1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক বছরে ১০১ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশে করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ করোনার সময় নানা কারণে মানসিক চাপে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ কিন্তু চলতি বছরেও পরিস্থিতি এখনো বদলানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷

প্রতীকী ছবিছবি: Hans Lucas/imago images

তরুণ শিক্ষার্থীদের পরিচালিত একাট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন তাদের এক জরিপে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং ও মানসিক চিকিৎসায়ও সহায়তা করে৷

তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানায়, এই ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ জন ছেলে শিক্ষার্থী৷ ৩৬ জন মেয়ে৷

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তারা মানসিক চাপের কথা বললেও এর মূলে রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক কারণ৷ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রোজ তানসেন জানান, ‘‘করোনার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ধাকায় বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি হয়৷ ভবিষ্যত নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন৷ অনেক পরিবার আর্থিক দুরবস্থায় পড়ার কারণে তাদের পরিবার থেকে চাকুরি বা আয়ের জন্য চাপ দেয়া হয়৷ করোনার সময় যেটা তাদের পক্ষে ছিলো প্রায় অসম্ভব৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে বড় একটি অংশ পরিবার থেকে বিয়ের চাপের মুখে পড়ে আত্মহত্যা করেন৷ অনেক পরিবার মনে করেছে এই এই সময়ে বিয়ে দিতে পারলে তারা কিছুটা চাপমুক্ত হবেন৷’’

তাদের জরিপ অনুযায়ী যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যা মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর ৬১.৩৯ ভাগ৷ আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৩ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২২.৭৭ শতাংশ৷ বাকিরা মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী৷
এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নয়জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  পাঁচ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন আত্মহত্যা করেছেন৷

করোনার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি হয়: রোজ তানসেন

This browser does not support the audio element.

তানসেন রোজ বলেন, ‘‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ অনেকেই গ্রাম থেকে পড়তে আসেন৷ তাদের পরিবার করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ তাই তাদের ওপর চাকরি বা আয় করে সংসারের হাল ধরার চাপ বেশি৷ সে কারণেই আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে তাদের সংখ্যা বেশি৷ অন্যদিকে মেয়েদের ওপর প্রধান চাপ ছিলো বিয়ে দেয়ার৷ সংসারের হাল ধরা বা চাকরি করার চাপ তাদের ওপর ছেলেদের তুলনায় অনেক কম বলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা কম৷ যদিও সাধারণভাবে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি৷’’

গত বছর আত্মহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া কুয়েটের একজন শিক্ষার্থী জানান, গত বছর করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি তার বাড়িতে ফিরে যান৷ এরপর থেকেই তিনি বিচ্ছিন্ন বোধ করতে থাকেন, আসে ক্যারিয়ার নিয়ে বিষণ্ণতা৷ তারপর শুরু হয় পরিবারের অবহেলা এবং কিছু একটা করার চাপ৷ এক পর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ বেঁচে গেলেও তাকে অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কপাল ভালো যে এরপর আমাকে কাউন্সেলিং করা হয়৷ আমার মানসিক শক্তি বেড়ে যায়৷ এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি৷ এখন আবার করোনার কারণে কুয়েটের ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি৷ তবে এবার আমি জীবন সম্পর্কে অনেক সচেতন৷ আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি৷ আশা করি করোনা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷’’

তবে পরিস্থিতির উন্নতি এখনো তেমন হয়নি বলে জানান রোজ তানসেন৷ তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসেই ১০জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের দায়িত্ব আছে: ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ কিন্তু আত্মহত্যার মতো ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এমন অনেক শিক্ষার্থীতো আত্মহত্যা করেননি৷ এখান থেকেই আমাদের জীবনবোধের শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ আর করোনার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলেও শিক্ষার্থীরা কিন্তু মানসিক চাপে থাকবে৷ তার মনে করবে তারা পিছিয়ে পড়ল, তাদের দিয়ে কিছু হবে না৷ এইখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের দায়িত্ব আছে৷ তাদের চাপ দেয়া চলবে না৷’’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং একটা জরুরি বিষয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ইনস্টিটিউটে স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার মাত্র একজন৷ এটা অনেক বাড়ানো উচিত৷ এই করোনার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন৷ তাদের সমস্যার কথা বলবেন৷ স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজর তাদের সমস্যার সমাধান করবেন না পারলে অন্য কোথাও কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করবেন৷ মানসিক চিকৎসকের কাছে পাঠাবেন৷ পরিবারেরও দায়িত্ব আছে৷ পরিবারের সদস্যদেরও তাদের সন্তানদের দেখভালের জন্য কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