ইসরায়েলের জেরুসালেমের পশ্চিমে অবস্থিত হার আদার নামে একটি বসতির প্রবেশপথে পাহারারত ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে গুলি ছোড়েন এক ফিলিস্তিনি৷ এতে তিন ইসরায়েলি নিহত ও একজন আহত হন৷ প্রাণ হারান হামলাকারীও৷
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে মার্কিন দূত জেসন গ্রিনব্লাট এখন জেরুসালেমে৷ এই সময় এই হামলা চালানোর ঘটনাকে ইসরায়েলের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি হটোভেলি বলেন, ‘‘হার আদারের এই ভয়াবহ হামলা মার্কিন দূত জেসন গ্রিনব্লাটের জন্য ফিলিস্তিনি অভ্যর্থনা৷''
ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র লুবা সামরি জানান, ফিলিস্তিনিঐ হামলাকারীর বয়স ৩৭৷ তিনি অন্য ফিলিস্তিনিদের মধ্যে লুকিয়ে হার আদার বসতির প্রবেশপথে গিয়েছিলেন৷ তবে নিরাপত্তা প্রহরীরা তাঁর চালচলন খেয়াল করে থামতে বললে তিনি পিস্তল বের করে গুলি চালান বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঐ মুখপাত্র৷ এতে তিন ইসরায়েলি প্রাণ হারান৷ আর সেখানে থাকা ইসরায়েলের অন্য বাহিনীর কর্মীদের হাতে প্রাণ হারান ফিলিস্তিনি হামলাকারী৷
উল্লেখ্য, হার আদার বসতিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ ফিলিস্তিনি সেখানে যান৷ হামলাকারীরও সেখানে কাজ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল বলে জানা গেছে৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/G. Cattermole
6 ছবি1 | 6
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নেয়া মার্কিন উদ্যোগ সম্পর্কে ইসরায়েলের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি হটোভেলি বলেন, ‘‘অ্যামেরিকানদের এই প্রচেষ্টার শুরুতে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে৷'' এ ধরনের হামলা বন্ধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ এছাড়া হামলা চালাতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের পরিবারকে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি৷ ‘‘এমন কারও সঙ্গে আলোচনা করে লাভ নেই যারা সন্ত্রাসীদের পরিবারকে সহায়তা করে,'' বলেন হটোভেলি৷
বার্তা সংস্থা এএফপির হিসেব বলছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকেইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে অস্থিরতায় কমপক্ষে ২৯৫ জন ফিলিস্তিনি বা আরব ইসরায়েলি প্রাণ হারান৷ একই সময়ে নিহত হন ৫০ জন ইসরায়েলি, দুজন অ্যামেরিকান, দুজন জর্ডানের নাগরিক, একজন ইরিত্রিয়া, একজন সুদানি ও একজন ব্রিটিশ নাগরিক৷
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহত অধিকাংশ ফিলিস্তিনি ছুরি ও গাড়ি নিয়ে হামলা চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন৷ অন্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, এপি)
ইসরায়েল: দেশটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
ফিলিস্তিনের সঙ্গে এবং সেই কারণে বলতে গেলে প্রায় গোটা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেই ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটির বৈরিতা৷ তবে ইহুদি অধ্যুষিত এ দেশ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানেন? জানলে সত্যিই অবাক হবেন৷
রাষ্ট্র ভাষা কয়টি?
জানেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রভাষা ক’টি? দু’টি৷ আধুনিক হিব্রু ভাষা এবং আরবি৷ হিব্রু ভাষার কথা তো সবাই শুনেছেন, কিন্তু ‘আধুনিক হিব্রু’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে তা হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না৷ এই ভাষাটি গত ১৯ শতকের শেষভাগ পর্যন্তও বিকশিত হয়েছে৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আধুনিক হিব্রুর শেকড় প্রাচীন হিব্রু হলেও এখন এ ভাষায় ইংরেজি, স্লাভিচ, আরবি এবং জার্মানসহ অনেকগুলো বিদেশি ভাষার প্রভাব রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
ইসরায়েলের আয়তন কত?
ছোট্ট দেশ৷ কিন্তু কত ছোট? ইসরায়েলের আয়তনই বা কত? কাজির গরু নাকি গোয়ালে থাকে না, গাছে থাকে৷ ইসরায়েলের ক্ষেত্রে কথাটা একটু অন্যভাবে বলা যায়৷ ইসরায়েলের ভূমি চুক্তিতে থাকে না, বাস্তবে থাকে৷ ১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ কিন্তু ইসরায়েলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার৷
ইসরায়েলের ‘সবাই’ সেনাসদস্য
ইসরায়েল একমাত্র দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক সব নাগরিকের জন্যই সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ সুতরাং দেশটিতে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সেনাসদস্যও এক অর্থে ততজন৷ সেনাপ্রশিক্ষণও স্বল্পমেয়াদি হয় না৷ সব প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে ৩ বছরের এবং মেয়েকে অন্তত ২ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলিও ফিলিস্তিনের সমর্থক?
ইহুদিদের একটি ধর্মীয় সংগঠন জিওনিজম মতবাদ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে৷ সংগঠনটির নাম, ‘নেতুরেই কার্টা’ বা ‘নগর রক্ষক’৷ ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি ‘ফিলিস্তিনের সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হননি
নোবেল বিজয়ী জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিনিধন বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ ইসরায়েল তাঁর কথা শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে মনেই রাখেনি, তাঁকে সম্মানও জানাতে চেয়েছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আইনস্টাইন৷
ছবি: Imago/United Archives International
ঈশ্বরের কাছে চিঠি
ইসরায়েলের মানুষ সত্যি সত্যিই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রচুর চিঠি লিখে৷ প্রতি বছর জেরুসালেমের ডাক বিভাগ এমন অন্তত হাজার খানেক চিঠি পায় যেখানে প্রাপকের জায়গায় লেখা থাকে ‘ঈশ্বর’!
ছবি: Fotolia/V. Kudryashov
জেরুসালেম যা যা সয়েছে
ইতিহাস বলছে, প্যালেস্টাইনের রাজধানী জেরুসালেমে এ পর্যন্ত ২৩ বার ভয়াবহ আগুন লেগেছে আর বহিঃশক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে ৫২ বার৷ জেরুসলেম দখল এবং পুনরুদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ৪৪ বার৷
ছবি: DW/S. Legesse
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নোট
ইসরায়েলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ মুদ্রা৷ ‘ব্রেইল’-এর মতো বর্ণের সহায়তায় কাগুজে নোটগুলোতে লেখা থাকে বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কেনাকাটা বা মুদ্রা বিনিময়ে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সারা বিশ্বে ইসরায়েল ছাড়া ক্যানাডা, মেক্সিকো, ভারত আর রাশিয়াতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই বিষেষ ব্যবস্থা রয়েছে৷