লাদাখ সীমান্ত থেকে যত সেনা সরাবার কথা ছিল, তা সরায়নি চীন। ভারতও লাদাখ অঞ্চল থেকে সেনা সরায়নি। প্যাংগং সহ বেশ কিছু অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক এখনও অব্যাহত।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব লাদাখের বিতর্কিত অঞ্চল থেকে এখনও সেনা সরিয়ে নেয়নি চীন। ভারতীয় কূটনীতিক মহল থেকে এমন তথ্যই দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, গালওয়ান অঞ্চল থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও লাদাখের অন্যান্য বিতর্কিত অঞ্চলে এখনও প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন রেখেছে চীন। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, তারাও আপাতত লাদাখ থেকে সৈন্য সরাচ্ছে না। ফলে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা সম্পূর্ণ প্রশমিত হয়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
আকাশ থেকে লাদাখ
পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যের যে অংশকে স্বর্গের কাছাকাছি ভাবা হয় তা হলো লাদাখ৷ পাখির চোখে দেখে নেওয়া যাক সেখানকার দুর্গম পাহাড়ের কিছু ছবি৷
ছবি: DW/S. Ghosh
শুধুই বরফ
দিল্লি থেকে লে-র বিমান রওনা হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হিমালয় পর্বতমালা।
ছবি: DW/S. Ghosh
শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল
প্রথমেই চোখে পড় শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল পর্বতমালা। ছবিতে যত দূর চোখ যায়, পুরোটাই ভারতীয় হিমালয়ের অংশ।
ছবি: DW/S. Ghosh
হিমালয়ের দৃশ্য
মুহূর্তে বদলাতে শুরু করল দৃশ্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান। যত দূর দেখা যায়, একের পর এক চেনা অচেনা শিখর।
ছবি: DW/S. Ghosh
যত দুর্গম, তত আলোড়ন
হিমালয়ের এই দুর্গম অঞ্চল ঘিরেই যত সংঘাত। ভারত, চীন, পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে এই গিরিবর্তের নানা খাঁজে।
ছবি: DW/S. Ghosh
যুদ্ধ সেখানে, যেখানে মানুষ নেই
সিয়াচেন গ্লেসিয়ারেও যুদ্ধ করেছে ভারত-পাকিস্তান। হিমালয় পর্বতমালা ছেড়ে বিমান ঢুকে পড়েছে ট্রান্স হিমালয়। দূরে কারাকোরাম। সেখানেই সিয়াচেন।
ছবি: DW/S. Ghosh
নীল-হ্রদ
১৫ হাজার ফুটে নোনতা জলের হ্রদ। সো মুরারি। লাদাখি ভাষায় সো মানে হ্রদ। সো মুরারি ছেড়ে আর একটু এগিয়ে গেলে প্যাংগং সো। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ভারত ও চীনের সেনা।
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ-তিব্বত মালভূমি
আমরা ঢুকে পড়েছি লাদাখ-তিব্বতের শীতল মরুভূমিতে। চারিদিক ধূসর। মাঝে মাঝে সামান্য সবুজ। সেখানেই মানুষের বাস।
ছবি: DW/S. Ghosh
আছে শুধু সেনা
এই মনুষ্যবর্জিত ল্যান্ডস্কেপে গাছ নেই, অক্সিজেন খুব কম। তারই মাঝে মাঝে সেনার ছাওনি। যে দেশের সেনা যত বেশি উচ্চতায় থাকতে পারবে, যুদ্ধে তার তত সুবিধা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ মানে শান্তি
বিমান পৌঁছেছে লে-র আকাশে। এখন এখানে যুদ্ধের ঘনঘটা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এটা লে-র স্বাভাবিক ছবি নয়। লে মানে শান্তি। সর্বধর্মের সহাবস্থান।
ছবি: DW/S. Ghosh
9 ছবি1 | 9
মে মাসের শেষ পূর্ব লাদাখে প্যাংগং লেক অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রথম উত্তেজনা শুরু হয়। এই হ্রদের এক তৃতীয়ংশ ভারতের দখলে, দুই তৃতীয়াংশ চীনের। ভারতের দাবি হ্রদের ফিঙ্গার পয়েন্ট এক থেকে আট পর্যন্ত তাদের অঞ্চল। চীনের দাবি ফিঙ্গার পয়েন্ট চার পর্যন্ত তাদের দখলে। এর আগেও এই অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ হয়েছে। মে মাসের শেষ পর্বে এই অঞ্চলে দুই দেশের সৈন্য হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তবে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় ১৫ জুন রাতে। ওই দিন গালওয়ান অঞ্চলে পেট্রল পয়েন্ট ১৪ তে দুই দেশের সেনার মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় সেনার। তারপর থেকেই দুই দেশ প্রকৃত সীমান্ত রেখা বরাবর সেনা বাড়াতে শুরু করে।
তবে একই সঙ্গে সেনা এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনাও শুরু হয়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দুই দেশ একটি রফাসূত্রে পৌঁছয়। ঠিক হয়, সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখতে দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। গালওয়ান অঞ্চলে সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে প্যাংগং, ডেপসং এবং গোগরা হট স্প্রিং নিয়ে। কারণ এই তিনটি অঞ্চলের ভূখণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ ঐতিহাসিক। ফলে ওই অঞ্চলে কোন দেশ কতটা সেনা পিছিয়ে নেবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। আরও একটি প্রশ্ন একই সঙ্গে উত্থাপন করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও, এখনই কি দুই দেশ বিতর্কিত অঞ্চল থেকে সেনা সরাবে?
