ভারতের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাস থেকে বোঝা যায় কোন পথে বইছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের নির্বাচন কমিশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক৷
বিজ্ঞাপন
সংসদীয় গণতন্ত্রের হিসাবে ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি৷ কিন্তু জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয় বেশি৷ ঠিক সেখানেই প্রয়োজন পড়ে একটি নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল ও কার্যকরী নির্বাচন কমিশনের৷
দেশভাগের পর স্বাধীন ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ১৯৫০ সালের ২৫শে জানুয়ারি গঠিত হয় প্রথম নির্বাচন কমিশন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুকুমার সেনের দায়িত্বে স্বাধীন ভারতের প্রথম দু’টি (১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে) সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়৷
নির্বাচন কমিশনে সংস্কার
১৯৯০ সাল থেকে বলা যায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিলো৷ এর আগে, নির্বাচন কমিশন বলতে ছিলেন শুধুই একজন প্রধান কমিশনার৷ কিন্তু পরে, ১৯৯০ সালে নতুন আইন প্রনয়ন করা হলে, অন্তত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গড়ার প্রচলন শুরু হয়৷ আইন বদলের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন আর ভি এস পেরি শাস্ত্রী৷ তাঁর নেতৃত্বেই ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আসে অসংখ্য নতুন ধারা৷ ভোট দিতে পারার বয়েস কমিয়ে ১৮-তে আনার সাথে সাথে একাধিক সদস্যের নির্বাচন কমিশনের শুরুও শাস্ত্রীর আমলে৷
শাস্ত্রীর পর নির্বাচন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব পান ভারতের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভি এস রামাদেবী৷ কিন্তু খুব বেশিদিন তিনি সেই দায়িত্বে থাকেনি৷
রামাদেবীর পর নির্বাচন কমিশনের ভার নেন টি এন সেশন ও তাঁর অধীনেই (১৯৯০ থেকে ১৯৯৬) ভারতের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আসে৷ তামিলনাড়ুর এই সাবেক প্রশাসনিক ক্যাডারকে অনেকে ‘চেঞ্জমেকার’ বা পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে চেনেন৷ সেশনের নেতৃত্বে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আসে স্বচ্ছতা, করা হয় নির্বাচনী আইনের ব্যাপক সংস্কার৷ আমলাতান্ত্রিকতা ও রাজনীতিকদের একাধিপত্য থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি ভারতের নির্বাচনকে৷ পুলিশ-প্রশাসনের ওপর ক্ষমতা ধরে রেখে আইন শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্রের রক্ষায় নামেন৷ টি এন সেশনের হাত ধরেই ভারতে শুরু হয় পরিচয়পত্রের প্রচলন - দুর্নীতিমুক্ত হয় বিশাল ভারতের তার চেয়েও বিশাল নির্বাচন ব্যবস্থা৷
সেশনের পরও কিছু বছর ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার চলতে থাকে৷ ২০০১ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন মেঘালয়ের আধিকারিক জে এম লিংডো৷ সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদীর সাথে তাঁর বিরোধ দেখা দিলেও সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে ২০০২ সালের নির্বাচন স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন হয়৷
ভারতের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও পরিচ্ছন্নতা আনার পেছনে নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের সুযোগ খুব কমই ছিলো বলা যায়৷ পরবর্তীতেও নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের ভোটাধিকার সহ আরো অনেক বদল আনা হয়৷ ২০১০ সালে ভারতের প্রথম সংখ্যালঘু নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হন এস ওয়াই কুরেশি৷ ২০১৫ সালে প্রবল মাওবাদী সংঘর্ষের মধ্যেও সংবাদমাধ্যমের বাড়তি নজর এড়িয়ে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় নির্বাচন ভি এস সম্পতের কর্তৃত্বে৷ কিন্তু মূলত ২০০৯ সালের পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে শুরু করে৷
দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলো
বাংলাদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাবার পর দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল পাকিস্তানেই এটি চালু আছে৷ তবে এ অঞ্চলে যেমন রাজতন্ত্র আছে, তেমনি আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতন্ত্রও৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন কমিশনের দায়িত্ব৷ কমিশন স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভারতের নির্বাচন কমিশন
ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একটি৷ মূলত লোক সভা, রাজ্য সভা, রাজ্যের বিধানসভা, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের৷ এছাড়া কোনো বিশেষ সময়ে যখন বিদ্যমান আইনে সুরাহা হচ্ছে না, তখন নির্বাচন কমিশনের সেখানে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে৷
ছবি: A.K Chatterjee
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ কোনো সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবার পর বা কোনো কারণে সংসদ বিলুপ্তির পর এই সরকার দায়িত্ব নেয়৷ তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ তবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ কমিশন জাতীয়, প্রাদেশিক ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন
এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো গণতন্ত্র হলো শ্রীলঙ্কা৷ সেখানেও রাষ্ট্রপতি, সংসদ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: AP
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন
মালদ্বীপে আলাদা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে মাত্র এক দশক আগে৷ ২০০৮ সালের আগষ্টে এই স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় নির্বাচন আয়োজন করত৷ পরে এই অফিসটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপতিই কমিশনার নিয়োগ দিতেন৷
ছবি: ADAM SIREII/AFP/Getty Images
নেপালের নির্বাচন কমিশন
১৯৫০ সালের নেপাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নেপালের নির্বাচন কমিশনের জন্ম৷ এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধন করার দায়িত্ব রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাঁধে৷ ছয় জন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশন ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
ভূটানের নির্বাচন কমিশন
ভূটানে রাজতন্ত্র আছে৷ তবে সংসদও আছে৷ সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার, জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের প্রধানের দেয়া তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন কমিশনারকে নিয়োগ দেন রাজা৷ কমিশনের ক্ষমতাও অনেক৷ নির্বাচন ছাড়াও বিধি তৈরি, নির্বাচন পদ্ধতি রিভিউ করাসহ যে কাউকে তলব, তদন্ত ও কিছু অ্যাডজান্কটিভ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন
যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতার কারণে আফগানিস্তানে ক্ষমতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাতেও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে সংবিধান অনুযায়ী, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
দলীয় রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশন
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভেতরে উঠতে থাকে নানা রকমের অভিযোগ৷ তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এন গোপালস্বামী তাঁরই সহকর্মী, আরেক নির্বাচন কমিশনার নবীন চাওলার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ হবার অভিযোগ আনেন৷ তদন্তের পর জানা যায় যে সত্যিই তিনি নিয়মিত পরামর্শ চাইতেন কংগ্রেসে উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের কাছে৷ কিন্তু ক্ষমতায় তখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার৷ দলের জোর খাটিয়ে গোপালস্বামীর অভিযোগকে সম্পূর্ণ দাবিয়ে দিতে সক্ষম হয় তারা৷ ক্রমেই কমে যেতে থাকে ভারতের নির্বাচনে কমিশনের একক অধিকার ও বাড়তে থাকে ক্ষমতার অপব্যবহার৷
তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অচল কুমার জ্যোতির পরিচালনায় ২০১৭ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে নতুন করে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে৷ বলা হয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনকালীন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরোধিতা করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একই আচরণকে তিনি এড়িয়ে যান৷
সংবিধান অনুযায়ী, ভারতের রাজনৈতিক গঠন কিছুটা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদলে গড়া৷ ফলে, নির্বাচন কমিশনও রাজ্য ও কেন্দ্রের জন্য ভিন্ন৷ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে এই দুই কমিশনের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ কেন্দ্রীয় কমিশনের বলা সত্ত্বেও রাজ্য কমিশনের ক্ষমতাসীন দল, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি তুলনামূলকভাবে নরম মনোভাব নিয়ে চলেছিলো, যার ফলে বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রের ফলাফল হয় সব গবেষণার থেকে আলাদা৷
আসন্ন ২০১৯
আগামী বছর ভারতে কেন্দ্রীয় লোকসভা নির্বাচনের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ সহ আরো কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন৷ স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ নাগরিক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনেক প্রত্যাশা৷ বিগত কয়েক বছর ধরে যেভাবে দলীয় ক্ষমতার প্রদর্শনে আক্রান্ত হয়েছে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও ভারতের বৃহত্তর গণতন্ত্র চর্চা, তাতে আগামী নির্বাচনে কী হবে তা নিশ্চিত করে বলার অবকাশ এখনই নেই৷ যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনার৷ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন থেকে একদম আলাদাভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সদস্য নিয়োগ গোটাটাই ঘটে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে, যার ফলে দলীয় প্রভাব বিস্তারের সুযোগও থাকে বেশি৷
তবুও আশা করা যায় যে সংবিধানে সেই জায়গাটুকু থাকার কারণে মুখ্য নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বা ভোটকেন্দ্রগুলির ওপর নজরদারী আরো কঠোরভাবে করতে সক্ষম হবে৷ ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৪ সালে কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনের হাত ধরেই কংগ্রেস-ইউপিএ জোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় এসেছিলো বর্তমান বিজেপি-এনডিএ সরকার৷ ভোটবাক্স থেকেই জানা গিয়েছিলো কোন পথে চলেছে বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক দিশা৷ ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হতে পারে জনতার মনোভাবের সঠিক বহিঃপ্রকাশ৷
একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র ভারতের গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্যেই এখন প্রয়োজন, তা ঠিক নয়৷ যেভাবে সংস্কারের জোয়ার এনে গোটা উপমহাদেশে উদাহরণ হয়েছিলেন টি এন সেশনের মতো যুগান্তকারী ব্যক্তিত্বরা, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি যেভাবে গণতান্ত্রিক আচরণ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, তা থেকে মুক্ত রাজনৈতিক চেতনাকে পুনরুদ্ধারের রাস্তা অবশ্যই সুস্থ নির্বাচনের সংস্কৃতি, যা একটি নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল নির্বাচন কমিশন ছাড়া দিবাস্বপ্ন৷
এক নজরে ভারতের আঞ্চলিক দল
২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়া এবং টিকিয়ে রাখায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দলগুলি নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
ছবি: UNI
দলিতের দল বহুজন সমাজ পার্টি
উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রাণপুরুষ, দলিত নেতা ডক্টর বি. আর আম্বেদকরের আদর্শে ১৯৮৪ সালে দলটি গঠন করেন কাঁসিরাম৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী তিনি৷ নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন হাতি৷ বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপির চারজন থাকলেও লোকসভায় একজনও নেই৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
ক্ষমতার আশায় সমাজবাদী পার্টি
১৯৯২ সালে মূল জনতা দল ভেঙে গঠিত সমাজবাদী পার্টি (এসপি) উত্তরপ্রদেশে খুবই প্রভাবশালী৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুলায়েম সিং যাদব, তবে বর্তমান দলনেতা অখিলেশ সিং যাদব৷ দলের মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র৷ নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল৷ ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে শাসক দল বহুজন সমাজ পার্টিকে পরাজিত করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করে৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭টি এবং ১৩টি৷
ছবি: picture-alliance
দাঁড়িপাল্লায় অকালী দল
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ ও পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল শিরোমণি অকালী দল৷ সব থেকে পুরানো এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি ‘অকালী’ নামেই পরিচিত৷ নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা৷ বর্তমান সভাপতি সুখবীর সিং বাদল৷ গুরুদোয়ারার মতো শিখ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর দল৷ প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে৷ বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অকালী দলের সাংসদ চারজন, বিধানসভায় ১১৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৫টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দক্ষিণ ভারতের এআইএডিএমকে
অখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, বা সংক্ষেপে এআইএডিএমকে, ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রাজনৈতিক দল৷ ১৯৭২ সালে এম.জি. রামচন্দ্রন কর্তৃক এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় প্রতীক জোড়া পাতা৷এই দল সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দ্রাবিড় আঞ্চলিক পার্টি৷ ‘আম্মা’ জয়ললিতার নেতৃত্বে ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে এআইএডিএমকে৷ রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল এআইএডিএমকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
উদীয়মান ডিএমকে?
দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, সংক্ষেপে ডিএমকে তামিলনাড়ু রাজ্যের পুরনো আঞ্চলিক দল৷ প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই৷ ‘জাস্টিস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দ্রাবিড় কড়গম পার্টি ভেঙে গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে আমৃত্যু দলের নেতৃত্ব দেন করুণানিধি৷ মতাদর্শ সামাজিক গণতন্ত্র ও আঞ্চলিকতাবাদ এবং নির্বাচনি প্রতীক উদীয়মান সূর্য৷ বিরোধীনেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর আগামী ভোটে কেমন ফল করে ডিএমকে, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sankar
আম জনতার আম আদমি পার্টি
২০১২ সালে গঠিত আম আদমি পার্টি বর্তমানে দিল্লির শাসক দল৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারী আন্না হাজারে ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নামে আম আদমি পার্টি ও সরকার গঠন করে৷ অবিলম্বে লোকপাল বিল আনার শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা না থাকায় ৪৯ দিনের মাথায় ইস্তফা দিলেও ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Reuters/A. Mukherjee
বিজু-র জয়রথ কি বজায় থাকবে?
১৯৯৭ সালে গঠিত বিজু জনতা দল বর্তমানে ওড়িষায় ক্ষমতাসীন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের ছেলে নবীন পট্টনায়েক এখন মুখ্যমন্ত্রী৷ পিতার নামেই দলের নাম৷ দলের প্রতীক চিহ্ন শঙ্খ৷ নবীন পট্টনায়েক ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন৷ ২০০০ সাল থেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় নবীন পট্টনায়ক এখন মোট চারবারের মুখ্যমন্ত্রী৷