‘‘বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে জঙ্গিবাদ বপন করা হচ্ছে৷ তাই সেই পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করে সরিয়ে আনা গেলে জঙ্গিবাদ আপনা-আপনি নুইয়ে যাবে,’’ বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে:বাংলাদেশে কি হঠাৎ করেই আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে?
মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ: এগুলোকে আমি আত্মঘাতী হামলা বলব না৷ বরং আমি বলতে চাই, জঙ্গিরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷ জঙ্গিদের এই পথ বেছে নেওয়ার মূল কারণটা হচ্ছে, তারা নিজেদের অত্যন্ত দুর্বল মনে করছে৷ তারা প্রতিরোধের মুখে পড়ে আত্মসমর্পণ করছে না, আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷
কেন জঙ্গিরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে?
আমি তো আগেই বলেছি, এটা তারা করছে দুর্বল মানসিকতা থেকে৷ কারণ তাদের সংগঠনে একটা অস্তিত্বের সংকট চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে এটাকে তারা দেখছে বীরোচিত আত্মত্যাগ হিসেবে৷ পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া একটা ব্যাপার৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তারা প্রচার চালাচ্ছে যে, আমাদের সংগঠনের লোকজন বীরের মতো যুদ্ধ করে মরেছে৷
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
7 ছবি1 | 7
এই আত্মঘাতীদের ঠেকানোর কি কোনো কৌশল আছে?
আমি বলব, এটা মতাদর্শের লড়াই৷ খণ্ডিতভাবে ধর্মপ্রচার করে যারা আত্মঘাতী হচ্ছে, তাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, এভাবে মৃত্যু হলে তারা বেহেস্তে চলে যাবে৷ জিহাদ করা তাদের ইমানী দায়িত্ব৷ এখানে মূল দায়িত্ব হচ্ছে সমাজ ও পরিবারের সচেতনতা৷ পাশাপাশি এরা যে মতাদর্শ ছড়াচ্ছে, সেটা ছড়ানোর যে ম্যাকানিজম আছে, সেটা নষ্ট করতে হবে বলে আমার মনে হয়৷ এটা শক্তির বিষয় না, বোঝানোর বিষয়৷ তাই এখানে সমাজ ও পরিবারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বলে আমি মনে করি৷ পাশাপাশি এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকাও দেখতে চাইছি আমি৷
জঙ্গিদের আত্মঘাতী স্কোয়ার্ড গঠনে বাইরের কোনো চক্র কাজ করছে কি?
আমি মনে করি, আত্মঘাতী হওয়াটা তাদের একটা কৌশল৷ আমার ধারণা, বাংলাদেশে আত্মঘাতীদের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল৷ খুব কম লোকই ওদের দ্বারা ‘মোটিভেটেড' হয়েছে, হচ্ছে৷ এর মধ্যে অনেকে আবার মারাও গেছে৷ ওদের আত্মঘাতী হওয়ার সঙ্গে আমি অন্য কিছু মেলাতে চাই না৷ তবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর উত্থানের পেছনে দেশি ও বিদেশি লোকজনের যে মদদ থাকে, সেটা অনেকটাই পরিষ্কার৷
যারা আত্মঘাতী হচ্ছে, তাদের মধ্যে শিতি না অশিতি বেশি?
