তদন্ত বিশ বাঁও জলে। অথচ একের পর এক অভিযুক্তের মিলছে জামিন। বিভিন্ন মামলায় ইডি বা সিবিআইয়ের তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে, তা স্পষ্ট নয়।
বিজ্ঞাপন
নিয়োগ দুর্নীতি হোক বা গরু পাচার মামলা, এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কম সরগরম হয়নি। আদালতের নির্দেশে একের পর এক মামলায় তদন্তভার হাতে নিয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু সারদা বা নারদ মামলার মতো এই তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শেষ পর্যন্ত কি আদৌ অপরাধের উপর পর্দা সরবে? প্রশ্ন সব মহলের।
একাধিক মামলায় জামিন
শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জন জামিনে মুক্ত হয়েছেন এই মামলায়। সিবিআই ও ইডি এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। প্রায় দু'বছর চার মাস পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর কারণে তিনি এর আগে প্যারোলে সাময়িক মুক্তি পেয়েছিলেন। প্যারোলে থাকাকালীনই তার জামিন হয়।
অন্যদিকে, গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। তিহার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অনুব্রত কালীঘাটের তৃণমূলের বৈঠকে বীরভূমের রাশ আবার নিজের হাতে নিয়েছেন।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ইডির মামলায় ছাড়া পেলেও সিবিআই নিজেদের হেফাজতে রেখে দিয়েছে এদের দুজনকে।
পার্থের বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে আরো টাকা উদ্ধার
বুধবার দিনভর অর্পিতার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার আরো টাকা এবং সোনা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসএসসি দুর্নীতি এবং অর্পিতা
গত শনিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে ২০ কোটিরও বেশি টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিল ইডি। বুধবার তার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলঘরিয়ার বাড়ি
উত্তর কলকাতা শহরতলির বেলঘরিয়ায় এই আবাসনে অর্পিতার আরো দুইটি ফ্ল্যাট আছে। বুধবার তারই একটিতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা এবং গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী কী উদ্ধার
দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ইডি শুধুমাত্র এই ফ্ল্যাটটি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। তার সঙ্গে ছিল চার কোটি ৩১ লাখ টাকা বাজার মূল্যের সোনার গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি
বাড়িটিতে বুধবার ১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় ইডি। পরে ফ্ল্যাটটিতে নোটিস লাগিয়ে সিল করে দেওয়া হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গোনার যন্ত্র
টাকা গোনার জন্য ব্যাংক থেকে চারটি বিশেষ যন্ত্র নিয়ে আসা হয় রাতের দিকে। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই সারা রাত ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা নেওয়ার ট্রাঙ্ক
টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রাকে ২০টি ট্রাঙ্ক নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেই ট্রাঙ্কে টাকা বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান
বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান চেয়ে পাঠায় ইডি। তারা এসে ফ্ল্যাটটি ঘিরে ফেলে। সকাল পর্যন্ত তারা এলাকায় পাহারায় ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির অফিসাররা
বিকেলের পর ইডির উচ্চপদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের উপস্থিতিতেই টাকা গোনার কাজ হয়েছে। আবাসনের এক আবাসিককেও সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অন্য ফ্ল্যাটটি
ওই একই আবাসনে আরো একটি ফ্ল্যাট আছে অর্পিতার। সেখানে এখনো তল্লাশি চালানো হয়নি। ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়ে গেছে ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অর্পিতার মা
গোটা ঘটনায় হতভম্ব অর্পিতার মা। বলেছেন, মেয়ে কী করছে, তার কোনো খবর তার কাছে ছিল না। তিনি ভাবতেও পারচেন না এমন সব ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মানিককে জেরা
বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ১৪ ঘণ্টা টানা জেরা করছে ইডি। শুক্রবার তাকে ফের যেতে বলা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কুণাল ঘোষের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, যদি তার কথা দলের পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করা হোক। কিন্তু তিনি এই দুর্নীতি মেনে নেবেন না।
ছবি: Privat
12 ছবি1 | 12
পুজোর আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, মানিকের স্ত্রী-ছেলে, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।
অন্যদিকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন রোখার জন্য এবার নতুন নতুন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে নেমেছে সিবিআই। এর জন্যই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে সোমবার গ্রেফতার করেছে তারা। প্রশ্ন উঠছে, এতজন অভিযুক্তের জামিনের পর সাধারণ মানুষকে ভরসা করতে পারবেন তদন্তের উপর?
বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা বিমলশঙ্কর নন্দ ডিডাব্লিউকে বলেন, "প্রথমত এই তদন্তগুলো আদালত মনিটর করছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা সরকারের কোন ভূমিকা নেই। আদালতের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে, তাই কোন গতিতে তদন্ত এগোচ্ছে সেটা আদালতেরই দেখার কথা। দ্বিতীয়ত, যদি দেখা যায় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আর তদন্তকে কোনোভাবে প্রভাবিত করতে পারবেন না, তখনই তারা জামিন পান। তাই সিবিআই কিছু করছে না এটা বলা যায় না। জনতার সামনে সিবিআই তদন্ত করে না। বিষয়গুলো তারা আদালতকে জানায়।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি প্রভাবশালী, বাইরে বেরোলে তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন, সেই ব্যক্তির জামিন সাধারণভাবে চায় না তদন্তকারী সংস্থা। আদালতে গিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে হয়তো তাই আটকানো হচ্ছে। বাকিদের ক্ষেত্রে তদন্তের অংশটা শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই তারা জামিন পেয়েছেন।"
তৃণমূল মুখপাত্র তথা আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা যায় না। জামিন পাওয়াটাই স্বাভাবিক, জামিন না পাওয়াটা অস্বাভাবিক। এতদিন কাস্টডিতে থাকার পরে তদন্তকারী সংস্থা যদি চার্জশিট জমা দিতে না পারে, তাহলে যারা কাস্টডিতে আছেন তারা জামিন পেয়েই যাবেন। যার ফলে মণীশ শিশোদিয়া, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন জামিন পেয়েছেন। একজন দুই আড়াই বছর জেলে রয়েছে তাও ট্রায়াল শুরু করা গেল না! তদন্তের অগ্রগতি না হলে অভিযুক্ত জামিন কেন পাবেন না? সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় মানুষের স্বাধীনতার অধিকার বলা হয়েছে।"
দুই দলের মধ্যে তলায় তলায় আঁতাত আছে: শুভময় মৈত্র
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমাদের দেশের আইনি এবং পুলিশি ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা আছে। আমাদের দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা কম ও বিষয়গুলি খুবই জটিল, তাই দীর্ঘসূত্রতা হয়। আমাদের দেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে যখন তখন কাউকে অপরাধী বলে শাস্তি দেওয়া যায় না। আইনি ব্যবস্থার সেই দিক থেকে শাস্তি পাওয়া বা না পাওয়া অনেকটা সময়সাপেক্ষ। তাই জামিন পাওয়াও খুব স্বাভাবিক। আবার রাজনৈতিকভাবে দেখতে গেলে বিজেপি তৃণমূলকে বিব্রত করতে চায় না। সেখান থেকেই বিরোধীদলগুলি অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস সেটিং তত্ত্বের কথা আনছে।
অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে তলায় তলায় আঁতাত আছে। সেটিং তত্ত্বটাও যে একেবারে নেই সেটাও বাইরে থেকে বলা যাবে না। সেই কারণে তদন্তের গতি ঠিকভাবে এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে।"
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "পশ্চিমবাংলায় দুর্নীতি যে রমরমা সে নিয়ে সন্দেহ নেই। সিবিআই তদন্ত যে গতি পাচ্ছে না, এটাতে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের ভরসা কমছে। অর্থাৎ আইন বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের ভরসা কমছে। চোখের সামনে যাদের টাকা নিতে দেখেছে, নারদা মামলায় তাদেরও এখনো কিছু হলো না। যার বাড়ি থেকে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হল, সেও জামিন পেয়ে গেল। অনুব্রত, অর্পিতা, মানিক, জীবনকৃষ্ণ যেভাবে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, তাতে মানুষ বুঝতে পারছে, যেভাবে তদন্ত হওয়া উচিত, সেটা হচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের ভরসা কমছে। এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে সিবিআইয়েরমাস্টারমাইন্ড কোন না কোনও ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, মমতা ব্যানার্জি ও তার বাহিনীকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করা যেন না হয়। এতে তদন্তের গতি এবং তদন্তের সত্যতা সম্পর্কে মানুষ অস্বস্তিতে আছে। অপরাধের গোড়া চিহ্নিত করে তদন্ত এগোচ্ছে না।"
সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "সাধারণভাবে আমাদের দেশে ধনী, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট অপরাধীদের শাস্তি শেষ পর্যন্ত কম হয়। তারা বিচার ব্যবস্থার নানারকম সুযোগ-সুবিধা খুব দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় দোষ প্রমাণ হয় না। তবে জামিন পাওয়াটা নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। যেহেতু আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়, সেহেতু তো আমাদের সন্দেহ হয়, জামিনটাই শেষ পর্যন্ত বিচারের ফল যেন না হয়ে যায়।"
অভিযুক্তর বিরুদ্ধে অপরাধের যে ধারা দেয়া হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সাজার এক তৃতীয়াংশ কেউ জেলে থাকলে জামিন দিতে হবে। আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বিডব্লিউকে বলেন, "চাকরি বিক্রি করে দুর্নীতি করার মত হোয়াইট কালার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুব একটা কঠোর আইন আমাদের দেশে নেই। এটা সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। দ্বিতীয়ত অনেক মামলায় আদালতের দ্বারা স্থগিতাদেশের জন্য তদন্ত শেষ করতে সময় লাগে।"
তার মতে, "এছাড়া শাসকদলের অভিযুক্ত নেতা ও ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালাতে গেলে যে অনুমোদন লাগে, তা রাজ্য সরকার দিচ্ছে না। আবার অভিযুক্তরা আদালতে বলছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় যেখানে শুরু হচ্ছে না, তাহলে তাদের দিনের পর দিন জেলে রাখা কেন? তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে যে উদাসীনতা, অনীহা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে, তার জন্য এরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। তবে জামিন পেয়ে যাওয়া মানেই এরা নির্দোষ হয়ে যাচ্ছেন, এমনটা নয়।"
এসএসসি কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী গ্রেপ্তার, বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসএসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার। তার দাবি, পার্থই টাকা রাখতে বলেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুক্রবার সকাল থেকে জেরা
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা পৌঁছে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। পার্থ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে শুরু হয় জেরা ও তল্লাশি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা
গ্রেপ্তার করার আগে ২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা করে ইডির অফিসাররা। শুধু পার্থের বাড়ি নয়, মোট ২০টি জায়গা তল্লাশি চালান ইডি-র কর্মকর্তারা। প্রায় ৯০ জন ইডি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকেন। উপরের ছবিতে কলকাতার নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার
তল্লাশির সময় অভিনেত্রী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। টাকা অর্পিতার শোয়ার ঘরের আলমারিতে চটের বস্তায় রাখা ছিল। অর্পিতা ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্থই তার কাছে টাকা রেখেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাতভর টাকার হিসাব
ইডি-র অফিসাররা ব্যাংক থেকে দশটি টাকা গোনার মেশিন ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। সারারাত ধরে টাকা গোনা হয়। দেখা যায়, ২২ কোটি টাকা আছে। তাছাড়া ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না ও প্রচুর ডলার পাওয়া যায়। বেশ কিছু নথিপত্রও নিয়ে গেছে ইডি। অর্পিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপরের ছবিতে অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীসের টাকা
আদালতে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতা এসএসসি-তে বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। তিনি অন্যতম চক্রান্তকারী। তার বাড়িই ছিল নিয়োগের আখড়া। সেই নথিপত্র ইডি পেয়েছে। মন্ত্রীর নামের সরকারি খামও পাওয়া গেছে। অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে, টাকাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। তিনি এনিয়ে কিছুই জানেন না। ইডি এখন অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা নিয়েও আলাদা মামলা করতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই অর্পিতা?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাছাড়া তিনি নেল আর্ট করতেন। পার্থর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ফোনে অর্পিতা সারাদিন কথা বলতেন বলে অভিযোগ। তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত। এই পুজোর সঙ্গে পার্থও য়ুক্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন অর্পিতার মা
মেয়ের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার মা মিনতি বলেন, ‘‘বাবা-মা যা চাইবে ছেলেমেয়ে কি সেটাই করবে? সেরকম হলে তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম। ওর কথা খবরে শুনেছি। তবে অর্পিতা এই কাজ করেছে কি না, সেই সত্যাসত্যও বিচার করা হবে।’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থ হাসপাতালে
গ্রেপ্তার করার পর পার্থকে নিজেদের হেফাজতে রাখে ইডি। তারপর আদালতে পার্থ জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তখন আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। এসএসকেএম হাসাপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ইডি অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির দাবি মেনে
ইডি পরে কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, পার্থকে কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু বিচারপতি বলেন, কল্যাণীর এইমসের উপর তার ভরসা নেই। পরে তিনি নির্দেশ দেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তিনিকেতনে পার্থর বাড়ি?
শান্তিনেকতনে ছয়টি বাড়ি পার্থর বলে অভিযোগ উঠেছে। তারমধ্যে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বলেছেন, একটি বাড়িতে পার্থর আসা-যাওয়া ছিল। একটি সাত বিঘের জমিও পার্থর বলে অভিযোগ। তবে সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, তারা খোঁজ না করে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন এসএসসি কেলেঙ্কারি হয়। পরীক্ষা দিয়ে যারা উঁচু স্থান পেয়েছে, তাদের চাকরি না দিয়ে, পয়সা দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম বরিষ্ঠ মন্ত্রী। মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামেশাই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে রাজ্যের নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থকে গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূলের বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ হলে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে এসএসসি চাকুরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন। বিকাশরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া হলো, ''পার্থ হচ্ছেন দাবার ঘুঁটি, ইডির উচিত হরিশ চ্যাটার্জি রোডে তল্লাশি করা। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে।'' তার দাবি, ''ইডি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ধরবে, সেদিন পুরো দুর্নীতি সামনে আসবে।'' সিপিএম কর্মীরা এখন বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Abp Photo/Sudipta Bhowmick
বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসএসসি নিয়ে বিক্ষোভ-মঞ্চে যান। তিনি টুইট করে পার্থ ও অর্পিতা নিয়ে সোচ্চার হন। দিলীপ ঘোষও তাই। কংগ্রেসও এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।