টেবিলে বসে ছবি আঁকা অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ৷ কিন্তু একাধিক শহরে বিশাল সারফেসের উপর কোনো ভুলত্রুটি ছাড়াই নিখুঁত শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা বিশাল চ্যালেঞ্জ বটে৷ এই জার্মান শিল্পী সেই অসাধ্যসাধন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ম্যার্সেবুর্গ শহরের প্রাসাদে শিল্পী হিসেবে অঁতোয়ানেৎ বিশাল এক শিল্পকর্মের কাজ শেষ করছেন৷ রং-পেন্সিল দিয়ে তিনি প্রায় একশো বর্গমিটার জুড়ে সেটি এঁকেছেন৷ নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘একই ধরনের বিশাল এই সারফেসগুলির জন্য অনেক পেন্সিলের প্রয়োজন হয়৷ শুধু একটি কাগজের জন্য আমি ৩৬টি নীল পেন্সিল ব্যবহার করেছি৷ কোনো স্কেচ বা খসড়া করতে পারি নি৷ বিশাল আয়তন এর অন্যতম কারণ৷ এত বড় জায়গার জন্য ছোট খসড়া মাথায় রাখা কঠিন৷''
তিন বছর ধরে তৈরি ‘ইউরোপাস অল্টার' অর্থাৎ গ্রিক পুরাণের চরিত্র হিসেবে ইউরোপার বেদি নামের শিল্পকর্মের জন্য তার প্রায় দেড় হাজার পেন্সিলের প্রয়োজন হয়েছে৷ মোট ১৩টি প্যানেলের মধ্যে শেষ চারটি ম্যার্সেবুর্গ শহরে সৃষ্টি হয়েছে৷ বাকিগুলি তিনি কাছের গ্যোরলিৎস শহর এবং ভিয়েনা ও প্রাগে এঁকেছেন৷ অঁতোয়ানেৎ বলেন, ‘‘তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে ইউরোপ আমার চর্চার বিষয় হয়ে আছে৷ কারণ আমার মতে গোটা বিশ্বে এই মহাদেশের এক অসামান্য গুরুত্ব রয়েছে৷ বাকি বিশ্বের মতো এখানেও বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ সে কারণেও নিজস্ব পরিচয়, নিজেদের সাধারণ ঐতিহ্য, পারস্পরিক সংযোগ এবং ভবিষ্যতের দিশা বর্ণনা করা অত্যন্ত জরুরি৷''
ইউরোপের রূপকথা জগতের চরিত্রগুলি সেখানে বিষাদ ও মুক্তি, নেতিবাচক মনোভাব ও ভালবাসার কাহিনি ফুটিয়ে তুলছে৷ গ্রিক পূরাণে ইউরোপাকে নারী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে৷ অঁতোয়ানেৎ সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে অসংখ্য নারীর প্রতিকৃতি এঁকেছেন৷
অঁতোয়ানেৎ তথাকথিত লাইপসিষ ঘরানার শিল্পী৷ তিনি সেই ধারার অন্যতম সেরা শিল্পী ব্যার্নহার্ড হাইসিশের খাস ছাত্রী ছিলেন৷ তবে অভিজ্ঞ শিল্পী হিসেবেও বিশাল এই প্রকল্প তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ অঁতোয়ানেৎ মনে করেন, ‘‘সত্যি ছবির মাঝে হাত রেখে আঁকা যায় না৷ পুরোটা সময় জুড়ে হাত বাড়িয়ে কাজ করতে হয়৷ ফলে টেবিলে বসে আরাম করে হাত রেখে আঁকার তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়৷''
ম্যার্সেবুর্গ শহরে গোটা বেদিটি প্রথমবার খাড়া করা হয়েছে৷ ২০ মিটার দীর্ঘ ও পাঁচ মিটার প্রস্থের সেই শিল্পকর্ম সঠিক স্থানে রাখা মোটেই সহজ কাজ ছিল না৷ পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সেটিকে এভাবেই রাখা হবে৷
দেড় হাজার পেন্সিলে আঁকা গ্রীক পুরাণের চরিত্র
04:18
প্রথমে মুক্ত গ্যালারি হিসেবে প্রদর্শনীর কথা ভাবা হয়েছিল৷ কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আগ্রহী দর্শকরা আপাতত শুধু জানালা দিয়ে শিল্পকর্মটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ অসাধারণ, খুঁটিনাটি বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে৷ সবাই যে তাকে সরাসরি কাজ করতে দেখতে পেয়েছেন, সেই বিষয়টি শিল্পীর জন্য সত্যি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা বটে৷ অঁতোয়ানেৎ বলেন, ‘‘প্রথম দর্শকরা এখানে আসার পর সত্যি বলতে কি আমি বেশ বিরক্ত হয়েছিলাম৷ কাজে আবার ভালোভাবে মনোযোগ দিতে আমার প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল৷ তারপর আর পিছনে কী হচ্ছে, তা বুঝতেই পারিনি৷''
সপ্তাহে সাত দিন ধরে দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের ধকল তাঁর জন্য সত্যি কঠিন ছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘কোনো ভুলত্রুটির অবকাশ নেই, কারণ বিশাল এই সারফেসে কিছুই মোছার উপায় নেই৷ এমনটা করলে কাগজ কুঁচকে যাবে, নষ্ট হবে৷ দর্শকরা অনেক বিষয় স্পষ্ট চিনতে পারবেন না৷ এখানে কোনো ত্রুটি নেই৷''
‘ইউরোপাস অল্টার' শিল্পকর্মের জন্য অঁতোয়ানেৎ এখন চূড়ান্ত জায়গা খুঁজছেন৷
আনা আকার/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