গেল প্রায় আট মাস ধরে কোনো হদিস মিলছে না সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত সৌদের৷ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সময় তাঁকে আটক করা হয়৷ এরপর থেকে তিনি গৃহবন্দি হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা৷
বিজ্ঞাপন
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য সুপরিচিত সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত সৌদ৷ বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না৷ কোনো রকমের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁকে রিয়াদে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
রাজকন্যার ঘনিষ্ঠ একজন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বাসমাহ চাইলেও তার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারছেন না, কেননা তাঁর সমস্ত যোগাযোগের উপর নজর রাখা হয়েছে৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ ব্যক্তি নাম প্রকাশ করতে চাননি৷
বাসমাহ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সাংবাধিনিক সংস্কার এবং মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে আসছেন৷ তাঁর মতো দেশটির রাজতন্ত্রের সমালোচকরা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ রাজপরিবারের অনেককেই এজন্য হত্যা, গুম, কারাবন্দি ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে৷
পারিবারিক নির্যাতন এড়াতে ব্যাংককে পালিয়ে যান সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন৷ পরিবারের কাছে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন ক্যানাডাতে৷ কিভাবে সামলেছেন এ পরিস্থিতি, ক্যানাডায় কেমন আছেন তিনি?
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
শুরুতে থাইল্যান্ডে
কুয়েত থেকে পালিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড বিমানবন্দরের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন রাহাফ৷ নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করে পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকার করলে আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়েন তিনি৷ এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ
হোটেলে অনেকটা বন্দি থাকলেও বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি তিনি৷ তাই নিজের অবস্থান জানাতে টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ৷ এ সময় তিনি ‘অ্যাসাইলাম’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইনও শুরু করেন৷ কখনো ফটো, কখনো ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান নিজের সর্বশেষ অবস্থান৷
ছবি: Twitter/Rahaf Mohammeed
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা
প্রথমে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে আশ্রয় দেবে না বলে জানায়৷ তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথাও ভাবছিল থাইল্যান্ড সরকার৷ পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝতে পেরে রাহাফ তাঁর বন্ধুর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার একটি বিমান টিকেট কেনেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Human Rights Watch/Rahaf Mohammed Alqunun
হেটেলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা
হোটেলে রাহাফের অবস্থান জানতে পেরে সেখানে তাঁর সাথে কথা বলতে যান থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি
বিমানবন্দরের হোটেলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা থাকার পর, আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Lalit
জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিরাও পাশে
পারিবারিক নির্যাতন এড়ানোর জন্য থাইল্যান্ডের হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাহাফ৷ সার্বিক অবস্থা জানতে পেরে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যান জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
বিদায় থাইল্যান্ড
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগের পর ক্যানাডা সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়৷ থাইল্যান্ড ত্যাগের আগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কার্যালয়ের সামনে একটি ছবি তুলতে ভোলেননি রাহাফ৷
ছবি: Reuters/UNHCR/K. Ibrahim
