কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে কো-পাইলট পৃথুলা রশীদকে ঘিরে৷ মৃত্যুর পরও কিছু মানুষ তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ অথচ এই নারীই বাঁচিয়েছেন ১০টি প্রাণ৷
বিজ্ঞাপন
১২ই মার্চ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের পর যখন একে একে নিহতদের খবর জানা গেল৷ তখন বিমানের পাইলট এবং কো পাইলট কে ছিলেন সে ছবিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘুরছিল৷ কো-পাইলট ছিলেন পৃথুলা রশীদ, যিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী৷ নারী হওয়ার অপরাধে মৃত্যুর পরও রেহাই পাননি এই নারী৷ অনেকেই তাঁর যোগ্যতা আর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন৷ অথচ পরে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন জানান, এই পৃথুলাই ১০ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক এবং পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন অনেকেই৷ তবে পৃথুলাকে নিয়েও লিখেছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন৷
বাংলাদেশ এবং নেপালে শোকের ছায়া
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ এবং নেপাল দুই দেশেই শোকের আঁধার৷ খবরের শিরোনামে, সর্বস্তরের আলোচনায় শুধু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে কিছু জীবনের করুণ পরিণতি নিয়ে আলোচনা৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
কেন এই দুর্ঘটনা?
বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত৷ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে পাইলটের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কথিত কথোপকথনের একটি অডিও ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন, কোনদিক দিয়ে রানওয়েতে নামা নিরাপদ এ নিয়ে পাইলটের মনে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
নেপালে তদন্ত
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিমধ্যে নেপালে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পরই্ তদন্ত শুরুর এ উদ্যোগ নেয়া হলো৷ তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য ইউএস-বাংলার সিইও ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
বিমানবন্দরের ছয় কর্মকর্তা বদলি
সোমবার দুর্ঘটনার সময় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যে ছয় কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককেই বদলি করা হয়েছে৷ বিমান কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, শুধু ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করার ধাক্কা সামলানোর সুযোগ দিতেই বদলি করা হয়েছে তাঁদের৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
শোক
বাংলাদেশ এবং নেপাল নামের দু’টি দেশের মাঝের আটশতাধিক কিলোমিটারের দূরত্ব যেন ঘুচিয়ে দিয়েছে এই দুর্ঘটনা৷ দু’দেশেই এখন শোকের ছায়া৷ স্বজন হারানোর বেদনা আর আহতদের চিন্তায় অশ্রু ঝরছে দু’দেশেই৷ ওপরের ছবিতে স্বজনের জন্য নেপালি এক তরুণীর কান্না৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
দুর্ঘটনার পর কাঠমান্ডুর হাসপাতালগুলোতে নিয়ে আসা আহতদের মাঝে চেনামুখ খুঁজতে ছুটে যান অনেকে৷ অনেকেই ফিরে যান স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে৷
ছবি: Reuters/E. Joshi
আহতদের চিকিৎসা
আহত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি এখনো কাটেনি৷ সোমবার প্রায় সংবাদমাধ্যমই ৫০ জনের মৃত্যুর খবর প্রচার করে৷ তবে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি অসিত বরণ সরকার জানিয়েছেন, ফ্লাইট বিএস২১১ এর ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, বাকি ২২ জন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
২৬ জন বাংলাদেশি নিহত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি৷ চারজন ক্রু এবং ২২ যাত্রী৷ এছাড়া আহত ১০ বাংলাদেশিকে কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
কাঠমান্ডুর আকাশ
দূরে বিমান পুড়ছে আর ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে কাঠমান্ডুর আকাশ৷
ছবি: Reuters/Nitin Keyal
মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা
কাঠমান্ডুতে খোলা হয়েছে ‘ডেডবডি ম্যানেজমেন্ট কো-অর্ডনিনেশন ডেস্ক’৷ এই ডেস্কে কর্মরতদের দায়িত্ব দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ সংরক্ষণ এবং তা স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
জীবন থেমে থাকে না
একদিকে শোক, তবে অন্যদিকে ঠিকই জীবন বয়ে চলেছে আপন নিয়মে৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ভেঙে চুরমার, পুড়ে যাওয়া বিমানটির পাশ দিয়েই আকাশে উড়ছে নতুন নতুন বিমান৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
10 ছবি1 | 10
