1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো ১০ ভাগ রক্ত আসে মাদকসেবীদের কাছ থেকে

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ জুন ২০১৯

জীবন বাঁচাতে রক্ত অপরিহার্য৷ দেশে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্ত সংগ্রহ ও বিতরণ করে৷ অনেকে রক্ত উচ্চমূল্যে বিক্রিও করে ৷ কোথা থেকে আসে এই রক্ত? জানাচ্ছেন সন্ধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইহসানুল করিম তানজিম৷

USA Blutkonserven
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Conroy

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে রক্তদানের কার্যক্রম ‘সন্ধানী' কবে থেকে শুরু করেছে?

ইহসানুল করিম তানজিম: ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেলের কিছু ছাত্র এটা শুরু করেন৷ এঁদের মধ্যে মোশারফ হোসেন মিশু ও আব্দুল কাইয়ুম স্যার উল্লেখযোগ্য৷ তাঁদেরই একজন সহপাঠী টিফিনের টাকা ‘কালেকশন' শুরু করেন৷ পরে ভাবেন, আর কী করা যায়? তখন রক্তদান ও মরনোত্তর চক্ষুদানের কার্যক্রম নিয়ে তাঁরা ‘সন্ধানী' প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রীয় সন্ধানী গঠন হয়৷ পরবর্তীতে এটা সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছড়িয়ে পড়ে৷

রক্তদাতা হিসেবে সন্ধানীর তালিকায় এখন কতজন আছেন?

আমাদের একটা ‘পুল' আছে৷ এই পুলে মেডিকেলের বাইরেও অনেকে আছেন৷ মেডিকেলের হিসাবটা যদি বলি, তাহলে প্রতিটি মেডিকেলে অন্তত ৫০০ জন আছেন৷ এই হিসেবে শুধু মেডিকেলের শিক্ষার্থীই আছেন ৪ থেকে ৫ হাজার৷ এর বাইরে প্রতিটি মেডিকেলে সন্ধানী বাইরে থেকে ‘ব্লাড' সংগ্রহ করে৷ সেই পুলেও প্রতিটি মেডিকেলে অন্তত ৩ থেকে ৪শ' জন মানুষ আছেন৷

আপনি কেন সন্ধানীর সঙ্গে যুক্ত হলেন?

আমি যখন মেডিকেলে ভর্তি হই, তখন একদিন আমি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম৷ তিনি বলছিলেন, একজন গ্রামের মহিলার মেয়ে নাকি অসুস্থ৷ তার সার্জারির জন্য রক্ত দরকার৷ কিন্তু তিনি তো গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ৷ তাই কোথায় রক্ত পাবেন? আমাদের দেশে তো তখনো এমনসচেতনা সৃষ্টি হয়নি যে, মানুষ স্বেচ্ছায় এসে রক্ত দেবে৷ এর জন্য তো একটা মিডিয়ার প্রয়োজন৷ আমি দেখলাম, সন্ধানী সেই কাজটাই করছে৷ তখন আমি সন্ধানীর সঙ্গে যুক্ত হলাম৷ আমাদের দেশে তো অনেক মানুষ নিজের ব্লাড গ্রুপও জানেন না৷ সন্ধানী এই কাজটি করে যাচ্ছে৷

আপনাদের এই কাজে অনুপ্রেরণা কারা?

অনুপ্রেরণা অবশ্যই আমাদের প্রতিষ্ঠাতারা৷ মোশারফ হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম স্যারসহ অনেকেই৷ তাঁরা ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন৷ এছাড়া ডা. দীপু মনি আপা ছিলেন৷ তিনি ঢাকা মেডিকেলের সেক্রেটারি ও সভাপতি ছিলেন৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ৷ তিনি সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন৷ এছাড়া সিনিয়ররা যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জীবনে সন্ধানীর এই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে৷ মানুষের সেবা করার অনুপ্রেরণা তাঁরাই মূলত আমাদের যোগান দিয়েছেন৷

‘সেবা করার অনুপ্রেরণা থেকেই সন্ধানী প্রতিষ্ঠা করি’

This browser does not support the audio element.

