গত দুই দফার থেকেও বেশি সহিংসতা হলো তৃতীয় দফায়। প্রচুর প্রার্থী আক্রান্ত হলেন। এদিন সকালে খানাকুলে তৃণমূল প্রার্থী নাজবুল করিমকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটানো হলো। আবার দুপুরে তিনি একটি বুথে গেলে সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। দুইটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
উলুবেড়িুয়ায় তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি আক্রান্ত হলেন। তার রক্ষীর মাথা ফাটল। আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডল খাঁকে বাঁশ দিয়ে মারা হলো। তার গাড়ি ভাঙার চেষ্টা হলো। তাকে তাড়া করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি ধানখেতের মধ্যে নেমে যান। ফলতায় আক্রান্ত হয়েছেন এক বিজেপি প্রার্থী। গত দুই পর্বে এতজন প্রার্থী আক্রান্ত হননি।
আগামী ১০ তারিখ থেকে উত্তরবঙ্গে ভোট শুরু হবে। লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা আসনে বিজেপি বেশ ভালো ফল করেছিল। এবারও কি তারা তা পারবে? কী হতে পারে তৃণমূলের ফলাফল?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWপাহাড়ের ভোটে এবার সকলের নজর বিমল গুরুংয়ের দিকে। সাড়ে তিন বছর পালিয়ে থাকার পরে আবার তিনি পাহাড়ে ফিরেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতাকে সমর্থন করছে তৃণমূল। এর আগে গুরুংয়ের সাহায্যে পাহাড়ে জয় পেয়েছিল বিজেপি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWগুরুংকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমানে ফেলেছেন বিনয় তামাং। গুরুং পালিয়ে যাওয়ার পরে বিনয়ের ক্ষমতা বাড়ে পাহাড়ে। এক সময় গুরুংয়ের সতীর্থ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা(বিনয়) তৈরি করেছেন দার্জিলিংয়ে। বিনয়কেও সমর্থন করছে তৃণমূল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWগোটা পশ্চিমবঙ্গে যখন বামেদের ভোট তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তখন শিলিগুড়িতে বাম দূর্গ ধরে রেখেছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি শিলিগুড়ির মেয়রও ছিলেন। এবারেও কি নিজের জমি বাঁচাতে পারবেন তিনি?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। কিন্তু গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গে বিজেপির দ্রুত উত্থানে তিনিও এখন আর খুব নিশ্চিন্তে নেই। গৌতম দেব কি জিততে পারবেন এবারের নির্বাচনে?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক সময় তৃণমূলে ছিলেন কোচবিহারের নেতা নিশীথ প্রামাণিক। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। বছরকয়েক আগে তৃণমূল তাকে বহিষ্কার করে। নিশীথ পালিয়ে যান। বলিউডের সিনেমার মতো সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ফিরে আসেন লোকসভা ভোটের মুখে। বিজেপি তাকে কোচবিহারে প্রার্থী ঘোষণা করে। সেই নিশীথ এখন সাংসদ। বিধানসভা ভোটে তিনি দলকে জেতাতে পারবেন?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক সময় কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী এখন তৃণমূলে। মালদহের এই নেতার বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ যেমন আছে, তেমন মানুষের ভালোবাসাও আছে। অসাধ্য সাধন আগেও করেছেন কৃষ্ণেন্দু। কঠিন সময়ে মালদহের ইংরেজবাজারের মতো কঠিন আসনে জিততে পারলে কৃষ্ণেন্দুর ক্ষমতা দলের ভিতর অনেকটা বেড়ে যাবে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWটেকনিক্যালি অধীর চৌধুরী উত্তরবঙ্গের নেতা নন। উত্তরবঙ্গে এবং দক্ষিণবঙ্গের সীমানায় মুর্শিদাবাদ। অধীর সেখানকার বাদশাহ। কিন্তু লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা এখন গোটা পশ্চিমবঙ্গেই কংগ্রেসের হাল ধরেছেন। উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের ফলাফলও খানিকটা নির্ভর করছে তার উপর।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWউত্তরবঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকি খুব বেশি আসন দিতে পারেননি। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে, তা খানিকটা হলেও নির্ভর করছে আব্বাস সিদ্দিকি এবং তার দলের কর্মীদের উপর। উত্তরবঙ্গের কোনো কোনো এলাকায় তার যথেষ্ট প্রভাব আছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW শুধু প্রার্থীদের আক্রমণই নয়, দুবরাজপুরে পুকুর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বিজেপি-র দাবি, ওই ব্যক্তি তাদের কর্মী। আবার ওখানেই তৃণমূলের এক নেতা ভোট দিয়ে ফিরে আসছিলেন। তখন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। তিনি মারা যান। