নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ ইউকেটে হারিয়ে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে প্রথমবারের মতো ছয় নম্বরে উঠেছে বাংলাদেশ৷ ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাওয়ার পথেও অনেকটাই এগিয়ে গেল বাংলাদেশ৷ আর এ নিয়েই মাতামাতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের ছয়ে ওঠা৷ নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট শ্রীলঙ্কার সমান ৯৩৷
খেলার শুরুতে বাংলাদেশের যে অবস্থা ছিল তাতে শংকিত হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা৷ কিন্তু নাসিরের বলে প্রধান দুই উইকেটের পতনে পুরো খেলার চিত্রটা পাল্টে যায়, যা শেষ হয় দারুণ এক জয়ের মধ্য দিয়ে৷ একদিকে র্যাংকিং-এর উপরে ওঠা, অন্যদিকে টাইগারদের দারুণ পারফর্মেন্সের কথাই উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্রিকেট ভক্তদের লেখায়৷ তবে অনেকেই লিখেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পেয়েছে, যেটা এখনো নিশ্চিত হয়নি৷
ফেসবুক পাতায় রফিকউল্লাহ রোমেল বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে সেরকম আদৌ কিছু হয়নি৷ হওয়ার সম্ভাবনা বা ‘গাণিতিক সম্ভাবনা’ অনেক অনেক বেশি৷ কিন্তু ‘নিশ্চিত' বলে ঘোষণা দেবার প্রশ্নই আসে না৷ ভারত, পাকিস্তান দুই দলই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে যেতে পারে৷ টাইগাররা হারতে পারে সব খেলা৷ ভারত যদি র্যাংকিং-এ এক বা দুই হয়, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগস্টের বাই লেটারাল সিরিজে যদি ভারতকে হোয়াইট ওয়াশ করে, তবে যে কোনো কিছু সম্ভব৷ খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে৷ গাণিতিক সম্ভাবনা বিচারে যে মিডিয়া বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ ‘নিশ্চিত হয়েছে' শিরোনামে খবর ছাপায়, তাদের মান কোনো অংশেই ভালো নয়৷’’
মাসুম আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির মত বড় টুর্নামেন্টের আগে এরকম একটা জয় আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল৷ নাসিরের প্রত্যাবর্তনটাও জয় দিয়ে হলো৷ খেলা হচ্ছে আয়ারল্যান্ডে কিন্তু দর্শক দেখে মনে হচ্ছে খেলা হচ্ছে আমাদের হোমগ্রাউন্ডে৷ বিদেশের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নিউজল্যান্ডকে হারালো৷ অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম৷’’
ঝন্টু পাহান লিখেছেন, ‘‘সাবাস বাংলাদেশ টাইগার ক্রিকেট দলকে৷ এখন আমরা নাম্বার ছয় আর নেই কোন ভয়৷’’
মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান লিখেছেন, ‘‘জিতেছি, সুতারাং, ধন্যবাদ সব টাইগারদের৷ এগিয়ে চলো বাংলার বাঘ৷’’
সাইফুল ইসলাম সিয়াম লিখেছেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়ানডেতে নিজেদের সেরা র্যাংকিং-এ বাংলাদেশ৷ প্রথমবারের মতো র্যাংকিং-এর ছয়ে বাংলাদেশ৷ আহ মনে কী শান্তি৷ ২৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সৌম্যকে হারালেও দারুণ শুরু দেয় সাব্বির তামিম এবং শেষে ভায়রা ভাইয়ের জুটিতে জয়ের প্রান্তে চলে যায় বাংলাদেশ এবং ইতিহাস গড়ে তামিম সাকিব ম্যাশ মুশফিক রিয়াদরা৷’’
রেজাউল করিম লিখেছেন, ‘‘জয়তু বাংলাদেশ টাইগার দল, তোমাদের প্রতি রইল অনেক ভালোবাসা৷’’
একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা একাদশ
ডয়চে ভেলের অনুরোধে এপ্রিল, ২০১৬ সালে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তাঁর দেয়া ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী নামগুলো থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
তামিম ইকবাল
ডয়চে ভেলের অনুরোধে ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তিনি সেরা একাদশ নির্বাচন করায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের ভাতিজা তামিমকে নিয়েছেন বলে যাঁরা ভাবছেন তাঁরা একবার তামিমের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিন৷ বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত মোট রানের সংখ্যা ৫,০০০ রান পেরিয়েছেন তিনি৷ এ জন্য তাঁকে ১৫৯টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ
টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম জয়টি আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ সেই ম্যাচে ওয়াকার, ওয়াসিম, শোয়ের আখতারের মতো বোলারদের বিপক্ষে প্রথম ব্যাট করতে নেমে ৩৯ রান করেছিলেন বিদ্যুৎ৷ দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই রান টাইগারদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
