1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কৃত্রিম জঙ্গিবাদ টিকবে না’

১১ এপ্রিল ২০১৭

‘‘বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে জঙ্গিবাদ বপন করা হচ্ছে৷ তাই সেই পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করে সরিয়ে আনা গেলে জঙ্গিবাদ আপনা-আপনি নুইয়ে যাবে,’’ বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ৷

Bangladesch Polizei Moschee Islam
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Z. Chowdhury

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কি হঠাৎ করেই আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে?

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ: এগুলোকে আমি আত্মঘাতী হামলা বলব না৷ বরং আমি বলতে চাই, জঙ্গিরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷ জঙ্গিদের এই পথ বেছে নেওয়ার মূল কারণটা হচ্ছে, তারা নিজেদের অত্যন্ত দুর্বল মনে করছে৷ তারা প্রতিরোধের মুখে পড়ে আত্মসমর্পণ করছে না, আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷

কেন জঙ্গিরা  আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে?

আমি তো আগেই বলেছি, এটা তারা করছে দুর্বল মানসিকতা থেকে৷ কারণ তাদের সংগঠনে একটা অস্তিত্বের সংকট চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে এটাকে তারা দেখছে বীরোচিত আত্মত্যাগ হিসেবে৷ পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া একটা ব্যাপার৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তারা প্রচার চালাচ্ছে যে, আমাদের সংগঠনের লোকজন বীরের মতো যুদ্ধ করে মরেছে৷

এই আত্মঘাতীদের ঠেকানোর কি কোনো কৌশল আছে?

আমি বলব, এটা মতাদর্শের লড়াই৷ খণ্ডিতভাবে ধর্মপ্রচার করে যারা আত্মঘাতী হচ্ছে, তাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, এভাবে মৃত্যু হলে তারা বেহেস্তে চলে যাবে৷ জিহাদ করা তাদের ইমানী দায়িত্ব৷ এখানে মূল দায়িত্ব হচ্ছে সমাজ ও পরিবারের সচেতনতা৷ পাশাপাশি এরা যে মতাদর্শ ছড়াচ্ছে, সেটা ছড়ানোর যে ম্যাকানিজম আছে, সেটা নষ্ট করতে হবে বলে আমার মনে হয়৷ এটা শক্তির বিষয় না, বোঝানোর বিষয়৷ তাই এখানে সমাজ ও পরিবারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বলে আমি মনে করি৷ পাশাপাশি এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকাও দেখতে চাইছি আমি৷

জঙ্গিদের আত্মঘাতী স্কোয়ার্ড গঠনে বাইরের কোনো চক্র কাজ করছে কি?

আমি মনে করি, আত্মঘাতী হওয়াটা তাদের একটা কৌশল৷ আমার ধারণা, বাংলাদেশে আত্মঘাতীদের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল৷ খুব কম লোকই ওদের দ্বারা ‘মোটিভেটেড' হয়েছে, হচ্ছে৷ এর মধ্যে অনেকে আবার মারাও গেছে৷ ওদের আত্মঘাতী হওয়ার সঙ্গে আমি অন্য কিছু মেলাতে চাই না৷ তবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর উত্থানের পেছনে দেশি ও বিদেশি লোকজনের যে মদদ থাকে, সেটা অনেকটাই পরিষ্কার৷

যারা আত্মঘাতী হচ্ছে, তাদের মধ্যে শিতি না অশিতি বেশি?

আমরা দু'টো দিকেই দেখতে পাচ্ছি৷ পুলিশের একটা গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আমাদের দেশে সবচেয়ে উচ্চবিত্ত ও সবচেয়ে নিম্নবিত্তদের মধ্যে জঙ্গি হওয়ার প্রবণতা সবচাইতে বেশি৷ অর্থাৎ ‘মেইন স্ট্রিম পপুলেশন' থেকে জঙ্গি বেশি হয়নি৷ এতে বোঝা যায় যে, সমাজে ঐ দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে বঞ্চনা এবং হতাশা আছে৷ আর সেটাই লাজে লাগাচ্ছে তারা৷ আর যেহেতু ‘মেইন স্ট্রিম পপুলেশন' থেকে জঙ্গি তৈরি হয়নি, সেহেতু আমি বলব আমরা ভালোই আছি৷

জঙ্গি দমনে গোয়েন্দারা যে পথে যাচ্ছে, সেটা কি সঠিক পথ?

