ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষকে নিজের ঘর ছেড়ে দেশের ভেতর অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার, আইডিএমসি৷
বিজ্ঞাপন
গতবছর বাংলাদেশ, ভারত ও মোজাম্বিকে সাইক্লোন, আর বাহামায় ডোরিয়ান হ্য়ারিকেন আঘাত হেনেছিল৷
বন্যার কারণে ২০১৯ সালে ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ৷ গতবছর বেশিরভাগ বন্যা হয়েছে আফ্রিকাতে৷
দাবানল, খরা, ভূমিধস আর চরম তাপমাত্রার জন্য প্রায় নয় লাখ মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় গতবছর দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল৷
আরো প্রায় এক কোটি মানুষ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন বা সরকার তাদের সরিয়ে নিয়েছিল বলে জানিয়েছে আইডিএমসি৷
এছাড়া বুর্কিনাফাসো, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে গতবছর ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ৷
সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে প্রায় তিন কোটি ৩৪ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হন বলে জানিয়েছে আইডিএমসি৷
এক দশকের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা৷ এক নজরে দেখে নিন গত এক দশকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলি...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
ক্যার ও মাহা, ২০১৯
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মাহা ও ক্যার৷ এর আঁচ এসে পড়ে ভারত-বাংলাদেশ টি টুয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজেও৷ বিজ্ঞানীরা জানান, ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম একসাথে দুটি ঘূর্ণিঝড় একসাথে অনুভব করছে ভারত৷
(প্রতীকী ছবি)
ছবি: IANS
ফেনী, ২০১৯
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওড়িষার উপকূলে কেন্দ্রবিন্দু থাকা এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সীমিত থাকেনি ভারতে৷ বাংলাদেশেও আসে তার প্রভাব৷ ১৯৯৯ সালের পর থেকে ওড়িষার উপকূলের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি৷ মোট ক্ষয়ক্ষতি ছিল ৭০ কোটি টাকার সমান৷
ছবি: AFP/M.U. Zaman
তিতলি, ২০১৮
গত বছর অক্টোবর মাসে ভারতের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় তিতলি৷ নাসার তথ্য অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা থেকে মাত্র ৩১২ মাইল দূরে৷ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছিলেন, এই ঝড় বাংলাদেশে এসে ঢুকবে৷ কিন্তু তা না হয়ে শেষ মুহূর্তে ঝড়টি পথ বদল করে চলে যায় দক্ষিণের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
অক্ষী, ২০১৭
দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছিল বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালের এই ঝড় বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে জন্ম নিয়ে দক্ষিণের দিকে এগোয়৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ভারতের দ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়৷ ঝড়ে প্রাণ হারান অন্তত ২৪৫ জন এবং নিখোঁজ হন সাড়ে পাঁচশরও বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই মৎস্যজীবী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
মোরা, ২০১৭
একই বছরের আরেকটি বিদ্ধংসী ঝড় ছিল মোরা৷ শ্রীলঙ্কা, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরপূর্ব ভারত, মিয়ানমার, ভুটান, তিব্বত ও বাংলাদেশ এই ঝড়ে আক্রান্ত হয়৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম এবং ঝড় চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম, পায়রা, মংলা ও কক্সবাজার বন্দরে বিপদসঙ্কেত জারি করা হয়৷ বন্ধ রাখা হয় বিমানবন্দরও৷
ছবি: bdnews24.com/Muhammad Mostafigur Rahman
রোয়ানু, ২০১৬
বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, রোয়ানু দুর্বল ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কারণে তেমন ক্ষতি হবে না৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে নতুন করে জেগে ওঠে এই ঝড়৷ মিয়ানমার উপকূলের কাছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রাথমিকভাবে আছড়ে পড়ে রোয়ানু৷ মারা যান ২৭জন৷ এরপর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সংস্পর্শে এসে শক্তিলাভ করে আরো বড় হয় ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু৷ শ্রীলঙ্কায় এই ঝড়ের কবলে প্রাণ হারান ২০১জন৷
ছবি: Imago/Zuma Press
কোমেন, ২০১৫
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎস৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এই ঝড় আছড়ে পড়ে বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারেরও কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: Getty Images/D. Chakraborty
হুদহুদ, ২০১৪
পূর্ব ভারত ও নেপাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত মহাসাগরের এই ঝড়ে৷ এছাড়াও, অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িষায় এসে পড়ে এর ছোঁয়া৷ প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের ক্ষতি হয় এই ঝড়ের কারণে৷ প্রাণ হারান ১২৪ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ফিলিন, ২০১৩
থাইল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের গায়ে আছড়ে পড়া এই ঝড় ছিল ১৯৯৯ সালের পরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় ছিল এটি৷ এর আগের ২৩ বছরে এত বড় মাপের কোনো ঝড় ভারত সামলায়নি৷ সরকারী তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২৫০ কোটি ভারতীয় রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইলা, ২০০৯
গত এক দশকে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ছিল আইলা, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ ও ভারতে পূর্ব উপকূলের বিশাল অংশ৷ প্রায় দুই কোটি মানুষ এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ ঘরছাড়া হন অনেকে৷ শুধু কলকাতা শহরেই এই ঝড় কেড়ে নেয় ১৮টি প্রাণ, বাংলাদেশে হারিয়ে যায় প্রায় ৬০ হাজার গবাদি পশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
10 ছবি1 | 10
সংস্থাটি বলছে, ঘরছাড়াদের অনেকে আবার ঘরে ফিরে আসে৷ তবে একটা অংশ আর ফিরতে পারে না৷ ফলে ২০১৯ সাল শেষে মোট পাঁচ কোটি আট লাখ মানুষ ঘরছাড়া ছিল, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ৷
এদের অনেকে অল্প জায়গায় একসঙ্গে বসবাস করছেন৷ এ কারণে তাদের অনেকে সহজেই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন আইডিএমসির পরিচালক আলেকজান্দ্রা বিলাক৷
তবে আইডিএমসির এসব পরিসংখ্যান আশার কথাও শুনিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য যারা ঘর ছেড়েছেন, তাদের অধিকাংশকেই দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ ফলে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি দুর্যোগ শেষে ঘরবাড়ি টিকে থাকলে সেখানে ফিরতেও পেরেছেন অনেকে৷
আইডিএমসি বলছে, বাংলাদেশ, ভারতের পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যাবস্থা ভালো হওয়ার কারণে ফণী, বুলবুলের সময় লাখ লাখ মানুষকে সময়মতো সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে৷ একই কারণে লেকিমা ও কামুরি ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে চীন ও ফিলিপাইন্সও তাদের নাগরিকদের বিপদমুক্ত করতে পেরেছে৷
তবে পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা না থাকায় আফ্রিকায় সাইক্লোন ইডাই ও কেনেথের কারণে কম মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, কিন্তু মারা গেছেন বেশি মানুষ৷