শামসির হায়দার, একজন কাশ্মীরি৷ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তাঁর জন্ম৷ এখন থাকেন বন শহরে৷ ডয়চে ভেলে বাংলা নানা বিষয়ে কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে৷ তিনি মনে করেন, ভারত যে পথ বেছে নিয়েছে, তা সংঘাত বাড়াবে৷
বিজ্ঞাপন
শামসির ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগে কাজ করছেন এখন৷ তাঁর জন্ম ১৯৮১ সালে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকা মিরপুরে৷ ছোটবেলায় পড়াশোনাও করেছেন সেখানে৷ তাঁর বাবা ছিলেন পাকিস্তান মিলিটারিতে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার তিন বছর আগে ১৯৬৮ সালে তাঁর বাবার পূর্ব পাকিস্তানে পোস্টিং হয়েছিল৷ তিনি বাংলাদেশে এসে দেখেন বৈষম্যের শিকার বাঙালিরা পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের ঘৃণা করেন৷ তাই তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করে ফিরে গিয়েছিলেন৷
শামসিরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল কাশ্মীর প্রসঙ্গে৷ ভারতের রাজ্যসভায় সংবিধানসম্মত ‘বিশেষ মর্যাদা' তুলে নেবার প্রস্তাব পাশ হওয়ায় আবারো আলোচনায় এই আলোচিত উপত্যকা৷ মোদী সরকারের এই উদ্যোগ কতটা প্রভাব ফেলবে কাশ্মীরে? পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরিরা কী ভাবছেন? এসব নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে৷ তাঁর মতে, কাশ্মীরিরা তাদের ভূমিকে পবিত্র মানেন৷ তাই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কাশ্মীরের ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, যা ভারতপন্থি কাশ্মীরিরাও ভালোভাবে নেননি৷ বাকি কথা শুনুন তাঁর মুখে৷
ডয়চে ভেলে: কাশ্মীর আসলে কী?
সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলেন৷ কাশ্মীরে সবসময় দু'টি দিক বর্তমান৷ এক, এটি অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা৷ কাশ্মীরের সৌন্দর্য বলতে মূলত কাশ্মীর ভ্যালির সৌন্দর্যকে বোঝায়৷ এটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা, ভারতের নিয়ন্ত্রণে৷ সেখানে তাদের অনেক সেনা রয়েছে৷ এছাড়া পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কাশ্মীরের একটি অংশ৷ আমি যখন ছোট ছিলাম, তখনই সেখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে৷ মকবুল ভাট (ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা) ছিলেন স্থানীয়দের কাছে নায়ক৷ কাশ্মীরিরা তাদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে গর্ব করে এবং এই জাতীয়তাবাদ সেখানকার মুসলিমদের ঘিরেই শুধু নয়, সেখানকার হিন্দু পুরোহিত বা সাধারণ মানুষ, তাদের মধ্যেও আছে৷ সাধারণ কাশ্মীরিরা সে ভারত বা পাকিস্তান যে অংশেই থাকুন, তারা নিজেদের কাশ্মীরি বলতে পছন্দ করেন৷ জওহারলাল নেহরুরও তো কাশ্মিরী রুট আছে৷ যেই সেই ভূমির সঙ্গে জড়িত, তাকেই ‘স্যাকরেড' (পবিত্র) হিসেবে মনে করা হয়৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
তার মানে আপনি বলছেন যে, ধর্ম সেখানে বড় বিষয় নয়?
ঠিক তাই৷ একজন মুসলিম কাশ্মিরীর কাছে অমুসলিম কাশ্মীরিও শুধু কাশ্মীরিই৷ ধর্ম এখানে বিষয় নয়৷ তবে এটা ঠিক যে সেখানে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা আছে এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা আছে৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মানুষদের অধিকাংশেরই পাকিস্তানের প্রতি সহমর্মিতা রয়েছে৷ সুতরাং দুই দেশ যে অংশগুলো দখলে রেখেছে, সেখানেও এর প্রতিফলন রয়েছে৷ তবে ছোটবেলা থেকে যেই কাশ্মীরির সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে, আমি প্রশ্ন করেছি যে, আপনি কোন কাশ্মীরের সঙ্গে যেতে চান, পাকিস্তান না ভারত? তারা উত্তরে তৃতীয় আরেকটি অপশন বেছে নিয়েছেন৷ তা হলো স্বাধীন কাশ্মীর৷
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, এটি সাধারণ কাশ্মীরিদের চাওয়া, শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নয়?
