২০১৭ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধের বলি হয়েছেন ১০ হাজার মানুষ৷ এর একটা বড় অংশ শিশু এবং মহিলা৷ জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই ছবি উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ পেলো জাতিসংঘের সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায়৷ সেখানে বলা হয়েছে, গত এক বছরে আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ৷ আহতের সংখ্যা অগুণতি৷ ২০১৬ সালের চেয়ে যা অন্ততপক্ষে ৯ শতাংশ বেশি৷ যদিও একইসঙ্গে রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, নিহতদের অধিকাংশই তালিবান এবং আইএস জঙ্গিদের আক্রমণের শিকার৷
পাখির মাঝে শান্তি খুঁজছে আফগানরা
01:40
বারাক ওবামার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আফগানিস্তান থেকে আস্তে আস্তে সৈন্য সরিয়ে নেবে অ্যামেরিকা৷ আক্রমণ প্রতিআক্রমণও খানিক কমেছিল৷ কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে জানিয়ে দেন, সৈন্য সরানোর তো প্রশ্নই নেই, বরং প্রয়োজনে সেদেশে আরো সৈন্য পাঠাবে অ্যামেরিকা৷ তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি থাকবে৷ প্রত্যু্ত্তর দেয় তালিবান এবং আইএস৷ আফগানিস্তানে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটাতে শুরু করে তারা৷ এর জেরে নিহত হন অসংখ্য সাধারণ মানুষ৷ বিভিন্ন বিদেশি মানবতাবাদী সংস্থার দপ্তরেও হামলা চালানো হয়৷ মার্কিন সেনাও আক্রমণ জারি রাখে৷ নিয়মিত চলতে থাকে বিমানহামলা৷ আর এই সবকিছুর মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান অসংখ্য সাধারণ মানুষ, যার একটা বড় অংশ মহিলা এবং শিশু৷
জঙ্গি হামলায় বিধ্বস্ত আফগান দপ্তর
বুধবার পাক-আফগান সীমান্তের জালালাবাদে জঙ্গিরা হামলা চালায় ব্রিটিশ এইড সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর দপ্তরে৷ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে একজনের৷ আহত কমপক্ষে ১৪ জন৷ ভয়াবহ সেই হামলার ছবি দেখুন গ্যালারিতে৷
ছবি: Reuters/Parwiz
গ্রেনেড হামলা
২৪ জানুয়ারি সকালে জালালাবাদে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর দপ্তরে প্রথমে গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গিরা৷ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আফগান নিরাপত্তারক্ষীরা৷ শুরু হয় গুলি বিনিময়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
তুমুল গুলি বিনিময়
গ্রেনেড বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা ঘিরে ফেলে আফগান পুলিশ৷ দপ্তরের পাঁচিলের একপাশে তখন পুলিশ, অন্য ধারে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/Parwiz
আগুন-ধোঁয়া
গ্রেনেড হামলায় আগুন লেগে যায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর দপ্তরে৷ আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশেও৷ বেশ কিছু গাড়ি জ্বলতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
উদ্ধারকাজ
গ্রেনেড হামলার সময় দপ্তরে ছিলেন সেখানকার কর্মীরা৷ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীরা একে একে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর কর্মীদের উদ্ধার করতে শুরু করেন৷ আতঙ্কগ্রস্ত কর্মীদের বেরিয়ে আসতে দেখা যায়৷ অন্যদিকে তখন গুলি বিনিময় চলছে৷
ছবি: Reuters/Parwiz
সামরিক ট্যাংক
লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় সামরিক ট্যাংক৷ প্রায় বিকেল পর্যন্ত লড়াই চলার পর স্থানীয় গভর্নরের অফিস থেকে জানানো হয় যে, লড়াই শেষ হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Parwiz
অজানা আক্রমণকারী
বিকেলে গুলি বিনিময় বন্ধ হলেও, কোনো জঙ্গির মৃত্যু বা আটকের খবর পাওয়া যায়নি৷ আফগান তালিবান মুখপাত্র বিকেলেই জানিয়ে দেয়, ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন৷ অন্য কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীও দায় স্বীকার করেনি৷
ছবি: Reuters/Parwiz
6 ছবি1 | 6
সমীক্ষা অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিমান হামলাতেই নিহতের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ নারী নিহতের সংখ্যা বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ৷ শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই নিহত হয়েছে ৮৬১ জন শিশু৷ আহত অন্তত ২৩১৮ জন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৬ সালে মৃত্যু উপত্যকা খানিক স্বস্তি পেয়েছিল৷ ২০১৭ আবার পুরনো দিন ফিরিয়ে এনেছে৷ এই নিয়ে ৪ বছর আফগানিস্তানে বাৎসরিক নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছড়ালো৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছে বিষয়টি রীতিমতো আশঙ্কার৷
জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের ইতিহাস
সম্প্রতি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে মার্কিন ড্রোন হামলায় অন্তত ২৬ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যও রয়েছে৷ কেন এ সংগঠনকে এ অঞ্চলের অন্যতম ভীতিকর জঙ্গি সংগঠন মনে করা হয়?
