স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার ২৬ দিন পর আবারো জমজ সন্তান জন্ম দিলেন এক মা৷ কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও, মা ও তাঁর তিন সন্তান সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে ডাক্তাররা৷
বিজ্ঞাপন
আরিফা সুলতানা নামের ২০ বছর বয়সি এ মায়ের বাড়ি বাংলাদেশের যশোর জেলায়৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গর্ভবতী আরিফা সুলতানা খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এসময় আরিফার গর্ভে থাকা আরো দুটি সন্তান থাকলেও তাদের অস্তিত্ব টের পাননি ডাক্তাররা৷ প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার ২৬ দিন পর তাঁর আবারো প্রসব বেদনা উঠলে গত মঙ্গলবার তিনি স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন৷ পরীক্ষার পর হাসপাতালের ডাক্তাররা আরিফার গর্ভে জমজ সন্তানের অস্তিত্ব টের পান৷ডাক্তারদের সহযোগীতায় আবারো একটি কন্যা ও একটি পুত্র শিশুর মা হন আরিফা৷
হাসপাতালে কর্তব্যরত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শীলা পোদ্দার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আরিফা নিজেও বুঝতে পারেননি যে তাঁর গর্ভে সন্তান রয়েছে৷ শীলা জানান আরিফার গর্ভে দুটি আলাদা আলাদা প্রকোষ্ঠ ছিল৷ এ ধরণের ঘটনা কদাচিত হয়ে থাকে উল্লেখ করে শীলা জানান তিন সন্তান নিয়ে আরিফা সুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন৷
তবে বিষয়টি অবাক করেছে সংশ্লিষ্টদের৷ যশোর জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিলীপ রায় এএফপিকে বলেন, তিনি তাঁর ৩০ বছরের ডাক্তারি জীবনে এ ধরণের ঘটনা দেখেননি৷ এ ক্ষেত্রে তিনি আরিফার প্রথম সন্তান জন্মের সময়ে নিয়োজিত ডাক্তারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন ওই সময়ে দায়িত্বরত ডাক্তারের এ বিষয়টি নজরে আসার কথা ছিল৷
দরিদ্র পরিবার থেকে আসা আরিফা তিন সন্তান পেয়ে বেশ পুলকিত৷ তবে দারিদ্রতার ভারে আক্রান্ত আরিফা সন্তানদের লালন পালন নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন ৷ এদিকে আরিফার স্বামী দিনমজুর সুমন বিশ্বাস ঘটনাটিকে ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপা' উল্লেখ করে বলেন, সন্তানদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন৷
আরআর/জেডএইচ (এএফপি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ধনী দেশে কম আর গরিব দেশে বেশি শিশু জন্মে কেন ?
বিশ্বের প্রতিটি নারী নাকি গড়ে আড়াই জন শিশুর জন্ম দেন৷ কিন্তু ‘গরিব’ দেশগুলোতে শিশু জন্মের হার ধনী দেশগুলোর তুলনায় বেশি কেন? হ্যাঁ, বিভিন্ন দেশে শিশু জন্মের হার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের দেয়া কিছু ব্যাখ্যা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
গরিব দেশের শিশু
গরিব দেশের মা-বাবা’র ঘরে জন্ম নেয় গড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি শিশু৷ পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে সংসারের সচ্ছলতার জন্য কাজও করতে হয়৷ অনেক সময় বেশি সন্তানকে সংসারের সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়ে থাকে৷
ছবি: Imago/robertharding
আরো কারণ
একজন নারী কয়টি সন্তানের জন্ম দেবে, তা নির্ভর করে সন্তানের বাবার ওপর৷ বিয়ে, চাকরি বা সন্তানের জন্ম দেয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্তই নেয়ার অধিকার নেই সেসব দেশে৷ এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ অ্যামেরিকার কথা জানিয়েছেন, যদিও বলেছেন, শহরের তুলনায় গ্রামের নারীদের সন্তান বেশি হয়ে থাকে, যা আসলে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
ছবি: DW/B. Darame
জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণা নেই
অনেক গরিব দেশের নারীদের গর্ভনিরোধক বা জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই৷ স্কুল, ডাক্তার বা কোথাও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় না, অর্থাৎ বহু নারী না চাইলেও তাঁরা গর্ভবতী হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফ্রিকার অবস্থা
জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারাইকে ড্যোরিং বলেন, বিশ্বের ৪৩টি দেশের নারীরা গড়ে চারটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন৷ আর এই দেশগুলোর মধ্যে ৩৮টি-ই আফ্রিকায়৷
ছবি: imago/epd/S. Vogt
ধনী দেশের নারীদের ভাবনা
জার্মানি, অ্যামেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের নারীরা গড়ে এক বা দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন৷ এসব দেশে জনসচেতনতা তুলনামূলকভাবে বেশি, সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নারী নিজেই নিতে পারেন৷ তাছাড়া শিল্পোন্নত দেশগুলোতে সন্তান জন্মের পরও নারীরা চাকরি করতে চান৷ এসব দেশের মায়েদের মতে, শুধু বাচ্চা জন্ম দিলেই হবে না, তাঁদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন দেয়ার নিশ্চয়তাও থাকতে হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/U. Anspach
জার্মানিতে শিশু জন্মের হার
গত বছর জার্মানিতে মোট ৭৮৫,০০০ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০১৬ সালের চেয়ে কিছুটা কম৷ জার্মানিতে কোন বছর কতজন শিশু জন্ম নেয় এবং কতজন শিশু কখন স্কুলে যাবে, তাদের কতজন শিক্ষকের প্রয়োজন তার একটি হিসেব থাকা জরুরি৷ ভবিষ্যতে কতজন মানুষ জার্মানিতে বসবাস করবেন সে হিসেব করার জন্যও তা প্রয়োজন৷