ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে ২০২৪ সালে দুই লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় সংখ্যাটি এক বছরের হিসাবে সর্বকালের সর্বোচ্চ৷
জার্মানিতে ২০২৪ সালে মোট দুই লাখ ৫৬ হাজার ৯৪২ জন মানুষ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত তিন দশমিক সাত শতাংশ বেশি৷ছবি: Thomas Trautschel/photothek/IMAGO
বিজ্ঞাপন
সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে জার্মানির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ভেল্ট আম জনটাগ এ তথ্য জানিয়েছে৷
বেশিরভাগ মানুষ নিজ ঘরে নিজেকে নিরাপদ মনে করলেও,পারিবারিক সহিংসতাপরিসংখ্যান সেই ধারণার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷
জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস (বিকেএ) এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে সাপ্তাহিক সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, পারিবারিক পর্যায়ে সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে৷
২০২৪ সালে মোট দুই লাখ ৫৬ হাজার ৯৪২ জন মানুষ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত তিন দশমিক সাত শতাংশ বেশি৷
এসব ঘটনায় বর্তমান স্বামী/স্ত্রী বা পার্টনার এবং প্রাক্তনের হাতেই সহিংসতার শিকার হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৬৯ জন৷ সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় এক দশমিক নয় শতাংশ বেশি৷
বিকেএ আরো জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে সহিংসতার ঘটনা সাত দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ৮৭৩টি৷
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের কয়েকটি দেশে নারীরা পরিবারের সদস্য বা কাছের মানুষদের মাঝেও নিরাপদ নয়৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস
নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়৷ এ দিনে জার্মানিতে নারীদের অবস্থা সম্পর্কে কিছু চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান জানান পরিবারমন্ত্রী ফ্রানসিজকা গিফে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
প্রতি ঘণ্টায় একজন নারী নির্যাতিত
মন্ত্রী ফ্রানসিজকা গিফে জানান, ২০১৮ সালে এক লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি নারী তাদের বর্তমান বা প্রাক্তন সঙ্গীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন৷ এই এক লাখ ১৪ হাজার নারীর মধ্যে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ গিফে বলেন, ‘‘প্রতি ঘণ্টায় কাছের মানুষের হাতে বিপজ্জনকভাবে আহত হন একজন নারী৷ এই পরিসংখ্যান আসলেই ভয়াবহ৷’’
ছবি: picture alliance/dpa
বাড়ছে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার প্রবণতা
জার্মানিতে গত কয়েক বছরে সহিংসতার ঘটনা প্রকাশের প্রবণতা বেড়েছে৷ আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি নারী চুপ না থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ তবে নানা কারণে এখনো বহু নারী অভিযোগ করতে আগ্রহী হন না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Ochoa
নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র
গিফে জানান, জার্মানিতে সহিংসতার শিকার প্রতিটি নারীর একটি নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সেই অনুপাতে নেই আশ্রয়কেন্দ্র৷ আরো আশ্রয়কেন্দ্র গড়তে আগামী চার বছরে বার্ষিক ৩০ মিলিয়ন ইউরো ( ২৮০০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করার ঘোষণা দেন তিনি৷ বর্তমানে জার্মানিতে মোট ৩৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
প্রতিবাদে নারীরা
জার্মানিতে প্রতি তিন দিন অন্তর একজন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মারা যান৷ ইটালি, বেলজিয়াম বা ফ্রান্সের মতো দেশের নারীদেরও একই অবস্থা৷ ২৪ নভেম্বর নারীর ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে পথে নামেন নারীরা৷ বেলজিয়ামে নির্যাতিত নারীদের প্রতীক লাল জুতো রাস্তায় বিছিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেন তারা৷
ছবি: AFP/K. Tribouillard
ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেমন চিত্র
ফ্রান্সের অবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ৷ নারীদের ওপর সঙ্গীর প্রাণঘাতী হামলার হার সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়া ইটালিতে গত পাঁচ বছর সঙ্গীর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার নারী, জানাচ্ছে ইটালির সরকারী পরিসংখ্যান সংস্থা ইনস্ট্যাট৷ ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সেখানে সহিংসতার ফলে নারী মৃত্যুর হারও বেড়েছে৷