ক্যানাডায় কিকবক্সিং শিখে আন্তর্জাতিক স্তরে নাম করার পর পুরো ওকেলো ফিরে এসেছেন স্বদেশ দক্ষিণ সুদানে, জুবায় কিকবক্সিং শেখাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
কিকবক্সিং-এর ট্রেনিং দিচ্ছেন পুরো ওকেলো৷ তাঁর কাছে শিখতে পাওয়া একটা বিরাট ব্যাপার, দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় পুরোর শিক্ষার্থীরা সেটা জানেন৷ পুরো ওকেলো এককালে অ্যামেরিকায় পেশাদার বক্সার ছিলেন৷ তিনি দক্ষিণ সুদানে ফেরেন ২০০৮ সালে৷
ওকেলো শোনালেন, ‘‘আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন আমি ব্রুস লি, চাক নরিস, এদের নিয়ে পাগল ছিলাম৷ আমার শিক্ষার্থীদের জন্য আমি নিজেই আজ জ্যাকি চান বা ব্রুস লি; আমি ওদের পথ দেখাতে পারি, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কী করতে হবে, তা বলতে পারি৷''
পুরো ওকেলো নব্বই-এর দশকের গোড়ায় সুদানের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে ক্যানাডায় চলে যান – তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪৷ ভ্যানকুভারে কিকবক্সিং শুরু করে শীঘ্রই তিনি একটির পর একটি টুর্নামেন্টে জিততে শুরু করেন৷ ওকেলো শোনালেন সে কাহিনী: ‘‘আমি কারাটে আর শোতোকানে থার্ড ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট ও জিউ জিৎসু আকিদো-তে ফার্স্ট ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট৷ এককালে পেশাদার বক্সার ও উত্তর অ্যামেরিকার ফুল কন্ট্যাক্ট চ্যাম্পিয়ন ছিলাম৷ আমার ৭৫ কিলোগ্রাম ওজন বিভাগে আমি অপরাজিত৷''
মেয়ে বলে কি বক্সিং-এ মানা ?
চলুন বন্ধুরা, রাগ, দুঃখ আর অভিমান ভোলার সহজ উপায় জেনে নেওয়া যাক কিশোরী জোবায়দার কাছ থেকে৷
ছবি: picture alliance/RIA Novosti
সবকিছু বালির বস্তায় ঝেড়ে ফেলতে পারি
জোবায়দা মুরাদ খেলাধুলা করতে খুবই পছন্দ করে৷ তাই সে প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনিং-এ যায়৷ জোবায়দা মনে করে, বক্সিং করলে সব কাজেই গতি বাড়ে৷ শুধু তাই নয়, শক্তি এবং মনোযোগও বাড়ে৷ কারণ বক্সিং-এর সময় খুবই মনোযোগী হতে হয় তাকে৷
ভবিষ্যতের স্বপ্ন – ডাক্তার হবে
জোবায়দা বার্লিনের নয়ক্যোলন পাড়ায় থাকে৷ এই এলাকার ৪০ শতাংশ মানুষই অভিবাসী৷ জোবায়দার পরিবার এসেছে তুরস্ক থেকে৷ ১৫ বছরের এই মেয়েটি হাইস্কুলে পড়ে৷ স্বপ্ন, ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হবে৷
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
মা ও মেয়ে
জোবায়দার মা কোনোভাবেই বুঝতে পারেন না, এতো রকমের খেলাধুলা থাকতে তাঁর মেয়ে কেন বক্সিং-এ আগ্রহী৷ তিনি মনে করেন, বক্সিং ছেলেদের খেলা৷
ছবি: DW/ K. Jäger
বখাটেদের থেকে দূরে থাকি
এতোটুকু বয়সেই জোবায়দা বুজতে পেরেছে, উঠতি বয়সি বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে শুধু মনের দিকে থেকে নয়, শারীরিকভাবেও শক্ত হতে হবে৷ তাই সে বক্সিংকেই বেছে নিয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
ভালো থাকতে হলে, ভালো খেতে হবে
জোবায়দা বক্সিং করতে গিয়ে শিখছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকতে হলে নানা রকম পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর ফল ও সবজি খাওয়া প্রয়োজন৷ যা ওর বয়সি ছেলেমেয়েদের খেতে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়না৷
ছবি: DW/Shoo
ফাস্টফুড
ওর বন্ধুরা সাধারণত ফাস্টফুড খেতেই বেশি পছন্দ করে, ফলে বেশিরভাগ বন্ধুই বেশ মোটা৷
ছবি: dreamer12 - Fotolia.com
পরিবারের সাথে মধুর সম্পর্ক
নিজের যে কোন সমস্যা নিয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন, যা সাধারণত খাবার টেবিলেই হয়ে থাকে৷
ছবি: Kathy Banda Sikombe
‘আমিও এদেশেরই একজন’
‘অভিবাসী পরিবারের জন্ম হয়ে এবং সেরকম একটি পরিবেশে বসবাস করে জোবায়দা চায় স্কুলের অন্যদের মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে এবং অবসর সময়ে কিছুটা কাজ করে নিজের হাত খরচ জোগাড় করতে৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
টিনএজার-দের প্রতি জোবায়দার পরামর্শ
