বাংলাদেশে ২০১৮ সালের এই নির্বাচন অনেক দিক দিয়ে প্রথম৷ টানা তিনবার কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকেনি৷ দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়নি৷ সবাই মিলে এত এত লজ্জাও পায়নি৷
বিজ্ঞাপন
অফিসে নতুন বস এসেছেন৷ দ্রুত তাঁর মন পেতে কাজকর্ম বাদ দিয়ে অনেক তোষামোদ শুরু করলেন এক ব্যক্তি৷ শুরুতে বস খুশি হলেও, কত আর তেল সহ্য করা যায়৷ একদিন দিলেন ধমক, ‘‘এত তেল দেন কেন? কাজ করেন৷''
ভাবগতিক খারাপ বুঝে বসের পেছন ঘোরা বাদ দিয়ে এবার কাজে মন দিলেন কর্মীটি৷ কদিন পর বস খেয়াল করলেন, কর্মীটি তো আর তার পেছনে একেবারেই ঘোরে না৷ তিনি আবার ডেকে দিলেন এক ধমক, ‘‘এখন আর পাত্তাই দাও না৷''
এভাবে ধমক খেতে খেতে একদিন আর ক্ষোভ সামলাতে না পেরে কর্মীটি বলে বসলেন, ‘‘স্যার এইটা করলেও সমস্যা, ওইটা করলেও সমস্যা৷ আমি কী করবো?''
বস বললেন, ‘‘তুমি ‘কী’-ও করবে না৷''
তো এখন চলছে, সেই ‘কী’-ও না করার যুগ৷ জনগণ, সংবাদমাধ্যম, বিরোধী দল, সমালোচকসহ ভিন্ন মতের কাউকেই ‘কী’ করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না৷ এটা দেশের জন্য, সমাজের জন্য, এমনকি দলের জন্যও সুস্থতার পরিচয় নয়৷
আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে৷ শুধু নিরঙ্কুশ নয়, এ বিজয় ভয়াবহ৷ টানা দ্বিতীয়বারের মতো আমরা হয়ত সংসদে একটি ‘গৃহপালিত বিরোধী' দল দেখতে যাচ্ছি৷
কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচন আমাদের সামনে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে অনেকগুলো লজ্জার৷ আসুন, একে একে লজ্জা নিবারণ করা যাক৷
সব সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পরও দাপটের সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে দলটি৷ স্বাধীন দেশে সরকার গঠন করেছে ৪ বার৷ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কিছু চিত্র...
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সর্বাধিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের ১০টি সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুটিতে অংশ নেয়নি৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করায় সংকটে পড়ে দলটি৷ ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে দলের দু’টি অংশ আলাদাভাবে অংশ নেয়৷ ১৯৮১ সালে দলকে ঐক্যবদ্ধ করেন শেখ হাসিনা৷ ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি৷ এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তারা বর্জন করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ৷ সেবার এক কোটি ৯৩ লাখ ২৯ হাজার ছয়শ' ৮৩ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭১৭ ভোট৷
ছবি: bdnews24
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নেতৃ্ত্ব সংকটে জর্জরিত আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়৷ এ নির্বাচনে আবদুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন পায় এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশ পায় দু’টি আসন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বিরোধী দলের ভূমিকায়
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃ্ত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসনে জয় লাভ করে৷ সেই নির্বাচনে দলটি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়৷ সেবারই প্রথমবারের মতো সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
আবার বিরোধী দলে
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসনে জয় লাভ করে আবার প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায়৷ ৮৮টি আসন পেলেও মোট ভোটে আওয়ামী লীগ ১৪০টি আসন জয়ী বিএনপির কাছাকাছিই ছিল৷ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩০ দশমিক এক শতাংশ ভোট আর বিএনপি পেয়েছিল ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Sarah Kabori/Nur Uddin, Dhaka
২১ বছর পর ক্ষমতায়
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফেরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ এর আগে বিএনপি সরকারের অধীনে আয়োজিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তারা বয়কট করে৷ সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ১৪৬টি আসন এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়৷ সেই সুবাদে প্রথম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন দলনেত্রী শেখ হাসিনা৷
ছবি: Saiful Islam Kallol
ভোট বিস্ময়
৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৬২টি আসন পায় আওয়ামী লীগ৷ সেবার নির্বাচনে জয়ী বিএনপি পায় ১৯৩টি আসন আর ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোট, যেখানে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২ আসনে জয়ী হয়ে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট৷ এর আগে ’৯১-এর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আসন অনেক কম পেলেও ভোট অনেক বেশি পেয়েছে৷ এবারও ২ কোটি ২৩ লাখের বেশি ভোট পায় দলটি, যেখানে তিনগুণ বেশি আসনে বিজয়ী বিএনপি পায় ২ কোটি ৩০ লাখ ভোট৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ভোটের জোয়ার
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ২৩০ আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ আর ভোট পায় ৪৯ শতাংশ৷
ছবি: bdnews24
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসন
বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিরোধেও তৎপর হওয়ায় আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসনে জয় লাভ করে৷ ৮১টি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হয়৷ মোট ২৩৪ আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ৷ তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই হয় এই নির্বাচন৷
ছবি: imago/Xinhua
9 ছবি1 | 9
আওয়ামী লীগের লজ্জা
দলের পক্ষ থেকে বারবার জোর গলায় বলা হচ্ছে – ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, কোথাও কিছু হয়নি, যা হয়েছে সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ভোটারদের অভিজ্ঞতা তা বলে না৷
গেট বন্ধ করে রাখায় ভোটারদের বিক্ষোভ, ভোট দিতে গিয়ে দেয়া হয়ে গেছে দেখে ফেরত আসা, জোর করে আরেকজনের ভোট নিজে দিয়ে দেয়া, ইভিএমেও যে একজনের আঙুলের ছাপ আরেকজনের দেয়া সম্ভব, তা প্রমাণ হওয়া, পুলিশ এমনকি সেনাবাহিনীর কাছে বিচার দেয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তা বেমালুম এড়িয়ে যাওয়া, এর সবকিছুরই ভিডিও ফুটেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে৷
কতটা ঘটনা ঘটলে তাকে বিচ্ছিন্ন না বলে থাকা যেতে পারে, আমার জানা নেই৷
জর্জ ডাব্লিউ বুশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, তখন সব দেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘‘তোমরা হয় আমাদের পক্ষে, না হয় বিপক্ষে৷'' এমন আচরণ বিশ্বের জন্য কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনি৷
এই নির্বাচনের আগে পরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা না বলা মানেই জামায়াত-বিএনপি৷ কিন্তু এই ধরনের বলপূর্বক বিভাজন দেশের জন্য তো না বটেই, আওয়ামী লীগের জন্যই কতোটা ভালো ফল বয়ে আনবে, তা ভাবনার বিষয়৷
নির্দ্বিধায় একপেশে অভিযোগ তুলে, নিজের বিপক্ষে সব অভিযোগ বিষয়ে চোখ-কান বন্ধ রেখে দলকানা একটি গোষ্ঠীকে গড়ে তোলা হচ্ছে, যা আসলে শেষ বিচারে দলের জন্যই ক্ষতিকর৷ দলের মধ্যেও যখন গণতান্ত্রিক বিরোধের জায়গা রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন সৃষ্টি হয় একটি সুবিধাভোগী অংশের৷ সুযোগ পেলে তারা যে সংস্কারপন্থি হতেও ছাড়ে না, এর প্রমাণ তো অতীতে রয়েছেই৷
অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে৷ ভালো হয়েছে৷ কিন্তু ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো' নীতিতে বিশ্বাস করে হলেও এবার সত্যিকারের একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ ছিলো আওয়ামী লীগের সামনে৷ কিন্তু সেটা যে সম্ভব না, সেটা প্রমাণ করার আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি?
এত কিছুর ডামাডোলে এরশাদ সাহেব হারিয়েই গেলেন৷ অথচ এই আওয়ামী লীগই কতো রক্ত ঝরিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল৷ আজ সংসদে রক্তে রঞ্জিত হাত নিয়ে এরশাদ প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূতও হন, সময়ে অসময়ে হুঙ্কারও দেন৷ প্রমাণ হলো, রাজনীতিতে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশলই শেষ কথা৷
খন্দকার মোশতাকের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না৷ বঙ্গবন্ধুর চেয়েও আওয়ামী লীগের বড় ভক্ত সাজার চেষ্টা করা ব্যক্তিটি তিনি নিহত হওয়ার পর কী অবস্থান নিয়েছিলেন, তা সবার জানা৷ ফলে জনগণের শক্তিতে পরিবেষ্টিত হয়ে থাকাটা বোধহয় বেশি নিরাপদ৷
আওয়ামী লীগেও যুদ্ধাপরাধী আছে৷ নৌকা প্রতীকে সরাসরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করা একজন জিতেও এসেছেন৷ অথচ, আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো বক্তব্যও দিলো না৷ এই যে একপাক্ষিক, এক চোখা দৃষ্টিভঙ্গি, এতে যে সমাজ গড়ে উঠবে, তা কি আদৌ দেশের মঙ্গল বয়ে আনবে?
