ফল জানা যাবে বৃহস্পতিবার, তার আগে এক্সিট পোল বলছে, গুজরাট বিজেপি-র, হিমাচলে কংগ্রেস-বিজেপি লড়াই। দিল্লির পুরভোটে জিততে চলেছে আপ।
বিজ্ঞাপন
গুজরাটে গত ২৫ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায়। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে জানালো এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত ভোট সমীক্ষা। শুধু ক্ষমতায় আসাই নয়, গতবারের তুলনায় অনেক বেশি আসন পেতে পারে বিজেপি। গতবার কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জের মুখে তারা পেয়েছিল ৯৯টি আসন। এবার সব এক্সিট পোলই বিজেপি-কে জয়ী হিসাবে দেখাচ্ছে। তাদের পূর্বাভাষ, বিজেপি সবচেয়ে কম ১১৭টি ও সবচেয়ে বেশি ১৫০টি আসন পেতে পারে। এনডিটিভি সবকটি এক্সিট পোলের ফল মিলিয়ে গড় করে বলছে, বিজেপি ১৩২, কংগ্রেস ও এনসিপি ৩৮ এবং আপ আটটি আসন পাবে।
গুজরাটে এবার তেড়েফুঁড়ে প্রচার করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গত ছয় মাস ধরে তিনি গুজরাট গিয়ে নিয়মিত প্রচার করেছেন। জনসভা তো বটেই, রোড শো, পদযাত্রা, ঘরে ঘরে গিয়ে আবেদন জানানো, কোনোকিছুই বাদ রাখেননি। তার আবেদন ছিল, কংগ্রেস ও বিজেপি-কে এতদিন ধরে গুজরাট-শাসনের অধিকার দিয়েছেন মানুষ। একবার তারা আপকে সেই সুযোগ দিক। আপ ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের দাম কমাবে, জলের মাসুল লাগবে না। সরকারি স্কুল, হাসপাতাল ভালো হবে। দিল্লির উদাহরণ দেখিয়ে ভোট টানতে চেয়েছিলেন তিনি।
বুথ ফেরত ভোট সমীক্ষা বলছে, কেজরিওয়ালের আপ খুব কম হলে তিনটি এবং খুব বেশি হলে ২১টি আসন পেতে পারে। তবে বেশিরভাগ সমীক্ষাই বলছে, আপ খুব বেশি হলে ১১ থেকে ১৩টি আসন পেতে পারে। অর্থাৎ, কেজরিওয়াল গুজরাটে বিজেপি নয়, কংগ্রেসেরই বেশি ক্ষতি করবেন। তবে ক্ষমতায় না আসতে পারলে আপ দ্বিতীয় স্থানে থাকতে চেয়েছিল, সেটা হবে না, কংগ্রেসই দ্বিতীয় স্থানে থাকবে।
গুজরাটে এবার কংগ্রেসের রাজ্য নেতারাই মূলত প্রচার করেছেন। রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীরা প্রচারে খুবই কম সময় দিয়েছেন। নতুন সভাপতি খাড়গেও বেশি জনসভা করেননি। ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন হার্দিক প্যাটেল, তার আগেই বিজেপিকে বেছে নিয়েছেন অল্পেশ ঠাকোর। বেশ কিছু বিধায়ক ও নেতাও ভোটের আগে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। ফলে কংগ্রেসের শক্তি এমনিতেই আগের থেকে কমেছে।
গুজরাটে বুথ ফেরত ভোট সমীক্ষার ফলে চমক নেই। বিজেপি যে গুজরাটে আবার জিততে চলেছে, সেকথা প্রায় সব রিপোর্টেই বলা হচ্ছিল। তবে হিমাচলের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রীতিমতো লড়াই হতে পারে। গত ৩৭ বছর ধরে হিমাচল প্রদেশের রীতি হলো, পাঁচ বছর পরপর ক্ষমতার বদল হয়। একবার কংগ্রেস আসে তো অন্যবার বিজেপি। প্রশ্ন হলো, এবার কি সেই প্রবণতা বহাল থাকবে, নাকি বিজেপি পরপর দুইবারের জন্য হিমাচলে জিততে পারবে?
