নরওয়ের উত্তরে জায়গাটির নাম হলো ভস৷ বছরে একবার এখানে এক্সট্রিম স্পোর্টস সপ্তাহের আয়োজন করা হয়, যার মূলমন্ত্রই হলো, নিজের ক্ষমতার চূড়ান্ত সীমা পরীক্ষা করা৷
বিজ্ঞাপন
এক্সট্রিম স্পোর্টস, মানে চূড়ান্ত খেলাধুলা, যাতে রোমাঞ্চই বড় কথা৷ মোট ১৩টি ইভেন্টে হার-জিত বড় কথা নয়৷
জার্মানির সেবাস্টিয়ান ব্র্যুক এই নিয়ে ছ'বারের মতো এখানে এসেছেন৷ তিনি বলেন: ‘‘এখানে আসি পরিবেশটার জন্য৷ বহু ‘কুল' মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয়৷ অনেক ধরনের আজব ঘটনা ঘটে, যা ভাবাই যায় না৷''
৩৫ বছর বয়সি সেবাস্টিয়ান একটি মাউন্টেন বাইক অভিযানের লিডার৷ রুটটা অভিজ্ঞ মাউন্টেন বাইকারদের জন্যও একটা চ্যালেঞ্জ৷ ২৫ জন বাইকারকে হেলিকপ্টারে করে ভোর সাতটায় একটা পাহাড়ের ওপরে নিয়ে আসা হয়৷ উচ্চতা ১,৪০০ মিটার৷ প্রথমে পাহাড়ের মাথায় বসে প্রাতরাশ, তারপর সেখান থেকেই বাইকে চড়ে নীচে নামা!
ভস কী ও কেন
এক্সট্রিম খেলাধুলার প্রতিযোগিতা বাদ দিলে ভস বেশ শান্ত একটি শহর৷ প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাস৷ চারদিকে পাহাড়, হ্রদ, স্কি খেলার ঢাল – সব ধরনের আউটডোর খেলাধুলার পক্ষে আদর্শ৷
এ বছর ৩০টি দেশ থেকে হাজার খানেকের বেশি এক্সট্রিম স্পোর্টের অনুরাগী এসেছেন৷ ভস-এর বাসিন্দাদের জন্যও রোমাঞ্চকর সময় এটা৷ তাদের একজনের মন্তব্য: ‘‘আমরা যারা ভস-এ থাকি, তাদের কাছে এই সপ্তাহটা খুবই রোমাঞ্চকর৷ নানা ধরনের স্পোর্ট দেখতে পাই, যা আমরা নিজেরা করার কথা ভাবতেই পারি না৷''
মজার যত খেলা
কাদায় দৌড় প্রতিযোগিতা, বুট নিক্ষেপ, ক্রেজি ক্রসিং – জার্মানিতে এ সব মজার খেলার আয়োজন গ্রীষ্মকালে প্রায়ই হয়ে থাকে৷ আসলে পুরো ব্যাপারটাই আনন্দের এবং মজার৷ আর এ বছরের গ্রীষ্মেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কাদায় দৌড়
লোয়ার স্যাক্সনির পূর্ব ফ্রিসল্যান্ডে প্রতি বছর কাদার মধ্যে স্লেজ গাড়ি চালানোর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়৷ আর চারটি দেশের ২৪টি দল এতে অংশ নেয়৷ বলা বাহুল্য, পূর্ব ফ্রিসল্যান্ডে এই বিশ্বকাপ ব্যাপক জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাঠের গুঁড়ি ছোড়া
গত কয়েক শতাব্দী ধরে স্কটল্যান্ডে এই প্রতিযোগিতা চলে আসছে, যা বর্তমানে জার্মানিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়৷ লোয়ার স্যাক্সনির গ্রোসগল্টার্নে চতুর্থবারের মতো এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ ৩৫ থেকে ৬০ কেজি ওজনের ‘লগ’ বা কাঠের গুঁড়িটি যে যত দূরে ছুড়তে পারে – তা নিয়েই প্রতিযোগিতা৷ তবে এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গরু ধরা
ফরাসি এবং ডাচরা ইউরোপের সেরা রাখাল বা কাউ বয় হিসেবে পরিচিত৷ কুহফাঙ্গেনের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গরু ধরার প্রতিযোগিতায় তাই তারাই বিজয়ী হয়৷ এবারের প্রতিযোগিতায় ইটালি, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রিয়া থেকে অন্তত ১০০ ঘোড়সওয়ার অংশ নিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গামবুট ছোড়া