জঙ্গি বিরোধী কৌশল হলো – জঙ্গিরা যেভাবে কৌশল পরিবর্তন করে, গোয়েন্দাদেরও একইভাবে কৌশল পরিবর্তন করতে হয়৷ সময়ের সাথে সাথে এটা পরিবর্তন না হলে তারা ‘ম্যাচ' করতে পারে না৷ এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমি মনে করি গোয়েন্দাদের কৌশল কাজে দিচ্ছে৷ আমাদের গোয়েন্দারা জঙ্গিদের ওপর চড়ে বসেছে৷ তাদের আস্তানা আবিষ্কার হচ্ছে, জঙ্গিদের ধরতে পারছে জঙ্গিরা৷

জঙ্গিদের এই প্রবণতা রোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কি যথেষ্ট?

পদক্ষেপের অনেকগুলো ভাগ আছে৷ জঙ্গি বিরোধী যে পদক্ষেপটা এখন দেখছি, সেটা কাজে লাগছে৷ জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে৷ আরেকটি হলো মতাদর্শিক লড়াই৷ এটা অহিংস পন্থা৷ জঙ্গিদের যে পৃষ্ঠপোষকরা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করা৷ এর জন্য বহুমুখী কৌশলের প্রয়োজন৷ আমদের রাষ্ট্র এখনও বহুমুখী কৌশল রপ্ত করতে পারিনি৷ তবে নানাভাবে কাজ হচ্ছে৷ এগুলোর সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেওয়া গেলে কাজ হবে৷

এদের ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ কি নেওয়া সম্ভব?

এখানে আমি রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিতে চাই৷ যারা জঙ্গিত্ব থেকে ফিরে আসতে চায়, রাষ্ট্র তাদের ফিরে আসার রাস্তাটা খুলে দিয়েছে৷ এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা হয়ত এখনও আমরা অনুধাবন করতে পারছি না৷ কিছু জঙ্গি ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে৷ আর যারা আত্মঘাতী, তারা ‘হাইলি ডেডিকেটেড'৷ যারা আত্মঘাতী, আপনি তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না৷ কারণ তারা হিজরত করে সবসময় গোপন আস্তানায় থাকছে৷ এখন যদি তাদের ভেতরে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় বা তারা ব্যাপারটা ‘রিয়েলাইজ' করে, তাহলে হয়ত তারা ফিরে আসবে৷ তাকে ‘মোটিভেট' করার সদিচ্ছা আপনার থাকলেও, আপনি তো তার কাছে পৌঁছাতে পারছেন না৷ এই জটিলতা মেনেই আমাদের এগোতে হবে৷

কোন প্রেক্ষাপটে জঙ্গি প্রবণতা বাড়ে, মানে দেশে কি এমন কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে?

Interview of Major Ganaral (Rtd.) Abdur Rashid - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

আমি মনে করি না যে, দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ আমাদের তিন হাজার বছরের সংস্কৃতি, যেখানে সহিষ্ণুতা ছিল৷ এ দেশে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে৷ এখানে সংস্কৃতির একটা বড় ভিত্তি আছে৷ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আমরা আগে দেখিনি৷ তাই আমি মনে করি না যে, এখানে জঙ্গিবাদ শেকড় গাড়তে পারে৷ তবে দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকরা নানারকম জঙ্গি মতাদর্শ তৈরি করে কৃত্রিমভাবে তা বপন করছে৷ এখানে পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করে তাদের পেছন থেকে সরিয়ে আনা গেলে জঙ্গিবাদ আপনা-আপনি নুইয়ে যাবে৷ তাছাড়া আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নতির দিকে৷ এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে এই উন্নয়ন যাতে সবাই ভোগ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা৷ সুতরাং কৃত্রিমভাবে যেটা করা হচ্ছে, সেটা টিকবে বলে আমি মনে করি না৷ জনগণও এদের সমর্থন করে না৷

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধেরকিছু মানবিক প্রশ্ন আসে৷ শক্তি প্রয়োগ করলে সেখানে কিছু মৃত্যু ঘটে৷ আর তাতে সাধারণ মানুষ মারা যান, জঙ্গিরা মারা যায় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মারা যান৷ এতে একটা স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়৷ শক্তি প্রয়োগের সময় আপনি যত মানবিক থাকবেন, জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে ততটাই সুফল পাবেন৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