জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বসবাসকারী অনেক মানুষই এখন নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন৷ একাকী সময় কাটানোয় তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছাড়াও এটি সমাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে৷
বিজ্ঞাপন
এমতাবস্থায় খ্রিস্ট্রান ডেমোক্রেটরা একাকীত্ব মোকাবেলায় বার্লিনে বিশেষ কমিশনার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন৷ বার্লিনের প্রতি দুইটির মধ্যে একটি পরিবার একজনের৷ এখানে বয়স্কদের জন্য রয়েছে খোশগল্প করার হটলাইন৷ পেশাগতদের সময় কাটানোর আলাদা গ্রুপ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক গ্রুপ৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দলের (সিডিইউ) বার্লিন শাখা নিঃসঙ্গতার জন্য একজন অফিসিয়াল কমিশনার নিয়োগের দাবি জানিয়েছে৷
সিডিইউর মুখপাত্র মাইক পেন স্থানীয় পাবলিক ব্রডকাস্টার আরবিবিকে বলেন, ‘‘শহরের একাকীত্ব সমস্যা মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবীর কাজগুলো যথেষ্ট নয়৷ সব কিছু সমন্বয় করতে পুরো সময়ের জন্য একজনকে দরকার৷৷ লাখ লাখ মানুষের মহানগর হিসেবে বার্লিনে এই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার৷’’
নিঃসঙ্গতা কাটাতে স্কুল
নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধে লড়তে থাইল্যান্ডের সরকার বয়স্কদের জন্য বিশেষ স্কুল চালু করেছে৷ সপ্তাহে একদিন করে তিনমাস স্কুলে যান শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
স্কুলে যাওয়ার আনন্দ
লাল-সাদা পোশাক পরে স্কুলে যাচ্ছেন তাঁরা৷ নিঃসঙ্গতা থেকে বয়স্ক মানুষদের কিছুদিনের জন্য হলেও মুক্তি দিতে দেশজুড়ে বিশেষ স্কুল গড়ে তুলেছে থাইল্যান্ডের সরকার৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
ক্লাস তিনমাস
সপ্তাহে একদিন করে তিনমাস ধরে চলে এই স্কুল৷ সেখানে নাচের ক্লাসেরও ব্যবস্থা আছে৷ ছবিটি থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া রাজ্যের একটি বিশেষ স্কুলে তোলা৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
অপেক্ষা
৭৭ বছরের সোমজিৎ তিরারোজ (মাঝে) বলছেন, ‘‘আমি প্রত্যেক বুধবারের অপেক্ষায় থাকি৷ সেদিন আমি পোশাক পরে স্কুলে যাই৷ বন্ধুদের সাথে দেখা হয়৷ হাসি-তামাশা করি৷’’ স্বামীর মৃত্যুর পর একাকী জীবনযাপন করা সোমজিৎ স্কুলে যাওয়ার মাধ্যমে শোক থেকে মুক্তি খুঁজছেন৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
বুড়িয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড
দেশটিতে দিনদিন সোমজিতের মতো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০৪০ সালে থাইল্যান্ডের প্রতি চারজনের একজনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি হবে – যা পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ হবে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
একাকীত্বের জীবন
থাইল্যান্ডে অতীতে সন্তানরাই বয়স্ক বাবা-মাদের দেখাশোনা করতো৷ কিন্তু এখন জীবিকার তাগিদে ছেলে-মেয়েরা শহরে চলে যাওয়ায় গ্রামে থাকা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানিদের একাই জীবন কাটাতে হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
‘দারুণ মজার’
৬৩ বছরের পুনশ্রি সেয়াঙ্গুয়াল স্কুলে যাওয়ার জন্য চুল বেঁধেছেন৷ স্কুল যেতে খুব ভাল লাগে তাঁর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আসলেই স্কুলে যেতে পছন্দ করি৷ অনেক মজা হয় সেখানে৷ কিছু বিষয় শিখতেও পারি৷ আমার অনেক বন্ধু হয়েছে৷ যখন স্কুলে যাই না, তখন একা লাগে৷ ক্লাসরুম মিস করি আমি৷’’
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মা-মেয়ে একসঙ্গে
কানাইয়ারাত খনক্রিট (ডানে) তাঁর ৯১ বছর বয়সি মা ফোয়েম খনক্রিটকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করছেন৷ তাঁরা দু’জনেই বয়স্কদের স্কুলে পড়েন৷ স্কুলে গিয়ে অনেকের সঙ্গে মেশার কারণে তাঁর মা এখন ভালো অনুভব করছেন বলে জানান কানাইয়ারাত খনক্রিট৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
7 ছবি1 | 7
পেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে বার্লিন শহরেরর একাকীত্ব মোকাবেলা করা প্রয়োজন৷ আমি আশা করি আমরা এখানে সব পক্ষের একাকী লোকদের জন্য কিছু করতে পরব, কারণ এটি তরুণ, বৃদ্ধ, ধনী, গরীব সবারই সমস্যা৷’’
