ফিলিপাইনস-এর টানিয়ন প্রণালীতে বিরল ঝিনুক কিংবা শুশুকের ঝাঁকের কোনো অভাব নেই৷ যার অভাব আছে, সেটি হল পর্যাপ্ত পরিবেশ সুরক্ষার, যার জন্য প্রয়োজন রেঞ্জার ও অর্থের৷ তবে তার চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইন্স-এ যেভাবে চলছে পরিবেশ সুরক্ষা
03:30
ট্রাইডাকনা গাইগাস বা জায়ান্ট ক্ল্যাম নামধারী সুবিশাল ঝিনুকটির ওজন শেষমেষ একশো কিলোগ্রামে দাঁড়াতে পারে৷ টানিয়ন স্ট্রেটে এরা সবাই শান্তিতে বড় হতে পারে৷ এই সব ঝিনুকদের অনেকেই আজ বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় পড়ে৷
টানিয়ন স্ট্রেট হল ফিলিপাইনস-এর নেগ্রোস আর চেবু দ্বীপের মাঝখানের প্রণালী৷ প্রায় বিশ বছর আগে এই সমুদ্রাঞ্চলকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়৷ আনসিল সিলভা অয়েস্টার বা মানুষের খাবারের যোগ্য ঝিনুক ধরে চারজন মানুষের সংসার চালান৷ পরিষ্কার পানি দেখে তিনি খুশি৷ আনসিল বলেন, ‘‘এই পানি রক্ষা করা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমাদের জীবিকাই তো এখানে৷ কাজেই আমাদের দেখতে হবে যে, এখানকার প্রবাল যেন বিনষ্ট না হয়৷''
কয়েকটি সেরা উদ্ভিদ ও প্রাণী
প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীকে সেরা নির্বাচিত করে, যেগুলো হুমকির মুখে রয়েছে এবং যাদের রক্ষা করা দরকার৷ ‘ফ্লোরা অ্যান্ড ফোনা ২০১৫’ তে কোন গাছ, ফুল ও পতঙ্গ সেরা খেতাব জিতল জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
তিতলি
তিতলি বা প্রজাপতি প্রাণিজগতের অন্যতম সুন্দর পতঙ্গ হিসেবে পরিচিত৷ এই প্রজাপতিটিকে নির্বাচন করার পেছনে অবশ্য অন্য কারণ রয়েছে৷ এরা খাদ্যের জন্য পিপড়ার উপর নির্ভরশীল৷ পিপড়া মথে খাবার লুকিয়ে রাখে, যা খেয়ে বেঁচে থাকে এই প্রজাপতিরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
কচ্ছপ
২০১৫ সালের সেরা সরীসৃপ নির্বাচিত হয়েছে এই ইউরোপীয় কচ্ছপটি৷ জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে এই হলুদ ছোপ ছোপ কচ্ছপের দেখা পাওয়া যায়৷ এরা কেবল স্থির পানিতে থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Robert Schlesinger
ম্যাপেল গাছ
এই গাছটি ম্যাপেল প্রজাতির৷ এ ধরনের গাছ শহরের বাইরে বা জঙ্গলে বেশি দেখা যায়৷ এই গাছের কাঠ খুব ভালো৷ তাই বলা হয় এটি কখনো প্রতারণা করে না৷ আর এজন্যই ২০১৫ সালের সেরা গাছ হিসেবে উঠে এসেছে এর নাম৷
ছবি: A. Roloff
প্রবাল
যদিও প্রবাল বা শৈলশিরা সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত৷ কিন্তু ‘মাশরুম ২০১৫’তে এদের নামই উঠে এসেছে৷ এখানে যে মাশরুমটিকে দেখা যাচ্ছে, সেটা অনেকটা মৃত গাছ থেকে জন্ম নেয়া ছত্রাকের মত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Theiß
বাজপাখি
রাজাওয়ালি প্রজাতির এই বাজ ২০১৫ সালের পাখি নির্বাচিত হয়েছে৷ এটি বিরল প্রজাতির এবং এ ধরনের পাখি শিকার ৭০ এর দশকে নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো তা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jens Wolf
কাঁচামরিচ
২০১৫/১৬ বছরের সেরা সবজি নির্বাচিত হয়েছে কাঁচামরিচ৷ এটা বিভিন্ন রঙ ও বিভিন্ন ধরনের হয়৷ স্বাদের দিক থেকেও ভিন্নতা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ কাটতে হয়ত কেউ ভালোবাসেন না৷ কিন্তু পেঁয়াজের রোগ সারানোর ক্ষমতা আছে৷ তাই আরোগ্য উদ্ভিদের তালিকায় সেরা হয়েছে পেঁয়াজ৷ পেঁয়াজ যে-কোনো ধরনের ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/xalanx