বর্তমানে ব্লাড ডোনেশনের কাজ করছে কতগুলো সংগঠন?

সন্ধানী ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক আছে, বাঁধন আছে – এটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে৷ এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আছে৷ আবার যারা টাকার বিনিময়ে রক্ত সংগ্রহ করতে চায়, তাদের মধ্যে কোয়ান্টাম আছে৷ ঢাকার মধ্যে ছোট-খাট অনেক সংগঠন আছে৷ আমার ধারণা, মোট ৩৫টি সংগঠন আছে৷

যারা এই কাজটি করছে, তারা সবাই কি ন্যায়-নীতির ভিত্তিতেই করছেন কাজটা?

আসলে মানুষ বিভিন্ন সংগঠনকে নানাভাবে দেখে৷ যেমন ধরুন বাঁধন বা সন্ধানী৷ এটা তো ছাত্ররাই করে৷ ছাত্রদের তো ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে করা ছাড়া আর কী উপায় আছে? এর বাইরে যে সংগঠনগুলো আছে, তারা আসলে নীতি অনুযায়ী করছে কিনা, সেটা বলা মুশকিল৷ তারা নীতির কথা বলছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে টাকা-পয়সা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে৷ যেখানে এক ব্যাগ রক্তের দাম সব খরচ মিলিয়ে ৪০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়, সেখানে তারা এক ব্যাগ রক্তের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকাও নিচ্ছে৷ এমনকি যেসব রক্ত পাওয়া কঠিন, যেমন নেগেটিভ রক্ত, সেগুলোর জন্য ৬ হাজার টাকা পর্যন্তও নিচ্ছে তারা৷ এগুলো দেখতে তো দৃষ্টিকটু লাগেই৷

সন্ধানী থেকে রক্ত নিতে গ্রহীতাকে কি কোনো টাকা দিতে হয়?

আমরা তো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ আমাদের কাছ থেকে কেউ যদি রক্ত নিতে চান, তাহলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনার চেনা কেউ রক্ত দেওয়ার মতো আছে কি? যদি থাকেন তাহলে আমরা তার কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্ত নেই, আর তাদের এক ব্যাগ রক্ত দেই৷ এখানে আমরা শুধু ব্যাগের দাম ও স্ক্রিনিং খরচের টাকাটা রাখি৷

একেবারেই বিনামূল্যে গ্রহীতাকে রক্ত দিচ্ছে কোনো সংগঠন?

এমন সংগঠন বলতে গেলে নেই৷ তবে যাঁরা একেবারেই দরিদ্র, আমরা সন্ধানীর পক্ষ থেকে তাঁদের বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহকরে থাকি৷ আসলে একেবারে বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহ করাটা কঠিন৷ কারণ আমাদের প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষার জন্য টাকা দিতে হয়৷ আবার ব্যাগটাও কিনতে হয়৷ একটা ব্যাগ কিনতে দেড় থেকে দুইশ' টাকা লাগে৷ পাশাপাশি রক্ত সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজেরও প্রয়োজন হয়৷

রক্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে আপনাদের কী ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়?

সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের সচেতনতার অভাব৷ অনেক মানুষই মনে করে, রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হয়৷ আবার দেখা যায়, যাঁর রক্ত দরকার তিনি একজন স্বজনকে নিয়ে এসেছেন৷ যদিও তাঁদের রক্তের গ্রুপের কোনো মিল নেই৷ তাহলে তিনি কীভাবে রক্ত দেবেন? এগুলো অনেকেই বুঝতে পারেন না৷ এ কারণে বর্তমানে দেশে রক্ত চাহিদা ৭ লাখ ব্যাগের মতো৷ এর মধ্যে সরবরাহ করা যায় মাত্র অর্ধেকের মতো৷ একজন মানুষ চারমাস পরপর রক্ত দিতে পারে৷ কিন্তু কেউ তো নিজে এসে রক্ত দেন না৷ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত – যেই হোক না কেন – কেউই আসেন না৷ এটার প্রয়োজনটা নিজের পরিবারে হলে তবে তাঁরা বুঝতে পারেন৷ আসলে মানুষ এ সম্পর্কে খুব কমই জানে৷

রক্ত দিলে একজন মানুষের শরীরের কি উপকার হয়?

