দেশে বলে মরণকূপ, ইংল্যান্ডে ওয়াল অফ ডেথ৷ তেলের পিপের আকৃতির কাঠের কুয়োটিতে মোটরসাইকেলে চড়ে চক্কর দেবে এক বা একাধিক আরোহী৷ মেলা বা সার্কাসের পুরনো খেল, ইউরোপেও আজ পর্যন্ত যার চল৷
বিজ্ঞাপন
কুয়ায় মোটর সাইকেলে খেলা দেখান তিনি ও তাঁর ছেলে
04:30
দেশের মেলা কিংবা সার্কাসেও হয়ত দেখে থাকতে পারেন৷ সেখানে এর নাম মরণকূপ৷ ইংরেজিতে ওয়াল অফ ডেথ, অর্থাৎ মরণের দেয়াল৷ কুয়োর আকৃতির সেই দেয়াল বেয়ে কাত হয়ে ঘুরছে মোটরসাইকেল৷
ডেভ সিমুর পরিচিত ‘ডিনামাইট ডেভ' নামে৷ তিনি আর তাঁর ছেলে ডিউক এই মরণকূপকেই তাদের পেশা করেছেন, নাম রেখেছেন ডেমন ড্রোম, অর্থাৎ শয়তানের ঘাঁটি৷ খাড়া দেয়ালের গায়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালালে শরীরের উপর মাধ্যাকর্ষণের পাঁচগুণ বেশি চাপ পড়ে৷ ডেভ বলেন, ‘‘দেখতে সোজা মনে হলেও, কাজটা সোজা নয়৷ জোরে চালালে প্রথমেই বোঝা যায়, রক্তটা মাথার দিক থেকে পায়ে গিয়ে জমা হচ্ছে৷ আরো বেশি জোরে চালালে চোখে সর্ষেফুল দেখতে হয়৷'' ডিউক সিমুর যোগ করলেন, ‘‘টানেল ভিশন হয়, যেন সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে দেখছি৷ যেন জুম করা হচ্ছে৷ ভালো ব্যাপার নয়৷ আবার বড্ড স্লো চালালে পড়ে যাবার ভয় থাকে৷’’
ভীষণ অদ্ভুত পাঁচটি খেলা
একটি খেলায় প্রতিযোগীরা শুধু মুখ ভ্যাংচান৷ আরেকটাতে বেশি বেশি ঝাল খেয়ে অন্যদের হারানোর চেষ্টা করেন৷ জেনে নিন এমন কয়েকটি খেলার কথা যেগুলোতে জয়-পরাজয় নয়, নির্মল আনন্দ লাভই আসল কথা৷
ছবি: Getty Images/J. Li
ক্যাননবলিং
পানিতে আনন্দ করাই এই খেলার মূল উদ্দেশ্য৷ সুইমিং পুলে যত অদ্ভুতভাবে সম্ভব লাফিয়ে পড়া, পানি ছিঁটানো – এ সবেরই প্রতিযোগিতা হয় ক্যাননবলিংয়ে৷ খেলাটি অবশ্য নতুন নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে নাকি একশ বছর আগেও হতো এ খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাদায় সাঁতরানো
এ খেলার ইংরেজি নাম ‘বগ স্নর্কেলিং’৷ লম্বা কূপের মতো জায়গা হলেই শুরু করা যায় এ খেলা৷ কূপে খুব কাদা থাকতে হবে৷ সেই কাদায় মাথায় স্নর্কেল আর পায়ে ফ্লিপার লাগিয়ে শুরু করতে হবে সাঁতরে সেই কূপ পার হওয়ার চেষ্টা৷ ওয়েলসে ১৯৮৫ সাল থেকে চলছে এ খেলা৷ সেখানে বরফশীতল কাদাজলে অনেক আমুদে, সাহসী মানুষ এ খেলায় অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঝাল খান আর হাসুন
যত খুশি ঝাল খাওয়ারও একটা প্রতিযোগিতা আছে৷ আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই হয় এমন প্রতিযোগিতা৷ জার্মানির বার্লিনে হয় চিলি সস খাওয়ার প্রতিযোগিতা৷ ঝাল খেতে খেতে অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে৷ প্রতিযোগীদের উৎসাহে তারপরও ভাটা পড়ে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চেসবক্সিং