ঔষধি উদ্ভিদ
হাইপেরিকাম পারফরেটুম এমন একটা উদ্ভিদ, যা মানুষের ভয় ও উত্তেজনা হ্রাস করে৷ এছাড়া হতাশা কমাতেও এর জুরি নেই৷ এছাড়া ক্যান্সার ও আলৎসহাইমার প্রতিরোধে ওষুধ হিসেবে এই উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে৷ এ কারণে ‘ওষধি উদ্ভিদ ২০১৫’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
ছোট্ট শামুক, দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
এ ধরনের শামুক এখন প্রায় বিরল৷ এরা সাধারণত গুহা, খনিতে লুকিয়ে থাকে৷ তাই একে ‘অ্যানিমেল কেভ ২০১৫’ এর খেতাব দেয়া হয়েছে৷
ছবি: K. Bogon
লম্বা দৈর্ঘ্যের গোলাকার ফুল
এই ফুলের প্রধান দুটি রঙ বেগুনি ও নীল৷ কখনো কখনো গোলাপী রঙেরও হয়ে থাকে৷ তাই সাকসিসা নামের এই ফুলটিকে ২০১৫ সালের সেরা ফুলের খেতাব দেয়া হয়েছে৷ ইউরোপের জলাবনে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ চা হিসেবে এই ফুলের দারুণ কদর রয়েছে৷ এটি রক্ত বিশুদ্ধকরণ এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে৷
টানিয়ন স্ট্রেট-এর নীচে সাগরের তলায় মাছেরা খাবার পায় – সেই সঙ্গে শত শত তিমি মাছ আর শুশুকরা, যারা এই ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রণালী পাড়ি দেয়, বিশেষ করে বসন্তে৷ ১৪টি বিভিন্ন ধরনের ডলফিন বা শুশুক এখানে দেখা গেছে৷ তাদের সুরক্ষার জন্য অর্থের প্রয়োজন৷ সেই অর্থ সংগ্রহ করা হল আনাবেল প্লান্তিয়া-র কাজ৷ তিনি বিওফিন নামের একটি সংস্থার হয়ে কাজ করেন, যারা সারা বিশ্বে সরকারবর্গকে বিভিন্ন পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পের অর্থায়নের কাজে সাহায্য করে৷ ফিলিপাইন্সেও তাঁর কাজের কোনো কমতি নেই৷
বিওফিন ফিলিপাইনস-এর প্রধান আনাবেল প্লান্তিয়া বলেন, ‘‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সকলকেই সংশ্লিষ্ট করতে হবে৷ কাজেই আমরা সরকারি বাজেট ঘেঁটে দেখেছি, সেখানে রদবদলের ভালো সম্ভাবনা আছে – যা থেকে এই সংস্থাগুলি আরো ভালোভাবে সহযোগিতা করতে পারবে৷''
বরাদ্দ অর্থ বাড়লে আরো বেশি রেঞ্জার নিয়োগ করা সম্ভব হবে – আপাতত উপকূলের এই অংশটির উপর নজর রাখার জন্য মাত্র তিনটি বোট রয়েছে৷ যে কারণে সংরক্ষিত এলাকায় আজও বেআইনিভাবে ডায়নামাইট ফাটিয়ে মাছ ধরা হয়৷ যার ফলে সমুদ্রবক্ষের বিপুল ক্ষতি হয়৷ রেঞ্জাররা যতোটা পারেন সেই ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করেন; প্রবালের চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তা পুঁতে দিয়ে মেরামত করার চেষ্টা করেন৷ ডায়নামাইট ফাটিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে পারলেই ভালো হতো, কিন্তু সে কাজের জন্য পর্যাপ্ত রেঞ্জার বা সরঞ্জাম নেই৷ টানিয়ন স্ট্রেট মেরিন রিজার্ভের রেঞ্জার লিওনিতো তোরেস বলেন, ‘‘বেআইনি জেলেদের ধরলে আমাদের হুমকিও দেওয়া হয়, তোমাদের খুন করে ফেলা হবে৷ প্রায়ই এ ধরনের হুমকি আসে৷''
ফিলিপাইনস-এ প্রজাতি সংরক্ষণ সহজ কাজ নয়৷ একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে মাছ ধরার পেশা৷ তারই মধ্যে পথ খুঁজতে হয়৷
ওয়ালফিন থেকে লাইগার – সংকর প্রজাতির কিছু দৃষ্টান্ত