আমরা দু'টো দিকেই দেখতে পাচ্ছি৷ পুলিশের একটা গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আমাদের দেশে সবচেয়ে উচ্চবিত্ত ও সবচেয়ে নিম্নবিত্তদের মধ্যে জঙ্গি হওয়ার প্রবণতা সবচাইতে বেশি৷ অর্থাৎ ‘মেইন স্ট্রিম পপুলেশন' থেকে জঙ্গি বেশি হয়নি৷ এতে বোঝা যায় যে, সমাজে ঐ দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে বঞ্চনা এবং হতাশা আছে৷ আর সেটাই লাজে লাগাচ্ছে তারা৷ আর যেহেতু ‘মেইন স্ট্রিম পপুলেশন' থেকে জঙ্গি তৈরি হয়নি, সেহেতু আমি বলব আমরা ভালোই আছি৷
আলোচিত কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা
ব্রিটিশ সংস্থা ‘অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স’ গত নভেম্বরে জানায়, গত ৩০ বছরে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: DW/ISPR
প্রথম আত্মঘাতী হামলা
১৮৮১ সালের ১৩ মার্চ এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন রুশ সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার৷ তাঁকে বহনকারী ঘোড়ার গাড়ির সামনে বোমা হামলা চালিয়েছিল ২৫ বছরের তরুণ ইগনাটি গ্রিনেভিৎস্কি৷ তিনি ‘দ্য পিপলস উইল’ নামে বামপন্থি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Fine Art Images/Heritage Images
ফিলিস্তিনের প্রথম নারী আত্মঘাতী হামলাকারী
ওয়াফা ইদ্রিস নামে ২৮ বছরের এক নারী ২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারি জেরুসালেমে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে এক বয়স্ক ইসরায়েলিকে হত্যা করেন৷ আহত হয়েছিলেন প্রায় ১০০ জন৷ ইদ্রিসের পিঠে ঝোলানো ব্যাগে ১০ কেজি ওজনের বোমা ছিল৷ ছবিতে তাঁকে গ্রাজুয়েশন পোশাক পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে৷ ‘আল-আকসা মার্টায়ার্স ব্রিগ্রেড’ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷ পরবর্তীতে নারী আত্মঘাতী হামলাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল তারা৷
ছবি: Getty Images
সবচেয়ে প্রাণঘাতী আত্মঘাতী হামলা
২০০১ সালে আল-কায়েদার আত্মঘাতী হামলাকারীরা বিমান ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলা চালিয়েছিল৷ এতে প্রায় তিন হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
বিদেশি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা
১৯৮৩ সালের অক্টোবরে লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলার সময় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ৩০০-র বেশি মার্কিন ও ফরাসি সামরিক বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল৷ দু’টি ট্রাক নিয়ে হামলাকারীরা ব্যারাকে ঢুকে পড়েছিল৷ প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ১ দশমিক ৪ টন বিস্ফোরক ছিল৷ ৯/১১ হামলার আগে ওটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Bouchon
শরীরের ভেতর বোমা স্থাপন
২০০৯ সালে সৌদি আরবের তৎকালীন উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নাইফকে (ছবি) হত্যার উদ্দেশ্যে নিজের শরীরের ভেতর বোমা স্থাপন করিয়েছিলেন ২৩ বছরের সৌদি তরুণ আল-আসিরি৷ পরে মোবাইল ফোনের সাহায্যে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটনা হলেও তাতে শুধু আসিরিই মারা যান৷ প্রিন্স নাইফ সামান্য আহত হয়েছিলেন৷ উল্লেখ্য, শরীরের ভেতরে বোমা স্থাপন করলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেটি সহজে ধরা পড়ে না৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Ammar
রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড
১৯৯১ সালের ২১ মে ভারতের তামিলনাড়ুতে আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় নিহত হন দেশটির সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী৷ তাঁকে হত্যা করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম’ বা এলটিটিই-র এক নারী সদস্য৷ ছবিটি হামলার কয়েক সেকেন্ড আগের মুহূর্তে তোলা৷ শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে সে দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়েছিল ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে প্রথম আত্মঘাতী হামলা
বাংলাদেশে নব্য জেএমবি-র সদস্যদের মধ্যে সম্প্রতি আত্মঘাতী প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও, আগেও এর নজির ছিল৷ ২০০৫ সালের ২৯শে নভেম্বর গাজীপুরে বাংলাদেশের প্রথম আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে৷ ঐ হামলায় আত্মঘাতী হামলাকারী জেএমবি-র সদস্য আসাদসহ আটজন নিহত হয়েছিলেন৷ উপরের ছবিটি সম্প্রতি সিলেটে এক অভিযানের সময় তোলা৷
ছবি: DW/ISPR
7 ছবি1 | 7
জঙ্গি দমনে গোয়েন্দারা যে পথে যাচ্ছে, সেটা কি সঠিক পথ?