বিরোধী দল তো গেছেই, শক্তিশালী বিরোধী দলের অবর্তমানে যে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারতো, তাদেরও প্রায় পঙ্গু অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেটা কিভাবে, তা আগে অনেকবার লিখেছি৷ চর্বিত চর্বনের আর প্রয়োজন বোধ করছি না৷
একাদশ নির্বাচনের ১১ উক্তি
সহিংসতা, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ, ভোট বর্জন, আগে-পরে ১৭ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এই ছবিঘরে থাকছে নির্বাচন পরবর্তী কিছু প্রতিক্রিয়া৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
এখন আনন্দ মিছিলের সময় নয়: শেখ হাসিনা
কোনো জায়গায় কাউকে আনন্দ মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘এখন আনন্দ মিছিল করার সময় নয়, দেশ গঠনের সময়৷’’
ছবি: Reuters/Bangladesh Sangbad Sangstha
পুনঃনির্বাচন দাবি করছি: ড. কামাল
কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন৷ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান তিনি৷
ছবি: DW/Z. Ahmed
শেখ হাসিনায় জনগণ খুশি: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচনে জনগণের ‘স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও গণজোয়ার’ প্রমাণ করেছে জনগণ প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ‘খুবই খুশি’ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে সারা দেশে নারী, পুরুষ এবং তরুণ ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রমাণ হলো ২০১৪ সালের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না: ফখরুল
নির্বাচনের নামে ‘নিষ্ঠুর প্রহসন’ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল৷’’
ছবি: Bdnews24.com
ধানের শীষের এজেন্ট না এলে কী করা? : সিইসি
বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা করলেন পালটা প্রশ্ন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ধানের শীষের এজেন্টরা কেন্দ্রে না আসলে কী করার? তাঁরা কেন্দ্রে কেন আসেননি বা কেন কোনো এজেন্ট নেই, সেটা প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্টরাই বলতে পারবেন৷’’
ছবি: bdnews24
বিএনপি এখন মুসলিম লীগের পথে: ইনু
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েও বিএনপির নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কর্মীদের অনাস্থাকে দায়ী করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘‘দলটি এখন মুসলিম লীগের পরিণতির দিকে এগোচ্ছে৷’’
ছবি: privat
আওয়ামী লীগের ২৯৯ আসন গেজেট দিলেই হতো : আলাল
সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার সময়ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল বলে মন্তব্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের নামে এই অর্থহীন তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটা গেজেট জারি করে নিলেই হতো যে, নৌকা ২৯৯ আসন পেয়ে গেছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
জনগণের রায় প্রত্যাখ্যানের অধিকার কারো নেই: নানক
আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ৷ তিনি বলেন, ‘‘জনগণের রায় প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কারও নেই৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রতিশ্রুতি রেখেছি: পর্যবেক্ষকদের গওহর রিজভী
রোববারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার তার প্রতিশ্রুতি রেখেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী৷ ভোটগ্রহণ শেষে ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি৷
ছবি: DW/ Zobaer Ahmed
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ: ইসি সচিব
সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ৷ কমিশনের ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে’ নির্বাচন হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
আওয়ামী লীগও আমার মতো প্রার্থীকে ভয় পায়: হিরো আলম
বগুড়ার এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম৷ সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে থাকা এ প্রার্থীর অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন ভোটারদের, এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, নন্দীগ্রামে তাঁর ওপর হামলা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি৷