ছবি: picture-alliance/dpa
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা যোদ্ধাদের সংগঠন
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন হাক্কানি ১৯৮০-র দশকে মুজাহিদিনের হয়ে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন৷ সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ আনুকুল্য পেয়েছিলেন মুজাহিদিন৷ সেই যোদ্ধাদের নিয়েই গড়ে তোলা হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক৷ ১৯৯৫ সালে হাক্কানি জোট বাঁধে তালিবানের সঙ্গে৷ ১৯৯৬ সালে দখল করে নেয় আফগান রাজধানী কাবুল৷ ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষনা দেয়৷
ছবি: AP
কে এই জালালউদ্দিন হাক্কানি?
জালালউদ্দিন হাক্কানি ১৯৩৯ সালে আফগানিস্তানের পাকতিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন৷ পাকিস্তানের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা মওলানা সামি উল হকের বাবার প্রতিষ্ঠা করা দারুল উলুম হাক্কানি নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন তিনি৷ দারুল উলুম হাক্কানির বিরুদ্ধেও তালেবানসহ অন্যান্য উগ্রপন্থি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
তালেবান মন্ত্রী জালাল উদ্দিন হাক্কানি
তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানের আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন জালালউদ্দিন হাক্কানি৷ ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে তালেবানদের পতনের আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন৷ তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের পর তাঁকেই আফগানিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী জঙ্গি নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়৷ আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সাথেও তাঁর ছিল ঘনিষ্ট যোগাযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাক্কানি নেটওয়ার্ক কোথায়?
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগান সীমান্ত সংলগ্ন পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরানশাহ শহরে এর কমান্ড সেন্টার৷ যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান মনে করে, হাক্কানি নেটওয়ার্ক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মদদপু্ষ্ট, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে৷ আফগানিস্তানের ভেতরে সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপর হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করে আসছে ওয়াশিংটন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tanveer
হাক্কানির উত্তরসুরি
২০১৫ সালে জালালউদ্দিন হাক্কানির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করা হয়৷ কিন্তু তার সংগঠন সেসময় খবরটি অস্বীকার করে৷ বর্তমানে জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এ নেটওয়ার্কের প্রধান৷ সিরাজউদ্দিন হাক্কানি তালেবানেরও উপ প্রধান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি কে ?
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকলেও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর ছোটবেলা কেটেছে পাকিস্তানের মিরানশাহ শহরে৷ লেখাপড়া পেশোয়ারের দরুল উলুম হাক্কানিতে৷ সিরাজউদ্দিনকে একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকে মনে করেন, তিনি তাঁর বাবার চেয়েও কট্টরপন্থি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আনাস হাক্কানি
সিরাজউদ্দিন হাক্কানির ছেলে আনাস হাক্কানি বর্তমানে আফগানিস্তানের কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি আছেন৷ আনাসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে কাবুলের পরিণতি ভয়ংকব হবে বলে হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/National Directorate of Security
হাক্কানি নেটওয়ার্ক কত বড়?
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আফগান বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংগঠনে তিন থেকে দশ হাজার যোদ্ধা রয়েছে৷ এর মূল তহবিল আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে৷ তহবিল সংগ্রহ করতে হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tanveer
অন্য জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা
আল কায়েদা, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ এশিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে হাক্কানি গ্রুপের রয়েছে ঘনিষ্ট যোগাযোগ৷ ওসামা বিন লাদেনের মতো আল কায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির সাথেও এ সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf Newspaper
9 ছবি1 | 9
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছে আফগান নাগরিকেরা৷ যাঁরা দেশে থাকছেন, তাঁরা যুদ্ধের বলি হচ্ছেন৷ আর যাঁরা ভিন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন শরণার্থী হয়ে, তাঁদেরও আর সে সমস্ত দেশ রাখতে চাইছে না৷ কিছুদিন আগে জার্মানি বেশ কিছু শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে দেয়৷ পাকিস্তান আফগান নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার শমন জারি করেছে৷ সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সে দেশের সাধারণ মানুষ৷