শত্রুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বকে সতর্ক করে দিয়েও আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন৷
বিজ্ঞাপন
খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুই দেশের সীমান্ত পরিদর্শন করতে পারেননি ট্রাম্প৷ ঘন কুয়াশার কারণে তাঁর হেলিকপ্টার সেখানে নামতে পারেনি৷ তাই এমন নাটকীয় মঞ্চ ছেড়ে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে বার্তার জন্য তিনি সংসদে তাঁর ভাষণকেই হাতিয়ার করতে বাধ্য হন৷
ট্রাম্প সে দেশের উদ্দেশ্যে বলেন, একের পর এক নতুন অস্ত্র তাদের মোটেই নিরাপদ করে তুলছে না, উলটে তাদের প্রশাসন ঘোর বিপদে পড়ছে৷ বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না৷ উত্তর কোরিয়াকে একঘরে করে তুলতে তিনি সব দেশের উদ্দেশ্যে আবেদন করেন৷ ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার প্রশ্নে অ্যামেরিকা এতকাল যে সংযম দেখিয়ে এসেছে, তাকে দুর্বলতা হিসেবে গণ্য করলে চলবে না৷
তবে সংঘাতের বদলেসংলাপের মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের পথও খোলা রাখছেন ট্রাম্প৷ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন-এর উদ্দেশ্যে তিনি কিছুটা নমনীয় কণ্ঠে বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাঁর পিতামহ এমন এক দেশের স্বপ্ন দেখেননি৷ আলোচনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করলেও তাঁর প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চাইছে কিনা, সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কোনো সরাসরি মন্তব্য করেননি৷ উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবার হুমকিও দিয়েছিলেন৷
এর আগে জাপান সফরের সময়েও তিনি অ্যামেরিকা ও তার সহযোগী দেশগুলির সুরক্ষার উপর জোর দেন৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এমন দুর্দিনের সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরও জোরদার করে তুলতে কোনো উদ্যোগ বাকি রাখেননি৷
ট্রাম্প চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এসে পৌঁছেছেন৷ উত্তর কোরিয়াকে বশে আনতে চীনের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন৷ চীন যথেষ্ট আন্তরিকভাবে উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করলে কিম জং উন-এর প্রশাসন সত্যি কঠিন সংকটে পড়বে বলে মনে করা হয়৷ শুধু জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা নয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বেইজিংয়ের উপর আরও চাপ দিতে চান ট্রাম্প৷ কোরীয় উপদ্বীপে বেড়ে চলা উত্তেজনার কারণে গোটা অঞ্চলে চীনের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ বিপন্ন হচ্ছে৷ এই অবস্থায় ট্রাম্পের সফর বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