ইউরোপের সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্ক একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে৷ তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তুরস্কের সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা৷ একটি জার্মান পত্রিকা তাদের মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ভেনিস কমিশন হলো ইউরোপের সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞদের উপদেষ্টা কমিটি৷ এই কমিটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘তুরস্কের বর্তমান অবস্থা প্রমাণ করে যে দেশটি গণতন্ত্রের পথ থেকে কতটা সরে গেছে বা যাচ্ছে৷’’ বুধবার জার্মান পত্রিকা ‘স্যুড ডয়চে সাইটুং’ তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন করেছে৷ সেখানে তাঁরা বলেছেন, ‘‘তুরস্কে যে সংবিধান প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কার্যকর হলে দেশটিতে স্বৈরশাসন কায়েম হবে৷’’ জানুয়ারিতে তুরস্কের পার্লামেন্ট সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে৷ আর তা অনুমোদন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷
যে দেশের গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই
না দেশটা বাংলাদেশ নয়৷ তবে বাংলাদেশের অবস্থা যে খুব একটা সুবিধাজনক তাও নয়৷ চলুন দেখে নেই, প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী কোন দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন৷
ছবি: DW/D. Olmos
ইরিত্রিয়া
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রকাশিত ২০১৬ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী, যে দেশটিতে গণমাধ্যমের কোনোই স্বাধীনতা নেই, সেটি হচ্ছে ইরিত্রিয়া৷ গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসকের কবলে থাকে দেশটির কমপক্ষে ১৫ সাংবাদিক এই মুহূর্তে জেলে আছেন৷ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে সবার নীচে আছে ইরিত্রিয়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
উত্তর কোরিয়া
ইরিত্রিয়ার পরই নীচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া৷ কিম জুন-উনের নেতৃত্বাধীন দেশটি গত ১৫ বছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে৷ দেশটিতে বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসা তেমন দেয়া হয় না, যদিও বা কেউ ভিসা পান, তাঁকে রাখা হয় কড়া নজরদারিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap/Kcna
তুর্কমেনিস্তান
এই দেশটিকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম তথ্য কৃষ্ণ গহ্বর৷ স্বাধীনভাবে কোনো সাংবাদিক কাজ করতে চাইলে তাঁর জন্য মোটামুটি কারাভোগ এবং নির্যাতন নিশ্চিত দেশটিতে৷ ইনডেক্সে তাদের অবস্থান নীচের দিক থেকে তৃতীয়৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ফিনল্যান্ড
এবার যাওয়া যাক, তালিকার উপরের দিকের অবস্থা৷ গত পাঁচবছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের শীর্ষে অবস্থান করছে ফিনল্যান্ড৷ দেশটির গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ তবে সেদেশের অধিকাংশ পত্রিকা দু’টি মিডিয়া গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/van Weel
নেদারল্যান্ডস
প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গত একবছরে দু’ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে নেদারল্যান্ডস৷ দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আইনিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Imago/SylviaxLederer
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে গতবছর চারজন ব্লগার এবং প্রকাশক খুন হওয়ার পরও প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটেছে৷ আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে দেশটির অবস্থান এখন ১৪৪তম, তবে গ্লোবাল স্কোর কমেছে মাইনাস ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ৷
ছবি: DW/A. Islam
6 ছবি1 | 6
সংবিধানের এ সব ধারার পরিবর্তনের ফলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বাড়ছে৷ বিরোধী দলগুলো এরপর থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেছে৷ কেননা সংবিধানের এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হবেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী৷ যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং কার্যকর করার ক্ষমতা থাকবে তাঁর হাতে৷ এমনকি তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যা অবৈধ৷ অর্থাৎ একটি রাজনৈতিক দল হবে রাষ্ট্রের অংশ অথবা স্বয়ং রাষ্ট্র, যা ভয়াবহ ঘটনা বলে মনে করেন তুরস্কের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিজ বাইকাল৷
জার্মানিতে সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
