ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের বিচার হয়নি এখনো৷ এরই মধ্যে খুন হয়েছেন আরো তিন ব্লগার৷ সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ হলেও পাশে দাঁড়িয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে তাদের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয় এক সংহতি বইমেলা, যেখানে নির্বাসিত বাংলা ব্লগাররা অংশ নেন৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় খবরটি জেনে পাঠক মাহফুজ রহমান লিখেছেন, ‘‘এইরকম একটা অনুষ্ঠানের অনেক প্রয়োজন ছিল৷ সংঘটিত হতে দেখে আশান্বিত হলাম৷ ব্লগার না হয়েও আমরা লিখি৷ ছোট স্কেলে মানবতা, নাস্তিকতার সপক্ষে৷ আমি মনে করি আমি এবং আমার মত আরো অনেকেই আছেন বিভিন্ন দেশে ছড়ানো, যারা স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি প্রতিবাদ করে যাচ্ছি৷ আমরা এই মুভমেন্টে যুক্ত হতে চাই, আস্থা অর্জন করে আপনাদের সাথে কাজ করতে চাই৷''
ব্লগার হত্যা নিয়ে ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ে পাঠকবন্ধু জাভেদ রাজু ডিডাব্লিউর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘গুটি কয়েক মুক্তমনাকে সাপোর্ট করতে গিয়ে কোটি কোটি মুসলিমের মনে আঘাত দেয়া কি আপনাদের আসল উদ্দেশ্য?''
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বইমেলা থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: DW
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
ছবি: DW
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
ছবি: DW
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
ইতিমধ্যে ২৪ জন মুক্তমনা, মানবতাবাদী ব্লগার বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন প্রাণভয়ে৷ বিষয়টি জাতিসংঘে আলোচনায় তোলার চেষ্টা চলছে৷ দেশত্যাগ করা ব্লগারদের সম্পর্কে মোহাম্মদ জুবায়েদের মন্তব্য, ‘‘ঈমানদার মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় না আর যারা বেঈমান তারা মৃত্যুর ভয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে পালিয়ে বেড়ায়, যেমন মুক্তমনা বা নাস্তিকরা৷'' এর উত্তরে আরেক পাঠক লিখেছেন, ‘‘এরা কেউ প্রাণভয়ে যাচ্ছে না, বেকার কর্মহীন জীবিকার অন্বেষণেই দেশ ছাড়ার সুযোগ নিচ্ছেন৷''
মো. নাসির মনে করেন, ব্লগাররা অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় পাওয়ার জন্যই নাকি ইসলামের বিরুদ্ধে লেখেন৷ ডয়চে ভেলের পুরনো বন্ধু ফয়সাল আহমেদ শিপন কিন্তু জানিয়েছেন, তিনি ব্লগারদের পাশে আছেন, তবে ইসলাম বিরোধীদের পাশে নেই৷
কে কোথায় কাকে হত্যা বা খুন করছে এসব বিষয় একেবারেই পরিষ্কার নয় ডয়চে ভেলের পাঠক আয়ার মাহমুদের কাছে৷ তবে তিনি নিশ্চিত যে এভাবে হত্যা অগ্রহণযোগ্য৷ আয়ারের প্রশ্ন, ‘‘মুক্তমনারা সত্যিই কি মুক্তমনা? নাকি তারা গালিগালাজের প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷''
অন্যদিকে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি একদমই পছন্দ করেন না ডয়চে ভেলের পাঠক মেরাজুল ইসলাম৷
২০১৫ সালে নিহত ১৮ ব্লগার
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে অন্তত ১৮ জন নেটিজেন এবং সিটিজেন জার্নালিস্ট বা ব্লগার প্রাণ হারিয়েছেন৷ এদের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশে খুন হন চারজন ব্লগার, তবে বেশি প্রাণ হারিয়েছেন সিরিয়ায়৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abbas
সবচেয়ে বেশি সিরিয়ায়
বর্তমানে গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা সিরিয়ায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি নেটিজেন এবং সিটিজেন জার্নালিস্ট খুন হয়েছেন৷ প্যারিসভিত্তিক ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ বা আরএসএফ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে পহেলা জানুয়ারি, খুন হন দিরার মুসা আল জাহিদ৷ আর সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর জুম্মা আল-আহমেদ৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Lawler
বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে
বাংলাদেশে সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধ না চললেও খুন হয়েছেন চার ব্লগার, আহত কয়েকজন৷ এদের সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় খুন হন লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ সর্বশষে সাত আগস্ট খুন হন ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়৷ নিহতরা সবাই নাস্তিক এবং ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
ব্রাজিলে নিহত এক
ব্রাজিলে ১৮ মে খুন হন ব্লগার ইভানি জোসে মেৎসকার৷ ধারণা করা হয়, তাঁকে হত্যার আগে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছিল৷ নিহত হওয়ার আগে শিশু পতিতাবৃত্তি নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন তিনি৷
ছবি: Facebook
ইসলামিক স্টেট-এর হাতে খুন জুহায়ের
ইরাকের মসুলের সিটিজেন জার্নালিস্ট জুহায়ের কিনান আল-নাহাস৷ আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিমান হামলায় দগ্ধ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর একটি গাড়ির ছবি তোলায় তাঁকে হত্যা করে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Felber
পাকিস্তানে নিহত মানবাধিকার কর্মী
পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী সাবিন মাহমুদ গত ২৪ এপ্রিল করাচিতে খুন হন৷ অজ্ঞাত বন্দুকধারী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে৷ এ সময় ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি৷ পাকিস্তানের বালুচিস্তানে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মাহমুদ৷ এ কারণে একাধিকবার হুমিকও পান তিনি৷
ছবি: DW/R. Saeed
তরুস্কে নিহত সিটিজেন জার্নালিস্ট
গত ৩০ অক্টোবর তুরস্কে খুন হন সিটিজেন জার্নালিস্ট ইব্রাহিম আব্দ আল-কাদের৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন সিরিয়ার এই ব্লগার৷ তাঁর জবাই করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহত ৬৫ সাংবাদিক
আরএসএফ-এর ওয়েবসাইটে নিহত সাংবাদিকদের তালিকা আলাদাভাবে দেয়া হয়েছে৷ সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট সংগঠনটির হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ সাংবাদিক, কারাবন্দি আছেন ১৫৩ জন৷ এছাড়া ১৬২ নেটিজেনও কারাবন্দি রয়েছেন৷