দক্ষিণ কোরিয়ার স্থলভূমির খুব কাছে মিসাইল ছুঁড়েছে উত্তর কোরিয়া। মিসাইল গেছে জাপানের উপর দিয়ে। পাল্টা উত্তর দক্ষিণ কোরিয়ার।
বিজ্ঞাপন
একের পর এক মিসাইল আক্রমণ উত্তর কোরিয়ার। দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী বাফার জোনে একের পর এক মিসাইল ছুঁড়েছে উত্তর কোরিয়া। বুধবার সবমিলিয়ে ২৩টি মিসাইল ছুঁড়েছে কিম জং উনের দেশ। প্রতিটি মিসাইলই সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি মিসাইল জাপানের উপর দিয়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়েছে। একটি মিসাইল দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্রতট থেকে মাত্র ৫৭ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছে। যার জেরে উলেউং দ্বীপে যুদ্ধের সাইরেন বেজে ওঠে।
উত্তর কোরিয়ায় অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷ এছাড়া এবার প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইলও ছিল না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্যারেড
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
করোনার চিহ্ন
আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়া করোনা শনাক্তের কোনো তথ্য দেয়নি৷ তবে সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়াসহ কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল৷ প্যারেডে যারা অংশ নিয়েছেন তারা হ্যাজম্যাট স্যুট (হ্যাজার্ডাস ম্যাটেরিয়ালস স্যুট) পরেছিলেন৷ মুখে ছিল মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক৷
ছবি: KCNA via REUTERS
তবে দর্শকরা মাস্ক পরেননি
প্যারেডে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের অনেকে মাস্ক পরলেও প্যারেডের দর্শকরা মাস্ক পরেননি৷ এমনকি কিম জং উনের খুব কাছে অনেককে মাস্কহীন অবস্থায় দেখা গেছে৷ মাস্ক ছাড়াই তাদের উনকে ছুঁতে এবং হাত মেলাতে দেখা গেছে৷
ছবি: KCNA/REUTERS
ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না
এবারের প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না৷ যদিও গত অক্টোবরে এক প্যারাডে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়েছিল৷ এছাড়া সেসময় কিম জং উন তার বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ক্ষমতা সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছিলেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনেকদিন পর ‘রেড গার্ডসের’ উপস্থিতি
১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর চীনা বাহিনী উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর ‘ওয়ার্কার-পিজেন্ট রেড গার্ডস’ নামে একটি জননিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল৷ ২০১৩ সালের পর এবার আবার তারা প্যারেডে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
সৌলের নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন বলছেন, প্যারেডে ব্যালিস্টিক মিসাইল না থাকা এবং রেড গার্ডসের উপস্থিতির অর্থ হচ্ছে কিম জং উন অভ্যন্তরীণ ইস্যু যেমন করোনা, অর্থনীতি, জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বিষয় দেখাতে চেয়েছেন৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনায় ভালো অবস্থানে থাকতে চাওয়ার লক্ষ্যে হয়ত ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়নি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
আলোচনা বন্ধ আছে
উত্তর কোরিয়া যেন পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করে সেই লক্ষ্যে আলোচনা ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন কূটনীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে সফলতা পেতে চান৷ গত জুলাই মাসে আন্তঃকোরীয় হটলাইন চালু হওয়ার পর আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল৷ তবে গতমাসে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ মহড়া শুরুর পর উত্তর কোরিয়া আর ফোন ধরছে না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
7 ছবি1 | 7
বুধবার সকাল থেকেই একের পর এক মিসাইল ছুঁড়তে থাকে উত্তর কোরিয়া। পাল্টা জবাব দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াও। তাদের মিসাইলও দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী বাফার জোনে গিয়েই পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের দাবি, এদিন বেশ কয়েকটি কম পাল্লার মিসাইলও নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া।
ঘটনার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ''উত্তর কোরিয়াকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা হবে না।'' তিনি জানিয়েছেন, এদিন উত্তর কোরিয়ার মিসাইল জাপানের আকাশ দিয়ে এমনভাবে গেছে যে মিয়াগি, ইয়ামাগাতা এবং নিগাতা অঞ্চলে সাইরেন বেজে উঠেছে। বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। জাপান যে মিসাইলগুলি ছুঁড়েছে তার মধ্যে একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইনস্টাগ্রামের ছবিতে উত্তর কোরিয়া
প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকলেও উত্তর কোরিয়া দেশটি বিচ্ছিন্ন ও প্রায় অজানা৷ ব্রিটিশ ইনস্টাগ্রামার পিয়ের ডেপন্ট নিয়মিতভাবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: DW/P.Depont
অজানার আকর্ষণ
উত্তর কোরিয়া গোপনে থাকতেই পছন্দ করে, বলা হয়ে থাকে৷ দেশটি কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে৷ উত্তর কোরিয়ায় পর্যটক হওয়ার অর্থ, বিশেষ ‘গাইড’-রা প্রতিপদে সঙ্গে থাকবে ও নজর রাখবে৷ এ সব সত্ত্বেও পিয়ের ডেপন্ট সাত বার উত্তর কোরিয়া যাত্রা করেছেন ও সেখানকার সাধারণ মানুষদের ছবি তুলেছেন৷
ছবি: DW/P. Depont
পুঁজিবাদের ভূত?