ছবি: YouTube/Little Big Films Bangladesh
11 ছবি1 | 11
বিএনপির লজ্জা
ঐতিহাসিকভাবেই বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে বিএনপি৷ যা খাওয়ার কথা, তা ছুঁড়ে ফেলেছে, যখন ছুঁড়ে ফেললে কাজ হতেও পারে, তখন গোগ্রাসে গিলেছে৷ বরাবরই তরুণদের অনুভূতি বুঝতে না পেরে, কালো শক্তি ও পেছনের দরজায় ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আজ বিএনপিকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে৷
মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিয়ে এবার কথা বলা যাবে না, ভালোভাবেই জানতেন বিএনপি নেতারা৷ তারপরও নির্লজ্জভাবে ভোটের লোভে, অথবা পেশীশক্তির লোভে তারা জামায়াতকে ছাড়তে পারেননি৷ অথচ এবার তাদের সামনে সুযোগ এসেছিল, পরিষ্কার ‘ইমেজ' নিয়ে সামনে আসার৷
উলটো কেউ বিশ্বাস না করলেও বারবার তারা বলেই যাচ্ছেন, এটা নির্বাচনি ঐক্য, রাজনৈতিক আদর্শের না৷ আরে বাবা, এ তো সহজ হিসাব৷ আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলে জামায়াতের সাথে আপনার রাজনৈতিক, পারিবারিক, আর্থিক, ব্যবসায়িক, বা আর যা যা সম্পর্কের কথা চিন্তা করা যায়, কোনোটাই তো থাকার কথা না৷
বললেন, সরকার গঠনে জামায়াতের কোনো ভূমিকা থাকবে না৷ আগেরবার কি তাহলে ভুল করেছিলেন? সেটা তো বললেন না৷ কয়দিন আগেও তো যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীতা করছিলেন৷ সেটা কি ভুল ছিল? বললেন না তো৷
ফলে সবই এখন জনগণ প্রত্যাখ্যান করে কথার কথা হিসেবে৷ বিশ্বাসের জায়গাটা আর ফিরে পেলেন না৷
এবার আপনারাও আওয়ামী লীগের মতোই ‘আমি খারাপ তো কি হয়েছে, তুমিও খারাপ' ছেলেখেলায় মেতে উঠলেন৷ দেখিয়ে দিলেন, তারাও নির্বাচনে জয়লাভে জনগণের চেয়ে ‘অন্য' শক্তিতেই বেশি ভরসা রাখেন৷ নির্বাচন ও তার আগের দিন হামলা চালিয়ে নৌকার নেতাকর্মীদের হত্যা করে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা, এরই পরিচয় রাখে৷
হিরো আলম পেয়েছেন মাত্র ছয়শর মতো ভোট৷ কিন্তু একটি কেন্দ্রে গিয়ে জাল ভোট আটকানোর চেষ্টা করে তার মার খাওয়ার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে৷ হিরো আলম আপনাদের দৃষ্টিতে কিছুই না, খ্যাত, অশিক্ষিত, আরো কতকিছু৷ কিন্তু নির্বাচনের দিন আপনারা কেউ মাঠে নামলেন না? রাজনীতি করছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচারের প্রতিবাদ করছেন, সেটা আদায় করার ক্ষমতা নেই? লক্ষ লক্ষ জনগণ আপনাদের চায়৷ জেল জুলুমের ভয়ে সেই লক্ষ লক্ষ জনগণ আর এগিয়ে এলো না?
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তো আপনারা করেছিলেন৷ অস্ত্র দিয়েও তো সেদিন টিকিয়ে রাখতে পারলেন না৷ আজ আপনারাই যদি ভয় পেয়ে সেঁটিয়ে থাকেন, জনগণ আপনাদের পেছনে দাঁড়াবে, ভাবলেনই বা কীভাবে?
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির তুলনায় বাকি দলগুলো জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ ওই দুই দলের বাইরে এ পর্যন্ত যে দলগুলো সংসদে আসন পেয়েছে, তাদের নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: imago/Xinhua
প্রথম সংসদ প্রায় বিরোধীদলশূন্য
১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরো ১১ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়৷ সেই দলের মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ, মুজাফ্ফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ, ভাসানী), বাংলাদেশ ন্যাশনাল লীগ (বিএনএল), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি উল্লেখযোগ্য৷ এর মধ্যে জাসদ ও বিএনএল ১ আসন করে পায়৷ ৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে৷ বাকি ২৯৩ আসন পায় আওয়ামী লীগ৷
ছবি: bdnews24.com
বাম দলের ১৬ আসন
তিন বছর সামরিক শাসনের পর দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদ্য গঠিত বিএনপির জয়-জয়কার থাকলেও ক্ষুদ্র দলগুলোর মধ্যে বামেরা ছিল এগিয়ে৷ সেই নির্বাচনে জাসদ ৮, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (মার্ক্সিস্ট-লিনিয়েস্ট) ১, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ৮ আসন পায়৷ বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৫ আসন, মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২ আসন ও ন্যাপ (মুজাফ্ফর) ১ আসন পায়৷ মোট ১২ দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
জামায়াতের ১০ আসন!