জার্মান-তুর্কি সাংবাদিক ডেনিজ ইউচেলকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে প্রচারণার অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়েছে তুরস্কের আদালত৷ এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে জার্মানির রাজনীতিবিদরা৷ রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ মঙ্গলবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন শত শত মানুষ৷ তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার, আর মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘ফ্রি ডেনিজ’ অর্থাৎ ডেনিজকে মুক্ত করো৷ বিক্ষোভ মিছিলটি তুরস্কের দূতাবাসে পৌঁছায়৷ সাংবাদিক ডেনিজকে আটকের ঘটনায় সরাসরি নিন্দা জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল৷ ডেনিজ ইউচেল তুরস্কের কুর্দ অধিবাসীদের প্রতি তুর্কি সরকারের আচরণ সম্পর্কে একাধিক প্রবন্ধ লিখেছেন – যা তাঁকে আংকারার সুনজরে আনেনি বলে ধরে নেওয়া যায়৷
তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে সমন
মঙ্গলবার তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তুরস্কে বাকস্বাধীনতার এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে সতর্ক করে দেন তিনি৷ ডেনিজকে কারাদণ্ডের ঘটনায় দু'দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান তিনি৷ ২০০২ সালের পর এই প্রথম তুরস্কের কোনো জার্মান সাংবাদিকের কারাদণ্ড হলো৷
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর লাখো গ্রেপ্তার
গত বছরের জুলাইতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গণমাধ্যম, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মী, শিক্ষক, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশসহ লাখো মানুষকে গণগ্রেপ্তার করা হয়৷ এক লাখেরও বেশি মানুষকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
তুরস্কে কবুতরের বাজার
অনেকের কাছে কবুতর বা পায়রা পোষা শুধু শখ নয়, অনেকটা নেশার মতো৷ সেরকম কবুতরপ্রেমীদের জন্যই তুরস্কের সানলিউরফার বাজার৷ বাজারের কাছেই সীরিয়া সীমান্ত৷ যুদ্ধ চলছে সেখানে৷ কিন্তু সানলিউরফায় ঠিকই বসছে কবুতরের বাজার৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নিলামে কবুতর
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বের শহর সানলিউরফা৷ সিরিয়ার খুব কাছে এই শহর৷ তাই যখন-তখন গোলার আঘাতে মৃত্যুর আশঙ্কা সেখানে থাকেই৷ তারপরও কার্ডবোর্ডোর বাক্সে কবুতর নিয়ে নিয়মিত তিন চায়ের দোকানের মোড়ে আসেন কবুতর বিক্রেতারা৷ কবুতর বিক্রি হয় নিলামে৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
সংকটপূর্ণ এলাকা
এ শহর থেকে সিরিয়া সীমান্ত মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে৷ ফলে এখানে সিরিয়া সংকটের প্রভাব আগে পড়েছে, এখন পড়ছে, আগামীতেও পড়বে৷ তাছাড়া এ অঞ্চলে তুর্কি সেনাবাহিনির সঙ্গে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘাতও প্রায় নিত্য দিনের ঘটনা৷
পায়রাপ্রেম
সানলিউরফার এই বাজারে যাঁরা পায়রা কিনতে আসেন, তাঁরা কিন্তু সাধারণ ক্রেতা নন৷ অধিকাংশই পায়রাপ্রেমী৷ তাই পছন্দ হলে যত দামই হাঁকা হোক না কেন, সেই পায়রা তাঁরা কিনবেনই৷ তুরস্কে এই জাতের পায়রাকে সবাই ‘সিয়াহ কিনিফরলি’ নামে চেনে৷ এর দাম ১০০০ তুর্কি লিরা, অর্থাৎ ২৪৩ ইউরোর মতো৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
চড়া দামের শখ
বিক্রেতা দিলদাস গর্ব করেই বললেন, ‘‘একবার আমি এক জোড়া পায়রা ৩৫ হাজার লিরা (৮,৫০০ ইউরো)-তে বিক্রি করেছিলাম৷ আসলে এ এমন এক ভালোলাগা, যা থেকে রেহাই নেই৷ আমি তো বাড়ির ফ্রিজ এবং বউয়ের সোনার ব্রেসলেট বিক্রি করেও পায়রার দাম দিয়েছি৷’’
ছবি: Reuters/U. Bektas
শান্তিপ্রিয় বন্ধু
যখন কবুতর বিক্রি হয়না, তখন সবাই নিজের কবুতর নিয়ে চলে যান বাড়ির ছাদে৷ সবাই যার যার কবুতর ওড়ান৷ শত শত কবুতরে ছেয়ে যায় আকাশ৷ রেসিত গুজেলও কবুতরপ্রেমী৷ ৫৫ বছর বয়সি গুজেল বলছিলেন, পাখিরা আমার বন্ধু৷ ওরা আমাকে শান্তি দেয়৷’’
ছবি: Reuters/U. Bektas
কবুতরের যত্ন
এই বাজারে কবুতরের ভিটামিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও বিক্রি হয়৷ গুজেলের ৭০টি কবুতর৷ প্রিয় পাখিগুলোকে নিয়মিত ভালো খাবার এবং ভিটামিন খাওয়ান তিনি৷ তাতে প্রতিদিন অন্তত ৫ লিরা খরচ হয়৷ গুজেল অবশ্য তা নিয়ে ভাবেন না৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
দীর্ঘ যুদ্ধ, কম কবুতর
যুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়া থেকে অনেকেই নিজেদের কবুতর নিয়ে চলে এসেছিলেন এই শহরে৷ তখন কবুতরের দাম খুব কমে গিয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আবার দেখা দিয়েছে কবুতরের সংকট৷ এখন সিরিয়া থেকে কবুতর আসা বন্ধ৷ ফলে দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই৷