1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনকার বুদ্ধিজীবীরা কতটা প্রশ্নাতীত?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ক্ষমতার সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিজীবী তাদের ভূমিকা পালন করছেন না৷ তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা দেশের অগ্রগতি ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে বলে মত অনেক তরুণ ও প্রবীণ চিন্তাবিদের৷

Bangladesch Märtyrer-Intellektuellen-Denkmal in Dhaka
ছবি: DW/M. M. Rahman

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ডয়চে ভেলেকে এমন কথা বলেন তারা৷ তারা আরো মনে করেন, একাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশে যে শক্তিশালী ও স্বাধীন বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে উঠেছিল তা প্রায় নেই৷ কেউ বিপদে পড়ার, কেউ আবার সুযোগ সুবিধা হারানোর ভয়ে চুপ থাকেন৷ সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তারা কোনো কথা বলেন না৷ আবার যারা বলেন তারা দলীয় চিন্তার বাইরে যেতে পারেন না৷ সরকারের প্রয়োজনীয় সমালোচনাও তারা করেন না৷ তাদের কাছ থেকে কোনো দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বুদ্ধিজীবীদের কথা জানি সেই মানের ও চিন্তার বুদ্ধিজীবী ব্যতিক্রম ছাড়া আর নেই৷ নব্বই পর্যন্ত আমরা দলীয় বুদ্ধিজীবী দেখেছি৷ একদল অন্যায় করলে অন্যদলের বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতেন৷ কিন্তু এখন কেউই কথা বলেন না, সবাই চুপচাপ হয়ে গেছেন৷ এর ফলে আমাদের প্রজন্ম চুপচাপ থাকাকেই স্বাভাবিক মনে করছে৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে৷’’

আ আল মামুন

This browser does not support the audio element.

তাঁর মতে, ‘‘এই অবস্থা দেশের জন্য ভয়াবহ৷ দেশের অগ্রগতি ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করে দেয় বুদ্ধিজীবীদের এই নিস্ক্রিয়তা৷’’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ আল মামুন বলেন, ‘‘আমাদের বুদ্ধিজীবীরা এখন প্রশ্নহীন হয়ে পড়েছেন৷ তারা মনে করেন সব কিছু সেটেল হয়ে গেছে৷ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হলো মুক্তির প্রশ্ন৷ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু মুক্তির প্রশ্ন সেটেল হয়নি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষের যে অবস্থা, গণতন্ত্রের যে অবস্থা, যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তা অর্জিত হয়নি৷ কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা এসব বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন৷ তাদের অধিকাংশ সরকার ও শাসন ব্যবস্থার সংকট নিয়েও কোনো কথা বলছেন না৷’’

এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এর দুইটি দিক আছে৷ প্রথমত ধর্মীয় বিশেষ করে ইসলাম নিয়ে এখানে এক ধরনের ডিলেমা আছে৷ তাই ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা এসব নিয়ে তারা কথা বলতে ভয় পান৷ আর তারা যেসব অন্যায্য সুযোগ সুবিধা পান তা হারনোর ভয়েও চুপচাপ থাকেন৷’’

আর তরুন সাংবাদিক ও লেখক বাধন অধিকারী মনে করেন, বুদ্ধিজীবী হবেন নিঃসঙ্গ৷ তারা যেকোনো শক্তি বা ক্ষমতার বাইরে থাকবেন৷ তারা ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন৷ আমরা একাত্তরে এই বুদ্ধিজীবীদের দেখেছি৷ তারা ছিলেন জনমুখী৷ কিন্তু এখনকার বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে আছি৷ আমরা সামগ্রিক একটা ভয়ঙ্কর নীরবতা লক্ষ্য করছি৷ কোনো অন্যায় বা অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা স্পষ্ট ও সোচ্চার কোনো প্রতিবাদ এখন দেখি না৷ এটা বুদ্ধিজীবীদের নিরবতার কারণেই হয়েছে৷’’

এইসব মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একাত্তরপূর্ব বুদ্ধিজীবী যাদের আমরা একাত্তরে হারিয়েছি তাদের সমমানের বুদ্ধিজীবী এখন আর নেই বললেই চলে৷ যারা সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী তারা কোনো বিষয়ে কোনো অবস্থান গ্রহণ করেন না৷ যেমন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখেই একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে আছে৷ এ নিয়ে কোনো বুদ্ধিজীবী কথা বলেন না৷ এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে৷’’

তিনি মনে করেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা এবং ব্যক্তিআকাঙ্খা বড় হয়ে যাওয়ার কারণে এটা হয়েছে৷ বলেন, ‘‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি৷ কিন্তু রাষ্ট্র স্বাধীন হয়নি এখনও৷ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে আমাদের সচেতন বুদ্ধিজীবী শ্রেণি দরকার৷ সরকার ভালো কাজ করছে৷ কিন্তু অনেক প্রশ্নবিদ্ধ কাজও করছে৷ এ নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের সোচ্চার হওয়া দরকার৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