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা তাকে ধাক্কা মারেন। দুবরাজপুরে এই দুই ঘটনা নিয়ে প্রবল গণ্ডগোল হয়েছে। গোলমাল থামাতে গিয়ে পুলিশের ওসি আহত হয়েছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গুলিতে দুই তৃণমূল প্রার্থী আহত। অভিযোগ আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের বিরুদ্ধে। আবার বাগনানে বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রীর বাবাকে কোপ মারা হয়। অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। ক্যানিংয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকরা।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোট নন্দীগ্রামে। নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে এলাকা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWকড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নন্দীগ্রাম। চণ্ডীপুর থেকে সমস্ত রাস্তা সিল করে দেওয়া হয়েছে। বাইরের কোনো মানুষকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DWতৃণমূল এবং বিজেপি-- দুই শিবিরেই চরম উত্তেজনা। ভোটের আগের রাতেও বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোল হয়েছে। আধা সামরিক বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ করেছে।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DWভাঙাবেড়া সেতুর নীচে এখানেই গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। এই মাঠেই প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেকে। এখন সেখানে মাছের ভেরি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWঅধিকারী পাড়ার রাস্তায় তৈরি হয়েছে শহিদ বেদী। এবারের নির্বাচনে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্ক তুলে দিয়েছেন। গুলি চালনার পিছনে শুভেন্দু অধিকারীদের চক্রান্ত ছিল বলে অভিযোগ করছেন তিনি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএকসময় নন্দীগ্রামে মমতার লেফটন্যান্ট ছিলেন শুভেন্দু। এখন তিনি বিজেপিতে। মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWমুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য বাম শিবিরে অক্সিজেন দিয়েছে। নন্দীগ্রামে বাম প্রার্থী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মেরুকরণের নন্দীগ্রাম তাঁকে কি ভোট দেবে?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWনন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে মরিয়া বিজেপি। অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে অনেকে নেতাই এখানে প্রচার করেছেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWনন্দীগ্রাম জিততে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে হিন্দুত্বের তাস খেলেছেন। তিনি জনসভায় চণ্ডীপাঠ করেছেন। মন্দিরে মন্দিরে গিয়েছেন। এমনকী নিজের গোত্র কী তাও জানিয়েছেন।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DWএবারের ভোটে সকলের নজর নন্দীগ্রামের দিকে। মনে করা হচ্ছে, নন্দীগ্রামই ঠিক করে দেবে কী ফলাফল হতে চলেছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW তৃতীয় দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া ও হুগলির ৩১টি আসনে ভোট ছিল। এই জেলাগুলি তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। বিজেপি এই সব জেলায় এবার ভালো ফল করতে চায়।
তবে তৃতীয় দফার ভোট শুরুর আগে চাঞ্জল্য দেখা দেয় তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট উদ্ধারকে কেন্দ্র করে। সোমবার মাঝরাতে উলুবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষের বাড়িতে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মেশিন রেখে যান সেক্টর অফিসার তপন সরকার। খবর রটে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা ওই নেতার বাড়ি ঘিরে রাখে। তপন সরকার জানিয়েছেন, তার ফিরতে ফিরতে রাত হয়েছিল। তিনি প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চান কী করবেন? তিনি বলেন, রাস্তায় রাত কাটাতে। তিনি তখন একজন স্থানীয় মানুষের বাড়িতে মেশিন রেখে চলে যান। সেটা যে তৃণমূল নেতার বাড়ি তা জানতেন না। এই অফিসার সহ চারজনকে সাসপেন্ড করেছে নির্বাচন কমিশন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)