সাদিয়া নাসরিন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘পৃথুলার অপরাধ কম নয়৷ এই পুরুষ শাসিত সমাজে পৃথুলা উর্ধাকাশ ভেদ করে আরো আরো আরো উপরে উঠেছিল৷ অত উপরে উঠেছিল বলেই আমরা অনেকেই যা পারি না, আমরা অনেকেই যা করি না পৃথুলা তাই পেরেছিল, তাই করেছিল৷ নিজে মরতে মরতে দশজন ভিনদেশির জীবনকে নিরাপদে তাঁদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে গেল৷ তারপর এই বীরকন্যা চুপচাপ মৃত্যুকে গ্রহণ করলো৷ নেপালের গণমাধ্যম এই বীরকন্যাকে ‘ডটার অফ বাংলাদেশ' বলে উল্লেখ করেছে৷ আর আমরা এই বাংলাদেশের মানুষরা (পড়ুন পুরুষ) এই মেয়েটিকে বিমান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে মিড়িয়া ট্রায়াল শুরু করেছে৷''
মাশরুফ হোসেইন লিখেছেন, ‘‘মরার আগে এই মেয়েটা যত জনকে পেরেছে বাঁচিয়ে গেছে৷ মরেও এর শান্তি হয় নাই, পুরুষতান্ত্রিক তেলাপোকাগুলো শোরগোল তুলেছে যে মেয়েদের দিয়ে প্লেন চালানো হয় না৷ এই তেলাপোকাগুলো আরো দশবার জন্মালেও নিজ যোগ্যতায় প্লেনের ককপিট দেখবার যোগ্যতা অর্জন করবে না৷ পাইলটের অদক্ষতায় যদি দুর্ঘটনা হয়, সেক্ষেত্রেও তার লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার কারো নেই৷ আলাদা করে পৃথুলার কথা লিখছি, কারণ তাঁকে মৃত্যুর পরেও গালি শুনতে হচ্ছে স্রেফ নারী হওয়ার কারণে৷ এক পৃথুলার আত্মত্যাগ জন্ম দিক আরো শত শত পৃথুলার!''
কাজী সাবির লিখেছেন, ‘‘এরপর থেকে প্লেনে ওঠার আগে জেনে নিবেন যে পাইলট নারী কিনা, দুর্ঘটনা হলে তার মমতায় আপনার জীবনটা বেঁচেও যেতে পারে!''
তৃষিয়া নাশতারান তুলে ধরেছেন আমাদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের চরম দিকটা৷ লিখেছেন, ‘‘প্লেনটা চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান৷ সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরে পুরুষের চালনশৈলী বিষয়ক কোনো সমালোচনা আমার চোখে পড়েনি৷ বরং আবিদ সুলতানের ক্যারিয়ারের বৃত্তান্ত লিখে, তিনি কত ব্রাইট অফিসার সেটা লিখে খবর এসেছে৷ তিনি একটানা তিনটা ফ্লাইটে সেদিন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত ছিলেন সেটা জেনেছি৷ কী কারণে পাইলট ওই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলেন সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে এবং সেটাই স্বাভাবিক৷ আবিদ সুলতানের জায়গায় পৃথুলা রশিদকে রেখে ভাবুন একবার৷ একজন পাইলট শুধুই একজন পাইলট৷ তিনি নারী বা পুরুষ হিসেবে আলাদা সম্মান কিংবা সমালোচনা কেন পাবেন? কেউ সংবেদনশীল হতে না পারলে অন্তত চুপ থাকতে তো পারেন৷''
শোক প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর বেগ লিখেছেন, ‘‘শোক জানানোর ভাষা আমার জানা নেই৷ সকলের পরিবার পরিজনের প্রতি জানাই গভীর শোক৷ আল্লাহ তাঁদের পরিবারবর্গকে এই শোক সইবার তৌফিক দান করুন৷ আমিন৷''
রোমানা আফরোজ ন্যান্সি লিখেছেন, ‘‘‘রং দে বসন্তি' মুভিটার কথা মনে আছে তো? পুরোনো জং ধরা যন্ত্রপাতি....অব্যবহারযোগ্য বিমানের জন্য দেশের মেধাবী প্রাণগুলো এভাবে চলে যায়৷ কিন্তু বাস্তব আর মুভি তো এক না৷ বাস্তবে আমরা দু'দিন পরেই এই দুর্ঘটনা ভুলে যাবো৷ যেহেতু মেধাবী মুখ আবিদ এবং পৃথুলা আমাদের কেউ নয়, সেহেতু নতুন কোনো ইস্যু পেলেই আমরা ভুলে যাবো তাঁদের৷''
বাংলাদেশের বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনা
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান৷ ৭১ জন আরোহী ছিল বিমানটিতে৷ তার মধ্যে অন্তত ৫০ জান মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
যারা ছিলেন বিমানে
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল থেকে রওনা হয়৷চার জন কেভিন ক্রু-সহ মোট ৭১ জন আরোহী ছিল ইউএস-বাংলার বোম্বার্ডিয়ার কিউ৪০০ বিমানটিতে৷ ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন নেপালের, ৩২ জন বাংলাদেশের আর একজন করে চীন এবং মালয়েশিয়ার৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
রহস্যজনক দুর্ঘটনা
নেপাল সময় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাভাবিক অবতরণের উদ্যোগই নিয়েছিলেন বৈমানিক৷ কিন্তু অবতরণের অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি উত্তর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ আকাশে দু’বার পাক খেতে দেখা যায় বিমানটিকে৷ তারপর কন্ট্রোলরুমের আপত্তি সত্ত্বেও তড়িঘড়ি অবতরণের উদ্যোগ নেন পাইলট৷ বিমানবন্দরের প্রাচীরে ধাক্কা দিয়ে বিমান নেমে পড়ে মাটিতে আর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন জ্বলতে শুরু করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
মার্কিন নাগরিক অ্যামান্ডা সামার্স কর্মসূত্রে এখন নেপালেই থাকেন৷ সোমবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে তিনি পরিষ্কার দেখেছেন ইউএস-বাংলার যাত্রীবাহী বিমানটিকে৷ বার্তাসংস্থা এপিকে তিনি বলেছেন, ‘‘বিমানটি এত নীচ দিয়ে উড়ছিল যে, আমার মনে হয়েছিল এক্ষুণি বুঝি পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খাবে৷ তারপর হঠাৎই প্রথমে একবার এবং তারপর আরেকবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
মোট কতজন নিহত?