জীবনে কিছু পেতে চাইলে নিয়ম মেনে সময়মতো কাজ করতে হবে৷ সবকিছুরই ট্রেনিং দরকার. বক্সিং-এর মধ্য দিয়ে সে সেটা করতে পারছে৷ যা নাকি কিছুদিন আগেও তার পক্ষে করা সম্ভব ছিলোনা৷ সব বয়সেই সমস্যা আসে, যা স্বাভাবিক৷ তাই নিজের পছন্দমতো উপায় বেছে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ ‘আমি রাগ, দুঃখ ভোলার জন্য বক্সিংকেই বেছে নিয়েছি’৷
ছবি: picture alliance/RIA Novosti
9 ছবি1 | 9
নতুন প্রজন্ম
পুরো ওকেলো দক্ষিণ সুদানে কিকবক্সারদের একটি নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন৷ নিজেই সাজসরঞ্জাম উদ্ভাবন করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন৷ সাফল্যও এসেছে৷ পুরো-র কল্যাণে দক্ষিণ সুদান আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে থাকে৷ পুরো-র শিক্ষার্থীরা কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া ও মিশরে কিকবক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন৷ কিন্তু তিন বছর আগে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া যাবৎ দক্ষিণ সুদানে কিকবক্সিং-এর সংক্ষিপ্ত সাফল্যের কাহিনির অবসান ঘটেছে৷
ওকেলো জানালেন, ‘‘২০১৪ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ছেলেরা সেরা ফাইটারদের মধ্যে ছিল৷ ওদের মধ্যে একজন, জেমস কুওল, ছিল কিকবক্সিং-এর বিশ্ব ব়্যাংকিং-এ ন'নম্বর৷ কিন্তু যুদ্ধের কারণে সে আর এখানে নেই৷ সে বেন্টিউ-তে কোথাও একটি প্রোটেকশন অফ সিভিলিয়ানস সাইটে রয়েছে৷ আমার তাতে খারাপ লাগলেও আমি বলেছি, আমি ছেড়ে দিতে পারি না৷''
মহিলারাও আছেন
পুরো ওকেলো মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেবার কথাও ভাবছেন৷ উইনি নাতাশা যৌন হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য কিকবক্সিং শিখছেন৷ উইনি ট্রেনিং করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছেন যে, তিনি আজ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকেন৷
উইনি জানালেন, ‘‘২০১৩ সালের জুলাই মাসে আমি এক ইটালীয় মহিলার সাথে লড়ি – সেটা ছিল দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার দ্বিতীয় বার্ষিকী৷ সেটা ছিল আমার প্রথম ম্যাচ – যে আমি ম্যাচে জিতি৷''
গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও উইনি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ সুদানের হয়ে কেনিয়ায় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ পুরো তাঁর শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে সম্মান করতে শেখান – তাঁর কেন্দ্রে দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা আছেন৷
মোহাম্মদ আলীর কিছু বিখ্যাত প্রতিকৃতি
বার্লিনের একটি গ্যালারিতে বক্সিং-এর কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর বিভিন্ন আলোকচিত্রের প্রদর্শনী চলেছে৷ ছবিগুলিতে সুপারস্টার আলীর খেলোয়াড়ি জীবনের নানা অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ধরা পড়েছে৷
ছবি: Thomas Hoepker
‘দ্য গ্রেটেস্ট’
১৫ই আগস্ট থেকে ১০ই অক্টোবর অবধি বার্লিনের ‘ক্যামেরা ওয়ার্ক’ গ্যালারিতে বক্সিং তথা খেলাধুলার জগতের সুপারহিরো মোহাম্মদ আলীর আলোকচিত্রের প্রদর্শনী চলবে৷ চিকাগোয় আলির এই ছবিটি তোলেন তাঁর এক প্রিয় ফটোগ্রাফার, জার্মান আলোকচিত্রশিল্পী টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
খ্রিষ্টান সন্তদের মতো
মার্কিন ‘এস্কোয়ার’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের জন্য ১৯৬৭ সালে আলীর এই ছবিটি তোলেন কার্ল ফিশার৷ এর ভিত্তি হলো রেনেসাঁস আমলের ইটালীয় চিত্রকলার একটি প্রামাণ্য ছবি: সন্ত সেবাস্তিয়ানের মৃত্যু৷ ১৯৬৭ সালে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন আলি বাধ্যতামূলকভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে অস্বীকার করেন এই বলে যে, ‘‘কোনো ভিয়েৎকং কখনো আমাকে ‘নিগার’ বলে ডাকেনি’’৷
ছবি: Carl Fischer
পপ এবং স্টার
১৯৬৪ সালে মিয়ামিতে ক্যাসিয়াস ক্লে-র দেখা বিটলসদের সঙ্গে – ক্লে তখনও আলী হননি৷ সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাতের এই ছবিটি তুলেছিলেন হ্যারি বেনসন৷ ক্লে অথবা আলী কোনোসময়েই শুধু বক্সার ছিলেন না, এক হিসেবে তিনি ছিলেন খেলাধুলার জগতের প্রথম পপস্টার৷ যেমন এখানে তিনি যেন এক ঘুঁষিতে চার বিটলেকে ধরাশায়ী করছেন!
