সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে৷ ঐপ্লাজার পেছন দিকে সিঁড়ির অংশে উদ্ধারকাজ শুরুর পর লাশের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধার করা হয় প্রায় শতাধিক লাশ৷
বিজ্ঞাপন
ফলে আরও একবার বিশ্ব গণমাধ্যমে ভবন ধসের ঘটনা সামনে এসেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমগুলোতে লাশের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে৷ আর সে খবরগুলো ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে৷
মোবাশ্বার হাসান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লাশের সংখ্যাটা জানিয়ে লিখেছেন ‘নো কমেন্টস'!
সামহয়্যার ইন ব্লগে ‘আহ্নিক অনমিত্র'-র লেখায় ক্ষোভ ঝড়ে পড়েছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের চোখে গার্মেন্টস শ্রমিক মারা গিয়েছে, বাইরে দেশের ইমেজ নষ্ট হবে৷ একটু ব্যবসা মন্দ যেতে পারে, এতটুকুই৷ মন্ত্রীদের চোখে এসব কিছুই না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধু ভুল পরিসংখ্যান, বিরোধী দলের কাছে শুধু আগামীতে ভোটে জেতার মোক্ষম অস্ত্র৷''
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
আরেক ব্লগার কবির সরদারের মনে প্রশ্ন, ‘‘নিহত ও আহতদের পরিবারকে স্থায়ী সহযোগিতার জন্য সংশিষ্টরা কি কিছু ভাবছেন?'' তিনি ধসে পড়া ভবনের জায়গায় একটি ‘স্মৃতি টাওয়ার' তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ আর সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিহতদের পরিবার ও আহতদের আজীবন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি৷
ফেসবুকের আরেক ব্যবহারকারী বায়েস আহমেদ তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন৷ তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করছেন৷ এক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন মার্কিন এক অধ্যাপক৷ তিনি কথা প্রসঙ্গে সাভারের ভবন ধসের কথা উল্লেখ করেন৷ সেই সময় বায়েস আহমেদ মার্কিন ঐ অধ্যাপককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপানারা আমাদের এইসব নিরীহ শ্রমিকদেরকে যে পরিমাণ বেতন দেন তাতে করে বেচারাদের দিনে এক গ্লাস পানি খাওয়ার টাকাই থাকে না....বলি কি, আপনারাও এই মৃত্যুর জন্য দায়ী!''
তাঁর এই বক্তব্য শুনে মার্কিন ঐ অধ্যাপক সেমিনার ছেড়ে চলে যান, আর ফিরে আসেননি, বলেন বায়েস আহমেদ৷