অবশ্যই৷ বাইরে থেকে যাদের আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী বলছি, স্থানীয়রা তাদের জাতীয়তাবাদী বলছেন৷ স্থানীয় মত তাদের পক্ষে৷ তারা পাকিস্তানপন্থি বা ভারতপন্থি নন৷ যারা কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশে মাইগ্রেট করেছেন, তারাও ব্যক্তিগত পরিসরে এমন কথাই বলেন৷ অবশ্য জনসন্মুখে তারা এমন কথা বলতে পারেন না৷ যাদের আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী বলছি, তাদের পাকিস্তান ও ভারত কেউই পছন্দ করছে না৷ কিন্তু স্থানীয়দের কাছে তারা নায়ক৷
আপনি কতটা সংঘাত দেখেছেন?
আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো আমরা এক সহপাঠীর ভাই ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে গেলেন যুদ্ধ করতে৷ সেটা ৯৪-৯৫ সালের কথা৷ আমার বয়স তখন ১৩ বছর৷ ১৯৮৯ সালে মকবুল ভাটের উত্থানের পর ভারতীয় কাশ্মীরে সেনা উপস্থিতি বাড়তে লাগল৷ পাকিস্তানি অংশেও সেনা উপস্থিতি বাড়ল৷ পাকিস্তানি অংশের মদদে সেখানে জিহাদি প্রশিক্ষণের ধারণাটি সবসময়ই ছিল৷ সেখানকার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে যুদ্ধ করতে যেতেন তারা৷ সে যাই হোক, খবর এল ওয়াকার ইয়াসিন, আমার বন্ধুর ভাইটি মারা গেছেন৷ আমরা স্কুলে তখন৷ সবাই তাদের বাড়িতে গেলেন৷ তাদের পরিবারের সদস্যরা খুব গর্ব অনুভব করলেন৷
কাশ্মীর নিয়ে কে কী বলছেন
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় বিল পাস হওয়ার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর হারাতে চলেছে তার সাংবিধানিক ‘বিশেষ মর্যাদা’৷ এর প্রতিক্রিয়া কোথায় কেমন, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
ওমর আবদুল্লাহ, জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
ওমর আবদুল্লাহসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমানে গৃহবন্দি৷ রাজ্যসভায় সদ্য পাস হওয়া বিল প্রসঙ্গে ওমর আব্দুল্লাহ বেশ কয়েকটি টুইট করেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে৷ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মেহবুবা মুফতি, জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী
মেহবুবা মুফতিও এখন গৃহবন্দি৷ এই পদক্ষেপের চরম বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান এভাবে বদলানো মানে কাশ্মীরের জনগণকে ক্ষমতাচ্যূত করা৷ শুধু তাই নয়, অটলবিহারি বাজপেয়ী কাশ্মীরের মানুষের কথা শুনে তারপর সিদ্ধান্তে আসার যে ধারা চালু করেছিলেন, মোদী সরকার সেই ধারাকে অসম্মান করেছে৷’’
ছবি: Imago/Hindustan Times
গুলাম নবি আজাদ, কংগ্রেস নেতা
রাজ্যসভা, যেখানে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেবার প্রস্তাব পেশ করা হয়, সেখানে কংগ্রেসের বরিষ্ঠ সদস্য গুলাম নবি আজাদ এই বিলকে ‘ভারতের সংবিধানকে খুন’ করার সাথে তুলনা করেন৷ একই সুর শোনা যায় সিপিআই, সিপিআই (এম) নেতৃত্বের বক্তব্যেও৷
ছবি: AP
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী
আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এমনিতে বিজেপি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের চরম সমালোচক৷ কিন্তু কাশ্মীর বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ তিনি আশা করেন যে এই পদক্ষেপের ফলে কাশ্মীরের মানুষ শান্তি ফিরে পাবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
পক্ষে যে যে দল
স্বাভাবিকভাবেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাবিত এই বিলের পাশে ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ ও তাদের জোটসঙ্গীরা৷ বর্তমানে বিজেপির জোটসঙ্গি দলগুলি হলো টিআরএস, শিবসেনা, বিএসপি, এআইএডিএমকে ও টিডিপি৷ কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাশ্মীর বিষয়ে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আম আদমি পার্টিও৷
ছবি: Reuters
বিপক্ষে যে যে দল
ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীর আসনে বসেন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে ও সিপিআই (এম)সহ বামপন্থি দলের সদস্যরা৷ এই দলের সাংসদরা রাজ্যসভা উত্তাল করে তোলেন কাশ্মীরের মর্যাদা বদলের এই বিল পাশ হওয়ার প্রতিবাদে৷
ছবি: DW/P. Mani
কাশ্মীরের দলগুলি যা বলল
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল পিডিপি অর্থাৎ পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি৷ সেই দলের সদস্যরা রাজ্যসভায় বিল পেশ করার মূহুর্তে ব্যাপক প্রতিবাদ করেন৷ প্রতিবাদস্বরূপ দুই সাংসদ ফৈয়াজ আহমেদ মীর ও নাজির আহমেদ ভারতের সংবিধান ছিঁড়ে ফেলেন রাজ্যসভায়৷ তখন তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন রাজ্যসভার স্পিকার ভেঙ্কাইয়া নাইডু৷ পরে তারা সংসদের বাইরে প্রতিবাদ করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
কাশ্মীরের মর্যাদা বদলের বিল পাশ হওয়া ঘিরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে৷ পাকিস্তান পিপলস পার্টি পিপিপি’র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি একটি টুইটে বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপের ফলে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে বর্তমান ভারতের আগ্রাসী ভূমিকা পরিষ্কার হয়েছে৷’’
ছবি: DW/Shamil Shams
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয় যা বলল
রাজ্যসভায় সোমবার বিল পাস হবার পর থেকেই পাকিস্তানের সরকার নড়েচড়ে বসে৷ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘‘এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তান ও ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনতা কখনোই মেনে নেবে না৷ এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বেঁধে দেওয়া নিয়মের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে রয়েছে৷ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shahid
9 ছবি1 | 9
আসলে এখানে জিহাদি এলিমেন্টের দু'টি দিক আছে৷ নাইন ইলেভেনের আগের জেহাদের ধারণার কথা বলছি, যখন পর্যন্ত জিহাদ ‘আন্তর্জাতিক শব্দ' ছিল না এবং এর অর্থ ‘সন্ত্রাসবাদ' করা হতো না৷ তখন এর অর্থ স্থানীয়ভাবে ‘মুক্তিসংগ্রাম' করা হতো৷
কিন্তু নববইয়ের দশকে জামাতুল দাওয়া ও আরো অনেক ধর্মভিত্তিক সংগঠন ধর্মের নামে কাশ্মীরের ‘মুসলিম ভাই'দের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান৷ তখন আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে অনেকে জিহাদে যোগ দিতে আসতে থাকলেন৷ এতে সমস্যা তৈরি হতে লাগল৷ যারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে যুদ্ধ করছিলেন, তারাও ক্ষুব্ধ হলে অনেক কারণে৷ এক, প্রথমত তাদের মুক্তির সংগ্রাম দখল হয়ে যাচ্ছিল৷ দুই, এছাড়া খবর আসতে লাগল যে জিহাদিরা স্থানীয় মেয়েদের ধর্ষণ করছে, জোর করে বিয়ে করছে এসব৷
আর পাকিস্তান অংশেও স্থানীয়রা তাদের গ্রহণ করছিলেন না৷ তারা বলছিলেন যে, ‘ধন্যবাদ আপনারা এসেছেন৷ সহযোগিতা করতে চেয়েছেন৷ কিন্তু আমাদের প্রয়োজন নেই৷' পাকিস্তানিরা পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরে এসে বসবাস করতে শুরু করবেন -এই ভয় ছিল স্থানীয় কাশ্মীরিদের৷
কিন্তু নাইন ইলেভেনের পর সব বদলে গেল৷ তখন জিহাদ মানে সন্ত্রাস হয়ে গেল৷ জাতীয়তাবাদীরা যারা যুদ্ধ করে মুক্ত দেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন তারা রাজনৈতিক পথ বেছে নিলেন, কারণ সংঘাতের পথ ধরে এগুলে তাতে সন্ত্রাসবাদের তকমা লেগে যাচ্ছিল৷ তাতে তাদের লক্ষ্য অর্জিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল৷ এই সুবিধা ভারত নাইন ইলেভেনের পর নিয়েছে৷
কাশ্মীর ইস্যুতে বিস্ফোরক সব মন্তব্য
