একের পর এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় খবরের শিরোনামে রাজস্থানের কোটার একটি হাসপাতাল৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একে স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই দাবি করছেন৷ তবে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷
বিজ্ঞাপন
উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের স্মৃতি ফিরে এল রাজস্থানের কোটায়৷ গত এক মাসে কোটার জে কে লোন হাসপাতালে অন্তত ১০০ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে৷ যার মধ্যে বুধবারই মারা গিয়েছে ৯টি শিশু৷ কেন এই মৃত্যু? উত্তর নেই কারও কাছে৷ ২০১৭ সালে ঠিক এ ভাবেই কিছু দিনের মধ্যে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু হয়েছিল গোরক্ষপুরে৷ যা নিয়ে রাজনীতিও হয়েছিল বিস্তর৷
কোটার হাসপাতালে গত এক মাস ধরেই একের পর এক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে৷ হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওজন কম থাকার জন্যই এ ভাবে মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক শিশুর৷ এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এক মাসে ১০০টি বাচ্চা স্রেফ ওজন কম থাকার কারণে মারা গেল? একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এমনও হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭০ বছর
কয়েকদিন আগেই ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র৷ গত ৭০ বছরে বিশ্বকে কী দিয়েছে ডাব্লিউএইচও ? চলুন দেখে নেয়া যাক....
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত
১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ সেদিন ছিল ৭ এপ্রিল৷ সেই হিসেবে এ মাসেই পালিত হলো জন্মদিন৷ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণে প্রথম বিশেষ সংস্থা এটি৷
ছবি: picture-alliance/akg/P. Almasy
মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানো
দুই দশক আগেও সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল৷ ১৯৯০ সালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেতো৷ ২০১৬ সালে মারা যায় ১৫ হাজারের মতো৷ মাতৃমৃত্যুহারও কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/B. Stirton
গড় আয়ু বেড়েছে
গড় আয়ু বৃদ্ধিতেও ভূমিকার রেখেছে ডাব্লিউএইচও৷
যদিও ইউরোপীয়দের তুলনায় আফ্রিকানদের আয়ু এখনও কুড়ি বছর কম , কিন্তু ১৯৯০ সালের তুলনায় আফ্রিকার জনগণের গড় আয়ু আট বছর বেড়েছে৷
এইডসে মৃত্যুহার কমছে
১৯৯৭ সাল থেকে এইচআইভিতে সংক্রমণের হার কমছে৷ তবে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বার্ষিক মৃত্যু সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল৷ ওই সময়ে প্রতিবছর প্রতি দুই লাখ মানুষ এইডসের কারণে মানা যেতো৷ বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৩৬ মিলিয়ন৷
ছবি: DW/Amós Zacarias
পরিষ্কার খাবার পানি পাচ্ছে অনেক বেশি মানুষ
কলেরা বা ডিপথেরিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখার মূল চাবিকাঠি-ই হচ্ছে হচ্ছে পরিস্কার পানীয় জল৷ গত ৩০ বছরে অনিরাপদ পানি পানের কারণে মৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী হ্রাস পেয়েছে৷ তবে ভারতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এখনো স্যানিটেশন ব্যবস্থার আরো উন্নতি প্রয়োজন৷ আগামীতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷
ছবি: AP
জীবন বাঁচায় পোলিও টিকা
একসময় বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনের জন্য বড় হুমকি ছিল পোলিও৷ তবে পোলিও টিকা আবিষ্কারের পর থেকে চিত্র ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে৷ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের অনেক দেশই এখন একেবারে পোলিওমুক্ত৷ ১৯৮৮ সালে সারা বিশ্বে মোট সাড়ে তিন লাখ পোলিও রোগী ছিল, ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা কমে ৩৭ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Al-Ansi
6 ছবি1 | 6
স্থানীয় মানুষের দাবি, ওই হাসপাতালটি বাসের অযোগ্য৷ প্রকাশ্যে শুকর ঘুরে বেড়ায় হাসপাতালের ভিতর৷ এক একটি খাটে চার-পাঁচজন করে রোগীকে ভর্তি করে নেওয়া হয়৷ রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম৷ ফলে যে সমস্ত শিশুদের ওখানে ভর্তি করা হয়, তারা ঠিক মতো চিকিৎসা পায় না৷ সে কারণেই একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে৷ অথচ প্রশাসন নীরব৷
বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে যথারীতি৷ বুধবারই বিজেপি সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল দেখতে গিয়েছিল হাসপাতালটি৷ যার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ ডয়চে ভেলেকে লকেট জানিয়েছেন, ''হাসপাতালটি বাসের অযোগ্য৷ শিশুদের চিকিৎসার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে৷ অথচ কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই৷ আমরা মৃত শিশুদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ রিপোর্ট তৈরি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রককে দেব৷'' যদিও লকেটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকারের স্বাস্থ্য দফতর৷