রক্ত দিলে উপকার হোক আর না হোক, অপকার যে হয় না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়৷ আমাদের ‘মোটো' হলো, রক্ত দিলে উপকার না হোক, কিন্তু ক্ষতি হবে না৷ আপনার শরীরের রক্ত কণিকার মধ্যে রেড সেল বা লাল রক্ত কণিকার মেয়াদ ১২০দিন৷ এরপর সেটা এমনিই নষ্ট হয়ে যায়৷ ফলে ১২০ দিন পরপর আপনি রক্ত দিলে আপনার রক্ত যেমন কমে না, আপনার কোনো ক্ষতিও হয় না৷ আসলে রক্ত দিলে শারীরিক বা দৈহিকভাবে আপনার ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ বরং কেউ যদি চার মাস পরপর রক্ত দেন, তাহলে স্ক্রিনিং-এর সময় তিনি বুঝতে পারেন, তার কোনো ছোঁয়াচে রোগ আছে কিনা৷ তখন তিনি রোগ নির্ণয় করেচিকিৎসা করাতে পারেন৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে রোগ দেহে সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগে৷ আর এরজন্য আপনার কোনো খরচও করতে হচ্ছে না৷ যে সংগঠন আপনার রক্ত নিচ্ছে, তারাই কিন্তু স্ক্রিনিংয়ের পর আপনাকে বলে দিচ্ছে আপনার কী কী ধরনের রোগ আছে৷ এছাড়া এতে করে মানবিকতা, নৈতিকতা বা মূল্যবোধও যে বৃদ্ধি পায়, তা বলাই বাহুল্য৷ 

আপনাদের কাজের কি কোনো সীমাবদ্ধতা আছে?

আগেই বলছিলাম, মানুষের সচেতনতার অভাবের কথা৷ দেখুন, আমরা তো ছাত্র৷ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের বড় একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটে৷ সমস্যা হয়, যখন পরীক্ষা চলে৷ সেসময় যদি একজন ফোন করে বলেন, তাঁর রক্তের খুব দরকার, তখন আমরা সংকটে পড়ে যাই৷ এ ধরনের কিছু বিপত্তিতে আমাদের পড়তে হয়৷ তবে আমার মনে হয়, এগুলো সব দূর হয়ে যাবে যদি মানুষের সচেতনতা বাড়ে৷

বাংলাদেশে প্রতিদিন কত ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়? অন্যদিকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে কতগুলো ব্যাগ?

প্রতিদিনের কোনো হিসেব আমাদের কাছে নেই৷ কেউ এটা করেনি৷ তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালে একটা হিসাব হয়েছিল৷ সেখানে দেখা গেছে, প্রতি বছর সাত লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয় বাংলাদেশে৷ এর মধ্যে আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো প্রায় অর্ধেকের মতো, অর্থাৎ ৪৫ ভাগ রক্ত সরবরাহ করতে পারি৷ এর বাইরে পরিবার বা স্বজনের কাছ থেকেও রক্ত আসে৷ সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রক্ত সরবরাহ করা যায়৷ তবে বাংলাদেশে অনেক সময়ই ‘সেফ ব্লাড' সংগ্রহ করা হয়ে ওঠে না৷ অনেক সংগঠনের সঙ্গে তো মাদকাসক্তরাও সম্পৃক্ত৷ তারা টাকার বিনিময়ে রক্ত দেয়৷ রোগী এটা বুঝতে পারেন না৷ এর কোনো স্ক্রিনিংও হয় না৷ ফলে এতে রোগীর ক্ষতি হয়৷ আমার জানা মতে, বর্তমানে প্রায় ১০ ভাগ রক্ত এই মাদকাসক্ত বা এ ধরনের ডোনারদের কাছ থেকেই আসছে৷

সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