২৪শে সেপ্টেম্বর জার্মানির সংসদ নির্বাচনের আগে দুই শীর্ষ প্রার্থীর একমাত্র ‘টেলিভিশন ডুয়েল' দেখতে পেলেন ভোটাররা৷ জনমত সমীক্ষায় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জয়ী হলেও ব্যালট বাক্সে তার প্রভাব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবারের টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠানে ম্যার্কেল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করেছেন৷ প্রতিপক্ষের হামলার মুখেও তাঁকে বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়নি৷ ২০১৫ সালে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন৷ বিদেশিদের অভিবাসনের প্রশ্নেও তিনি নিজের ঘোষিত পথে এগোতে চান৷ ডিজেলগেট কেলেঙ্কারি সামলাতে তিনি কোনো চমকের বদলে এক সার্বিক সমাধানসূত্রের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ মোটকথা চতুর্থ বার চ্যান্সেলর হলে ম্যার্কেল ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন৷ প্রতিদ্বন্দ্বী শুলৎস পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন৷
তবে চাপের মুখে পড়ে তিনি এমন কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন, যা এতকাল অস্পষ্ট ছিল৷ যেমন তিনি বলেন, জার্মানিতে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স কোনো অবস্থায় বাড়িয়ে ৭০ করা হবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগদান সংক্রান্ত আলোচনা বাতিল করার প্রস্তাবেও তিনি সায় দেন৷
প্রার্থী হিসেবে ম্যার্কেল ও শুলৎস-এর মধ্যে মতের মিলের অভাব নেই৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির ভূমিকা থেকে শুরু করে অভিবাসন প্রসঙ্গে তাঁদের অবস্থান প্রায় এক৷ টেলিভিশন বিতর্ককে তাই অনেকে ‘ডুয়েল' না বলে ‘ডুয়েট' আখ্যা দিচ্ছেন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আদলে দুই প্রার্থীর মধ্যে ‘টেলিভিশন ডুয়েল'-এর রীতি জার্মানিতে চালু হয়েছে ২০০২ সাল থেকে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় জার্মান চ্যান্সেলরের ক্ষমতা অনেক সীমিত৷ সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা সামলে তাঁকে কাজ করতে হয়৷ তা সত্ত্বেও নেতা হিসেবে শীর্ষ প্রার্থীর মূল্যায়নে এই ডুয়েল জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ রবিবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর প্রতিপক্ষ এসপিডি দলের মার্টিন শুলৎস-এর বাকযুদ্ধ দেখেছেন সম্ভবত প্রায় ২ কোটি মানুষ৷ অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ম্যার্কেলই এই বাকযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন৷
তবে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগের এই একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান ভোটারদের আচরণের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সব মহলেই সন্দেহ রয়েছে৷ বিশেষ করে যে সব ভোটার এখনো মনস্থির করে উঠতে পারেননি, তাঁদের সিদ্ধান্তের উপর ২৪শে সেপ্টেম্বরের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে৷
স্বতঃস্ফূর্ত বাকযুদ্ধ নয়, রীতিমতো নিয়মের কাঠামোয় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল এবারের ‘টেলিভিশন ডুয়েল' অনুষ্ঠান৷ বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের চারজন সাংবাদিক দুই প্রার্থীর জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন৷ মোট চারটি বিষয় স্থির করে দেওয়া হয়েছিল৷ সেই গণ্ডির মধ্যেই ম্যার্কেল ও শুলৎস-কে আবদ্ধ থাকতে হয়েছে৷ অনুষ্ঠানের পর শুলৎস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয় নি৷ তবে তিনি দ্বিতীয় ডুয়েলের দাবি জানালেও ম্যার্কেল তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
একমাত্র এই ‘টেলিভিশন ডুয়েল'-কে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না৷ জোট সরকার গঠনে যে সব দলের ভূমিকা অনস্বীকার্য, সেই সব দলের নেতাদের বিতর্কে শামিল করা হয়নি৷ তাঁদের জন্য সোমবার আলাদা টেলিভিশন বিতর্কের আয়োজন করা হচ্ছে৷ তাছাড়া বিষয় বাছাই নিয়েও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