কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, তারা ভুল করে ২০ বছর বয়সি এক আফগান আশ্রয়প্রার্থীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে৷ অভিবাসন অফিস এখন তাঁকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক জার্মানির ফেডারেল অফিস বিএএমএফ বুধবার জানিয়েছে এ তথ্য৷ নসিবু্ল্লাহ নামের সেই শরণার্থীকে আরো ৬৮ আফগান শরণার্থীর সঙ্গে এ মাসের শুরুর দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ অথচ এই তরুণের আশ্রয়প্রার্থনার আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলছে৷ সুরাহা হয়নি৷
তাঁর আবেদনটি প্রাথমিকভাবে গত বছর এপ্রিলে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল৷ এরপর তিনি আপিল করলে তা এখনো জার্মান শহর গ্রিফসভাল্ডের প্রশাসনিক আদালতে ওঠেইনি৷
বিএএমএফ জানিয়েছে যে, নসিবু্ল্লাহর আইনজীবীর সঙ্গে ও কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে৷
ইইউতে ম্যার্কেলের বন্ধু ও শত্রুরা
শরণার্থী সংকটকে ঘিরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের মধ্যে মতানৈক্য চরমে পৌঁছেছে৷ একই বিষয়ের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও ম্যার্কেলের বন্ধু ও শত্রু হয়ে উঠেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O.Matthys
বন্ধু
ম্যার্কেলের রাজনৈতিক বন্ধু বলতে যদি কাউকে বোঝায় তবে সেটা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ম্যার্কেলের মতোই তিনি শরণার্থী সংকটের ইউরোপীয় সমাধানের পক্ষে ছিলেন৷ ইইউ’র নেতারা সম্প্রতি ব্রাসেলসে এক বৈঠকে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছান৷
ছবি: picture-alliance/Tass/dpa/M. Metzel
দরদি
সম্প্রতি ইটালি ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের একটি জাহাজ তাদের উপকূলে ভেড়ার অনুমতি দেয়নি৷ পরে স্পেন সেই জাহাজ তাদের দেশে ভিড়তে দেয়৷ এই ঘটনায় স্পেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজকে শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের নীতির সমর্থক বলে মনে হতে পারে৷ তবে তিনিও বলেছেন, সংকট সামলাতে তাদের সহায়তা প্রয়োজন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Soriano
মধ্যস্থতাকারী
ম্যার্কেলের মতো ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে-ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত খোলা রাখার পক্ষে৷ তবে তাঁর নিজের দেশেই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
কৌশলী
ঋণ-সংকট ইস্যুতে সম্প্রতি ম্যার্কেলকে গ্রিসের বিরুদ্ধে নমনীয় হতে দেখা গেছে৷ ফলে শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷ এর মাধ্যমে তিনি হয়ত ঋণ ইস্যুতে কিছুটা ছাড় পাওয়ার আশা করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কট্টরপন্থি
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেনকে দেখতে কট্টরপন্থির মতো মনে না হলেও অভিবাসন ইস্যুতে তিনি সেরকম মনোভাবই দেখিয়েছেন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের ডেনমার্কে ঢুকতে না দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন, তা ইইউ’র অন্য কোনো সরকার করেনি৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিদ্বন্দ্বী
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ম্যার্কেলের সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার দেখান অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়রৎস৷ তবে শরণার্থী ইস্যুতে যে তিনি ম্যার্কেলের খোলা দুয়ার নীতির বিরোধী, তা সরাসরিই জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস শ্যোডারের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
সমস্যা সৃষ্টিকারী
ইইউ নেতারা সম্প্রতি যে চুক্তিতে পৌঁছেছেন, শুরুতে তা ভন্ডুল করে দিতে চেয়েছিলেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টে৷ কারণ, সম্প্রতি দায়িত্ব নেয়া কন্টে তাঁর ভবিষ্যতের জন্য লিগা পার্টির উপর নির্ভরশীল৷ এই দলের নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাটেও সালভিনি আর কোনো শরণার্থী না নেয়ার পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress
উদাসীন
২০১৫ সালে ম্যার্কেল যখন শরণার্থী ইস্যুতে খোলা দুয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তখন ম্যার্কেলের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিলেন হাঙেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান৷ তখন তিনি বলেছিলেন, শরণার্থী সংকট ম্যার্কেলের সমস্যা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Vojinovic
8 ছবি1 | 8
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার বুধবার সকালে বলেন, ‘‘এটি বিএএমএফ-এর একটি প্রশাসনিক ভুল৷'' তিনি সর্বদা ‘ন্যায়শাসন নিশ্চিত' করতে চান বলে দাবি করেন৷
গত মাসে সেহোফারের ‘অভিবাসন মহাপরিকল্পনা' নিয়ে ব্যাপক জলঘোলা হয়৷ ম্যার্কেলের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি আরো দাবি করেন যে, তাঁর এলাকা বাভারিয়া রাজ্যকে অস্ট্রীয় সীমান্ত দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা দিতে হবে৷
এদিকে, নসিবুল্লাহ তাঁর আপিলটি যথাসময়ে করেননি বলে বিএএমএফ প্রথমে দাবি করলেও তাঁর আইনজীবী এই দাবি ভুল প্রমাণ করেন৷ গ্রিফসভাল্ডের প্রশাসনিক আদালতও আগেই আপিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷
বিএএমএফ এখন বলছে যে, যদি তাদের ফিল্ড অফিস সময়মতো তথ্যগুলো দিয়ে থাকে তাহলে এমন ভুল হওয়ার কথা ছিল না৷
জার্মানি এবারই প্রথম আফগানিস্তান থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত আনেনি৷ গত ডিসেম্বরেও এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল৷ জিগমারিনগেনের প্রশাসনিক আদালত সেই আফগান নাগরিককে ফেরত আনার রায় দিয়েছিল৷ পরে তাঁকে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ দেয়া হয়, কারণ, তিনি আফগানিস্তানে তালিবানদের সঙ্গে লড়াইয়ে জার্মান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং এর ফলে তাঁর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে৷
এর আগে বিএএমএফ অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে৷
প্রতি দু’সেকেন্ডে একজন ঘরছাড়া
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে অনেক মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
গৃহহীন যারা
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ .
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
দু’ সেকেন্ডে একজন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা আগে থেকেই উদ্বাস্তু, তাঁরাও৷ অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছেন এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছেন৷
যুদ্ধ, হিংসা এবং উৎপীড়নের জন্য ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
দেশের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা হিংসার জন্য দেশের ভেতরেই অনেক মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়৷ তাঁদের বলা হয় আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল)৷ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৪কোটি আইডিপি ছিল৷ এই সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়ায় এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
সিরিয়ার দুর্দশা
গত ৭ বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষ অবধি প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ এছাডা়ও সিরিয়াতে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Derks
আফগানিস্তান
সিরিয়ার পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান৷ প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছেন৷ বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীনভাবে যুদ্ধ, সহিসংতা ও উৎখাতের কারণে প্রতিদিনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Paduano
দক্ষিণ সুদানের অবস্থা
দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘের মতে, এই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে৷
ছবি: Reuters/H. Kalis
তুরস্ক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে প্রচুর শরণার্থী রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ৩৫ লক্ষ শরণার্থী ছিল৷ তার মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়ার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamik
গরিব দেশেও
অ্যামেরিকা আর ইউরোপ যাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক শরণার্থী কম আয় সম্পন্ন বা মধ্যম আয় সম্পন্ন দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের মধ্যে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো, উগান্ডার মানুষই বেশি৷