কাশ্মীর বরাবরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কারণ৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪২ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু এ বিতর্কে এনেছে নতুন মোড়৷ খোদ ভারতের মধ্যেই এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷ দেখুন কিছু মন্তব্য৷
ছবি: Getty Images/R. Bakshi
আলোচনার সময় শেষ: মোদী
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কাশ্মীরে আক্রমণের পেছনে পাকিস্তানের মদদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জঙ্গি ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া মানে তাদের উসাহিত করা৷
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau
ভারতকে প্রতিহত করা হবে: ইমরান খান
কোনো প্রমাণ ছাড়াই পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ ঘটনার তদন্তে পাকিস্তান সহায়তা ও আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু ভারত কোনোভাবে আক্রমণ করে বসলে, সাথে সাথে তার কড়া জবাব দেয়া হবে বলেও জানান ইমরান খান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
নির্বাচনের আগেই কেন: মমতা
লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে কেন এতো বড় হামলার ঘটনা ঘটলো, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এর আগে ‘তদন্ত না করে’ পাকিস্তানের ওপর ‘দোষ চাপানো’ উচিত নয় মন্তব্য করেও বিতর্কের জন্ম দেন মমতা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পাকিস্তানের ধ্বংস জরুরি: কঙ্গনা রানাউত
বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বলিউডের বর্তমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত৷ পাশাপাশি আহ্বান জানিয়েছেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার৷ বলছেন, শুধু পাকিস্তানের শিল্পীদের ভারতে নিষিদ্ধ করলেই হবে না, পাকিস্তানকেই ধ্বংস করতে হবে৷
ছবি: AP
বন্দুক হাতে থাকলেই হত্যা: লে. জে. ঢিলন
কাশ্মীরে কেউ বন্দুক হাতে নিলেই তাকে হত্যা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের চিনার কর্পসের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল কে জে এস ঢিলন৷ বন্দুক হাতে নিলে তা কেবল আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Imago/Zuma Press
কাশ্মীরকে বর্জন করুন: তথাগত রায়
‘কাশ্মীরে যাবেন না, কাশ্মীরী পণ্য কিনবেন না’, সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে চলা এমন বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন মেঘালয় রাজ্যের গভর্নর তথাগত রায়৷ কিন্তু অনেকেই অবশ্য এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, বলছেন, কাশ্মীর ভারতের অংশ, কাশ্মীরীরা ভারতের নাগরিক৷ ফলে নিজের দেশের একটা অঞ্চলের সব মানুষকে শত্রু বানিয়ে দেয়া উচিত নয়৷
ছবি: Reuters
পুরো দেশকে দোষ দেয়া যায় না: নভজ্যোত সিং সিধু
‘কিছু হাতে গোণা মানুষের জন্য পুরো দেশকে দায় দেয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড় খেলোয়াড় ও পাঞ্জাবের পর্যটনমন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধু৷ এমন মন্তব্যের কারণে তাঁকে জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বর্জন করুন: হরভজন সিং
আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলতে ভারতের ক্রিকেট দলকে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ভারতীয় অফস্পিনার হরভজন সিং৷ প্রয়োজনে ম্যাচটি ওয়াকওভার দিয়ে দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ হরভজন মনে করেন, ভারতের যে শক্তি, তাতে একটি ম্যাচ না খেললেও তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শক্তি রাখে৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
আমরা দেখেছি যে, সম্প্রতি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে৷ পাকিস্তান অংশের কী অবস্থা?
