1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে দুর্গাপুজা

২৩ অক্টোবর ২০১২

বাঙালি হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বন৷ এর মাঝেও দুর্গা পূজার স্বাদটা কিন্তু এক্কেবারে আলাদা৷ বাঙালির কাছে দেবী কখনও দুর্গতিনাশিনী, কখনও আবার নিছকই মাতৃপ্রতিভূ৷ যার আমেজ দেখা যায় জার্মানিতেও৷

ছবি: DW/Debarati Guha

১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ৷ অবিভক্ত বাংলায় তখন থেকেই শুরু দুর্গা পূজা৷ শোনা যায়, সে সময় রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার তাহিরপুর অঞ্চলের রাজা কংস নারায়ণ শারদীয় দুর্গা পূজার প্রচলন করেন৷ তাঁর দেখাদেখি ভাদুরিয়ার রাজা জগৎনারায়ণও করেছিলেন মাতৃ পূজা৷ এরপর থেকেই দুর্গা পুজো ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে বাংলায়, বাঙালির মানসে৷ এখন তো সেই রাজসিক দুর্গা জাত-পাত ভুলে বৈষম্যের চির অবসানে তৎপর৷ একালের দুর্গা পূজা মানুষের আনন্দ সম্মীলন, প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে এই আনন্দোৎসব৷ এমনকি এই জার্মানিতেও৷

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষকে বলা হয় দেবী পক্ষ৷ কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথী থেকে শুরু করে শুল্কপক্ষের প্রতিপদ ষষ্ঠি, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং সব শেষে বিজয়া দশমী – এই কটা দিন বাঙালির হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের উৎসব৷

জার্মানির সবচেয়ে বড় পুজোটি হয় বন শহরের অদূরে কোলনে৷ এবার চলছে ২১তম আয়োজন৷ তবে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের মতো এখানে প্রতিবছর নতুন প্রতিমার দেখা মেলে না৷ কোলনের পুজো কমিটি, যা ভারত সমিতি নামেই পরিচিত, তাদের এ বছরের সেক্রেটারি এবং পুরোহিত সুবীর গোস্বামী জানান, ‘‘আমাদের ঠাকুরটা আসে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে৷ এই ঠাকুরটা আমরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে পুজো করছি৷ আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ না কেউ একজন ‘ডোনেট' করে থাকে প্রতিমাটি৷ যার দাম প্রায় এক লাখ টাকার মতো৷ এছাড়া প্রতিমা জার্মানিতে নিয়ে আসার খরচও প্রায় এক লাখ টাকার মতো৷ এরপরও আশা করছি আগামী বছর আমরা আবার একটা নতুন ঠাকুর আনতে পারবো৷''

কলকাতার কুমোরটুলির একটি দৃশ্য...ছবি: DW

শুধু আশেপাশের ছোট শহরগুলি থেকেই নয়, জার্মানির বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসেন পুজো দেখতে৷ পূজার ক'টা দিন সন্ধ্যায় প্রায় ৬৫০ জন মানুষের সমাগম হয় সেখানে৷ এ বছর তো শুধু নেদারল্যান্ডস থেকেই এসেছেন একশ'রও বেশি মানুষ৷ তাঁদের একজন বললেন, ‘‘আমরা গত প্রায় ১০ বছর যাবৎ বিশাল একটা দলে প্রতিবছরই এই পুজো দেখতে আসি৷ এদের মধ্যে এত আন্তরিকতা, এত ভালো লাগে আমাদের এখানে যে আমরা ভারতকেও ‘মিস' করি না৷ তাই প্রতিবছরই বাচ্চাদের স্কুল কামাই করে আমরা কোলনের ইবিস হোটেলে থেকে এই পুজো দেখতে আসি৷''

এবার অবশ্য কোলনের এই পুজোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রতিবেশী শহর ড্যুসেলডর্ফ৷ সেখানেও শুরু হয়েছে দুর্গা পূজা৷ সেখান থেকে আসা ইলোনা দাস ব্রান্টের কাছে দু'জায়গায় পুজো সবদিক থেকেই ভালো৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমার জন্য এটা খুব ভালো হয়েছে৷ আমি ড্যুসেলডর্ফের কাছে থাকি, সেখানেই আমার জন্ম, পড়াশোনাও সেখানে৷ আমার মতে এর মাধ্যমে পুজোর একটা ব্যাপ্তি ঘটলো৷ দুর্গা পূজা আরো ছড়িয়ে গেল জার্মানিতে৷ আমার কোলনেও যেমন বন্ধু আছে, আছে ড্যুসেলডর্ফেও৷ তাই আমার জন্য এটা ‘ডাবল' মজা৷''

Week 43/12 LS2-Culture: Durga Puja in Germany - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

পৌরানিক মতে, মহিষাসুরের অত্যাচারে বিপর্যস্ত-দেবতাদের রক্ষা করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী দুর্গা৷ অসুর বা অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি৷ কথায় বলে, বাঙালির কাছে দেবী দুর্গা শুভ-অশুভ বোধ জাগ্রত করে, মানুষের চেতনাকে প্রভাবিত করে এবং জন্ম দেয় আধ্যাত্মিকতার৷ তবে জার্মানির এ পুজোতে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নন, অংশ নেন শামসুল মাজিদ চৌধুরী সাকির মতো মুসলমানরাও৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখানে যারা পূজার আয়োজন করে, তারা প্রায় সবাই আমার বন্ধু-বান্ধব৷ এটা একটা সার্বজনীন আবহমান বাঙালির মহা উৎসব এবং সেই উৎসবে আমরা ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সবাই যোগদান করি, উপভোগ করি৷''

বলা বাহুল্য, দেশের মতো জার্মানিতেও পূজার নতুন কাপড়-চোপড়, উপহার আর নাচ-গান-নাটক নিয়ে আনন্দে মেতে থাকে ছোট-বড়, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, ধনি-দরিদ্র, হিন্দু-অহিন্দু – এক কথায় সকলেই৷ বাংলা গানের পাশে জায়গা করে নেয় বলিউড৷ তার সঙ্গে দেবীর নামে তৈরি হয় নানা রকম খাবার-দাবার – নারিকেলের নাড়ু, লুচি, পায়েস, যাতে হাত লাগায় পুজো কমিটির অনেকেই৷ এভাবে জার্মানিতেও পারিবারিক আমেজে দুর্গা অচিরেই দেবী থেকে পরিণত হন মায়ে৷ আমাদের ‘মা দুর্গায়'৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