৭১ জন আরোহীর মধ্যে বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ৫০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ ১২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ বাকি ৯ জনের বিষয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি৷ নিহতদের অনেকের দেহই পুড়ে প্রায় ছাই৷ আহতদেরও কারো কারো অবস্থা শঙ্কাজনক৷ মৃতের সংখ্যা বাড়তেই পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Sapkota
বাংলাদেশের ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনা
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো বিমানের যে কয়টি দুর্ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে এটিই ভয়াবহতম৷ এর আগে ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবতরণের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফকার এফ২৭-৬০০ বিমান বিমানবন্দরের কাছের জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়৷ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে আসা ঘরোয়া ফ্লাইটের বিমানটির ৪৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান৷ কাঠমান্ডুর দুর্ঘটনা ১৯৮৪ সালের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shreshta
5 ছবি1 | 5
লুসি তৃপ্তি গোমেজ লিখেছেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রিমুকে নিয়ে, যিনি সপরিবারে এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন৷ লুসি একাই নন, এই দম্পতিকে নিয়ে লিখেছেন অনেকেই৷ তাদের সহকর্মী আর সহপাঠীদের হাহাকারে ভরে উঠেছে ফেসবুকের পাতা৷ লুসি লিখেছেন, ‘‘রিমু ভাই, ভাবী, অনিরুদ্ধ তোমরা রবে নীরবে হৃদয়ে স্মরণে৷ রিমু ভাই শুধু রিতু আপুর ভাই ছিল না, আমারও বড় ভাই ছিল৷ যতবারই দেখা হয়েছে দেখা হবার রেশ থেকে গেছে বহুক্ষণ৷ সুন্দর কথা আর কাজের অনুপ্রেরণা থাকত বাকি সময় জুড়ে৷ রিমু ভাই, ভাবী আর অনিরুদ্ধ তিনজনের ছবি দেখে মনে হচ্ছিল কী ভাগ্যবান ওরা তিনজন সুন্দর মানুষ একসাথে ছিল জীবনে-মরণে৷ দুর্ভাগ্য আমাদের তোমাদের হারিয়েছি আর দেখা হবে না কথা হবে না আর কোনদিন৷ খালাম্মার মুখটা শুধু মনে ভাসছে, হে ঈশ্বর শক্তি দাও, যে শোক দিয়েছ তাঁদের সে হইবার শক্তি দাও৷ ৫০ জন মানুষ গেছে, রেখে গেছে অসংখ্য ব্যথা ভরা মন৷ তাঁদের শান্তি হোক৷''
জিল্লুর রহমান লিখেছেন, ‘‘কাঠমান্ডু ঘুরলে অনেক জায়গায় বড় বড় বিলবোর্ড দেখা যায়, সেখানে উচ্চশিক্ষার্থে বাংলাদেশে পড়ার বিজ্ঞাপন৷ আমি এই ১৩ জন শিক্ষার্থীর পরিবারের গল্প জানি না৷ তবে তাদের সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বলতে পারি৷ মৃত মানুষদের কোনো দেশ থাকে না৷ দেশ একটাই যেখান থেকে ফেরা যায় না৷ শুধু থাকে তাদেরকে ঘিরে বেঁচে থাকা অনেক মানুষের কান্না৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ/অনিরাপদ এয়ারলাইন্সের তালিকা
২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৬০টি এয়ারলাইন্সের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে অনিরাপদ এয়ারলাইন্সগুলোর তালিকা করেছে জার্মানির জেএসিডিইসি ইনস্টিটিউট৷ তালিকাটি দেখে বোঝা যায় বিমানযাত্রায় বড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে মানুষ৷
ছবি: Reuters/E. Su
অনিরাপদ চায়না এয়ারলাইন্স
২০১৬ সালে ৩৭০ কোটি যাত্রী তাদের বিমানে যাতায়াত করেছে৷ যাঁরা চায়না এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেছেন তাঁদের অনেকেরই মনে হয়েছে এটি একটি অনিরাপদ পরিবহন৷ তাই ৬০ টি এয়ারলাইন্সের তালিকায় তাইওয়ানিজ এয়ারলাইন সবচেয়ে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Qintao
কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কার বিকল্প নেই