এক্সিট পোল বলছে, তীব্র লড়াই হবে। ইনডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার সমীক্ষা বলছে, কংগ্রেস জিতবে। টুডেজ চাণক্য বলছে, দুই দলই ৩৩টা করে আসন পাবে। নির্দল পাবে দুইটি আসন। টিভি৯ বিজেপি-কে ৩৩ ও কংগ্রেসকে ৩০টি আসন দিয়েছে। জন কি বাত বিজেপি-কে ৩২ থেকে ৪০ ও কংগ্রেসকে ২৭ থেকে ৩৪ আসন দিয়েছে এবং এবিপি-সিভোটার্স বিজেপি-কে দিয়েছে ৩৩ থেকে ৪১ আসন এবং কংগ্রেসকে ৩০ থেকে ৪০টি আসন। সব সমীক্ষা বলছে, আপ এখানে একটি আসনও পাবে না।
দিল্লিতে পুরসভায় জিততে পারবেন কেজরিওয়াল?
রোববার দিল্লি পুরসভার নির্বাচন। গত ১৫ বছর ধরে পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রেখেছে বিজেপি। এবার কি কেজরিওয়াল জিততে পারবেন?
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
১৫ বছর ধরে
গত ১৫ বছর ধরে বিজেপি দিল্লি পুরসভা দখল করে রেখেছে। আগে তিনটি আলাদা পুরসভা ছিল। এবার সবকটিকে মিলিয়ে দিয়ে একটা করা হয়েছে। ফলে দিল্লি পুরভোটে জয় পাওয়াটা এবার মোদী-শাহের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কেজরিওয়ালের কাছে
দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি-কে একাধিকবার পর্যুদস্ত করেছেন কেজরিওয়াল। কিন্তু পুরসভায় জিততে পারেননি। মধ্যদিল্লির ভিভিআইপি এলাকা ছাড়া এবার পুরো দিল্লিকে পরিষেবা দেবে একটাই পুরসভা। সেখানে জিতলে রাজধানীতে আরো কিছুটা ক্ষমতা কেজরিওয়ালের হাতে আসবে। তাই তিনি এবার পুরসভায় ক্ষমতা দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
কেজরিওয়ালের নামে
দিল্লিতে আম আদমির প্রার্থীরা লড়ছেন কেজরিওয়ালের নামে। এই ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, আম আদমি পার্টির জনসভায় পিছনে লাগানো ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে, কেজরিওয়ালের পার্ষদ। অর্থাৎ, প্রার্থীরা গৌন, লড়ছেন আসলে কেজরিওয়াল। তার নামে ভোট জোগাড়ের চেষ্টা। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভায় মমতাও বলেছিলেন, ২৯৪ আসনে আসলে তিনিই লড়ছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
পারবেন কেজরিওয়াল?
এটাই এই সময়ে দিল্লিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বারবার বিজেপি-র জয়রথ থামিয়ে দিয়েছেন। পুরসভায় পারবেন কি? কেজরিওয়াল এবার গুজরাটে ভোটের প্রচারে বেশি সময় দিয়েছেন। দিল্লিতে মাত্র কয়েকদিন প্রচার করেছেন। কিছু জায়গায় বাড়ি বাড়ি গেছেন, রোড শো করেছেন, জনসভাও। কিন্তু আপ বিধায়ক ও নেতারা প্রচারে ঢিলে দেননি। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে তারা প্রচার করেছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বিধানসভা জিতেছিলেন কেজরিওয়াল। লোকসভায় সব আসন জিতেছিল বিজেপি। এবার পুরসভায় বিজেপি জিতলে বুঝতে হবে, দিল্লির মানুষ এখনো তাদের সঙ্গে আছে। পুর-সমস্যা সমাধানে তাদের উপর ভরসা রেখেছে। বিজেপি-র প্রচারও চলছে নানাভাবে। এখানে যেমন গাড়ির ছাদের একাংশ সরিয়ে দিয়ে বিজেপি প্রার্থী দাঁড়িয়ে সবাইকে অভিবাদন করছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
নারীবাহিনী
পুরসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসন মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত। তাই প্রতিটি দলই প্রচুর নারীকে প্রার্থী করে। তাদের সঙ্গে থাকেন নারীরা। এখানে যেমন বাঙালিপ্রধান এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে বিজেপি-র নারী প্রার্থী ও তার সঙ্গীদের দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
প্রচারে অধীর
দিল্লি পুরসভায় কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করছেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। চিত্তরঞ্জন পার্কের দুই নম্বর মার্কেটে কংগ্রেসের জনসভায় দেখা যাচ্ছে তাকে। চিত্তরঞ্জন পার্ক বাঙালিপ্রধান এলাকা বলে অধীরকে দিয়ে জনসভা করিয়েছে কংগ্রেস।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
লড়ছে হাত
একটা সময় ছিল, যখন দিল্লির পুরসভা থেকে বিধানসভা পর্যন্ত সর্বত্র কংগ্রেসের শাসন ছিল। কিন্তু এখন যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। সারা দেশের মতো দিল্লিতেও কংগ্রেসে ভাটার টান। তবে পুরসভায় কংগ্রেস লড়ছে। ফলাফল কী হবে তা ৭ ডিসেম্বর জানা যাবে। তবে তাদের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কী বলছেন মাছ-বিক্রেতা
দুই নম্বর মার্কেটে মাছ বিক্রি করেন টাবু। দিনাজপুরের ছেলে টাবু দীর্ঘদিন হলো দিল্লিতে ব্যবসা করছেন। তার মতে, আম আদমি পার্টিই জিতবে। কেজরিওয়াল অনেক সুবিধা দিচ্ছেন। তাই তিনি কেজরিওয়ালের দলকে ভোট দেবেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
সুরিন্দর সিংয়ের দাবি
সুরিন্দর সিং ব্যবসা করেন। তার দাবি, কেজরিওয়াল যে কাজ করছেন, তা দেখা যায়। মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। এজন্যই পাঞ্জাবের মানুষ তার দলকে ক্ষমতায় এনেছে। তিনিও আপের ঝাঁটাতেই ভোট দিতে চান।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
বিজেপি-র সমর্থনে
বিজেপি-র সমর্থনেও কিছু মানুষ কথা বলছেন। তারা বলছেন, মোদীর জন্য তারা বিজেপি-কে ভোট দিতে চান। কিছু মানুষ কংগ্রেসের পক্ষেও বলছেন। উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন বেশি। কিন্তু সাধারণ গরিব মানুষ আপকে সমর্থন করার কথা বলছেন। কারণ, আপ তাদের বিদ্যুতের বিল কম করেছে তাই নয়, মেয়েদের সরকারি বাসে পয়সা লাগে না। তবে ৭ ডিসেম্বর জানা যাবে, কার দখলে যাবে দিল্লি পুরসভা।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
11 ছবি1 | 11
দিল্লির পুরভোট
বুথ ফেরত ভোট সমীক্ষা বলছে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ এবার দিল্লির পুরসভা দখল করবে। পুরসভায় বিজেপি-র ১৫ বছরের শাসনের অবসান হবে।
ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া সমীক্ষার ফল হলো, আপ পাবে ১৪১ থেকে ১৭১টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ৬১ থেকে ৯১টি। কংগ্রেস তিন থেকে সাতটি। ইটিজি-টিএনএন বলছে, দিল্লিতে আপ পেতে পারে ১৪৬ থেকে ১৫৬ আসন। বিজেপি ৮৪ থেকে ৯৪ এবং কংগ্রেস ছয় থেকে ১০টি আসন।
এক্সিট পোল নিয়ে
অনেক সময়ই দেখা যায়, এক্সিট পোল যা বলছে, তা মেলেনি। আবার অনেক সময় এক্সিট পোল প্রায় সবটাই মিলে যায়। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এক্সিট পোল ঠিক হতে পারে, আবার ভুলও হতে পারে। এই অবস্থায় ফলাফল প্রকাশের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দিল্লি পুরসভার ফল বেরোবে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বেরোবে গুজরাট ও হিমাচলের ফলাফল।