এক অভিবাসী তরুণীর সাফল্যের কাহিনি
১৯ মে ২০২৩নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে আসার পর মারিনা কোরেইয়া আজ প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে লংবোর্ড ডান্সের চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছেন৷ অথচ মাত্র আট বছর আগে মারিনা নিস শহরে প্রথমবার লংবোর্ডে সওয়ার হয়েছিলেন৷ সেই বোর্ড তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে৷ মারিনা নিজে মনে করেন, ‘‘আমার বোর্ড আমার নিজস্ব সত্ত্বার সম্প্রসারিত অংশ৷ সেটাই আমার সম্পূর্ণ জীবন৷ এখনকার জীবন চালিয়ে যাওয়ার সেটাই কারণ৷ বোর্ডই আমার সর্বস্ব৷''
২৫ বছর বয়সি এই নারী বিশ্বের অন্যতম সেরা লংবোর্ড ডান্সার৷ তিনি হাতে গোনা পেশাদার নর্তকীদেরও একজন৷ এমন নাচের ব্যাখ্যা করে মারিনা বলেন, ‘‘লংবোর্ড আসলে স্কেটবোর্ড ও সার্ফিংয়ের মিশ্রণ৷ লংবোর্ড ড্যান্সের ক্ষেত্রে বোর্ডের উপর স্টেপ সাজাতে হয়৷ একইসঙ্গে এগিয়েও যেতে হয়৷ বোর্ডের উপর দাঁড়ালে উত্তেজনায় অ্যাড্রিনালিন রাশ সৃষ্টি হয়, মুক্তির স্বাদ ও নিয়ম ভাঙার অনুভূতি জাগে৷ শুধু তুমি ও তোমার বোর্ড৷''
তিনি আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কাপ ভ্যার্দেতে বড় হয়েছেন৷ ১৪ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ফ্রান্সে আসেন৷ ফরাসি ভাষা প্রায় বলতেই পারতেন না৷ তখন আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মারিনা কোরেইয়া বলেন, ‘‘আমি মুখ খুললে প্রায়ই অনেকে হাসাহাসি করতো৷ টের পেলাম, স্কুলে বাকিদের তুলনায় আমি আলাদা৷ ফলে বুঝতে পারলাম, আমার উচ্চারণ ও ত্বকের রং থেকে অন্যদের মনোযোগ সরাতে আমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে৷''
সৎ বাবা ১৭ বছর বয়সে তাঁকে প্রথম বোর্ড কিনে দেন৷ স্কেটিংয়ের জগতে মারিনা যেন নতুন বাসা খুঁজে পেলেন৷ নিস শহরের সমুদ্র সৈকতে তিনি দ্রুত অন্যতম সেরা হয়ে উঠলেন৷ মারিনার মা আন্তোনিয়া আলমেইদা কোরেইয়া নিজের মেয়ে সম্পর্কে বলেন, ‘‘সে অবিচল থাকে৷ কখনোই হাল ছেড়ে দেয় না৷ কিছু হাসিল করতে চাইলে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে৷ ও এরকমই৷''
২০২০ সালে মারিনা নারীদের ফ্রিস্টাইল লংবোর্ড ডান্সের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবার যোগ্যতা অর্জন করেন৷ করোনার কারণে সে বছর অনলাইনে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ তাঁর পাঠানো ভিডিওতে অভাবনীয় দ্রুত নৃত্যশৈলি সবার নজর কেড়েছিল৷ মারিনা বলেন, ‘‘জুরির সদস্যরা আমাকে তিনবার একই প্রশ্ন করেছিলেন৷ জানতে চেয়েছিলেন, আমি নিজের ভিডিও এডিট করেছি কিনা৷ আমি বলেছিলাম, ভলিউম চালু করে ভালো করে দেখুন, কেউ এত দ্রুত মুভমেন্ট করতে পারে না৷ আমিই এত দ্রুত সঞ্চালন করতে পারি৷ মনে হয় সে কথা শুনে তাঁরা মুগ্ধ হয়েছিলেন৷ যাই হোক, আমি জমিতেছিলাম''
যে সব মানুষ ক্রীড়ার ক্ষেত্রে নজর কাড়েন না, মারিনা তাদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনো অ্যাক্টিভিস্ট নই, কিন্তু আমার উপস্থিতিই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে৷ আমি আসলে গতানুগতিক কাঠামোয় খাপ খাই না৷ আমি চাই, যে সব বিদেশি মূল স্রোতের সঙ্গে খাপ খান না বা অস্বস্তি বোধ করেন, তারা যেন জানতে পারেন যে সবই সম্ভব৷ এক টুকরো কাগজ মোটেই কারো পরিচয় বা ভবিষ্যৎ স্থির করে না৷''
২০২৪ সালে মারিয়া কোরেইয়া নিজের মূল দেশ কাপ ভ্যার্ডের অলিম্পিক দূত হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করবেন৷
গ্যোনা কেটেল্স/এসবি