জঙ্গি বিরোধী কৌশল হলো – জঙ্গিরা যেভাবে কৌশল পরিবর্তন করে, গোয়েন্দাদেরও একইভাবে কৌশল পরিবর্তন করতে হয়৷ সময়ের সাথে সাথে এটা পরিবর্তন না হলে তারা ‘ম্যাচ' করতে পারে না৷ এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমি মনে করি গোয়েন্দাদের কৌশল কাজে দিচ্ছে৷ আমাদের গোয়েন্দারা জঙ্গিদের ওপর চড়ে বসেছে৷ তাদের আস্তানা আবিষ্কার হচ্ছে, জঙ্গিদের ধরতে পারছে জঙ্গিরা৷
জঙ্গিদের এই প্রবণতা রোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কি যথেষ্ট?
পদক্ষেপের অনেকগুলো ভাগ আছে৷ জঙ্গি বিরোধী যে পদক্ষেপটা এখন দেখছি, সেটা কাজে লাগছে৷ জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে৷ আরেকটি হলো মতাদর্শিক লড়াই৷ এটা অহিংস পন্থা৷ জঙ্গিদের যে পৃষ্ঠপোষকরা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করা৷ এর জন্য বহুমুখী কৌশলের প্রয়োজন৷ আমদের রাষ্ট্র এখনও বহুমুখী কৌশল রপ্ত করতে পারিনি৷ তবে নানাভাবে কাজ হচ্ছে৷ এগুলোর সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেওয়া গেলে কাজ হবে৷
এদের ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ কি নেওয়া সম্ভব?
এখানে আমি রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিতে চাই৷ যারা জঙ্গিত্ব থেকে ফিরে আসতে চায়, রাষ্ট্র তাদের ফিরে আসার রাস্তাটা খুলে দিয়েছে৷ এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা হয়ত এখনও আমরা অনুধাবন করতে পারছি না৷ কিছু জঙ্গি ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে৷ আর যারা আত্মঘাতী, তারা ‘হাইলি ডেডিকেটেড'৷ যারা আত্মঘাতী, আপনি তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না৷ কারণ তারা হিজরত করে সবসময় গোপন আস্তানায় থাকছে৷ এখন যদি তাদের ভেতরে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় বা তারা ব্যাপারটা ‘রিয়েলাইজ' করে, তাহলে হয়ত তারা ফিরে আসবে৷ তাকে ‘মোটিভেট' করার সদিচ্ছা আপনার থাকলেও, আপনি তো তার কাছে পৌঁছাতে পারছেন না৷ এই জটিলতা মেনেই আমাদের এগোতে হবে৷
কোন প্রেক্ষাপটে জঙ্গি প্রবণতা বাড়ে, মানে দেশে কি এমন কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে?
Interview of Major Ganaral (Rtd.) Abdur Rashid - MP3-Stereo
আমি মনে করি না যে, দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ আমাদের তিন হাজার বছরের সংস্কৃতি, যেখানে সহিষ্ণুতা ছিল৷ এ দেশে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে৷ এখানে সংস্কৃতির একটা বড় ভিত্তি আছে৷ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আমরা আগে দেখিনি৷ তাই আমি মনে করি না যে, এখানে জঙ্গিবাদ শেকড় গাড়তে পারে৷ তবে দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকরা নানারকম জঙ্গি মতাদর্শ তৈরি করে কৃত্রিমভাবে তা বপন করছে৷ এখানে পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করে তাদের পেছন থেকে সরিয়ে আনা গেলে জঙ্গিবাদ আপনা-আপনি নুইয়ে যাবে৷ তাছাড়া আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নতির দিকে৷ এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে এই উন্নয়ন যাতে সবাই ভোগ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা৷ সুতরাং কৃত্রিমভাবে যেটা করা হচ্ছে, সেটা টিকবে বলে আমি মনে করি না৷ জনগণও এদের সমর্থন করে না৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধেরকিছু মানবিক প্রশ্ন আসে৷ শক্তি প্রয়োগ করলে সেখানে কিছু মৃত্যু ঘটে৷ আর তাতে সাধারণ মানুষ মারা যান, জঙ্গিরা মারা যায় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মারা যান৷ এতে একটা স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়৷ শক্তি প্রয়োগের সময় আপনি যত মানবিক থাকবেন, জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে ততটাই সুফল পাবেন৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