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পাওয়া জামায়াতে ইসলামী প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে৷ সেই নির্বাচনে ১০ আসন পায় জামায়াত৷এরশাদ শাসনামলে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মোট ১১টি দল অংশগ্রহণ করে৷ দুই দলে ভাগ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাসদ৷ আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ৪ আসন এবং সিরাজুল আলম খানের জাসদ ৩ আসন পায়৷ বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাপ পায় ২টি করে আসন৷
ছবি: picture-alliance/epa/Abir Abdullah
সিংহভাগ দলের নির্বাচন বর্জন
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিসহ অনেক দল অংশ নেয়নি৷ ৮৮ সালের সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে অংশ নেয় নির্বাচনের পূর্বে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল ও ফ্রিডম পার্টি৷ সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯ আসন পায়৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আসামী কর্নেল আব্দুর রশিদ, কর্নেল সাঈদ ফারুক রহমান ও মেজর বজলুল হুদার দল ফ্রিডম পার্টি পেয়েছিল ২ আসন৷
ছবি: DW/M. Mamun
৭৫ দলের অংশগ্রহণ
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নেয়৷ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পর তৃ্তীয় সর্বোচ্চ আসন পায় জাতীয় পার্টি৷ তারা ৩৫টি আসন পায়৷ এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ৫টি করে আর ইসলামী ঐক্য জোট, ন্যাপ (মুজাফ্ফর), গণতান্ত্রিক পার্টি, ন্যাশনাল ডোমোক্র্যাটিক পার্টি, জাসদ (সিরাজ) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১ টি করে আসন পায়৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
শুধু ফ্রিডম পার্টি
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূলত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি এক আসনে জয় লাভ করে বিরোধী দলের আসনে বসে৷ মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পড়ে সেই নির্বাচনে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
মোট দল ৮১টি!
১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সংসদ ভেঙে সেবছরই নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় বিএনপি৷ প্রথমবারের মতো তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ মোট ৮১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় সেই নির্বাচনে৷ ২৮১জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২৫৭৪ জন প্রার্থী অংশ নেয় নির্বাচনে৷ ৩২ পায় জাতীয় পার্টি৷ জামায়াতে ইসলামী ৩, ইসলামী ঐক্য জোট ১, জাসদ (রব) ১ আসনে জয় লাভ করে৷ বাকি ৭৪টি দল কোনো আসন পায়নি৷
ছবি: bdnews24.com
জাতীয় পার্টির ভরাডুবি
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অংশ নেয়৷ ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি মাত্র ১৪টি আসন পায়৷ মঞ্জুর জাতীয় পার্টি পায় ১টি আসন৷ সেই সময় জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসনে জয়লাভ করে৷ নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি - বিজেপি পায় ৪ আসন৷ এছাড়া ইসলামী ঐক্য জোট ২ আসন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২ আসন পায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
জোটের নির্বাচন
১০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মূলত জোটের নির্বাচনের জন্য মনে রাখা যেতে পারে৷ সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় মহাজোট গঠিত হয়৷ সেই জোটে জাতীয় পার্টি ২৭, জাসদ ৩, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২ এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি ১ আসনে জয় লাভ করে৷ অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী ২ আসন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি ১ আসন পায়৷
ছবি: bdnews24.com
মাত্র ১৭ দলের অংশগ্রহণ
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়৷ রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয় লাভ করে৷
ছবি: imago/Xinhua
10 ছবি1 | 10
ঐক্যফ্রন্টের লজ্জা
এই লজ্জা আসলে শুধু ঐক্যফ্রন্টের না, প্রায় সবার৷ যে ব্যক্তিটি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান লিখলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা নিজ হাতে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করলেন, তিনি কিভাবে জামায়াতের মতো একটি দলের সাথে আঁতাত করলেন?