সাকিব
অনেকে হয়ত তাঁকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় বলবেন৷ বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে কয়েকবার শীর্ষে উঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এই অলরাউন্ডার৷ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত ১৬৩টি একদিনের ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,৫৬৬, উইকেট নিয়েছেন ২১৫টি, সেঞ্চুরি আছে ৬টি৷ সাকিবের চেয়ে উইকেট বেশি আছে শুধু মাশরাফির৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মুশফিকুর রহিম
এই উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যানের ওডিআই ডেব্যু হয়েছিল ২০০৬ সালে৷ সেই থেকে ১৬৪টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,০৭৬টি, আছে ৪ সেঞ্চুরি (২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত)৷ প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটিও তাঁর৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
বাংলাদেশের প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন নান্নু৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০৷ সেটি ১৯৮৬ সালের কথা৷ এরপর মোট ২৭টি ওয়ানডে খেলেছেন৷ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে নান্নুর করা সাত ওভার (২৯ রান দিয়েছিলেন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
পাইলট
শুধু ভালো উইকেট-রক্ষকও ছিলেন না, শেষদিকে ব্যাট করতে নেমে দলকে জেতাতে না পারলেও বেশ কয়েকবারই একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে ওডিআই খেলা শুরু করার পর ১২৬ ম্যাচে ১,৮১৮ রান করেছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
রফিকুল আলম
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার৷ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের হয়ে দু’টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন৷ তবে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলেন ১৯৮০ সালে৷ ১৯৮২ ও ১৯৮৬-র আইসিসি ট্রফিতেও খেলেছেন রফিকুল আলম৷
ছবি: Mir Farid
রফিক
প্রধান পরিচয় বাঁ-হাতি স্পিনার হলেও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেও পরিচিত ছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক হয়েছিল৷ প্রথম উইকেটটাই পেয়েছিলেন টেন্ডুলকারকে আউট করে৷ বোলিং ফিগার ছিল ৫-০-১৫-১৷ এরপর ১২৫টি একদিনের ম্যাচ খেলে সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
মাশরাফি (অধিনায়ক)
সেরা একাদশের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি আকরামের জন্য সহজই ছিল বলা যায়৷ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিতে বেশ কয়েকবারই পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
মুস্তাফিজুর রহমান
আইসিসি ২০১৫ সালে ওয়ানডে একাদশের যে নাম ঘোষণা করেছিল তাতে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ ঐ বছর জুনে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক ঘটে৷ প্রথম দুই ওয়ানডেতে তিনি ১১ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
রুবেল হোসেন
ডানহাতি এই ফাস্ট বোলারের ওয়ানডে অভিষেকটা স্মরণীয় হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে টাইগারদের জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/Dibyangshu Sarkar
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (দ্বাদশ খেলোয়াড়)
সাকিব-তামিম-মুশিফক-মাশরাফিদের ভিড়ে তাঁর নাম চাপা পড়ে গেলেও দলের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই তাঁকে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা যায়৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপর দুই ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন৷ তাঁর অফস্পিনও সময় সময় বেশ কাজে লাগে৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
অমায়িক আকরাম
সেরা একাদশে নিজের নাম না রাখা প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, ‘‘তালিকা আমি করেছি, সেখানে তো আমার নাম রাখতে পারি না৷’’ তবে ইএসপিএনক্রিকইনফো ডটকম ওয়েবসাইটে আকরামকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘প্রথম আসল নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Bernama
13 ছবি1 | 13
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...