তৃণমূল নেতাদের দাবি, শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেকের বৈঠকে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে? সত্যি হয়েছে তো?
বিজ্ঞাপন
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। বহুদিনের প্রবাদ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সে ঘটনাই ঘটছে। যে শুভেন্দু অধিকারীকে দিনের পর দিন ধরে দলে একঘরে করার চেষ্টা করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই শুভেন্দুরই হাত জড়িয়ে ধরতে হলো তাঁকে। বলতে হলো, দলের স্বার্থে নির্বাচনের আগে তিনি যেন তৃণমূল না ছাড়েন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৃণমূলের প্রবীণ অন্য দুই নেতা বলেছেন, দীর্ঘ বৈঠকের ফলাফল ইতিবাচক। শুভেন্দু দল ছাড়ছেন না। কিন্তু শুভেন্দু কী বলছেন? এখনো স্পষ্ট নয়। এত দ্রুত স্পষ্ট হওয়ার কথাও নয়।
ভারতে পরিবারের ভেতর রাজনৈতিক লড়াই!
পারিবারিক রাজনীতি বরাবরই ভারতের অন্যতম চিত্র৷ কিন্তু অনেক রাজনীতিক পরিবার এমনও রয়েছে, যার সদস্যরা একে অন্যের বিপক্ষ আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
দুই বউ দুই দলে
কংগ্রেসের রাশ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নেহরু-গান্ধী পরিবারের হাতে৷ জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীবের পর ভার গেছে রাজীব-পত্নী সোনিয়ার কাছে৷ কিন্তু ইন্দিরার আরেক পুত্র সঞ্জয়ের অকাল প্রয়াণে রাজনৈতিক আলোয় এসে পড়েন তাঁর স্ত্রী মানেকা৷ শ্বশুরবাড়ির মানুষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মানেকা প্রতিষ্ঠা করেন ‘সঞ্জয় বিচার মঞ্চ’ নামের একটি কংগ্রেস-বিরোধী দল৷ বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ
সোনিয়া, মানেকা গান্ধী পরিবারের দুই বউ৷ তাঁরা দুজনেই দুজনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী৷ উত্তরাধিকার মেনে নিয়ে সোনিয়া-পুত্র রাহুল বর্তমানে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ মানেকা-পুত্র বরুণ গান্ধীও ভারতীয় জনতা পার্টি, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ ছবিতে বরুণ, তাঁর মা মানেকা ও স্ত্রী যামিনী৷
ছবি: DW
মহারাষ্ট্রেও একই চিত্র
মারাঠি জাতীয়তাবাদী আদর্শে গঠিত শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে৷ তাঁর পর কে পাবেন দলের দায়িত্ব, এই নিয়ে যখন পুত্র উদ্ধব ও ভাইপো রাজের মধ্যে বচসা বাধে, দলের ভার পান উদ্ধব ঠাকরে৷ রাজ ঠাকরে শিব সেনা ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আরেকটি সম-আদর্শের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’৷ দুই দলের মধ্যে আদর্শিক কোনো দ্বন্দ্ব সেভাবে না থাকলেও, মহারাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে রাজ-উদ্ধব দ্বন্দ্ব আলোচিত৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
রাজপরিবারের ভেতরেও দ্বন্দ্ব
গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিতে আসার ঝোঁক৷ কিন্তু সদস্যদের মধ্যে নেই মতের মিল৷ কংগ্রেস-সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও-এর মা বিজয়রাজে সিন্দিয়া ছিলেন গোয়ালিয়রের শেষ রাজা জিবাজিরাও-এর স্ত্রী৷ প্রথম দিকে বিজয়রাজে সিন্দিয়া কংগ্রেস-বিরোধী স্বতন্ত্র পার্টিতে যোগ দিলেও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন৷ ওপরের ছবিতে মাধবরাও-এর বোন বসুন্ধরা, যিনি মায়ের মতোই কংগ্রেস-বিরোধী৷
ছবি: DW/J. Sehgal
নতুন প্রজন্মও দুই দলে বিভক্ত
মাধবরাও সিন্দিয়ার পথ ধরে তাঁর পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্দিয়াও কংগ্রেসে যোগদান করেন৷ বর্তমানে তিনি দলের অন্যতম জনপ্রিয় যুবনেতা৷ অন্যদিকে তাঁর বাবার দুই বোন, যশোধারা ও বসুন্ধরা যথাক্রমে মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ৷ শুধু তাই নয়, পিসি-ভাইপো’র মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদের জের এসে পড়েছে পারিবারিক সম্পর্কেও৷ সংসদেও একে অন্যের বিপক্ষে লড়তে দেখা যায় বসুন্ধরা ও জ্যোতিরাদিত্যকে৷
ছবি: AP
বাবার বিরোধী ছেলে
বাবা মুকুল রায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য যখন ২০১৭ সালের নভেম্বরে দল বদলে বিজেপি’তে যোগদান করেন, প্রশ্ন ওঠে, কী হবে তৃণমূল সাংসদ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? অবশেষে ২০১৯ সালের মে মাসে এসে তিনিও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে৷
ছবি: Ians
বলিউড পরিবারেও হলো যা...
