1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক কারাগারে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন

১০ ডিসেম্বর ২০২৪

বগুড়া জেলা কারাগারে এক মাসে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে৷ জেল সুপার বলেছেন, চারজনই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন৷ তিনি জানান, তার আগের কর্মক্ষেত্র নওগাঁয় এক সপ্তাহে মারা গিয়েছিল সাতজন৷

মাত্র ২৯ দিনে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু সম্পর্কে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তবে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷
বগুড়া জেলা কারাগারছবি: Bobin Rahman/DW

মানবাধিকার কর্মী এবং জাতীয় গুম কমিশনের সদস্য নূর খান চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন৷

১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস৷ এই দিনে কথা হলো নূর খানের সঙ্গে৷ কথা হলো বগুড়া কারাগারে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও৷

আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে রতনের তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় কিছু করেই মেরে ফেলেছে৷ তা না হলে (এত অল্প সময়ে) এতগুলো মানুষ মরবে কেন?'' 

‘বলেছে তো হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে’

This browser does not support the audio element.

সর্বশেষ সোমবার সকাল ১০টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুর্গাহাটা ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন ওরফে মিঠু(৬৫)৷ তিনি ওই ইউনিয়নের একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন৷ গত ২৪ আগস্ট তাকে আটক করা হয়৷

রবিবার দিবাগত রাতে বগুড়া জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ ভর্তি করা হয়৷ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কারাগার থেকে তাকে হাসপাতালে আনা হয়৷ সকালে তিনি মারা যান৷''

আব্দুল মতিনের ভাইয়ের ছেলে শান্ত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার চাচার বয়স হয়েছিল৷ তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই৷''

এ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ দিনে বগুড়া কারাগারে বন্দি থাকা চারজন আওয়ামী লীগ নেতা কথিত ‘হৃদরোগে আক্রান্ত' হয়ে মারা গেলেন৷ এর আগে গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ওরফে ঝুনু (৫৭) কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান৷ ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ, ২৫ নভেম্বর মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ (৬৭)৷ এর দু সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ, ১১ নভেম্বর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ওরফে রতন (৫৮)৷  

এক কারাগারে ২৯ দিনে চারজন, চার মাসে ছয়জন

বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ মাত্র মাত্র ২৯ দিনে চার জনের মৃত্যু সম্পর্কে বলেন, ‘‘গত এক মাসে চার জনের মৃত্যু হলেও ৫ আগস্টের পর আটক মোট ছয় জন মারা গেছেন৷ অসুস্থ অবস্থায় কারা হাসপাতালে এখনো দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা চিকিৎসাধীন আছেন৷ যারা মারা গেছেন তারা সবাই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন৷ তাদের প্রত্যেকের ময়না তদন্ত হয়েছে এবং থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে৷ কোনো নির্যাতন বা আমাদের অবহেলায় কেউ মারা যাননি৷ তাদের সবাই বয়স্ক এবং নানা রোগে ভুগছিলেন৷ তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হামলা ও মারামরিসহ নানা অভিযোগে মামলা আছে৷''

দুর্গাহাটা ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন ওরফে মিঠুর মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘যেদিন রাতে তিনি অসুস্থ হন, সেদিন বিকালেও তার প্রেসার মাপা হয়েছে৷ হার্টবিট স্বাভাবিক ছিল৷ তবে তিনি প্রেসারের রোগী ছিলেন, বাল্কি ছিলেন৷ হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন৷''

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ওরফে ঝুনু (৫৭) গত ২৬ নভেম্বর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান৷ তার মৃত্যু সম্পর্কে জেল সুপার বলেন, ‘‘তিনি গোসলের পর হার্ট অ্যাটাক করে পড়ে যান৷ সাথে সাথে মারা যান৷''

‘তার হার্টের কোনো রোগ ছিল না'

তার স্ত্রী মাহবুবা মঞ্জুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিনি কী কারণে মারা গেলেন বুঝতে পারছি না৷ তার হার্টের কোনো রোগ ছিল না৷ কারা কর্র্তৃপক্ষ বলছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন৷ আমরা কিছু ভাবতে পারছি না৷ এখন যা পরিবেশ-পরিস্থিতি তাতে আমরা অভিযোগ করার কথা চিন্তা করতে পারছি না৷ এখন আমাদের টিকে থাকাই কষ্ট৷''

২৫ নভেম্বর মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ (৬৭)৷ তার ছেলে শাহরিয়ার কবির বলেছেন, বাবার মৃত্যুর বিষয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে৷ আমাদের কোনো অভিযোগ নাই৷''

১১ নভেম্বর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ওরফে রতন (৫৮)৷ তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বলেছে তো হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে৷ এখন কী কারণে মারা গেছে কীভাবে বলবো৷ পুলিশ বলেছে, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেড় মাস পরে পাওয়া যাবে- তখন মৃত্যুর কারণ জানা যাবে৷ এখন কী রিপোর্ট দেয় না, না দেয় কী জানি৷ আমার মনে হয় কিছু করেই মেরে ফেলেছে৷ তা না হলে (এত কম সময়ে) এতগুলো মানুষ মরবে কেন?''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সে মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমি কারাগারে তার সাথে দেখা করেছি৷ সে তখন বলেছে, তার বুক ব্যথা, শরীরে বিষ-ব্যথা৷ হাসপাতাল থেকে ঠিকমতো ওষুধ , চিকিৎসা দেয় না৷ তার ডয়াবেটিস ছিল৷''

বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ওরফে রতনের মৃত্যু সম্পর্কে জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘তিনি মারা যাওয়ার আগে দুই-তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন৷'' 

‘এই মৃত্যুগুলো নিয়ে আসলে একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার’

This browser does not support the audio element.

নওগাঁ কারাগারে এক সপ্তাহে সাত জনের মৃত্যু?

বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ আরো বলেন, ‘‘যারা মারা গেছেন তারা সবাই বয়স্ক৷ সবার বয়স ৬০ বছরের উপরে৷ এমনিতেই তারা নানা রোগে ভুগছিলেন৷ মৃত্যুর উপরে তো কারো হাত নেই৷'' এ সময় তিনি জানান, তার আগের কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুহার আরো বেশি ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এর আগে নওগাঁ ছিলাম৷ সেখানকার কারাগারেও এক সপ্তাহে সাত জন মারা গেছেন৷''

ওই সাতজনের মৃত্যুকাল সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি৷

জেল সুপার জানান, ‘‘৫ আগস্টের পর বগুড়া কারাগারে দুইশ'রও বেশি আওয়ামী লীগের নেতা আটক ছিলেন৷ এখন ৫০ জনের মতো আছেন৷ বাকিরা জামিনে বের হয়ে গেছেন৷''

‘ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই কী ধরনের মৃত্যু'

মাত্র ২৯ দিনে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু সম্পর্কে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তবে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷ ডিউটি অফিসার সাব ইন্সপেক্টর মেহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘কারাগারে মৃত্যু হলে সাধারণত অপমৃত্যুর মামলা হয়৷ ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই সেটা কী ধরনের মৃত্যু৷ কারাগার থেকে বলা হয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে৷''

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘এটা খুব দুর্ভাগ্যজনকে যে, যখন যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকে, তাদের প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন৷ এই মৃত্যুগুলো নিয়ে আসলে একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার৷ এবং একই মাসে আওয়ামী লীগের চারজন নেতা একটি জেলা কারাগারে ইন্তেকাল করেন এটাকে সন্দেহের চোখে দেখাটাই স্বাভাবিক৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