১২০ বছর আগে ফিনিশ নাবিকরা এই প্রতিযোগিতা শুরু করে৷ যে যত দূরে বুট ছুড়তে পারবে সেই বিজয়ী৷ জার্মানিতে ২০০৭ সালে গামবুট ছোড়ার বিশ্বকাপ প্রথম শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রেজি ক্রসিং
‘ক্রেজি ক্রসিং’ প্রতিযোগিতা হয় হানোফার শহরে৷ ১২টি দল এতে অংশ নেয়৷ লক্ষ্য হলো প্রতিটি দল নিজেদের বানানো নৌকা নিয়ে ৩০০ মিটার দূরে দূরে থাকা বাধাগুলো অতিক্রম করবে৷ সব প্রতিযোগীদের পোশাক হবে দেখার মতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রং দৌড়
জার্মানিতে দ্বিতীয়বারের মতো এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ৫ কিলোমিটার দৌড়াতে হয়৷ ৫৫০০ জন অ্যাথলিট মিউনিখে এই প্রতিযোগিতা এবং এর সাথে জড়িত নানা বর্ণিল অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷ ভারতের হোলি উৎসব থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই প্রতিযোগিতার চল শুরু হয়েছে৷ প্রতিযোগীদের পোশাকে নানা রং লাগানো থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাঠ কাটার প্রতিযোগিতা
এ বছর জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যে অবস্থিত মিউনিখ শহরে এই চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয়েছিল৷ প্রতিযোগীদের ২.৮০ মিটার লম্বা গাছের গুড়ি ফাঁড়তে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন কাদা দৌড়
কাদার মধ্যে বিভিন্ন বাধা পেড়োনো দৌড়ের জন্য আপনি কি প্রস্তুত? ব্রান্ডেবুর্গের এই আয়োজনে এটাই কিন্তু ছিল প্রতিযোগিতার মূল বিষয়৷ এই প্রতিযোগিতায় কাদার মধ্যে ১৮ কিলোমিটার পথ দৌড়াতে হয় বিভিন্ন বাধা পেড়িয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাদাতেই মজা
কাদার মধ্যে মজা যেমন রয়েছে, তেমনি সেই মজার শেষে আপনাকে আর কেউ একজন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি বলতে পারবে না৷ অর্থাৎ, আপনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে যাবে কাদায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
প্রতিদিন প্রায় ১৬টা করে প্রতিযোগিতা৷ অ্যাথলিটরা বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টে পয়েন্ট সংগ্রহ করে সপ্তাহের শেষে একটা বিশেষ প্রাইজ পেতে পারেন৷ দারুণ পরিবেশ, অনেকটা অ্যাথলিটদের একটা বড় পরিবারের মতো৷ ভস-এর আরেক বাসিন্দা বললেন:
‘‘১৯৯৭ সালে ভস-এর স্কাইডাইভিং ক্লাব, প্যারাগ্লাইডিং ক্লাব, ব়্যাফটিং ক্লাব আর কায়াক ক্লাব – সকলেই পরের গ্রীষ্মে একটা ইভেন্ট আয়োজন করার কথা ভাবছিল৷ তারপর একই সপ্তাহে সব কটি ইভেন্ট করার পরিকল্পনা নেয়া হলো৷ শুরুটা এ ভাবেই হয়েছিল৷''
প্যারা-জাম্পিং ও নিসর্গ
ভস-এর বিশেষত্ব হল, অ্যাথলিটরা একটা ইভেন্টে নয়, একাধিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন৷ সেবাস্টিয়ান ব্র্যুক যেমন মাউন্টেনবাইক ছাড়া প্যারা-জাম্পিং-এও অংশ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন: ‘‘এখানে প্যারা-জাম্পিং একটা দারুণ ব্যাপার, কেননা চারদিকে খোলা প্রকৃতি৷ নামার জায়গাগুলো কম, কেননা চারপাশে পাহাড়৷ জাম্প করার পর যে দৃশ্য, তা সত্যি মুগ্ধ হবার মতো৷''
ভস-এর এক্সট্রিম স্পোর্টস সপ্তাহ৷ এখানে আসলে যেটা লাগে, সেটা হল অসম সাহস!