সুকুমার রায়ের কবিতায় ‘হাঁসজারু’ বা ‘বকচ্ছপ’-এর মতো কাল্পনিক সংকর প্রাণীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে৷ কিন্তু বাস্তবেও মিশ্র প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা কম নয়৷ এদের কয়েকটির সঙ্গে আলাপ করা যাক৷
ছবি: picture-alliance/newscom
‘পিজলি’ ভালুক
উত্তরমেরুর পোলার বেয়ার এবং গ্রিজলি বেয়ার – এই দুই ভালুকের মিলনের ফল ‘পিজলি বেয়ার’৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই দুই প্রাণীর সাক্ষাৎ সম্ভব হয়েছে৷ তারা নিজেরাও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম৷ সম্প্রতি গবেষক ও শিকারিরা এই মিশ্র প্রজাতির বেশ কয়েকটি নমুনা চোখে দেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/University of Alberta/Andrew E. Derocher
খচ্চর
সংকর প্রজাতির সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ সম্ভবত খচ্চর৷ ছেলে গাধা আর মেয়ে ঘোড়ার মিলনের ফলে সৃষ্টি হয় ‘মিউল’৷ উলটোটা হলে ইংরেজিতে বলা হয় ‘হিনি’৷ বাংলায় দুই ক্ষেত্রেই তার নাম খচ্চর৷ মাল বইতে তারা ওস্তাদ৷ তবে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা নেই এই মিশ্র প্রজাতির৷
জেবরা ও গাধার মিশ্রণে সৃষ্ট প্রাণীকে কি বাংলায় ‘জেবধা’ বা ‘গাধরা’ বলা চলে? ইংরেজিতে এর নাম জেব্রয়েড৷ ২০১৩ সালে ইটালির ফ্লোরেন্স শহরের চিড়িয়াখানায় ছবির এই প্রাণীটির জন্ম হয়৷ ইথিওপিয়ায় প্রকৃতির কোলেও এদের দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Tiziana Fabi
পুকুরের ব্যাং
জার্মানিতে পুকুরের ব্যাং যে আসলে সংকর প্রজাতির প্রাণী, তা অনেকেই জানে না৷ মার্শ ফ্রগ ও ছোট ‘ওয়াটার ফ্রগ’ প্রজাতির সংমিশ্রণে এদের সৃষ্টি৷ তাদের ডাকের মধ্যেও দুই প্রজাতির ছাপ শোনা যায়৷ জার্মানির বিভিন্ন বাগানে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Wittek
ওয়ালফিন
হোয়েল + ডলফিন = ওয়ালফিন৷ অর্থাৎ উল্ফ বা নেকড়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ তিমি ও শুশুকের মিলনে সৃষ্ট ছবির এই প্রাণীটির জন্ম হাওয়াই দ্বীপে সি লাইফ পার্কে৷ নাম কেকাইমালু৷
ছবি: picture-alliance/newscom
ক্যামা
ক্যামেল + লামা = ক্যামা৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষে দুবাই শহরে বিশ্বের প্রথম ক্যামার জন্ম হয়, তবে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায়৷ তারপর তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ উদ্দেশ্য ছিল এমন প্রজাতি সৃষ্টি করা, যা লামার তুলনায় বেশি উল বা পশম উৎপাদন করে এবং উটের মতো বড় ও শক্তিশালী হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Balkis Press/Abaca
ভেড়া-ছাগল
ভেড়া ও ছাগলের সংকর তেমন বিস্ময়কর না মনে হলেও বিষয়টা মোটেই সহজ নয়, কারণ, এই দুই প্রজাতির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে৷ তাদের মিলন হলে শাবক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত অবস্থায় জন্মায়৷ ছবির এই প্রাণীটি সুস্থ অবস্থায় আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Murphy
লাইগার
লায়ন + টাইগার = লাইগার৷ প্রকৃতির কোলে সিংহ ও বাঘের সংকর দেখা যায় না৷ শুধু চিড়িয়াখানায় এমন কিছু নমুনা রয়েছে৷ যেমন রাশিয়ার নভোসিবির্স্ক শহরের চিড়িয়াখানায় জিটা নামের এই প্রাণীটি৷ ২০১৫ সালে তার দুটি শাবক জন্মায়৷ আকারে ও ওজনে তারা অনেক সময় বাবা-মায়ের থেকেও বড় হয়৷