জামায়াত থাকবে জানলে আপনি ঐক্যফ্রন্টে থাকতেন না, ভালো কথা৷ যখন জানলেন, সরে দাঁড়ালেন না কেনো? এতে আপনার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়তো, নাকি কমতো? শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধীতার কারণে জামায়াতের সাথে গেলেন?
বামপন্থিদের লজ্জা
এমন একটা বিরোধীশূন্য অবস্থানেও নিজেদের অবস্থান দাঁড় করাতে ব্যর্থ বাম দলগুলো৷ এক মার্কা দেয়া তো দুরের কথা, মুখে বামঐক্য বললেও মাঠে তার যৎসামান্যই প্রমাণ করতে পেরেছে তারা৷ সেই একই চিরাচরিত ভাষা, একই মুখস্ত সমালোচনার ঘেরাটোপে মানুষ এখন তাদের অনেকের নামও ভুলতে বসেছে৷
কথায় কথায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে গালি দিলেও, আত্মসমালোচনার কোনো আলামত নেই নেতাদের মধ্যে৷ যে ভাষায় কথা বলেন, সে ভাষা বোঝারও তো ক্ষমতা নেই সাধারণ মানুষের৷
মুক্তিযুদ্ধ যে একভাবে আওয়ামী লীগের অধিকারে চলে গেছে, সে দায় কাদের? যেকোনো কিছুতেই সরকার করতে দিচ্ছে না বলে আর কতদিন? রাশিয়ার লেনিন বা চীনে মাও, কেউই সরকারের অনুমতি নিয়ে বিপ্লব করেননি বলেই আমার মনে পড়ে৷ আপনারা কেনো তাহলে নিজেরা শক্তি সংগ্রহে ব্যর্থ? কোথায় আপনাদের লাল ফৌজ?
জনগণের ব্যর্থতা
জনগণও আসলে ব্যর্থ৷ আমি জনগণ বলতে এখানে কোনো দলের কট্টর কর্মী-সমর্থকদের কথা বলছি না৷ যারা দ্বিধায় থাকেন, তাদের কথা বলছি৷ নির্বাচন এলেই একটি কথা শোনা যায়, অমুক দল মন্দের ভালো, তমুক দলকে জীবনেও ভোট দেয়া যাবে না বলেই অমুককে ভোট দিয়েছি৷ কেন? উত্তর আসে, ‘বিকল্প তো নেই'৷
কিন্তু আসলে কি তাই? আমরাই ভোট দেই, আমরাই গালি দেই৷ আমরাই বলি, ‘ভালো কেউ রাজনীতিতে আসে না', আবার যখন কেউ আসে, ‘ওর তো জামানত বাজেয়াপ্ত হবে' বলে ভোটটা আর ভালো মানুষের মার্কায় না দিয়ে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া নিশ্চিত করি৷
দিল্লির মসনদে আম আদমি পার্টির মতো দল হঠাৎ করে এসে প্রতিষ্ঠিত সব দলকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে৷ বাংলাদেশে এটা সুদূর ভবিষ্যতেও সম্ভব না৷ আমাদের কারণেই সম্ভব না৷
আরেকটা গল্প দিয়ে শেষ করছি৷
মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক৷ ফলে মায়ের সাথে আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে প্রথম কয়েক বছর সে স্কুলেই পড়াশোনা৷ কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত এলাকায় স্কুল হওয়ায় বরাবরই ক্লাসে প্রথম হতাম৷ কিন্তু ক'দিন পরই অভিযোগ উঠলো, আমি শিক্ষকের ছেলে বলে কারচুপি করে আমাকেই প্রথম বানিয়ে দেয়া হয়৷
আমার শিক্ষক মা সে অভিযোগ সইতে না পেরে আমাকে বাসা থেকে দূরে অপেক্ষাকৃত ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন৷ সেখানেও প্রথম হলাম৷
ভালো স্কুল, একটু ভয় ছিল, মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডনের চাপ ছিলো, তাই ফল ঘোষণার পর লাফিয়ে উঠলাম৷ প্রধান শিক্ষিকা বললেন, ‘‘তুমি যে ফার্স্ট হবে, জানাই তো ছিল৷'' বললাম, ‘‘কীভাবে?'' উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘বাঘ নাই বনে শেয়ালই রাজা৷''
এরপর নিজেরই খারাপ লাগায় আবার স্কুল পরিবর্তন৷ আরো ভালো স্কুলে, আরো বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে গিয়ে আমি আর সে অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি৷ নিজের যোগ্যতার আসল যাচাই হয়েছিল তখন৷ তবে আমি মানি, এই পুরো ঘটনা আমার বেড়ে ওঠায় বড় প্রভাব ফেলেছে, আমাকে অহংকারী হয়ে উঠতে দেয়নি, আমার যোগ্যতা, দক্ষতা, লড়াই করে সম্মান আদায়ের চেষ্টা শিখিয়েছে৷