‘আমি পেরেছি’
থাইল্যান্ড থেকে ক্যানাডাগামী বিমানে বসে নিজের পাসপোর্টের একটি ছবি টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন রাফাহ৷ ছবির ক্যাপশনে লিখে দেন ‘আমি পেরেছি’৷
ছবি: Reuters/Twitter
ক্যানাডায় উষ্ণ অভ্যর্থনা
আন্তরিকভাবেই রাহাফকে গ্রহণ করে ক্যানাডা সরকার৷ পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে ক্যানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
সৌদি সরকারের বক্তব্য
সৌদি আরবে নারী অধিকার বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ৷ নির্যাতন এড়াতেই পরিবার ছেড়ে পালিয়েছেন রাহাফ৷ ঘটনার কয়েকদিন পর সৌদি সরকারের জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান এক বিবৃতিতে রাহাফের কর্মকাণ্ডকে ‘পারিবারিক মূল্যবোধবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
10 ছবি1 | 10
চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ ও সৌদি কর্তৃপক্ষের সন্দেহ
সূত্র অনুযায়ী, কন্যাকে নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে পারেন এমন সন্দেহে চলতি বছরের মার্চে বাসমাহকে বন্দি করা হয়৷ চিকিৎসার জন্য তার সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল৷ ডয়চে ভেলের কাছে আসা নথি অনিযায়ী সুইস ডাক্তারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর বাসমাহ কন্যাসহ জেদ্দা ত্যাগের ছাড়পত্র পান৷ কিন্তু ভ্রমণের দিনই দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী লিওনার্ড বেনেট৷
বেনেটে বলেন, দুই মাস পর থেকে ‘‘তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেউ জানে না তিনি কোথায় আছেন৷ আমরা প্রকৃতপক্ষে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি৷''
বেনেট জানান, কয়েক দফা ফোন কল করার পর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও তিনি তেমন কিছু বলেননি৷ বাসমাহর কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন৷
বেনেট বলেন, বাসমাহর গন্তব্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভা হলেও, যাওয়ার কথা ছিল তুরস্ক হয়ে৷ অঙ্কারার সাথে শত্রুতামূলক সম্পর্ক থাকায় রিয়াদ বিষয়টিকে দেখেছে সন্দেহের চোখে৷
কোথায় আছেন বাসমাহ?
ডয়চে ভেলেকে বাসমাহর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানিয়েছে, ‘‘(পালিয়ে যাওয়ার) অভিযোগ সত্য কিনা তারা (কর্তৃপক্ষ) সেই তদন্ত শেষ করেছে৷ তারপরও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷'' তিনি বলেন, বাসমাহর বিরুদ্ধে দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু কেন এখনো তাকে আটকে রাখা হয়েছে সেটি তাদের জানা নেই৷
কে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে তা পরিস্কার নয় বলে জানিয়েছে এই সূত্র৷ রাজকন্যার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাসমাহর এক বন্ধু এবং ব্যবসায়িক সহকর্মী৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, শাসক পরিবার ঠিকই জানে বাসমাহ কোথায় আছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘দুটি সূত্র অনুযায়ী (রাজপরিবারের) এক নম্বর ব্যক্তি (মোহাম্মদ বিন সালমান) বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন৷ কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি, তিনি জানেন৷ আমরাও জানতে চাই সে (বাসমাহ) কোথায় আছে, কেন তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে?''
বাসমাহ নিয়মিত টুইটার ব্যবহার করলেও ফেব্রুয়ারির পর থেকে তিনি অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে নীরব রয়েছেন৷ জুলাই অবধি তার কর্মচারীরা কিছু ধর্মীয় পোস্ট দিয়েছেন৷
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
10 ছবি1 | 10
রাজপরিবারের সরব সদস্য
৫ সন্তানের জননী বাসমাহ ২০০৬ সাল থেকে সৌদি গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করেন৷ কিন্ত তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও জনগণের হয়ে কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি দেশটির শাসকরা৷
বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০১০-২০১১-র দিকে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ পরিচিতি পান গণমাধ্যমে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব অঞ্চলের দুর্নীতি, মানবাধিকার এবং সম্পদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাসমাহ৷ সৌদি আরবে ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস, নারীদের অধিকারসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিও জানান তিনি৷ প্রশাসনের সমালোচনা করলেও রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে অবশ্য কখনো সরাসরি কোনো কথা তাকে বলতে শোনা যায়নি৷
