শরীরে হাড় ভেঙেছে কিনা, জানতে এক্স-রে বড় ভরসা৷ সিটিস্ক্যানও আজকাল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে৷ অথচ এককালে এই প্রযুক্তি মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল৷ ফিরে তাকানো যাক এক্স-রে প্রযুক্তির বিবর্তনের দিকে৷
বিজ্ঞাপন
হাড় ভেঙে গেছে? অথবা কেউ কিছু গিলে ফেলেছ? নাকি টিউমার হয়েছে? ডাক্তাররা এক্স রে, আলট্রাসাউন্ড, সিটি অথবা এমআরআই স্ক্যানের মতো নানা ‘ইমেজিং' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা পরীক্ষা করতে পারেন৷
বহুকাল ধরে শুধু মানুষের লাশের উপর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা করা যেত৷ জীবন্ত মানুষের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা আন্দাজের ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় করতেন৷
১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ভিলহেল্ম কনরাড ব়্যোন্টগেন আবিষ্কার করেন, যে কিছু যন্ত্র অদৃশ্য রশ্মি বিকিরণ করে – অনেকটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে৷ এই রশ্মির বিস্ময়কর গুণ হলো সহজেই তা নানা বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে, আলো যা পারে না৷
শিশুদের চোখের সমস্যায় করণীয়
ছোট শিশুদের স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডের অক্ষর ঝাপসা দেখা বা নিজের খাতায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে – এমনটা লক্ষ্য করলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত৷ শিশু বয়সে চোখের গোলমাল ধরা পড়লে কিন্তু সমাধান সম্ভব, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Colourbox
স্কুলে সমস্যা
শিশুদের চোখের সমস্যা থাকলে তা অবশ্যই স্কুলের লেখাপড়া বা পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা খুবই স্বাভাবিক৷ দূরে দেখার সমস্যা হলে শিশুরা ব্ল্যাকবোড়ের লেখা ভালোভাবে দেখতে পারে না আর কাছে দেখার অসুবিধা হলে পড়তে এবং নিজের খাতায় লিখতে সমস্যা হয়৷ আর এ সব অসুবিধার কারণ শিশুরা নিজেরা বোঝে না বা কাউকে ঠিকমতো বোঝাতেও পারে না৷
ছবি: AP
চোখ পরীক্ষা জরুরি
শিশু বয়সে চোখ পরীক্ষা খুবই জরুরি৷ কারণ চোখে যদি কোনো ত্রুটি, গোলমাল বা দেখার কোন অসুবিধা থেকে থাকে, তা ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে সহজেই তার চিকিৎসা সম্ভব৷ ডাক্তাররা বলেন, ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ঠিক করা সম্ভব৷ কিন্তু শিশুদের বয়স দশ হওয়ার পর ওদের চোখে কোনো ‘ডিফেক্ট’ থাকলে তা ঠিক করা সম্ভব নয় বা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/McPHOTOs
সমস্যা কীভাবে বুঝবেন?
শিশুরা ওদের সমস্যা বুঝতে পারে না৷ তাই মা-বাবাকেই খেয়াল রাখতে হবে৷ শিশুর একটি চোখ বন্ধ করে তাকে কিছু একটা দেখতে দিন৷ এরপর অন্য চোখটিও একই উপায়ে পরীক্ষা করুন৷ দেখুন, শিশু আলাদাভাবে দুই চোখেই সমান পরিষ্কার দেখতে পায় কিনা৷ এছাড়াও লক্ষ্য রাখুন, লেখার সময় লাইনগুলো সোজা কিংবা ওপর-নীচ হচ্ছে কিনা৷
ছবি: Taylor Weidman/Getty Images
ঘরোয়া পরীক্ষা পর
ঘরোয়া পরীক্ষা শেষ হলে এবং কোনো সন্দেহ থাকলে শিশুকে নিয়ে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷ প্রয়োজনে চশমা বা ওষুধ দেবেন ডাক্তার সাহেব৷
ছবি: JamejamOnline.ir
বিশেষ চশমা
অনেক শিশু আছে, যারা নিয়মিত চশমা পরে৷ কিন্তু তারাই আবার খেলাধুলার সময় চশমা খুলে রাখে, যা মোটেই ঠিক নয়৷ শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি আলাদা চশমা পাওয়া যায়৷ তাই খেলার সময় সেই চশমা পরা উচিত৷ তা না হলে যে কোনো রকম অঘটন ঘটতে পারে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/S. Sauer
বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যা লক্ষ্যণীয়
মাঝে মাঝেই চোখ কচলানো, কপাল কুচকে কিছু দেখা, লেখা বা ছবি আঁকার সময় তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হওয়া, পড়া বা লেখার সময় গতি খুব কম থাকা, ভুল পড়া বা লেখা এবং টিভি দেখার সময় বেশি কাছে গিয়ে দেখা৷ এ বিষয়গুলো মা-বাবার নজরে পড়লে অবশ্যই চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে৷
ছবি: Fotolia/mirpic
আরো কিছু লক্ষণ
হঠাৎ করে স্কুলের পরীক্ষার ফল খারাপ করা, মাঝে মাঝে ঘরের আসবাব-পত্রে হোঁচট খাওয়া, অন্ধকারে বাইরে যেতে না চাওয়া, বন্ধুদের কাছ থেকে একটু দূরে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ টোমাস ট্রুকেনব্রোড৷
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
এর পরেই ব়্যোন্টগেন তাঁর স্ত্রীর হাতের বিখ্যাত ছবিটি তোলেন৷ তাতে হাড় ও আংটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে৷ এক্স রে-র আবিষ্কারকে সত্যি চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল৷ ব়্যোন্টগেন নোবেল পুরস্কার পেলেন৷ তাঁর দেখানো পথ শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিল৷
এই প্রথম ডাক্তাররা মানুষের শরীরে ছুরি না চালিয়েও তার ভিতরের অংশ দেখতে পেলেন৷ বিষয়টি আসলে খুবই সহজ৷ এক্স-বিকিরণের ফলে ফটোগ্রাফির প্লেট কালো হয়ে যায়৷ এক্স-রে ও ফটোগ্রাফিক প্লেটের মাঝে কিছু রাখলে তা রশ্মিকে দুর্বল করে দেয়৷ ঠিক যেভাবে কাপড় সূর্যের রশ্মিকে দুর্বল করে তোলে৷ সে কারণে কোনো এক্স-রে ছবিতে হাড় পেশির তুলনায় হালকা দেখায়৷
বহু বছর ধরে গবেষক ও ডাক্তাররা কোনো সতর্কতা ছাড়াই ঢালাওভাবে এক্স-রে ছবি তুলে গেছেন৷ অথচ এক্স রেডিয়েশন অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় তা শরীরের কোষের ক্ষতি করতে পারে – এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে৷ সে কারণে ডাক্তাররা আজকাল কয়েক দশক আগের তুলনায় বিকরণের ভগ্নাংশ ব্যবহার করেন৷
এক্স রে প্রযুক্তিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কম্পিউটার টোমোগ্রাফি সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এর আওতায় পরীক্ষার জন্য শরীরের অজস্র এক্স-রে ছবি তোলা হয়৷ তারপর কম্পিউটার তা একত্র করে এক থ্রিডি সংস্করণ সৃষ্টি করে৷
কিন্তু হাড় ভাঙলে আজও সেই সাধারণ এক্স-রে ছবির উপরই ভরসা করা হয়৷