১৩ বছর আগে নেহায়েত মজা করতেই দাবার সঙ্গে বক্সিং মিলিয়ে ‘চেসবক্সিং’ নামের মজার এক খেলা শুরু করেছিলেন হল্যান্ডের ইয়েপ রুবিং৷ ৬ রাউন্ড দাবা আর ৫ রাউন্ড বক্সিং, দুটো মিলে ‘চেসবক্সিং’৷ দাবায় একবার কিস্তিমাত করতে পারলে কিংবা বক্সিংয়ে প্রতিপক্ষকে একবার নক আউট করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হবে খেলা৷ খেলাটি এখন অনেক দেশেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stephanie Pilick
ভ্যাংচানো
প্রাচীন কালে ইংল্যান্ডের এগ্রেমন্ট শহরে নাকি বোকা লোকদের মাথায় ঘোড়ার লাগাম লাগিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হতো৷ লোকটি রেগেমেগে নানা ধরণের মুখভঙ্গি করত আর সবাই তা দেখে হাসতো৷ ওখান থেকেই নাকি খেলাটির উৎপত্তি৷ আবার এ-ও কথিত আছে যে,টক আপেল খেতে গিয়ে অভিব্যক্তিতে যে পরিবর্তন আসে, তা দেখেই নাকি একদিন কারো মাথায় এসেছিল এমন এক খেলার আইডিয়া৷ এগ্রেমন্টে মুখ ভ্যাংচানোর খেলাটি চলছে প্রায় ৮০০ বছর ধরে৷
ছবি: Getty Images/J. Li
5 ছবি1 | 5
সিমুর পরিবার প্রতিবছর গোটা ইউরোপ জুড়ে সফর করেন৷ এবার তারা দক্ষিণ ইংল্যান্ডের গুডউড রিভাইভাল শো নামের ওল্ডটাইমার ফেস্টিভালে তাঁবু গেড়েছেন৷ মরণকূপ খেলাটির জন্ম ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে৷ গোড়ায় হতো সাইকেলে চড়ে! গত শতাব্দীর বিশের দশকে সাইকেলের বদলে মোটর সাইকেল ব্যবহার শুরু হয়৷ তারপর ওয়াল অফ ডেথ খেলাটা ক্রমেই আরো বেশি পিলে-চমকানো হতে থাকে৷ ত্রিশের দশকে ইউরোপে প্রায় শ'খানেক ওয়াল অফ ডেথ মানুষের মনোরঞ্জন করছিল৷
দন্তহীন সিংহ?
ডেভ সিমুর জানালেন, ‘‘ওয়াল অফ ডেথ-এর সংখ্যা বাড়ে, কাজেই প্রতিযোগীদের চেয়ে আরো ভালো শো দেখাতে হবে, আরো বিপজ্জনক সব ক্যায়দা-কেরামতি৷ এমনকি ওরা সিংহ আনাতে শুরু করে৷ তাদের বসিয়ে রাখার জন্য আফিম দেওয়া হতো কিনা কে জানে৷ অধিকাংশ সিংহের দাঁত ছিল না বলেই আমার ধারণা৷''
১৯২৭ সালে তৈরি ডেমন ড্রোম ২০০০ সালে বিক্রি করা হচ্ছিল৷ ডেভ সিমুর শুধু মোটরসাইকেলগুলো কিনতে চেয়েছিলেন, মরণকূপটি সাথে ফ্রি-তে পান৷ ডেভ আর তাঁর ছেলে কিন্তু ইতিমধ্যে সেই মরণকূপের ফ্যান হয়ে পড়েছেন৷ ডিউক সিমুর বললেন, ‘‘১৪ বছর বয়স থেকে এই করছি৷ মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে লোকের দিকে তাকাতে পারি, হাসতে পারি৷'' ডেভ সিমুর যোগ করলেন, ‘‘মোটরসাইকেল চালাতে পারা এক কথা৷ কিন্তু চালাতে চালাতে হাসা, দর্শকদের সাথে কথা বলা, রীতিমতো পারফরমেন্স দেওয়া আরেক কথা৷''
ক্লাইম্যাক্স হলো, ডেভ সিমুর তাঁর কন্যাকে স্টিয়ারিং-এর ওপর বসিয়ে মরণকূপে চক্কর দেবেন৷ রোমহর্ষক খেলা দেখার পর দর্শকরা মরণকূপে পয়সা ছুঁড়ে দেয়, দুর্ঘটনা হলে চিকিৎসার খরচ, কেননা কোনো বীমা কোম্পানি সিমুরদের ইনসিওর করবে না৷ ডেভ আর ডিউক ইতিমধ্যেই একাধিকবার হাত-পা ভেঙেছেন৷ কিন্তু সিমুর পরিবার এই বিপজ্জনক পেশা ছেড়ে দেবার কথা ভাবেন না৷ একটানা নিজেদের কোরিওগ্রাফি বাড়িয়ে চলেছেন তারা৷ স্বহস্তে তৈরি একটি রেসিং কার নিয়ে মরণকূপে চক্কর দেবার পরিকল্পনা আছে, তাই কূপের কাঠের দেয়ালগুলোকে আরো শক্ত করা হয়েছে৷
প্রায় নব্বই বছরের পুরনো ডেমন ড্রোমে ডেভ আর ডিউক সিমুর আজও মোটরসাইকেলে চড়ে চক্কর কেটে চলেছেন...