বাংলাদেশে শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ কেমন ছিল নির্বাচন? দেখা যাক সাধারণ ভোটাররা কী বলেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A. Nath
আলী হোসেন
সত্তরোর্ধ আলী হোসেন জীবনে অনেক ভোট দেখেছেন, কিন্তু এবারের মতো ভোটের পরিবেশ জীবনে আর দেখেননি৷ জোর করে তাঁর ব্যালটে সিল মেরেছেন বুথের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করা অন্য একজন৷ শেষ বয়সে এসে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে কিছুই বলতে পারেননি৷
ছবি: DW
এলিম মিয়া
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এলিম মিয়ার কেন্দ্রে ভোট হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে৷ তিনি ৩০ জানুয়ারি সকালেই ভোট দিতে পেরেছেন৷ সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষমান দেখেছেন তিনি৷ ভোটের পরিবেশও তাঁর কাছে সুষ্ঠু মনে হয়েছে৷
ছবি: DW
জুনায়েদ অমি
জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে পেরে খুবই আনন্দিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী৷ ভোটের পরিবেশ বেশ ভালো বলে মনে হয়েছে তাঁর৷ তবে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে উপস্থিতি এবং পুলিশের একপেশে ভূমিকা তাঁর ভালো লাগেনি৷
ছবি: DW
লামিয়া তাসনিম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া তাসনিম এবারই প্রথম ভোট দিলেন৷ বিষয়টি নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলেন৷ তবে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও নিজের ভোটকেন্দ্র খুঁজে বের করতে তাঁর দুপুর পর্যন্ত সময় লেগেছে৷ কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন ফটক বন্ধ৷ জানানো হয়, মধ্যাহ্ণবিরতি চলছে৷ কিন্তু ভোটের সময় তো কেন্দ্রে কোনো বিরতি থাকার কথা নয়৷ তাই অনেক বিতণ্ডা করে শেষ পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে নিজের ভোটটি দিতে পেরেছেন৷
ছবি: DW
মোহাম্মদ মামুন
খুব সকাল সকালই ভোট দিতে পেরেছেন তরুণ ভোটার মোহাম্মদ মামুন৷ ভোটের পরিবেশ নিয়েও তিনি বেশ সন্তুষ্ট৷
ছবি: DW
নূরুল্লাহ
বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল্লাহের দাবি, ঢাকার একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে গিয়েছিলেন দুপুর ১২টার দিকে৷ গিয়ে দেখেন তাঁর ভোট এর আগেই দেয়া হয়ে গেছে৷ ফলে ভোট তো দিতে পারেনইনি, উলটে ভোটকেন্দ্রের এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে নাকি দুর্ব্যবহার করেছেন৷ ভোট না দিয়েই তাই ফিরে এসেছেন তিনি৷
ছবি: DW
মো. শাহ জালাল
পিরোজপুরের ভোটার মোহাম্মদ শাহ জালাল দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন নৌকা মার্কায়৷ এবারও ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তবে ব্যালটে নিজে সিল মারতে পারেননি৷ জানালেন, নৌকা মার্কার এজেন্টই তাঁর হাত থেকে সিল নিয়ে নৌকা মার্কার ওপরে মেরে দিয়েছেন৷
ছবি: DW
সিরাজুল ইসলাম
সিরাজুল ইসলাম এলাকায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত৷ তাই আগে থেকেই নাকি তাঁকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল৷ তাঁর দাবি, ভয়ে আর তিনি ভোট দিতে যাননি৷