রাজস্থানে এখন কংগ্রেসের সরকার৷ স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে৷ ঠিক যে ভাবে গোরক্ষপুরের ঘটনায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কংগ্রেস৷ নাগরিক সমাজের বক্তব্য, একেকটি করে এমন ঘটনা ঘটে, রাজনীতিকরা তার মধ্যেও ভোট খোঁজেন৷ কাজের কাজ কিছু হয় না৷ গোরক্ষপুরের হাসপাতাল যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আছে৷ ঠিক যেমন থেকে যাবে কোটার সরকারি হাসপাতালটি৷ এক বছর আগে বিজেপি আমলেও হাসপাতালটি যে অবস্থায় ছিল, এখন কংগ্রেস আমলেও সেই একই অবস্থায় পড়ে আছে৷
সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রভুত অগ্রগতি হয়েছে৷ কমেছে শিশুমৃত্যুর হার৷ ইউনিসেফ-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট দিচ্ছে এমন তথ্য৷ তারপরও এখনো যেতে হবে বহুদূর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
আড়াই দশকে কমেছে ৫৭ ভাগ
১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেত৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি কমে ১৫ হাজার হয়েছে৷ অর্থাৎ আড়াই দশকে প্রায় ৫৭ ভাগ কমেছে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুমৃত্যুর হার৷
ছবি: AP
নবজাতকের মৃত্যুর হার
২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ২৬ লাখ নবজাতক (এক মাস বয়সি বা তার কম) মারা গেছে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার৷ এই সংখ্যা পাঁচ বছরের কম যত শিশু মারা যায় তার ৪৬ শতাংশ৷ অথচ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ৷ তুলনামূলক হারে বাড়লেও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি হাজারে ২৫ বছরে ৩৭ থেকে কমে ১৯ হয়েছে৷
ছবি: DW/J. Abdullah
প্রথম মাসেই ঝুঁকি বেশি
জন্মের প্রথম মাসেই শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯, যেখানে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তা ১২ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সেটি ১১৷ ইউনিসেফ বলছে, ১ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর গতি খুবই শ্লথ৷
ছবি: imago/i Images/A. Parsons
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি
জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ভাগ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এরপর সাবসাহারান আফ্রিকায়, ৩৮ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু
যত নবজাতকের মৃত্যু হয় তার অর্ধেকই হয় পাঁচটি দেশে৷ এগুলো হলো, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া৷ সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এমন দশটি দেশের আটটিই আফ্রিকার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে কম জাপানে
জাপান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ১ হাজার ১শ ১১ জন শিশুর মধ্য একজন প্রথম মাসে মারা যায়৷ এছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি হাজারে, সিঙ্গাপুরে প্রতি ৯০৯ জনে, ফিনল্যান্ডে প্রতি ৮৩৩ জনে, এস্তোনিয়া ও স্লোভেনিয়ায় প্রতি ৭৬৯ জনে, সাইপ্রাসে প্রতি ৭১৪ জনে এবং বেলারুশ, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ৬৬৭ জনে একজন নবজাতক মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
পার্থক্য কমাতে হবে
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে, মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে ৫০ গুণ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই পার্থক্য কমিয়ে আনা খুব দরকার বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ তাদের হিসেবে, যদি প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি শিশুর জীবন বাঁচবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel/W. Dolder
চিকিৎসা আছে
ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, যেসব রোগে বেশির কম বয়সি শিশু (০-৫ বছর) মারা যায়, তার অধিকাংশেরই প্রমাণিত চিকিৎসা আছে এবং মোটেই ব্যয়বহুল নয়৷ তারা বলছে, বড় বাচ্চাদের (৫-১৪ বছর) চেয়ে ছোট বাচ্চারাই সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়৷ তবে বড় বাচ্চারা বেশি মারা যায় দুর্ঘটনা বা অসংক্রামক রোগে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে...
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে৷ আড়াই দশকে বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম শিশুমৃত্যু বছরে ২ রাখ ৪১ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজারে নামিয়েছে৷ অর্থাৎ হার কমিয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ তবে নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এখনো পৃথিবীর দশটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়ে গেছে৷ এছাড়া এখনো বছরে ৮৩ হাজার শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়৷