ছবি: Harry Benson
নক আউট
সম্ভবত বক্সিং রিং-এ আলীর সবচেয়ে নামকরা ছবি৷ লিউয়িস্টন, মেইন, ১৯৬৫: আলি সদ্য সেকেন্ড রাউন্ডে সনি লিস্টন-কে নক-আউট করেছেন৷ নিল লেইফার ছিলেন সেই ভাগ্যবান ফটোগ্রাফার, যাঁর আঙুল সঠিক মুহূর্তটিতে শাটার টিপেছিল৷
ছবি: Neil Leifer
দোয়া কামনা
১৯৬৫ সালে ক্যাসিয়াস ক্লে ইসলামধর্ম অবলম্বন করে মোহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করেন৷ ষাটের দশকের শেষদিকে তিনি ম্যালকম এক্স-এর মতো নাগরিক আন্দোলন নেতৃবর্গের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মুসলমান ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে প্রকাশ্যভাবে কথাবার্তা বলতেন৷ আলীর বক্সিং রিং-এ গ্লাভস হাতে দোয়া চাওয়ার এই ছবিটি তোলা হয় লন্ডনে ১৯৬৬ সালে; তোলেন টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
‘দ্য শো মাস্ট গো অন’
আলী সবসময় যা করতেন, যেটাকে ইংরেজিতে বলে ‘প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারি’ – বা জনতার মনোরঞ্জন৷ তিনি ছিলেন একজন ‘বর্ন এন্টারটেইনার’, এমনকি ট্রেনিং-এর সময়েও৷ স্কিপিং রোপ হাতে আলীর এই ছবিটি তুলেছিলেন পেটার আঞ্জেলো জিমন, ১৯৭৪ সালে৷ সেই বছর আলী আফ্রিকার কিনশাসায় ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামধারী ফাইটটিতে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে হেভিওয়েট খেতাব পুনর্বিজয় করেন৷
ছবি: Peter Angelo Simon
আত্মগরিমা
মোহাম্মদ আলী নিজেকে বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বক্ষণ যে দু’টি বিশেষণ ব্যবহার করতেন, সেগুলি হলো ‘গ্রেটেস্ট’ এবং ‘প্রিটি’ – মানে সুন্দর৷ তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি অত ভালো বক্সার বলেই তাঁর মুখে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই৷ নয়ত নিজের চেহারা নিয়ে তাঁর হামবড়াই ছিল অনেকটাই লোক-দেখানো৷ চিকাগোর একটি চুল কাটার দোকানে এই ছবিটি তোলেন টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
জহুরি চেনে জহর
‘মোহাম্মদ আলী’ নামধারী ছবিটি থেকে বোঝা যায়, ফটোগ্রাফি নামের মাধ্যমটিকে আলী ঠিক কতটা বুঝতেন এবং নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কাজে লাগাতে জানতেন৷ টোমাস হ্যোপকার-এর মতো আলোকচিত্রশিল্পীরা বলেন, আলীর সঙ্গে ফটো শুট ছিল অতি সহজ কাজ, কেননা আলী মাধ্যমটির প্রয়োজন ও কার্যকরিতা সম্পর্কে পুরোমাত্রায় ওয়াকিবহাল ছিলেন৷
ছবি: Thomas Hoepker
8 ছবি1 | 8
ওকেলো বলেন, ‘‘আমি এখানে আছি এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, এই সব কম বয়সের ছেলেমেয়েরা দক্ষিণ সুদানে যা ঘটছে, তার অনুসরণ বা পুনরাবৃত্তি করবে না৷''
তবে তাঁর মতো মানুষদের প্রেরণার ফলে যে গৃহযুদ্ধের বিভীষিকার অন্ত ঘটবে, সে ধরনের অলীক আশা পুরো রাখেন না৷ তবে যুদ্ধ সমাপ্তির পর তাঁর স্বদেশকে নতুন করে গড়ে তোলায় সাহায্য করতে চান পুরো ওকেলো৷