নিরাপত্তার নামে সেখানেও কড়াকড়ি আছে৷ প্রচুর সেনা উপস্থিতি আছে৷ সীমান্ত এলাকায় সম্প্রতি আপনি জানেন গুলিবিনিময়ও হয়েছে৷ তবে পারস্পরিক যোগাযোগের অবস্থা ভারত অংশের চেয়ে পাকিস্তান অংশে ভালো৷ আসলে কাশ্মীরিদের নিয়ন্ত্রণে ভারত ও পাকিস্তানের ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে৷ অবশ্যই পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরিদের তুলনামূলক সুদৃষ্টির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ তাই সেখানে সেনা উপস্থিতি থাকলেও তারা ভারতীয় অংশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করছেন৷
বাংলাদেশিদের প্রতি কাশ্মিরীদের ভাবনা কী?
সাধারণভাবে ইতিবাচক৷ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম এবং তারা একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিল, সে জায়গা থেকে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে দু'টি ভাগ আছে৷
একদল কাশ্মিরী মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ডে ভারতের ষড়যন্ত্র ছিল৷ আরেকদল পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন৷ তারা মনে করে পাকিস্তানিরা শুধু ১৯৭১ সালেই নয়, তার আগেও বাংলাদেশে পাশবিকতা চালিয়েছে৷ তবে সবাই বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন করেন৷ তারা মনে করেন, দু'টি দাপ্তরিক ভাষা থাকতে কোনো সমস্যা নেই৷ তবে যখন পাকিস্তান-বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলে তখন পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরিরা পাকিস্তানকেই সমর্থন করেন৷ আর বাংলাদেশ-ভারত খেললে বাংলাদেশ৷
অপরূপ কাশ্মীরের আসল রূপ
কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য নিয়ে অনেক কবিতা, বহু গান রচিত হয়েছে৷ আমাদের রবীন্দ্রনাথও কাশ্মীরের ঝিলম নদী নিয়ে কবিতা লিখেছেন৷ অপরূপ সেই কাশ্মীর নিয়েই দেখুন ছবিঘর৷
ছবি: M.Davari
সব ধর্মের অবস্থান
নানা সংস্কৃতি আর ভাষার মানুষের বসবাস কাশ্মীরে৷ আছে নানা ধর্মের মানুষও৷ কাশ্মীক উপত্যকার অধিকাংশ মানুষ মুসলমান৷ হিন্দুদের বাস জম্মু এলাকায়৷ আর লাদাখে আছেন বৌদ্ধরা৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid
জাফরান
কাশ্মীরের আরেকটি বিখ্যাত জিনিস জাফরান৷ ইরান আর স্পেনের পর ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান রপ্তানিকারক৷
ছবি: imago/Xinhua
‘পুবের সুইজারল্যান্ড’
সুন্দর সব ফুলের বাগান আর বরফে ঢাকা সাদা পাহাড়চূড়ার দেখা পাওয়া যায় কাশ্মীরে৷ তাই অনেকে কাশ্মীরকে পুবের সুইজারল্যান্ড বলে ডাকেন৷ ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ১১ লক্ষ পর্যটক গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বরফ সাদা কাশ্মীর
শীত এলে পুরো কাশ্মীরের রঙ সাদা হয়ে যায়৷ তখন শীতকালীন খেলাধুলার জন্য কাশ্মীর উপযুক্ত হয়ে ওঠে৷ কিন্তু অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে সেটা সম্ভব হয় না৷
ছবি: UNI
নদী
কাশ্মীরের হিমালয় অংশ থেকে ঐ অঞ্চলের প্রায় ২০টি নদী পানি পেয়ে থাকে৷ নদীগুলোর মধ্যে সিন্ধু, চেনাব আর ঝিলম সবচেয়ে বড়৷ এছাড়াও রয়েছে নীলম, রবি, দোদা ইত্যদি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নদী৷ বেশিরভাগ নদীই ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত হয়েছে৷
ছবি: UNI
কাঠ
জাফরানের মতো কাশ্মীরের কাঠও বেশ বিখ্যাত৷ ভালো ক্রিকেট ব্যাটের জন্য কাশ্মীরের কাঠের যেন বিকল্প নেই৷ এই কাঠ দিয়ে নৌকাও তৈরি হয়৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto/Y. Nazir
সুফিবাদ
ষোড়শ শতকে কাশ্মীরে সুফিবাদের আগমন ঘটেছিল৷ সেই থেকে সেখানকার মানুষ সুফিবাদের চর্চাকারীদের পছন্দ করেন৷
ছবি: AP
মুভিতে কাশ্মীর
গত শতকের আশির দশকে বলিউডের ছবি নির্মাতাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘লোকেশন’ ছিল কাশ্মীর৷ সেই সময়টা ছিল কাশ্মীরের জন্য স্বর্ণযুগ৷ কিন্তু এখন সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাতের ঘটনা ঘটছে৷ ফলে নির্মাতারাও সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ বর্তমানে সারা বছরে মাত্র এক থেকে দু’টি ছবির শ্যুটিং হয় কাশ্মীরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘাত কবে থামবে?
১৯৪৮ সাল থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে৷ অদূর ভবিষ্যতে সেটার সমাধান হবে কিনা তার কোনো উত্তর কারও জানা নেই৷
ছবি: dapd
9 ছবি1 | 9
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় নেয়া সিদ্ধান্তে কী প্রভাব পড়েছে কাশ্মীরের সাধারণের মাঝে?
এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷ শুধু ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র টেকে না, তার প্রমাণ বাংলাদেশ৷ সেখানকার ভাষা আছে, সংস্কৃতি আছে৷ প্রত্যেক কাশ্মীরি, এমনকি যারা পাকিস্তানবিরোধী ও ভারতপন্থি অথবা স্বাধীনতাকামী, তারা কেউ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি৷ তারা মনে করছে, ভারত চায় কাশ্মীরের ডেমোগ্রাফি বদলে দিতে৷ তাদের ধারণা, ভারত নন-কাশ্মীরিদের এখানে আনতে চাইছে, বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এখানে আনতে চাইছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাত বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ তারা এখানে আসবে, জমি কিনবে, এখানে থাকা শুরু করবে, কাজ করবে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের কাছে বড় কথা নয়৷ তারা মনে করেন, এভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না৷ কারণ শান্তি থাকবে না৷ সংঘাত গণহত্যায় রূপ নিতে পারে৷ বিদ্রোহীরা চুপ করে থাকবে না৷ ভারতের মনোভাব হলো, যে করেই হোক এটা বদলাতেই হবে৷ এতে কাশ্মীরিদের মাঝে আত্মপরিচয়ের সংঘাত তৈরি হচ্ছে৷
বিশ্বের অনেক জায়গাতেই আমরা দেখেছি, স্থানীয়দের মধ্যে ‘সেটেলার'দের ঠেলে দিয়ে প্রথমে সংঘাত ও পরে ধীরে ধীরে শান্তির পথ তৈরির একটি প্রক্রিয়া বা ‘থিওরি' বিদ্যমান৷ বাংলাদেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷ আপনি কি মনে করেন এখানেও তেমনটি হবে?
এটা সত্য শান্তি আসে অনেক অশান্তির পর, যখন দেখা যায়, অশান্তিতে আর কোনো ফায়দা হচ্ছে না৷ সেটা এখানেও হতে পারে৷ কাশ্মীরিরাও বোঝেন যে, আপোষ করতে হবে একটা সময়ে৷ কারণ দেশভাগের পর থেকে শুরু, ৭২ বছরের এই সংঘাত৷ বাজপায়ি ও মোশাররফের সময়ে যে সমাধানসূত্র এসেছিল তার পক্ষে ছিলেন কাশ্মীরিরা৷ সেখানে ছিল যে, যে, তিনটি অংশ হবে৷ লাদাখ ও জম্মু অংশ ভারতের সঙ্গে, কাশ্মীর উপত্যকা হবে স্বাধীন এবং গিলগিত-বালতিস্তান পাকিস্তানের সঙ্গে৷ এই সমাধানটি রাজনৈতিকভাবে সম্ভব ছিল৷ মনে হচ্ছিল, আশা আছে৷ কিন্তু এখন যেটা হলো, তাতে আশা নিভে গেছে সাধারণের৷ ভারতের ভাষ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষকে স্বস্তি এনে দেবে৷ তবে সেটা এত সহজ হবে না৷
কাশ্মীরে উড়ছে ভারতের পতাকা
সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে স্বকীয়তা নিয়ে থাকা জম্মু-কাশ্মীরে উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা৷ বলা হচ্ছে, ভাষা, ধর্ম ও বর্ণে এই অঞ্চলে যে বৈচিত্র্য, সেটাকে পুঁজি করেই জম্মু-কাশ্মীরও লাদাখকে করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বাতিলে বদল
ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকভাবে কাশ্মীরের যে অনন্য চরিত্র, তা ৩৭০ ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে বদলে ফেলা যাবে কি না তানিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ কারণ জম্মু ও কাশ্মীরের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং রাজনীতি ভারতের অন্য অঞ্চলের থেকে একেবারেই আলাদা৷
ছবি: Imago Images/S. Majeed
বহু ভাষার মিশ্রণ
কাশ্মীরের উপত্যকা ও পাকিস্তানি অঞ্চলের বেশিরভাগ মুসলিম উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলেন৷ জম্মুর পশ্চিমাঞ্চলে মুসলিম ও পূর্বে বসবাসকারী হিন্দুদের ভাষা হিন্দি, পাঞ্জাবি ও ডোগরী৷ আর লাদাখের বৌদ্ধরা কথা বলেন লাদাখি ভাষায়৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
ধর্মীয় বৈচিত্র্য
কাশ্মীরে থাকেন মুসলিম, পন্ডিত ও শিখরা; জম্মুতে হিন্দু-মুসলিম এবং লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা বসবাস করায় এই অঞ্চলে ছিল ধর্মীয় বৈচিত্র্য৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid
খাবার-পোশাকেও ভিন্নতা
জম্মু ও কাশ্মীরীদের জীবনযাত্রা ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষের থেকে ভিন্ন৷ তারা যে খাবার খান, যেসব পোশাক পরেন সেগুলোর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য৷ আর লাদাখের জনগণ অনুসরণ করেন তিব্বতীয়দের৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
‘কাশ্মীরিয়াত’
মুসলিম, হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধের ধর্মীয় এবং নিজস্ব সামাজিক রীতি জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে ভিন্নধর্মী একটি সম্মিলিত সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যাকে ‘কাশ্মীরিয়াত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
ক্ষোভ
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চল৷ তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে ফুঁসে উঠেছেন কাশ্মীরের জনগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শিথিল হলেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
নতুন আশা
‘৩৫এ’ ধারা বাতিল হওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে যে কেউই এখন সম্পত্তি কিনতে পারবেন৷ এই দুই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও করা যাবে সরকারি চাকরির আবেদন৷ সংখ্যালঘু সংরক্ষণ আইনের সুবিধার পাবেন কাশ্মীরে সংখ্যালঘুরা এবং কার্যকর হবে তথ্য অধিকার আইন৷