থাইল্যান্ডের একটি কোম্পানি ২০১৫ সালে একটি সিসি ক্যামেরা বাজারে আনে৷ একটি ভিডিও বিজ্ঞাপনে এই পণ্যটির নাম ছড়িয়ে গেছে দুনিয়া জুড়ে৷ বাংলাদেশেও অনেকে এই বিজ্ঞাপন শেয়ার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায়, রাতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক দোকানের সামনে প্রতিদিন এক গৃহহীন ব্যক্তি এসে ঘুমায়৷ যিনি ভিক্ষা বা টোকাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
এক সকালে দোকানদার দোকান খুলে দেখেন, ওই ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছে৷ তিনি তার গায়ে বালতি-ভরা পানি ঢেলে দেন৷ ওই ব্যক্তি চিৎকার করতে থাকলে ছুঁড়ে মারেন ধাতব সেই বালতি৷ এতে পালিয়ে যান ওই ভিক্ষুক৷
পরের দিনও ঘুম থেকে জেগে একই পরিস্থিতি দেখে দোকানদার তাঁকে তাড়িয়ে দেন৷ এক সকালে দোকানদার জেগে দোকানের সামনে পেশাবের গন্ধ পান৷ তিনি ধরেই নেন এটা ওই গৃহহীন ব্যক্তির কাজ৷
ঘুমন্ত সেই গৃহহীনকে দোকানদার লাথি দেয়৷ এতে জেগে যান অনাহার-অপুষ্টি ক্লিষ্ট সেই ব্যক্তি৷ এভাবে আক্রমণে প্রথমে বিস্মিত হলেও দোকানির ক্রোধ দেখে পালিয়ে যান তিনি৷
ওইদিন গৃহহীন সেই ব্যক্তির সঙ্গে এ ধরনের আচরণে এক তরুণী এসে তিরস্কার করে যায় দোকানদারকে৷
এরপর এক সকালে দোকানদার ঘুম থেকে জেগে দেখেন, দোরগোড়ায় ঘুমানো সেই ব্যক্তি নেই৷ পরপর কয়েকদিন না দেখায় তিনি অবাক হন৷ এদিক ওদিক চলে যায় অনুসন্ধিৎসু চোখ৷
এ সময় পাশের দোকান থেকে একজন এই দোকানদারকে বলেন, তার (গৃহহীন) খোঁজ করছো? সে অনেক দূরে চলে গেছে৷ কিছুই বুঝতে পারলো না দোকানদার৷ তখন মনে পড়ে যায় দোকানের সামনে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার কথা৷ পুরাতন ভিডিও ঘেটে তিনি দেখেন, অন্য এক ব্যক্তি পেশাব করতে শুরু করার পর ওই গৃহহীন তাকে তাড়িয়ে দেয়৷
বিজ্ঞাপন দেখেই বিশ্বাস করবেন না
বিজ্ঞাপনে যা দাবি করা হয়, পণ্যে অনেক সময়ই তা থাকেনা৷ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এমন৷ দেখুন বিশ্বে নানান সময় বিজ্ঞাপনের নামে কী করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
তিনি মরিয়াও জীবিত...
লিডিয়া ডি পিংকহাম মেয়েদের ঋতুস্রাব এবং মেনোপজ-এর জন্য বিশেষ ধরণের ওষুধ কিনতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন৷ ১৮৮৩ সালে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান লিডিয়া৷ কিন্তু বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য তাঁর মৃত্যু সংবাদ গোপন রাখা হয়৷ প্রতি সপ্তাহে ওষুধ ব্যবহারকারীদের চিঠির জবাব দিতেন লিডিয়া৷ তাঁর মৃত্যুর পরও বেশ কিছুদিন অনেকে লিডিয়ার কাছ থেকে জবাব পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W.Townson
প্রায় শত বছর আগে ক্যানসার সারানোর দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তার উইলিয়াম ফ্রেডেরিক কখ সেই ১৯৪০-এর দশকে দাবি করতেন তিনি গ্লাইক্সিলাইড উদ্ভাবন করেছেন এবং তা দিয়ে অনেক রোগ, বিশেষ করে ক্যানসারও সারানো সম্ভব৷ এ কথা বিশ্বাস করে ৩০০ ডলার দিয়ে একটা ইনজেকশন কিনেও ক্যানসার থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ৷ পরে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক সংস্থাই জানায়, ডা. উইলিয়াম ফ্রেডেরিক কখ আসলে একজন হাতুড়ে ডাক্তার!