বিখ্যাত অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ তাঁর স্ত্রী পুনম সিনহা যখন এ বছর রাজনীতির ময়দানে আসার ঘোষণা দেন, সবার মনেই ছিল প্রশ্ন– কোন দলে যাবেন তিনি? বিজেপি বা কংগ্রেস, দুই দলে না গিয়েই পুনম যোগ দিলেন সমাজবাদী পার্টিতে৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই দলের হয়েই তিনি লড়বেন বিজেপি’র রাজনাথ সিংয়ের বিরুদ্ধে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
দিন দু'য়েক আগে মমতার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীপদ ছেড়েছিলেন শুভেন্দু। জল্পনা শুরু হয়েছিল, তা হলে কি এ বার দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন তিনি? শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপির যে আলোচনা চলছে, সে খবর নতুন নয়। বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দুই তরফ একাধিকবার বৈঠক করেছে বলে দুর্জনেরা দাবি করেন। শুভেন্দু বা বিজেপি প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকার না করলেও ব্যক্তিগত স্তরে নেতারা তা মেনে নেন। বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এমন দাবিও করেছেন যে, সময় এবং সুযোগ বুঝে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেবেন। সেই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়া মানে বিজেপিতে যোগ দেয়া-- সহজ পাটিগণিত অনেকেই কষে ফেলেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দু পাটিগণিত নয়, রাজনীতির অঙ্ক কষছেন। ফলে বিজেপিতে যাননি। চুপচাপ বসে জল মাপছেন। সে সময়েরই সদ্ব্যবহার ঘটানোর চেষ্টা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে শ্যামবাজারের একটি বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে হাত ধরে দলে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের দুই বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন, তৃণমূলের রাজনৈতিক সহায়ক প্রশান্ত কিশোর। বৈঠক শেষে সৌগতবাবু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। মানঅভিমান কেটে গিয়েছে।
এক নজরে ভারতের আঞ্চলিক দল
২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়া এবং টিকিয়ে রাখায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দলগুলি নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
ছবি: UNI
দলিতের দল বহুজন সমাজ পার্টি
উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রাণপুরুষ, দলিত নেতা ডক্টর বি. আর আম্বেদকরের আদর্শে ১৯৮৪ সালে দলটি গঠন করেন কাঁসিরাম৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী তিনি৷ নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন হাতি৷ বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপির চারজন থাকলেও লোকসভায় একজনও নেই৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
ক্ষমতার আশায় সমাজবাদী পার্টি
১৯৯২ সালে মূল জনতা দল ভেঙে গঠিত সমাজবাদী পার্টি (এসপি) উত্তরপ্রদেশে খুবই প্রভাবশালী৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুলায়েম সিং যাদব, তবে বর্তমান দলনেতা অখিলেশ সিং যাদব৷ দলের মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র৷ নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল৷ ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে শাসক দল বহুজন সমাজ পার্টিকে পরাজিত করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করে৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭টি এবং ১৩টি৷
ছবি: picture-alliance
দাঁড়িপাল্লায় অকালী দল
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ ও পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল শিরোমণি অকালী দল৷ সব থেকে পুরানো এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি ‘অকালী’ নামেই পরিচিত৷ নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা৷ বর্তমান সভাপতি সুখবীর সিং বাদল৷ গুরুদোয়ারার মতো শিখ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর দল৷ প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে৷ বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অকালী দলের সাংসদ চারজন, বিধানসভায় ১১৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৫টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দক্ষিণ ভারতের এআইএডিএমকে
অখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, বা সংক্ষেপে এআইএডিএমকে, ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রাজনৈতিক দল৷ ১৯৭২ সালে এম.জি. রামচন্দ্রন কর্তৃক এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় প্রতীক জোড়া পাতা৷এই দল সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দ্রাবিড় আঞ্চলিক পার্টি৷ ‘আম্মা’ জয়ললিতার নেতৃত্বে ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে এআইএডিএমকে৷ রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল এআইএডিএমকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
উদীয়মান ডিএমকে?
দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, সংক্ষেপে ডিএমকে তামিলনাড়ু রাজ্যের পুরনো আঞ্চলিক দল৷ প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই৷ ‘জাস্টিস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দ্রাবিড় কড়গম পার্টি ভেঙে গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে আমৃত্যু দলের নেতৃত্ব দেন করুণানিধি৷ মতাদর্শ সামাজিক গণতন্ত্র ও আঞ্চলিকতাবাদ এবং নির্বাচনি প্রতীক উদীয়মান সূর্য৷ বিরোধীনেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর আগামী ভোটে কেমন ফল করে ডিএমকে, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sankar
আম জনতার আম আদমি পার্টি
২০১২ সালে গঠিত আম আদমি পার্টি বর্তমানে দিল্লির শাসক দল৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারী আন্না হাজারে ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নামে আম আদমি পার্টি ও সরকার গঠন করে৷ অবিলম্বে লোকপাল বিল আনার শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা না থাকায় ৪৯ দিনের মাথায় ইস্তফা দিলেও ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Reuters/A. Mukherjee
বিজু-র জয়রথ কি বজায় থাকবে?
১৯৯৭ সালে গঠিত বিজু জনতা দল বর্তমানে ওড়িষায় ক্ষমতাসীন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের ছেলে নবীন পট্টনায়েক এখন মুখ্যমন্ত্রী৷ পিতার নামেই দলের নাম৷ দলের প্রতীক চিহ্ন শঙ্খ৷ নবীন পট্টনায়েক ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন৷ ২০০০ সাল থেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় নবীন পট্টনায়ক এখন মোট চারবারের মুখ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
8 ছবি1 | 8
সত্যিই কি কেটেছে? কাটা আদৌ কি সম্ভব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠতা নন্দীগ্রাম পর্বে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুকে ভরসা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। শুভেন্দু সেই ভরসার ষোলোআনা মর্যাদা দিয়েছেন। ক্রমশ মেদিনীপুরের একমেবদ্বিতীয়ম নায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি এবং অধিকারী পরিবার। তৃণমূলেও ক্রমশ তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে। দলের যুব সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলেছেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে ওই যুব সংগঠন ঘিরেই তাঁর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেকের। ক্রমশ সেই সংঘাত বেড়েছে। মমতা চাইলে আগেই তার সমাধান করতে পারতেন। অভিষেকের সঙ্গে শুভেন্দুর রফা করাতে পারতেন। শুভেন্দুকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন, দলে তাঁর গুরুত্ব আগের মতোই আছে। কিন্তু মমতা কিংবা তৃণমূল নেতৃত্ব সে কাজ করেনি। বরং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতা প্রকাশ্যে শুভেন্দুর সমালোচনা করেছেন।
দুর্জনেরা বলেন, লোকসভা নির্বাচনে মালদা, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের খারাপ ফলের পিছনে শুভেন্দুর কলকাঠি ছিল। যদিও শুভেন্দু তা বরাবরই অস্বীকার করেছেন। ওই অঞ্চলগুলিতে শুভেন্দুর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি দল ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে পঞ্চাশেরও বেশি আসনে তৃণমূল বিড়ম্বনায় পড়বে। এ কথা শুভেন্দুর থেকেও ভালো জানেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে শেষবেলায় মানভঞ্জনের চেষ্টা চলছে। শুভেন্দুকে যাঁরা ব্যক্তিগত স্তরে চেনেন, তাঁরা জানেন, শুভেন্দু রাজনীতি মাখেন, রাজনীতি খান, রাজনীতিতে ঘুমোন। রাজনীতির জন্য দামি ঘড়ি পরার শখ মুহূর্তে ছেড়ে দিতে পারেন। ব্যক্তিগত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিতে পারেন। সেই শুভেন্দু এক বৈঠকে গলে জল হয়ে যাবেন, এমন ভাবার কারণ নেই। ঠিক যেমন ভাবার কারণ নেই যে, তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ এখনো মনে করেন, ভোটের ঠিক আগে শুভেন্দু আলাদা দল তৈরি করতে পারেন। তৃণমূল ভাঙা যে দল পুরনো তৃণমূলের বার্তা নিয়ে পৌঁছবে মানুষের কাছে। ভোটের পরে তারা কাকে সমর্থন করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
হতেই পারে, মঙ্গলবারের বৈঠকের পর শুভেন্দু দলে থেকে গেলেন। বৈঠকে অভিষেকের ফোন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে বলে কোনো কোনো সূত্র জানাচ্ছে। হতে পারে 'দিদি'র কথা ফেলতে পারবেন না শুভেন্দু। কিন্তু বিষয়টি যে খুব সহজ নয়, তা সকলেই বুঝতে পারঠছেন। ভোট যত এগোবে, খেলা তত জমবে, এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশ।