এক মাসের মধ্যে লিখিত শান্তি প্রস্তাব দিতে পারে তালেবান
৬ জুলাই ২০২১
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যেতে শুরু করেছে৷ এই সুযোগে বিভিন্ন জেলা দখল করে নিচ্ছে তালেবান৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিমধ্যে ১০০-র বেশি জেলা তালেবানের দখলে চলে গেছে৷ তবে তালেবানের দাবি, তারা ৩৪টি রাজ্যের প্রায় ২০০ জেলা দখল করেছে, যা দেশটির প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে অবস্থিত৷
এদিকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি বাগরাম এয়ারবেস থেকে গত সপ্তাহে মার্কিন সেনারা চলে গেছে৷ ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সেনার আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা৷
এই অবস্থায় আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে তালেবানের আগমন বার্তা বুঝতে পেরে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর এক হাজারের বেশি সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে তাজিকিস্তানে চলে গেছেন বলে তাজিকিস্তানের সীমান্তরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে৷ আফগান বাহিনীর কয়েকজন সদস্য জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়েছেন বলেও জানা গেছে৷
আফগানিস্তান ছাড়ছে মার্কিন সেনারা, রেখে যাচ্ছে আবর্জনা
গত দুই দশক ধরে বাগরাম বিমানঘাঁটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সদরদপ্তর৷ এরমধ্যে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে ওয়াশিংটন৷ সেখানে এখন পড়ে আছে মার্কিন সেনাদের টনকে টন আবর্জনার স্তূপ৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
যত দূর চোখ যাবে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের রাজনীতির জন্য কী ধরনের ভবিষ্যত রেখে যাচ্ছে সেটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে৷ তবে দেশটি ছাড়ার আগে সেনারা যে তাদের ব্যবহৃত বিশাল আবজর্নার স্তূপ রেখে যাচ্ছে এই ছবি সেই কথাই জানাচ্ছে৷ বাইডেনের ঘোষিত সময়সীমার ১১ সপ্তাহ আগেই বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এখন সেখানে শুধুই ময়লার স্তূপ৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
এত জঞ্জালের কী হবে
২০০১ সাল থেকে বাগরামে যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখের বেশি সেনা দায়িত্ব পালন করেছেন৷ কাবুল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকাটি রীতিমত একটি ছোটখাটো অ্যামেরিকান শহরে পরিণত হয়েছিল৷ গড়ে উঠেছিল শপিং সেন্টার, ফাস্টফুডের দোকানও৷ যাওয়ার সময় মার্কিন সেনারা দরকারি সরঞ্জামগুলো সাথে নিয়ে যাচ্ছে অথবা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করছে৷ কিন্তু ফেলে যাচ্ছে বিপুল আবর্জনা, প্যাকেজিং ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
কারো ফেলনা কারো সম্পদ
ঘাঁটির বাইরে ফেলনার এই ভাগাড় অবশ্য স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিপুল কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে৷ তাদের চোখ তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে যদি মূল্যবান কিছু মিলে৷ যেমন এক জোড়া সামরিক বুট খুঁজে পেয়েছেন একজন৷ আবর্জনা থেকে খুঁজে পাওয়া উপকরণ বিক্রি করে অনেকে অর্থ আয়েরও চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
ইলেকট্রনিকের খোঁজে
এই স্তূপের একটি বড় অংশই ইলেকট্রনিক বর্জ্য৷ সেখানে সার্কিট বোর্ড, স্ক্রু থেকে শুরু করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্থানীয়রা৷ এগুলোর কোনো কোনোটিতে এমনকি তামা, সোনার মতো মূল্যবান ধাতুও রয়েছে৷ এখান থেকে যদি ৫০০ ডলার আয়ের ব্যবস্থাও হয় তাও রীতিমত সম্পদের খনি আফগানদের জন্য৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
বাগরামের ভবিষ্যত
হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত বাগরামের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে রয়েছে দীর্ঘ এতিহ্য৷ ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখলের পর সোভিয়েত সেনারাও সেটিকে ব্যবহার করেছিল৷ অনেকেরই এখন আশঙ্কা ঘাঁটিটি তালেবানরা দখল করে নিলে সেটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ছবি: imago images
আফগানিস্তান ত্যাগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি বছর ‘নাইন ইলেভেনের’ আগেই সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ১ মে থেকে আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে মার্কিন সেনারা৷ তবে তালেবানদের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ভারি অস্ত্রসহ একটি বাড়তি দলকে সেখানে মজুদ রাখা হয়েছে৷ ন্যাটো ও অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর ৩৬টি মিশন এখনও সেখানে আছে৷ অ্যামেরিকার অবশিষ্ট সৈন্য আছে আড়াই হাজার আর জার্মানির এগারশো৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
নারীদের অবস্থান
ভাগাড় থেকে দরকারি ধাতব বস্তু খুঁজে পেয়েছে এই মেয়েটি৷ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে আফগান নারীদের জীবনে৷ তারা স্কুলে যেতে পারছে, এমন কিছু জায়গায় কাজ করতে পারছে, যা আগে নিষিদ্ধ ছিল৷ আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নারীরা জায়গা করে নিয়েছে৷ তাদের এই পরিবর্তন কি সামনের দিনেও বজায় থাকবে?
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
মার্কিন বাহিনীর আগমনের পর বাগরাম ঘাঁটি নির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছিল আশেপাশে৷ জীবিকার তাগিদে অনেক আফগান সেখানে এসে বসবাস শুরু করেন৷ তবে মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ায় পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
যা পড়ে থাকছে
নিজেদের ব্যবহৃত বুট আর আবর্জনা ছাড়া আফগানিস্তানকে আর কী দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে আশ্বাস দিয়েছেন টেকসই সম্পর্ক গড়ে তেলার৷ তার রূপরেখা কী হবে কিংবা কতটা কার্যকর থাকবে তাই এখন দেখার বিষয়৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
9 ছবি1 | 9
আলোচনা চলছে
কাতারের দোহায় গতবছর আফগানিস্তান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়৷ বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে তালেবানের অবস্থান ভালো থাকলেও তারা শান্তি আলোচনায় আন্তরিক বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ৷ ‘‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা ও প্রক্রিয়ার গতি আরও বাড়বে... এবং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এটা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হবে,’’ বলেন তিনি৷ মুজাহিদ বলেন, ‘‘সম্ভবত এক মাসের মধ্যে ঐ পর্যায়ে পৌঁছা যাবে যখন উভয়পক্ষ তাদের লিখিত শান্তি প্রস্তাব পেশ করবে৷’’
আলোচনার দিকে নজর রাখা কূটনীতিকরা অনেকদিন ধরেই তালেবানের কাছ থেকে একটি লিখিত শান্তি প্রস্তাব আশা করছেন৷ এখন তালেবানের মুখপাত্র এক মাসের মধ্যে তেমন একটি প্রস্তাব দেয়ার কথা বললেও তারা আসলেই সেটা দিবে কিনা, তা আশা করা কঠিন বলে মনে করছেন আফগানিস্তানের শান্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিয়া আনোয়ারি৷ তবে তিনি তালেবানের সেই প্রস্তাব পাওয়ার আশা করছেন যেন অন্তত ‘তারা কী চায় তা জানা যায়’৷