ছবি: Imago/blickwinkel
মাউথ ওয়াশ নাকি সর্দিকাশিও সারায়
যুক্তরাষ্ট্রের ডা. জোসেফ লিস্টার-এর অসাধারণ এক উদ্ভাবন মাউথওয়াশ ‘লিস্টার’৷ কিন্তু তা দিয়ে কি সর্দি-কাশি সারানো সম্ভব? এক সময় লিস্টার প্রস্তুতকারীরাই দাবি করত, লিস্টার ব্যবহার করলেই সবার সর্দিকাশি অর্ধেক সেরে যাবে৷ এই দাবিও যে মিথ্যা তা বুঝতে বেশিদিন লাগেনি৷
ছবি: Imago/United Archives
মিষ্টিতেও মিথ্যা
যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম ‘সুইটনার’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্প্লেন্ডা দাবি করতো, তাদের সুইটনার চিনির মতো, কারণ সুইটনারগুলো আসলে চিনি দিয়েই তৈরি৷ এই দাবি সম্বলিত বিজ্ঞাপনও প্রচার করত স্প্লেন্ডা৷ কিন্তু সুইটনার উৎপাদনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান ‘ইকুয়াল’ মামলা ঠুকে দিল৷ আদালতে ইকুয়াল দাবি করে, চিনির কথা বলে স্প্লেন্ডা আসলে ধোঁকাবাজি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে৷ অভিযোগ সত্যি হওয়ায় ক্ষতিপূরণও পেয়েছিল ইকুয়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W.Townson
জার্মান কোম্পানির মিথ্যাচার
সাম্প্রতিকতম মিথ্যাচারটি জার্মানির গাড়ি কোম্পানি ফল্কসভাগেন-এর৷ ১৯৫০ এর দশক থেকে ‘থিংক বিগ’ সিরিজের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে তারা৷ তাদের ডিজেল গাড়ির কম্পিউটারে একটি সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়ায় দূষণ পরীক্ষার সময় গাড়িটি বিষাক্ত গ্যাস কম ছাড়ত৷ পরীক্ষা শেষে গাড়িটি যখন কোনো ব্যবহারকারী রাস্তায় নামাতো, তখন দেখা যেত গাড়িটি এমন হারে গ্যাস ছাড়ছে যা নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
5 ছবি1 | 5
এভাবে একদিন গৃহহীন এসে দেখতে পায়, হেলমেট পরা কিছু মানুষ দোকানের তালা ভাঙার চেষ্টা করছে৷ তিনি তা রুখে দাঁড়ান৷
কিন্তু দুর্বল শরীর নিয়ে এবং একাকী তাদের সাথে পেরে উঠেননি৷ এক পর্যায়ে ওরা তাঁর মাথা পদপিষ্ট করে৷ তাতেও তিনি দমে যাননি৷ এরপরও তাঁকে থামাতে না পেরে দুষ্কৃতিকারীরা তাঁর পেটে ছুরি চালিয়ে দেয়৷ এতে ঢলে পড়েন তিনি৷
এদিকে একের পর এক দিনের ভিডিও দেখছিলেন আর আত্মগ্লানিতে ভেঙে পড়ছিলেন দোকানদার৷ শেষে স্ক্রিনে ভেসে উঠে, দেয়ার ইজ মাচ মোর ট্রুথ দ্যাট ইউ আর ব্লাইন্ড টু৷
এরপরই ভিজার সিসিটিভির নাম, পণ্যের ছবি এবং মনোগ্রাম ভেসে উঠে৷ এটি ক্রিয়েচার ল্যাব সলিউশন লিমিটেড নামের এক কোম্পানির পণ্য৷
২০১৫ সালের ২৭ অগাস্ট ভিজারের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিওটি শেয়ার দেয়া হয়৷ এ পর্যন্ত এটা এক কোটি ৯২ লাখ বার দেখা হয়েছে৷ পরেরদিন এটা দেয়া হয় ফেইসবুকেও৷ যা এ পর্যন্ত ৬৫ লাখ বার দেখা হয়েছে৷ যা ২৭৮ হাজারবারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে৷
এর মাধ্যমে নিজ দেশেও অপরিচিত এই ব্র্যান্ড পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে৷