বার্লিনের দৈনিক টাগেসস্পিগেলের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাকীত্বের কারণে গত বছর বার্লিনের এক হাজার ৩০০ মানুষ স্বেচ্ছাসেবীর কাজে যোগ দেন৷ এই শহরে ৩৬ লাখ মানুষ বাস করে এবং প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে৷
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্লিনের কমপক্ষে ৩০০ মানুষ প্রত বছর তাদের অ্যাপার্টমেন্টে মৃত্যুবরণ করেন৷ সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্লিনকে একাকিত্বের রাজধানী নামে অভিহিত করা হচ্ছে৷
গত মে মাসে ফেডেরাল সরকার পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সের জার্মানরা নিঃসঙ্গতা বোধ করেন এবং এই সংখ্যা এখন ১৫ শতাংশে ঠেকেছে৷
কোনো কোনো বয়সের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ৫৯ শতাংশে ঠেকেছ এবং প্রতি চারজনের মধ্যে একজন কিশোর মাঝে মাঝে একাকীত্ব বোধ করেন বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়৷
এলিজাবেথ শুমাখার/এসআই/কেএম
বার্লিনের সেরা ১০ স্থাপনা
জার্মানির রাজধানী বার্লিন ভ্রমণ করতে চান? দেখতে চান ইতিহাস আর ঐত্যিহ্যের মিশেলে গড়া দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপনা? তাহলে আপনার জন্যই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Lange
বার্লিন টেলিভশন টাওয়ার
১৯৬৯ সালের ৩ অক্টোবর আলেকজান্ডাররপ্লাৎসে এক হাজার ২০৭ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি বসানো হয়৷ এটি অনেক দূর থেকেও দেখা যায় বলে টাওয়ারটি শহরের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতীক৷ প্রতি বছর এক মিলিয়ন দর্শনার্থী এই টাওয়ারটি দেখতে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রান্ডেনবুর্গ গেট
১৭৯১ সালে গেটটি উদ্বোধন করা হয়৷ বিশেষভাবে তৈরি এই তোরণটি বার্লিনের বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক৷ ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীর ভাঙার পর সেই প্রাচীর ঘিরে থাকা গেটটি দেখা যায়৷ এখন এটি জার্মানির ঐক্যের প্রতীক৷
ছবি: Fotolia/sborisov
রাইখস্টাগ বিল্ডিং
চমৎকার এ ভবনটি বার্লিনের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে আছে৷ জার্মান সম্রাটের শাসনামলে সংসদ সদস্যরা এখানে মিলিত হতেন৷ সাড়ে ৭৫ ফুট উচ্চতার কাচের গম্বুজটি পর্যটকদের বেশ আকর্ষণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
বার্লিন ক্যাথেড্রাল
৯৮ মিটার উঁচুর বার্লিন ক্যাথেড্রালের মূল গম্বুজটি রাজধানীর উচ্চতম৷ এটি বার্লিনের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে দেখতে সহায়তা করে, এজন্য আপনাকে ২৭০ ধাপ আরোহণ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
চেকপয়েন্ট চার্লি
এখানে এক সময় সোভিয়েট এবংঅ্যামেরিকান ট্যাঙ্কগুলো মুখোমুখি হয়েছিল৷ পর্যটকরা এখানে নামমাত্র ফি দিয়ে ছবি তুলতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/DPPI Media/A. Guillaumot
ইস্ট সাইড গ্যালারি
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা বার্লিনে এসে স্প্রি নদীর তীরে প্রাচীরের এক দশমিক তিন কিলোমিটার অংশে ছবি এঁকেছিলেন৷ এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম ওপেন এয়ার গ্যালারি তৈরি হয়৷
ছবি: DW/T. Kakareko
ভিক্টোরি কলাম
টিয়ারগার্টেনের মাঝামাঝি ৬০ মিটার উচ্চতার কলামটি দাঁড়িয়ে আছে৷ এটি ৬০টি কামান দিয়ে সজ্জিত ছিল, যা ১৮৬৪ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত চলা জার্মান একীভূতকরণের যুদ্ধের সময় নেওয়া হয়েছিল৷ এর শীর্ষে রয়েছে বিজয়ের দেবী ভিক্টোরিয়া, যিনি ‘গোল্ডেলসে’ নামে পরিচিত৷
ছবি: imago/J. Tack
কাইজার ভিলহেল্ম মেমোরিয়াল চার্চ
পুরোনো চার্চ টাওয়ারটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধ্বংসের স্মারক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে৷ নতুন টাওয়ারটি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷
ছবি: Colourbox/V. Voennyy
নিউ সিনাগগ
ওরানিয়েনবুর্গার স্ট্রাসে নিউ সিনাগগ ১৮৬৬ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি পুড়ে যায়৷ পুনর্নির্মিত এই স্থাপনাটি ১৯৯৫ সালে ফের প্রতিষ্ঠা করা হয়৷
ছবি: Renate Pelzl
মলিকিউল ম্যান
দুই ভদ্রলোক সম্ভবত বার্লিনের নবীনতম নিদর্শন৷ অ্যামেরিকান ভাস্কর জোনাথন বোরোফস্কির ১৯৯৯ সালে ৩০ মিটার উঁচু এই ভাস্কর্যটি পুনর্মিলিত শহরের প্রতীক হিসাবে ক্রয়েসবার্গের ফ্রিড্রিশহাইন এবং ট্রেপ্টো জেলার স্প্রি নদীর মধ্যে স্থাপন করেন৷