ডেপন্ট প্রথম উত্তর কোরিয়ায় যান ২০১৩ সালে৷ সেযাবৎ কর্তৃত্ববাদী দেশটিতে পরিবর্তন এসেছে, বলে তিনি লক্ষ্য করেছেন৷ বিগত দু’তিন বছরের মধ্যে ‘‘পিয়ংইয়াংয়ে নিজের সম্পদ প্রদর্শন করাটা গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও পিয়ংইয়াংয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে ও প্রচুর বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Pierre Depont
আলাপ করা সহজ নয়
ডেপন্ট দেখেছেন, পিয়ংইয়াংয়ের রাস্তায় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়৷ প্রথমত, গাইডদের একজন সবসময় কান খাড়া করে শোনে৷ দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ফটো তুলতে দিতে বিশেষ পছন্দ করেন না৷ রাস্তাঘাটে মহিলারা ক্রমেই আরো ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে উঠছেন বটে, তবে সেটা প্রধানত বড় শহরগুলোয়৷
ছবি: DW/P. Depont
শহর বনাম গ্রাম
পিয়ংইয়াংয়ের মেট্রো স্টেশনটি দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়: মনে হবে যেন কারুকার্য করা শ্বেতপাথরের দেওয়ালের ওপর সুবিশাল ঝাড়বাতি ঝুলছে৷ ডেপন্টের কাছে উত্তর কোরিয়া ‘‘ফটো তোলার একটা আশ্চর্য জায়গা,’’ কেননা এখানে রাস্তাঘাটে কোনো বিজ্ঞাপন নেই৷ অপরদিকে শহরে স্বাচ্ছল্যের নানা চিহ্ন চোখে পড়লেও, গ্রামাঞ্চলে এখনও চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে৷
ছবি: Pierre Depont
টুরিস্টরা যা দেখতে পান না...
...তা হলো উত্তর কোরিয়ার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বাস্তবিক পরিস্থিতি৷ সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ করলেও, দেশটি কৃষিপ্রধানই রয়ে গিয়েছে৷ ‘‘প্রত্যেকটি ছোট ক্ষেতে চাষ করা হয়, প্রতি বর্গমিটার জমি ব্যবহার করা হয়,’’ বলেছেন ডেপন্ট৷
ছবি: Pierre Depont
মেকি প্রাচুর্য?
টুরিস্টদের শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় বৈকি, তবে বড় বড় কৃষি সমবায়ের গাইডেড টুরে৷ ডেপন্ট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামহুং-এর কাছে একটি কৃষি সমবায়ে যাওয়ার সুযোগ পান; সেখানকার ছোট্ট বাজারটিতে সুন্দর করে পণ্য সাজানো ছিল ও অনটনের কোনো চিহ্নই ছিল না – খুব সম্ভবত ‘‘শুধু লোক-দেখানো,’’ বলে ডেপন্ট মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: DW/P.Depont
হালফ্যাশনের স্কুল, তবে সবার জন্য নয়
উত্তর কোরিয়ায় টুরিস্ট হিসেবে সেখানকার একটি এলিট স্কুল বা মডার্ন স্কুল না দেখে ছাড় নেই৷ সংডোওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সামার ক্যাম্পটি পূর্ণ সংস্কারের পর আবার খোলা হয় ২০১৪ সালে৷ সেখানে ছেলেমেয়েরা সর্বাধুনিক আর্কেড গেম্স নিয়ে খেলছে আর তাদের ব্যবহারের জন্য গোটা বিশেক কম্পিউটার রাখা আছে দেখে ডেপন্টের মনে হয়, দৃশ্যটা ‘‘কিছুটা অবাস্তব৷’’
ছবি: DW/P.Depont
সর্বত্র মিলিটারি
দেশটির সত্তা ও সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল মিলিটারি৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মিলিটারিতে কাজ করে৷ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার তুলনায় সামরিক খাতে পিয়ংইয়াংয়ের ব্যয় বিশ্বের বৃহত্তম মিলিটারি বাজেটগুলির মধ্যে পড়ে৷ উত্তর কোরিয়ার কচিকাঁচারা মিলিটারি প্রতীকে অভ্যস্ত – এমনকি খেলার জায়গাতেও৷
ছবি: Pierre Depont
কর্তাভজা
মিলিটারি, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং কিম জং-উন ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ঘিরে ‘ব্যক্তি উপাসনা’ – এই হলো উত্তর কোরিয়ার কাহিনি৷ মহান নেতাদের কিংবদন্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও তাঁদের সুবিশাল মূর্তিগুলোর পরিচর্যায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা দেখে ডেপন্ট চমৎকৃত৷
ছবি: DW/P.Depont
9 ছবি1 | 9
দক্ষিণ কোরিয়াও ঘটনা কড়া সমালোচনা করেছে। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, কোরিয়ার উপকূলে জাপান, অ্যামেরিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার জবাবেই তারা এ কাজ করছে। কারণ, শুরু থেকেই এই মহড়া উত্তর কোরিয়া থ্রেট বা হুমকি বলে মনে করছে।
এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বললেও, পরে জাপানের সামরিক বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার মিসাইল চিহ্নিত করার পর অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে মিসাইলের উড়ান ট্র্যাক করা হয়েছে। মিসাইলটি জাপানের খুব কাছ দিয়ে গেলেও তার আকাশসীমায় ঢোকেনি।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকা এদিন উত্তর কোরিয়ার কড়া নিন্দা করেছে। অ্যামেরিকা বলেছে, ''উত্তর কোরিয়া যা করছে তা ক্ষমাহীন। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে রক্ষা করার জন্য অ্যামেরিকা সর্বদা আছে বলে এদিন জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, উত্তর কোরিয়া উত্তেজনা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্যও এর নিন্দা করেছে। রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অ্যামেরিকার অভিযোগ
এরইমধ্যে অ্যামেরিকার অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র এবং গোলা-বারুদ কিনছে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধে তা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। যদিও উত্তর কোরিয়া একাধিকবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।