বাংলাদেশে একাত্তরে জেনোসাইডের স্বীকৃতির প্রস্তাব পাস করতে জেনোসাইড বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে জেনোসাইড ও এর নিবৃত্তি: একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই আহ্বান জানানোর কথা মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএজিএস প্রেসিডেন্ট মেলানি ও‘ব্রায়েনের কাছে প্রস্তাবের খসড়া পাঠিয়েছেন একাত্তরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহীদ রেজা নূর৷
বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার তৌহীদ রেজা নূর বলেন, "আমাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছি, যা আইএজিএস রেজুলেশন কমিটি যাচাই-বাছাই করে অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল বডির কাছে ভোটের জন্য তুলবে৷"
১৯ জুলাই স্পেনের বার্সেলোনায় আইএজিএস এবং স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনার যৌথ আয়োজনে পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি শুরু হয়৷ সেখানে সারা বিশ্বের জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা জেনোসাইড বিষয়ক আলোচনা করেন৷ সম্মেলনের প্রথম দিনে জেনোসাইড নিরোধ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা এলিস ওয়াইরিমু দেরিতু মূল বক্তব্য দেন৷
এর আগে ‘বাংলাদেশে জেনোসাইডের পঞ্চাশ বছর এবং অতঃপর' শিরোনামে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷ খ্যাতিমান জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ও বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডাম জোন্সের সভাপতিত্বে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের চারজন গবেষক শাহরিয়ার আলম, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, এমরান আজাদ এবং ড. তৌহীদ রেজা নূর নিজেদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন৷
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে জেনোসাইডের স্মৃতি কীভাবে প্রবাহিত হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক শাহরিয়ার আলম৷
‘একাত্তর সালের জেনোসাইড বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গীঃ একটি নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ‘ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান৷
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম গ্র্যাজুয়েট এমরান আজাদ আলোচনা করেন একাত্তরে সংঘটিত জেনোসাইডের শিকার পরিবারের জন্য গঠিত বিচার প্রক্রিয়ার অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও এর ভবিষ্যৎ বিষয়ে৷
মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)৷ ছবির সমারোহে দেখে নিন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার ইতিহাস...
ছবি: AP/picture alliance
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ৷ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: AP/picture alliance
সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল, যশোরে একটি রিকশায় অস্ত্র হাতে দুই মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: AP/picture alliance
মুক্তিবাহিনীর মার্চ
এটাও ২রা এপ্রিলের ছবি৷ যশোরে মুক্তিসেনারা মার্চ করছেন৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রত্যয়ী মুক্তিসেনা
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিলের এই ছবিতে কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
সবার মুখে ‘জয় বাংলা’
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিলের এই ছবিটিতে পাংশা গ্রামে শত শত মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
রাজধানী ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিলের ছবি এটি৷ বাসে করে রাজধানী ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
ঘর ছেড়ে পরবাসে
১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের ছবি এটি৷ মেহেরপুর থেকে ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন এই শরণার্থীরা৷
ছবি: AP/picture alliance
রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনা
তখন ভারতে হামলা চালিয়েছে দিশাহারা পাকিস্তান৷ তাই রণাঙ্গনে সরাসরি নেমে পড়ে ভারতীয় সেনা৷ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের এই ছবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনাদের৷
ছবি: AP/picture alliance
যশোর রোডে ভারতীয় সেনা
ছবিটি ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের৷ যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সেনারা৷
ছবি: AP/picture alliance
জনসমাবেশ
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ বিজয়ের মাত্র পাঁচ দিন আগে একটি জনসমাবেশে শ্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ পেছনে সিটি হলে ছাদের উপর টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP/picture alliance
বিদেশিদের দেশে ফেরা
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ ঢাকায় পৌঁছেছে ব্রিটিশ বিমান৷ বিদেশিদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ৬ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির সময় বিদেশিরা এই বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন৷
ছবি: AP/picture alliance
ভারতীয় সেনাদের স্বাগত
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক, বগুড়ার দিকে রওনা হওয়ার পথে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী৷
ছবি: AP/picture alliance
আত্মসমর্পণ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন৷ পাশে আছেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা৷ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপ-সেনাপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার৷
ছবি: AP/picture alliance
রাজাকারের শাস্তি
ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকায় তোলা৷ মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা যাওয়ার আগে তিন রাজাকারসহ উপস্থিত সবাই আল্লাহ’র কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করছেন (নীচে বসা তিন রাজাকার)৷ পাঁচ হাজার মানুষের সামনে রাজাকারদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Horst Faas/AP/picture alliance
বিহারি ক্যাম্প
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতের বিহার থেকে উর্দুভাষী মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন৷ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে অনেকে মারাও যান৷ এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে তোলা৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ছবি এটি৷ পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন৷ ঢাকায় পৌঁছানোর পর লাখো মানুষ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে সংবর্ধনা জানায়৷ ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন তিনি৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
স্বাধীনতার পর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমান
এই ছবিটি ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির৷ কলকাতা বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে৷
ছবি: AP/picture alliance
17 ছবি1 | 17
এই সেশনের শেষ বক্তা তৌহীদ রেজা নূর আলোচনা করেন বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে৷ দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই স্বীকৃতির নানা চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোকপাতের পর তিনি সেশনের সভাপতি অধ্যাপক জোন্সের মাধ্যমে আইএজিএস-এর প্রতি বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করার দাবি তুলে ধরেন৷ সম্মেলনের শেষদিন নবগঠিত নির্বাহী পরিষদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএজিএস-এর সদস্য এবং বাংলাদেশ জেনোসাইডের শিকার পরিবারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে ওই জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিয়ে রেজ্যুলিউশন ঘোষণা দেবার প্রস্তাব করেন তৌহীদ নূর, সভার কার্যবিবরণীতে নথিভুক্ত হয়৷
এই প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের জেনোসাইড স্কলারদের প্ল্যাটফর্ম আইএজিএস-এর দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেবার প্রক্রিয়াটি শুরু হলো৷
বাংলাদেশে জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিমূলক রেজ্যুলিউশন প্রস্তাবের প্রতি খ্যাতিমান জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যান্টন, অধ্যাপক হেলেন জারভিস এবং অধ্যাপক এডাম জোন্স পূর্ণ সমর্থন জানান৷
সভায় এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক৷