প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বই থেকে অমুসলিম এবং ভিন্ন ধারার লেখকদের লেখা বাদ দেয়ার বিষয়টি ফিরে ফিরে আসছে আলোচনায়৷ এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক অজয় রায় বলেছেন, ‘‘সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে একদিন শেখ হাসিনাকেও হিজাব পরতে হবে৷''
বিজ্ঞাপন
পাঠ্যবইয়ে ‘সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বৈষম্যমূলক' বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ হাইকোর্টের মাজার গেট সংলগ্ন রাস্তা ও সচিবালয়ের সামনে দফায় দফায় পুলিশের বাধার মুখে সংগঠনগুলো স্মারকলিপি দিয়ে কর্মসূচি শেষ করে৷
এর আগে গত রোববার ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘সংকটের আবর্তে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর' শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন' আয়োজিত সেই সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বইয়ে ব্যাপক ভুল এবং অনাকাঙ্খিত পরিবর্তনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এবারের বইয়ে প্রথমত দেখলাম ভুল-ত্রুটিগুলো থেকে গেছে, তারপরে যেটা আমাদের নজরে আসল তাতে মনে হয়েছে রাতের অন্ধকারে সুনামি ঘটে গেছে৷ সেই সুনামি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অজয় রায়ের আপত্তিটাও সেখানেই৷ তাই তিনি বলেন, ‘‘বইয়ে কোনো মুদ্রণজনিত ভুল হলে সেটা মেনে নেওয়া যেত৷ কিন্তু যখন সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটবে, তখন সেটাকে আমরা রেহাই দিতে পারি না৷ হেফাজতে ইসলামের নির্দেশমতো সমস্ত বই রচিত হবে আর সেটা এখন পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে শিশুরা পড়বে, এটা চলতে পারে না৷''
রাশেদা কে চৌধুরী পাঠ্যপুস্কককে ‘সাম্প্রদায়িক' করার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এ পরিবর্তনগুলো কী করে ঘটল? এই যে ১৭টি লেখা বাদ দেওয়া হলো, তার মধ্যে ১৫ জন লেখক মূলধারার সম্প্রদায়ের না হওয়ায় বাদ দেওয়া হলো৷ এই আদর্শিক বিচ্যুতি কোনোভাবে গ্রহণ করা যায় না৷''
অজয় রায় মনে করেন, সরকারের মধ্যে অনেক হেফাজতের লোক বা হেফাজতপন্থি লোক আছে এবং তাদের কারণেই গোপনে পাঠ্যপুস্তকে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ তাই সরকারের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘‘আপনাদের মধ্যে যারা হেফাজতি আছে, তাদের চিহ্নিত করুন, শাস্তি বিধান করুন এবং জনসমক্ষে দাঁড় করান৷ নইলে বাংলাদেশকে আপনারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না৷''
এখনো ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে মৌলবাদীদের হাতেই দেশ চলে যেতে পারে – এমন ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে অজয় রায় বলেন, ‘‘একদিন…বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, আপনাকেও বোরকা পরতে হবে, আপনাকেও হিজাব পরতে হবে৷ এই হেফাজতিরা আপনাকেও ছাড়বে না৷ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলে রেহাই দেবে না৷''
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বইমেলা থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: DW
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
ছবি: DW
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
ছবি: DW
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
প্রসঙ্গত, অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে খুন হন৷ হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷ কিন্তু দু'বছর পেরিয়ে গেলেও বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যার বিচার হয়নি৷ এক সাক্ষাৎকারে অজয় রায় বলেছেন, ‘‘পুলিশের কাছে গেলেই বলে, খুনি শনাক্ত হয়েছে, পুলিশের নজরদারিতে আছে৷ শিগগির খুনিকে গ্রেফতার করা হবে৷ আমি পুলিশের ‘খুনি নজরদারিতে' এই কথার অর্থ বুঝি না৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘ছেলে হত্যার বিচার পাবো বলে আর বিশ্বাস করি না৷ পুলিশ আমাদের কোনো কিছু জানায় না, খোঁজও নেয় না৷ তিন মাস আগে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম, কোনো তদন্ত নেই৷ শুধু বলে তদন্ত চলছে৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
10 ছবি1 | 10
বন্ধু, আজয় রায়ের এই মন্তব্য সম্পর্কে আপনি কিছু বলচে টাইলে লিখুন নীচের ঘরে৷