গত ৩০ বছরের নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে ঐ তালিকা করা হয়েছে৷ বিমান কতবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, কত যাত্রী নিহত হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা, এছাড়া কত কিলোমিটার যাত্রা করেছে এবং যাত্রী সংখ্যা কত- এসবের ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে৷ এসবের ভিত্তিতে তাদের ০ থেকে ১.০০ পয়েন্ট দেয়া হয়েছে৷ কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কার স্কোর দাঁড়িয়েছে ০.৯১৪৷ ২০১৬ সালের সবচেয়ে খারাপ বিমানের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান তাদের৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইন্দোনেশিয়ায় এয়ারলাইন্সে বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি
গারুদা ইন্দোনেশিয়ার স্কোর ০.৭৭৭৷ খারাপ বিমানের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়৷ ১৯৫০ সালে চলাচল শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই এয়াররলাইন্স ৪৭টি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মোট ৫৮৩ জন৷
ছবি: A.Berry/AFP/GettyImages
গবেষণা নিয়ে সমালোচনা
কিন্তু জেএসিডিইসি’র তালিকা কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছে, কেননা, টেকনিক্যাল কোনো ত্রুটির কথা তারা উল্লেখ করেনি৷ এমনকি মানব আচরণের সমস্যার কথাও নেই সেখানে৷ আবহাওয়া বা সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ নেই, যেমন, সন্ত্রাসবাদ বিমানের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় হুমকি৷ এর কারণে ১০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষক সিমন অ্যাশলে বলেছেন, সন্ত্রাসের ভয় দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ৷
ছবি: AP
খারাপ আবহাওয়া
এছাড়া ভয়াবহ খারাপ আবহাওয়ার কারণে বহু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমান৷ সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দুর্ঘটনার ১০ ভাগ দুর্ঘটনা তুষারপাত, কুয়াশা এবং ঝড়ের কবলে পড়ে হয়েছে৷
ছবি: dapd
প্রযুক্তিগত কারণ
বর্তমানের বিমানগুলো নতুন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ৷ দুর্ঘটনার ২০ ভাগ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
মানব আচরণ
বিমানের চালকরা ঝুঁকির অন্যতম কারণ৷ সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অর্ধেকের বেশি দুর্ঘটনা হয় তাদের ভুলের কারণে৷ মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভুল থেকেও দুর্ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া পাইলটের মানসিক অবস্থার উপরও দুর্ঘটনা নির্ভর করে৷
ছবি: picture alliance/ROPI
আকাশের হিরো
২০০৯ সালে হাডসন নদীতে ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে নেমে পড়েছিল বিমান৷ পাইলট ছিলেন চেসলে শুলেনব্যর্গার৷ কিন্তু তিনি পানিতে বিমানটি অবতরণ করাতে পারায় প্রাণে বেঁচেছিলেন যাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Day
দুর্ঘটনার শিকার বিমান
দুর্ঘটনার পর যেসব বিমান মেরামত করে আবার চালানো হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই উদ্বেগ থাকে৷ বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তোলেন না যে দুর্ঘটনায় পড়া বিমান আদৌ নিরাপদ কিনা৷
ছবি: Reuters
এবং বিজয়ী
হামবুর্গভিত্তিক ঐ গবেষণা তালিকায় হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক ২০১৬ সালের সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারলাইন্স হয়েছে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এয়ার নিউজিল্যান্ড এবং তৃতীয় অবস্থানে চীনের হাইনান এয়ারলাইন্স৷ জার্মানির লুফৎহানসার অবস্থান তালিকায় দ্বাদশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে দুর্ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে
জেএসিডিইসি জানিয়েছে, গত বছর বিমান দুর্ঘটনায় ৩২১ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ এ বছর যে বিমান দুর্ঘটনাটি সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা হলো ৭২ জন যাত্রী নিয়ে বলিভিয়া থেকে কলম্বিয়া যাওয়ার সময় মেডেলিন বিমানবন্দরের কাছে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা, যেখানে ব্রাজিলের শাপেকোইনসি রেয়াল ফুটবল দলের খেলোয়াড়রাও নিহত হন৷