ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই ভারতীয় হকির পুনর্জন্ম হলো। অলিম্পিক থেকে ব্রোঞ্জ আনলেন ছেলেরা। মেয়েরা পৌঁছলেন পদকের খুব কাছে।
বিজ্ঞাপন
এক সময় তাকে নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন, কেন ওড়িশার মতো আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া একটি রাজ্য ভারতীয় হকির পিছনে অর্থ খরচ করবে? তিনি পিছিয়ে আসেননি। নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থেকেছেন। আর সে কারণেই অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে ভারতীয় পুরুষ হকি দলের অধিনায়ক প্রথম ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে। ২০১৮ সালে পুরুষ এবং নারী দলকে স্পনসর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই ভারতীয় হকির পুনর্জন্ম হলো।
অলিম্পিকে ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের বয়কটের কয়েকটি ঘটনা
টোকিও অলিম্পিকে দুজন জুডো খেলোয়াড় ইসরায়েলের এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে খেলেননি৷ একজন নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, অন্যজন ম্যাচে উপস্থিত হননি৷ অলিম্পিকে অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/M. Blake
আরাশ মিরইসমাইল
২০০৪ অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে ইরানের পতাকা বহন করেছিলেন এই জুডো খেলোয়াড়৷ সেই সময় জুডোর অনুর্ধ্ব-৬৬ কেজি বিভাগে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন৷ কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ওজন মাপার সময় তার ওজন দুই কেজি বেশি পাওয়া যায়৷ সে কারণে মিরইসমাইল বাদ পড়ে যান৷ তবে প্রথম রাউন্ডে ইসরায়েলের ইহুদ ভাকসের সঙ্গে খেলা পড়ায় তিনি তার মুখোমুখি হতে চান না বলে ইরানে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Sar
মোহাম্মদ আলীরেজাই
ইরানের প্রথম সাঁতারু হিসেবে ওয়াইল্ডকার্ড ছাড়াই ২০০৮ অলিম্পিক খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি৷ তবে বাছাইপর্বে ইসরায়েলের সাঁতারু থাকায় প্রতিযোগিতা শুরুর আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলীরেজাই৷ ইরানি কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কারণে তিনি এটা করেছেন বলে সেই সময় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
বায়ান জুমাহ
২০০৮ অলিম্পিকের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারের বাছাইপর্বে ইসরায়েলি সাঁতারুর সঙ্গে লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সিরিয়ার বায়ান জুমাহ৷ ইসরায়েলের পত্রিকা জেরুসালেম পোস্ট সেই সময় এই খবর দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
জৌদ ফাহমি
তিনি সৌদি আরবের জুড়ো খেলোয়াড়৷ ২০১৬ অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়তে হতে পারে এই সম্ভাবনায় ফাহমি হাত, পায়ে ইনজুরির দাবি করে প্রথম রাউন্ড থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ইসরায়েলের এক গণমাধ্যম বলেছিল, ফাহমির আসলে কোনো ইনজুরি ছিল না৷ তবে ফাহমির নাম প্রত্যাহারের কারণ ইনজুরি বলে জানিয়েছিল সৌদি অলিম্পিক ডেলিগেশন৷ আল অ্যারাবিয়া সেই তথ্য প্রকাশ করেছিল৷
ছবি: alarabiya.net
ফেঠি নুরিন
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ডে শনিবার ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী তোহার বুতবুলের সঙ্গে লড়ার সম্ভাবনা থাকায় প্রথম রাউন্ড থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন আলজেরিয়ার জুডো খেলোয়াড় নুরিন৷ সে কারণে তাকে ও তার কোচকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন৷ আলজেরিয়াও অলিম্পিকে ঐ দুজনের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করেছে৷ নাম প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
মোহামেদ আবদালারাসুল
ফেঠি নুরিনের পর সুদানের জুডো খেলোয়াড় আবদালারাসুলও ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী তোহার বুতবুলের (ছবি) সঙ্গে লড়েননি৷ বুতবুলের সঙ্গে ম্যাচে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন৷ অথচ ম্যাচের জন্য তিনি ওজন মাপিয়েছিলেন৷ ম্যাচে উপস্থিত না হওয়ার কোনো কারণ জানাননি তিনি৷
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
অন্যান্য প্রতিযোগিতা
অলিম্পিক ছাড়াও অন্য অনেক প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অ্যাথলিটদের বিরুদ্ধে খেলতে অনেক দেশের খেলোয়াড়েরা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন৷ তাদের বেশিরভাগই ইরানের অ্যাথলিট৷ এছাড়া টিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, সিরিয়া, আলজেরিয়া, সৌদি আরব, লেবানন ও জর্ডানের খেলোয়াড়রাও আছেন৷
7 ছবি1 | 7
একসময় অর্থের অভাবে ভুগছিল ভারতের জাতীয় স্তরের হকি। স্পনসররা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। সকলেই ছুটছিল ক্রিকেটের পিছনে। অর্থের অভাবে খেলা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছিলেন প্লেয়াররা। সে সময় হাত বাড়িয়ে দেন নবীন। জানিয়ে দেন ২০১৮ থেকে ২০২৩ এই পাঁচ বছর ভারতীয় পুরুষ এবং নারী হকি দলের সমস্ত ব্যয় বহন করবে ওড়িশা সরকার। ভারতে এমন ঘটনা এই প্রথম। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা খেলায় অর্থ বিনিয়োগ করলেও কোনো রাজ্য কখনো তা করেনি। কিন্তু বরাবরই অন্য ভাবনার মানুষ নবীন সে কাজটিই করে ফেলেন। দুইটি জাতীয় দলের জন্য ২০ কোটি করে অর্থ বরাদ্দ করেন। সঙ্গে হকি দলের পরিকাঠামোর জন্য সব মিলিয়ে ১৫০ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নেন।
দুন স্কুলের সাবেক ছাত্র নবীন নিজেও হকি খেলোয়াড় ছিলেন। গোলরক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। তার কথায়, ওড়িশায় ঘরে ঘরে হকি খেলা হয়। ওড়িশার মানুষ হকি নিয়ে পাগল। কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার সুযোগই কেউ পায় না। কারণ হকির সেই পরিকাঠামোই নেই। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সেই পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছেন নবীন। কলিঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এখন বিশ্বমানের ব্যবস্থা আছে। পরবর্তী ছেলেদের হকি বিশ্বকাপও ওড়িশার স্টেডিয়ামেই হবে। বিশ্বমানের সেই সেই স্টেডিয়ামও তৈরি।
বছরকয়েক আগেও যে হকি ধুঁকছিল, এখন সেই হকিতেই প্রাণ ফিরেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা ওড়িশায় এসে হকি খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। এবারের জাতীয় নারী দলের প্রায় প্রত্যেক খেলোয়াড় চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে এসেছেন। ভেঙেছেন সামাজিক প্রতিরোধ। সবটাই সম্ভব হয়েছে ওড়িশা সরকারের সাহায্যে। বস্তুত, ভারতের পুরুষ এবং নারী দলে এখন তিনজন ওড়িশার খেলোয়াড় আছেন।
এক সময় যারা নবীনকে নিয়ে হেসেছিলেন, এখন তারাই ধন্য ধন্য করছেন। ছেলেরা ব্রোঞ্জ পাওয়ার পর নবীন টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে আরো একটি কথা বলেছেন নবীন। হকি নিয়ে তার আরো স্বপ্ন আছে। এবারের অলিম্পিকে ভারতীয় পুরুষ এবং নারী দলের পারফর্ম্যান্স তার সূচনামাত্র। আরো অনেক পথ পেরোতে হবে। বস্তুত, এক সময় ভারতীয় হকি বিশ্ব শাসন করেছে। ধ্যানচাঁদ এখনো হকির বিশ্বে জীবন্ত কিংবদন্তী। কিন্তু গত কয়েকদশকে সেই হকি কার্যত মৃত্যুর পথে হাঁটছিল। এবারের অলিম্পিক প্রত্যক্ষভাবে তাকে আবার জীবনে ফিরিয়েছে। আর তার পিছনের নায়ক ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।