২০১৫ সালের দিকে সৌদি আরবে ফিরে আসেন বাসমাহ৷ লন্ডনের বেশ কিছু ব্যবসা তিনি গুটিয়ে ফেলেন৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিবিসি অ্যারাবিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়েমেন যুদ্ধের ইতি টানতে সৌদি আরবের প্রতি আহবান জানান৷ এরপর থেকে তাকে আর গণমাধ্যমে দেখা যায়নি৷
রাজপরিবারের রাজনীতি
বাসমাহ সাবেক সৌদি রাজার ১১৫ সন্তানের একজন৷ এই পরিবারের একটি অংশকে বর্তমান রাজা সালমান ও তার পুত্রের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দী বলে মনে করা হতো৷
বর্তমান সৌদি রাজপরিবারের মোট ১৪ হাজার সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশ কয়েকটি বিভাজন রয়েছে৷
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সৌদি রাজনীতি ও রাজপরিবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাদাওয়ি আল-রাশিদ বলেন, রাজা আবদুল্লাহর শাসনকালে রাজকন্যারা সব ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে পারতেন৷ এটা অনেকটা জনসংযোগের মতো ছিল৷ ললোয়াহ বিন্ত ফয়সাল আল সৌদ ছিলেন তেমনই একজন৷ তিনি বাইরের জনসংযোগমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সৌদি রাজ পরিবারের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলেন৷ রাশিদ বলেন, এখন এই নারী পুরোপুরি নীরব হয়ে গেছেন৷
সালমান ও তার সন্তান ক্ষমতার বাইরে থাকা এইসব নারীকে একে একে নীরব করে দিতে চাইলে তা অবাক করার মতো কিছু হবে না বলেই মনে করেন তিনি৷
টম অ্যালিনসন/এফএস
মোটর সাইকেল চালানো শিখছেন এক সৌদি নারী
সৌদি আরবের নারীরা আগামী জুন মাস থেকে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবেন৷ সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মারিয়াম আহমেদ আল-মোয়ালেম৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
প্রথমদের মধ্যে থাকতে চান
জুন মাস থেকে সৌদি আরবের নারীরা যখন গাড়ি চালানো শুরু করবেন, তখন প্রথমদের মধ্যে থাকতে চান মারিয়াম আহমেদ আল-মোয়ালেম৷ তাই তো প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনে গিয়ে মোটর সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
ছোটবেলার আগ্রহ
ছোটবেলায় পাশের বাড়ির ছেলেদের যখন মোটর বাইক চালাতে দেখতেন, তখন থেকেই এই বাহনটির প্রতি মারিয়ামের আগ্রহ জন্মায়৷ তবে জীবদ্দশায় যে তিনি এটি চালাতে পারবেন, সেটি ভাবতে পারেননি৷ তাই এখন সেই সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি তিনি৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
ইতিবাচক সাড়া
মোটর সাইকেল চালানোর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বন্ধুদের কাছ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন মারিয়াম৷ তাঁর পরিবারও বলেছে, যা করতে তাঁর ভালো লাগে, তা-ই যেন তিনি করেন৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
অন্য আগ্রহ
শুধু মোটর সাইকেল নয়, স্কুবা ডাইভিং আর কারাতের প্রতিও দারুণ আগ্রহ আছে মারিয়ামের৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
নেতাদের ধন্যবাদ
মারিয়াম যেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সেখানকার এক কর্মকর্তা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের নারীরা একের পর এক সুযোগ পাচ্ছেন৷ এজন্য দেশগুলোর শাসক, রাজা, বাদশাহ ও প্রিন্সদের ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
সৌদি নারীদের অন্য সুযোগ
পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই এখন ব্যবসা শুরু করতে পারছেন সৌদি নারীরা৷ এছাড়া স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল ম্যাচ দেখতে এবং খেলাধুলায় অংশ নিতে পারছেন তাঁরা৷ এসব কারণে সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
ছবি: Reuters/H. I Mohammed
কর্মক্ষেত্রে নারী
কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ ইতিমধ্যে তামাদার বিনতে ইউসেফ আল-রামাহ নামের এক নারীকে শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ রক্ষণশীল দেশটিতে সরকারের এমন উঁচু পদে একজন নারীর নিয়োগ বিরল এক ঘটনা৷