1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগো চাবেস নেই

৬ মার্চ ২০১৩

চলে গেলেন উগো চাবেস৷ অনুগামীদের কাছে রক্ষাকর্তা, বিরোধীদের কাছে স্বৈরাচারী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকার মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন চাবেস৷

ছবি: picture-alliance/Photoshot

জ্বালাময়ী বক্তৃতা, বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব

২০০৬ সালে জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে উগো চাবেস বলেছিলেন, ‘‘এখানে এখনো যে দেখি গন্ধকের গন্ধ! গতকাল শয়তানটা এখানে এসেছিল৷ এমনভাবে কথা বলেছে যেন গোটা বিশ্ব তারই সম্পত্তি৷'' সেদিন এমন জ্বালাময়ী ভাষণের লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ এমন বিতর্কিত মন্তব্য তিনি বহুবার করেছেন৷ তার বেশিরভাগ লক্ষ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ‘উত্তর অ্যামেরিকার সাম্রাজ্যবাদ'৷ নব্য ধনতন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে কামান দেগে তিনি শুধু নিজের দেশের ভোটার নয়, গোটা বিশ্বের বামপন্থীদের হৃদয় জয় করেছেন৷ নিজের টেলিভিশন শো-র মাধ্যমে প্রায় অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন তারকা হয়ে উঠেছিলেন অনেকের কাছে৷

চাবেসের মৃত্যুর খবরে সমর্থকদের মধ্যে কান্নার রোলছবি: JUAN BARRETO/AFP/Getty Images

মোটকথা উগো চাবেস-কে এককথায় বর্ণনা দেওয়া কঠিন৷ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নিজের খেয়ালখুশি মতো কার্যকর করেছেন৷ তবে মতলববাজ বললে তাঁর প্রতি অন্যায় করা হবে৷ অনেকের কাছে শেষ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবে বেঁচে ছিলেন তিনি৷ প্রায় ২০০ বছর আগে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন অনেক নেতা, যাঁদের ‘কাউদিয়োস' বলা হয়৷ সশস্ত্র সংগ্রামের পরিচালক ছাড়াও জনমোহিনী শক্তি ছিল তাঁদের৷ সেই ঘরানার নেতা ছিলেন চাবেস৷ তাঁর জন্মও এমন এলাকায়, যেখানে একাধিক এমন ‘কাউদিয়োস' সক্রিয় ছিলেন৷ বেশ রুক্ষ ও কঠিন সেই অঞ্চল৷ পোড়খাওয়া মানুষের ভাষাও বেশ চাঁচাছোলা৷ অতএব চাবেস-কে বুঝতে হলে এই প্রেক্ষাপটও জানতে হবে৷

রাজনীতির আসরে পদার্পণ

৩০ বছর বয়সে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীতে থাকতেই রাজনীতির জগতে পা দেন উগো চাবেস৷ ১৯৮৩ সালে অন্যান্য কয়েক জন কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি ‘বলিভারপন্থি আন্দোলন ২০০' শুরু করেছিলেন৷ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নায়ক সিমন বলিভার-কে আদর্শ হিসেবে চিরকাল মেনে এসেছেন তিনি৷ জনগণের বড় অংশের স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে, এই অভিযোগে ১৯৯২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে বসে চাবেস-এর নেতৃত্বে বলিভারপন্থি জোট৷ সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, বছর দুয়েকের জন্য কারাবন্দি হন চাবেস৷ এরপর নতুন দল গড়ে ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেন তিনি৷ তার আগেই ল্যাটিন অ্যামেরিকা জুড়ে ফিদেল কাস্ত্রোর মতো বামপন্থি নেতাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন তিনি৷

ইরানের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন চাবেসছবি: picture-alliance/dpa

ক্ষমতায় এসে বামপন্থি মতবাদ কার্যকর করতে শুরু করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন চাবেস৷ পর পর চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ পেট্রোলিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকানা বাতিল করে রাষ্ট্রের আওতায় একে একে সংস্থাগুলিকে নিয়ে আসেন তিনি৷ সেই আয় বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে কাজে লাগানো হয়৷ গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা থেকে শুরু করে সবার জন্য শিক্ষার মতো জনপ্রিয় কর্মসূচি কার্যকর করেন তিনি৷ ব্যাপক ভূমি সংস্কারের মাধ্যমেও গরিব কৃষকরা উপকৃত হন৷

সীমানা পেরিয়ে

তবে উগো চাবেস-এর প্রভাব শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকায় একের পর এক দেশে বামপন্থি নেতারা ক্ষমতায় আসতে থাকেন, যার পেছনে চাবেস-এর অবদান অস্বীকার করা যায় না৷ তিনি গোটা মহাদেশের মানুষকে এক পরিচয় দেবার স্বপ্ন দেখেছেন৷ বিশেষ করে মার্কিন ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ সংগ্রামের নেতা হিসেবেই নিজেকে ভাবতে ভালোবাসতেন তিনি৷ এমনকি চিরশত্রু বুশ-কে ধাক্কা দিতে বেলারুশ ও ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক জোটও গড়ে তুলেছিলেন তিনি৷

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চাবেসছবি: Reuters

চাবেস-এর সার্বিক মূল্যায়ন করতে গেলে অবশ্য কিছু সংশয়ের কথাও উল্লেখ করতে হয়৷ ইরানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে৷ তাছাড়া তাঁর শাসনকালে ভেনেজুয়েলায় দারিদ্র আরও বেড়ে গেছে৷ প্রায় ৭০ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করতে হয়েছে৷ শুধু পেট্রোলিয়াম রপ্তানির উপর ভর করে সরকার চালানোর ফলে বাজারের তারতম্যের কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে৷ সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ দুর্নীতিও বেড়ে চলেছে৷ খুন-জখমের মতো অপরাধের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে৷

উগো রাফায়েল চাবেস ফ্রিয়াস একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ কিন্তু ব্রাজিল বা চিলি-তে বামপন্থি নেতাদের মতো গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা ছিল না৷ বিরোধিতা বা ভিন্ন মত তিনি সহ্য করতে পারতেন না৷ তার মাশুল দিতে হয়েছে অনেক বিরোধী নেতাকে৷ তবে সবকিছু সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার অনেক মানুষের কাছে তিনি কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন৷

প্রতিবেদন: ইয়ান ভাল্টার/এসবি

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ইউরোপ