মোদী লাদাখে কেন
লাদাখে প্রধানমন্ত্রী মোদী। লে শহর থেকে কিছুটা দূরে ১১ হাজার ফুট উচ্চতার নিমুতে ভারতীয় সেনার কম্যান্ডারদের কাছ থেকে পরিস্থিতি বুঝলেন। কথা বললেন জওয়ানদের সঙ্গে। ভাষণ দিলেন। প্রশ্ন হলো, কেন মোদীর এই লাদাখ সফর?
ছবি: Reuters/Press information Bureau
চীনকে সরাসরি বার্তা
গালওয়ানে ভারত-চীন সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে। তারপর চীনের উদ্দেশে তেমন কড়া বার্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই রক্তাক্ত সংঘাতের আড়াই সপ্তাহ পরেও সেনা সরেনি। সেনা পর্যায়ে আলোচনায় দ্রুত কোনও ফল হচ্ছে না। এই অবস্থায় লাদাখে দাঁড়িয়ে চীনকে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছেন মোদী।
ছবি: Reuters/Press information Bureau
সেনার মনোবল বাড়ানো
বিশ্বের সর্বত্র সেনার মনোবল বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রনেতারা ফরোয়ার্ড পোস্টে যান, জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের মনোবল বাড়ান। দেশের লোককে আশ্বস্ত করেন। গালওয়ানের সংঘর্ষের পর মোদীও সেটাই করলেন।
ছবি: Reuters/ANI
দেশের লোককেও বার্তা
শুধু সেনা নয়, দেশের লোকের কাছেও বার্তা দেওয়া জরুরি ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কারণ, সর্বদলীয় বৈঠকে তাঁর বলা কথা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এই অভিযোগও উঠেছে, চীনের প্রতি মোদীর মনোভাব অনেকটা নরম।
ছবি: Reuters/Press information Bureau
মোদীার ত্রিমুখি নীতি
চীন নিয়ে মোদী ত্রিমুখি নীতি নিয়েছেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল স্ট্রাইক করছেন। শান্তির জন্য, সেনা সরাতে সামরিক স্তরে কথা চলছে, কূটনৈতিক স্তরেও সক্রিয়তা বাড়ছে। তৃতীয় নীতি হলো, সামরিক প্রস্তুতি। প্রয়োজনে সীমান্তে সংঘাতেও ভারত পিছপা নয়, এই কথাটা চীনকে বুঝিয়ে দেওয়া। লাদাখ যাওয়া তাই জরুরি ছিল।
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
রাজনৈতিক স্বার্থেও জরুরি
লাদাখ গিয়ে চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন, সেনার মনোবল বাড়ান, দেশের ভিতর এই বার্তাটা রাজনৈতিক কারণেও জরুরি ছিল। জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে ভোট-যুদ্ধে জেতা যায়, এটা আগেই দেখিয়েছেন মোদী। কয়েক মাস পরে বিহারে গুরুত্বপূর্ণ ভোট।
ছবি: Reuters/A. Dave
রাজনাথের প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর লাদাখ যাওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তাঁর সফর বাতিল হয়। তারপরেই হঠাৎ মোদী লাদাখ পৌঁছে যান। রাজনাথ জানিয়েছেন, ''ভারতীয় সেনার হাতে দেশের সীমান্ত নিরাপদ। মোদীজি লাদাখ সফর করে সেনার মনোবল নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়িয়ে দিলেন।''
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নেভার গিভ আপ
প্যাংগং লেকের কাছে একটা বিশাল ব্যানার লাগিয়েছে ভারতীয় সেনা। তাতে লেখা 'নেভার গিভ আপ', মানে কখনও হার মানা নয়, হাল ছাড়া নয়। লাদাখে ভারতীয় সেনাকে মোদী এটাই বলতে চেয়েছেন। ভারতীয় সেনার অদম্য সাহস, বীরত্ব ও হার না মানা মনোভাবের কথা লাদাখে বারবার উল্লেখ করেছেন মোদী।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
7 ছবি1 | 7
সাম্প্রতিক রিপোর্টে সেই প্রশ্নেরই উত্তর মিলেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে কয়েক কিলোমিটার পিছিয়ে গেলেও চীন সৈন্য সংখ্যা কমায়নি। বিতর্কিত এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার পিপলস লিবারেশন আর্মির জওয়ান মোতায়েন আছে। তারই সঙ্গে লং ডিস্ট্যান্স ক্ষেপনাস্ত্র, বিমানধ্বংসকারী মিসাইলও মজুত করা আছে। ভারতও লাদাখ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়নি। চীনের প্রায় সমপরিমাণ সেনা ভারতও মজুত রেখেছে। লে সামরিক বিমান ঘাঁটিতে যুদ্ধ বিমান রাখা আছে। আট মিনিটের মধ্যে যা প্রকৃত সীমান্ত রেখায় পৌঁছে যেতে পারে।
সূত্র জানাচ্ছে, প্যাংগং, ডেপসং এবং গোগরা হট স্প্রিং নিয়ে দুই দেশই কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারেনি। ফলে সীমান্ত উত্তেজনা কমানো যাচ্ছে না। প্যাংগংয়ে ফিঙ্গার পয়েন্ট পাঁচে চীনা সেনা এখনও রয়েছে।
তা হলে কি ফের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ না হলেও উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা এখনই নেই। দুই দেশ যতদিন এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখবে, তত দিন এমন আবহাওয়া বজায় থাকবে। আপাতত কোনও দেশই সেনা সরাবে বলে মনে করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি সামান্য উত্তেজনা হলেই তা বড় সংঘাতের চেহারা নেবে বলে মনে করছেন তাঁরা।