স্পেনে এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখককে আটক করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল তুরস্কের কড়া সমালোচনা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক দোহান আকহানলে স্পেনের গ্রানাদা শহর বেড়াতে গিয়েছিলেন৷ শনিবার সকালে হোটেলের ঘরে পুলিশ এসে তাঁকে আটক করে নিয়ে গেল৷ তাঁর অপরাধ? জানা গেল তুরস্কের সরকার তাঁর নামে ইন্টারপোল ‘রেড অ্যালার্ট' নোটিস জারি করেছে৷ তাই স্পেনের পুলিশ তাঁকে আটক করেছে৷ নিয়ম অনুযায়ী তুরস্কের সরকারকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রমাণ পেশ করতে হবে৷ তবেই স্পেনের আদালত তাঁকে তুরস্কের হাতে প্রত্যর্পণ করতে পারবে৷
প্রায় একই সময়ে স্পেনে ছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলার সিগমার গাব্রিয়েল৷ তিনি এই জার্মান লেখকের সহায়তা করতে সে দেশে জার্মান কূটনীতিকদের জোরালো তৎপরতার নির্দেশ দেন৷ তাঁদের হস্তক্ষেপে আকহানলে আপাতত রেহাই পেয়েছেন৷ পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি পেলেও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি স্পেন ছেড়ে যেতে পারবেন না৷
উল্লেখ্য, প্রায় এক মাস আগে জার্মান সরকার তুরস্কের প্রতি আর নরম মনোভাব না দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এর মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিকদের জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ম্যার্কেল-কে ‘উচিত শিক্ষা' দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গাব্রিয়েল জার্মানির সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের সমালোচনা করায় এর্দোয়ান আবার গর্জে ওঠেন৷ চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘‘সে কতদিন ধরে রাজনীতি করছে? তার বয়সই বা কত? তার সীমা জানা উচিত৷''
দোহান আকহানলে-র ঘটনার সূত্র ধরে জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে আবার কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, তুরস্ক ইন্টারপোলের অপব্যবহার করতে পারে না৷
দোহান আকহানলে কেন তুরস্কের সরকারের এমন বিরাগভাজন হয়ে পড়েছেন? তিনি নিজে জানিয়েছেন, তিনি তুরস্কের সরকারের নীতি ও সে দেশের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে কলম ধরে আসছেন বলেই তাঁকে আটক করে তুরস্কে নিয়ে গিয়ে নীরব করে দিতে বদ্ধপরিকর সে দেশের সরকার৷ বিশেষ করে ওসমানি সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়দের গণহত্যা নিয়ে তাঁর খোলামেলা লেখা সরকারের মোটেই পছন্দ নয়৷ এক সাক্ষাৎকারে আকহানলে বলেন, ৬০ বছর বয়স ছুঁয়ে তিনি আর নীরব থাকতে চান না৷
এর্দোয়ানের পক্ষে, বিপক্ষে যারা
ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ানকে নিয়ে আলোচনা চলছে গোটা বিশ্বেই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কি তাঁর ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে বিপক্ষেও আছেন অনেক মানুষ৷ রবিবারের সেই গণভোটের পর বিক্ষোভ হয়েছে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার
রবিবারের গণভোটের পর থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে থাকা একদল প্রতিবাদকারী৷ শুরুতে পুলিশ তাদের বাধা না দিলেও বুধবারের খবর হচ্ছে, অন্তত ৩৮ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অল্প ব্যবধানে জয়
তুরস্ক সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রবিবার ভোট দেওয়া তুর্কিদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটর ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন৷ এই ভোট সেদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হয়নি৷ ৬০ শতাংশ ভোট পুর্নগণনার দাবি জানিয়েছেন এর্দোয়ানের বিরোধী পক্ষ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অভিনব প্রতিবাদ
ইস্তানবুলে প্রতিবাদকারীরা হাড়ি পাতিল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন৷ তারা সেসব দিয়ে শব্দ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ আবার এর্দোয়ানকে ‘চোর, খুনি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
ভিন্নচিত্র
তুরস্কের সামগ্রিক চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষের মানুষরা তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন৷ অনেক নারীও তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তায় কমতি নেই
একরোখা আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর্দোয়ান এক সমালোচিত চরিত্র হলেও নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর সমর্থন তেমন একটা কমেনি বলেই মনে হচ্ছে৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল কার্যত জনগণ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পাশে থাকায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘ডিক্টেটর’ এর্দোয়ান?
গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ান কি ‘ডিক্টেটরদের’ মতো ব্যবহার শুরু করবেন? এটা সত্য যে, এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা বহু আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ এখন সে পথ পরিষ্কার৷ তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, গণভোট তাঁকে ‘ডিক্টেটর’ বানাচ্ছে না৷ বরং নতুন ব্যবস্থা তাংর জন্যনয়, তুরস্কের মঙ্গলের জন্যই, বলেন এর্দোয়ান৷