লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে৷ তারা এবার জানিয়েছে, সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কোবানি শহরের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট৷
বিজ্ঞাপন
সংস্থার প্রধান রামি আব্দুলরহমান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ‘‘কোবানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি দখল করে নিয়েছে আইএস বা আইসিস৷ শহরের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব অংশের একাংশ এখন আইএসের নিয়ন্ত্রণে৷''
মূলত কুর্দি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কোবানির দখল নিতে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করছে আইএস৷ তাদের ঠেকাতে লড়ে যাচ্ছে কুর্দিরা৷ আকাশ থেকে বিমান হামলা চালিয়ে কুর্দিদের সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তারপরও কোবানির দখল ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা৷
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
কিন্তু কোবানি যেহেতু তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের একটি শহর, তাই আইএস যদি কোবানির দখল নিয়ে নেয়, সেক্ষেত্রে তারা তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য কতটা হুমকি হতে পারে – তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়৷ ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল তুরস্কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে, চলবে শুক্রবার পর্যন্ত৷ আলোচনায় আইএস-কে ঠেকাতে তুরস্কের সহায়তা চাওয়া হবে৷ কিন্তু তুরস্ক এক্ষেত্রে আগেই একটি শর্ত দিয়ে রেখেছে৷ সেটা হচ্ছে, তারা (তুরস্ক) আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়ার অঙ্গীকার করে৷ কিন্তু এটা হওয়া সম্ভব নয়৷ কারণ পেন্টাগনের মুখপাত্র বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘সত্য হলো, এই মুহূর্তে সিরিয়ার অভ্যন্তরে আমাদের কোনো ইচ্ছুক, যোগ্য ও কার্যকর অংশীদার নেই৷''
জার্মানিতে কুর্দিদের বিক্ষোভ
কোবানিতে আইএস-কে ঠেকাতে তুরস্ক কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তুরস্ক সহ ইউরোপের কুর্দিরা প্রতিবাদ করছে৷ জার্মানির কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ চলছে৷ বুধবার সারা রাত হামবুর্গ ও সেলে শহরে বিক্ষোভ হয়েছে৷ সেখানে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে ইসলামপন্থি সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে৷ দক্ষিণপূর্ব তুরস্কে এ ধরনের সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে৷