প্রতিবেদন: গেরহার্ড সনলাইটনার/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
যে সাতটি খেলা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
দাবা থেকে শুরু করে স্টারক্রাফট, এখানে থাকছে সাতটি কৌশলের খেলা যা ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো৷ যারা ব্রেনের ব্যায়ামে আগ্রহী, তারা এগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
দাবা: খেলার রাজা
দাবা খেলার নামটা মূলত এসেছে ফার্সি শব্দ ‘শাহ’ থেকে, যার অর্থ রাজা৷ দাবার বোর্ড তৈরি হয়েছে ভারতে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে৷ দু’জন খেলায়াড় একে অপরের বিপরীতে এই খেলায় অংশ নিতে পারেন৷ খেলায় জিততে হলে প্রতিপক্ষের রাজাকে এমনভাবে ‘চেক’ দিতে হয়, যাতে তার পালানোর কোনো উপায় না থাকে৷ এই ‘চেক’ দেয়াকে বলা হয় ‘কিস্তি মাত’৷
ছবি: MEHR
গো: এশিয়ায় তৈরি
‘গো’ খেলাটি সৃষ্টি হয়েছে চীনে৷ তবে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া এবং জাপান৷ কালো এবং সাদা পাথর দিয়ে একটি বোর্ডের উপর খেলাটি খেলতে হয় যেখানে ১৯টি অনুভূমিক এবং ১৯টি উল্লম্ব রেখা টানা থাকে৷ বোর্ডের অধিকাংশ অংশ যে দখলে রাখতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: Imago/Xinhua
শোগি: জাপানের দাবা
দাবার জাপানি সংস্করণ শোগিতে বোর্ডটি নয়টি মাঠে ভাগ করা থাকে৷ তবে ছোট বা বড় বোর্ডও পাওয়া যায়৷ দাবার সঙ্গে এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গুটিগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই৷ অর্থাৎ উভয়েই সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে উদ্দেশ্য একই, রাজাকে ‘চেক’ দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Sasahara
চেকারস: লাফান এবং চুরি করুন
চেকারবোর্ড দেখতে দাবার বোর্ডের মতো৷ তবে খেলার নিয়ম পুরোপুরি ভিন্ন৷ এখানে একটি গুটি আড়াআড়িভাবে একঘর পর্যন্ত সরানো যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রতিপক্ষের একটি গুটিকে ডিঙাতে পারে৷ আর ডিঙানো গুটিটি যে ডিঙিয়েছে তার হয়ে যাবে৷ এভাবে প্রতিপক্ষের সবগুটি নিতে পারলে জয় আসবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Bouys
টিক-টেক-টো: সার্কেল অথবা স্কয়ার?
খেলাটার বাংলা নাম ‘কাটা-কুটি’৷ দীর্ঘ ভ্রমণের পথে দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসা এই খেলাই সম্ভবত সেরা৷ এর জন্য আপনার শুধু একটি পেন্সিল এবং এক টুকরো কাগজ দরকার৷ কাগজের উপরে আঁকা নয়টি ঘরের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড় ক্রস বা সার্কেল আঁকেন৷ যে খেলোয়াড়টি আগে একইরকম সংকেত দিয়ে অনুভূমিক, উল্লম্ব কিংবা আড়াআড়িভাবে তিনটি ঘর ভরতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: imago/J. Tack
সিভিলাইজেশন: বোর্ড থেকে স্ক্রিনে
শুরুতে বোর্ড গেম হিসেবে চালু হওয়া ‘সিভিলাইজেশন’-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ খেলার ধারণা জটিল ছিল: একটি সিভিলাইজেশনকে সেই লৌহযুগের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টিকে থাকতে হবে৷ সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে এটি খেলতে পারে৷ আর একেকটি গেমের দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ১৯৯১ সালে ‘সিভিলাইজেশন’ কম্পিউটার গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
ছবি: 2007 Free Software Foundation, Inc.
স্টারক্রাফট: অবসরের খেলা
কারো কারো কাছে এটা হয়ত নিখাদ বিনোদন, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্টারক্রাফট’ হচ্ছে অবসর সময়ের জন্য উপযোগী জাতীয় খেলা৷ ‘রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি’ খেলাটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে৷ আর তখন থেকেই এটি অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম হিসেবে বাজার দখল করে আছে৷