একদিনে ৮৬ লাখ টিকাকরণ হয়েছে ভারতে। দ্রুত সব নাগরিককে প্রথম ডোজ দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বিজ্ঞাপন
এক দিনে রেকর্ড সংখ্যক টিকা দিল ভারত। সোমবার গোটা দেশে ৮৬ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী কয়েক দিন এভাবেই টিকাকরণ চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যারা টিকা পেয়েছেন এবং যারা টিকা দিয়েছেন, সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী বলেছেন, অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে টিকাকরণ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে সোমবার একদিনে ৮৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২ এপ্রিল একদিনে সব চেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছিল, ৪২ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৭। সোমবার থেকে দেশের টিকাকরণের পুরো দায়িত্ব কেন্দ্র নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। মাঝে দেড় মাসের জন্য রাজ্যগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, ফের কেন্দ্র টিকাকরণের গোটা দায়িত্ব নিজেদের হাতে নেবে।
১৮ বছরের উপরে সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বস্তুত, মোট টিকা উৎপাদনের ৭৫ ভাগ কেন্দ্র কিনে নিচ্ছে। তারপর তা বিনামূল্যে নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে। ২৫ ভাগ ভ্যাকসিন কিনছে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলি। তারা অর্থের বিনিময়ে টিকা দিচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট দাম বেধে দিয়েছে কেন্দ্র।
করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?
প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/M. Schönherr
কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷
ছবি: Xavier Galiana/AFP
মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: AFP/National Institutes of Health
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷
ছবি: PAWAN KUMAR/REUTERS
উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Pradeep Gaur/ZUMA Wire/imago images
টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷
ছবি: Anindito Mukherjee/Getty Images
অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷
সোমবার থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন প্রচার শুরু করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকা'। কেন্দ্র চাইছে দ্রুত দেশের সমস্ত মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দিয়ে দিতে। বিশেষত গরিব মানুষের কাছে যাতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করতে। কোনো কোনো অঞ্চলে টিকা নিয়ে ভয় তৈরি হয়েছে। অনেকেই টিকা নিতে চাইছেন না। সকলের কাছে পৌঁছাতে চাইছে কেন্দ্র। এবং সে কারণেই এই নতুন প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সোমবারের টিকাকরণ অভিযানে বেশ কিছু রাজ্যে ভালো ফল মিলেছে। এতদিন আসাম রাজ্যে যথেষ্ট টিকা দেওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার সেখানে তিন লাখ ১৯ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিন প্রতিদিন অন্তত তিন লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সোমবার মধ্যপ্রদেশে টিকা পেয়েছেন ১৬ লাখ মানুষ। উত্তর প্রদেশে প্রায় সাত লাখ। এত দিন উত্তর প্রদেশেও টিকাকরণ নিয়ে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছিল। রাজস্থানে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ। মহারাষ্ট্রে প্রায় চার লাখ। পশ্চিমবঙ্গে তিন লাখের সামান্য বেশি।
কেন্দ্র জানিয়েছে, মে মাসে গোটা দেশে সাত দশমিক নয় কোটি টিকা দেওয়া হয়েছিল। জুন মাসে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১২ কোটি। এখনো তিন কোটি ভ্যাকসিন হাতে আছে বলেও জানানো হয়েছে।