বজবজের একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। মৃত অন্তত তিন।
বিজ্ঞাপন
এগরার পর এবার বজবজে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। রোববার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সারা রাত ধরে পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরক সরিয়েছে।
গত সপ্তাহেই পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় একটি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছিল। ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ওই বিস্ফোরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এবার প্রায় সেই একই ঘটনা ঘটল বজবজে। স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, রোববার সন্ধে সাতটা নাগাদ আচমকাই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চিংড়িপোতা অঞ্চল। দেখা যায় একটি বাড়ির দোতলায় আগুন জ্বলছে। স্থানীয় মানুষেরা ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে। তার মধ্যে এক মা ও মেয়ে আছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরে আরো এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিস্ফোরণের গ্রাম বলছে, বোমা তৈরি হতো বাজি কারখানায়
এগরা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে খাদিকুল গ্রাম। সেখানেই বাজি তৈরির কারখানায় মঙ্গলবার ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়েছে। কারখানাটি ভানু বাগের। অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। উপরের ছবিটি ভানু বাগের কারখানার। এই কারখানায় বেআইনিভাবে বাজি বানানো হতো বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মৃতদেহ ছিটকে পড়ে রাস্তায়
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মৃতদেহগুলি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজি না বোমা?
বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে সাবেক পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, বাজি থেকে এরকম হয় না। বোমা থেকে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'বোমা তৈরি হতো'
স্বামী শক্তিপদ বাগের সঙ্গে মালতী বাগ ওই কারখানায় কাজ করতেন। স্বামী মারা গেছেন। সেদিন মালতী দেরি করে যাবেন ঠিক করেছিলেন বলে বেঁচে গেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''ওরা সবরকম বোমা বানাতো। অভিযুক্ত ভানু বাগও আগে বোমা বানাতো। আমি চাই দোষীদের শাস্তি হোক।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একই কথা প্রাণকৃষ্ণের
গ্রামবাসী প্রাণকৃষ্ণ মাইতি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, বিশাল আওয়াজ হয়। আমরা তো প্রথমে ঢুকতে পারিনি। পরে দেখি, পুকুরে দেহ ভাসছে। তার দাবি, এখানে আগেও তিনবার আগুন লেগেছে। মানুষ মারা গেছে। কারখানায় বোমা বানানো হতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চৈতন্য ভুইঞাঁর অভিযোগ
গ্রামবাসী চৈতন্য ভুইঞাঁ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, পুকুরে দেহ পড়ে। এক দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলারানি যা বললেন
গ্রামের বাসিন্দা বেলারানি মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আমাদের বাড়ির কাচ ভেঙেছে। প্রচণ্ড শব্দের পর শুধু কালো ধোঁয়া দেখতে পাই। আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভানু বাগ গ্রেপ্তার
বিস্ফোরণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভানু বাগকে ওড়িশার কটক থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার ভাইপো এবং ছেলেকেও। গত ৩০ বছর ধরে সে বাজি বানাতো। ২০১১-র পর থেকে তার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাংলাদেশে যেত ভানুর বাজি
ভানু বাগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভানু বাগকে কালীপুজোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সে জামিন পেয়ে যায়। ওড়িশা সীমানার কাছে সে বেআইনিভাবে বাজি কারখানা চালাত। মমতা বলেছেন, আমি শুনেছি, ও বাংলাদেশে এবং ওড়িশাতে বাজি সরবরাহ করতো। উপরের ছবিতে ভানু বাগের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজনীতি চলছে
বিস্ফোরণের পরেই রাজনৈতিক নেতারা আসছেন এই গ্রামে। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার এগরায় যান। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভানু তৃণমূলের বড় নেতা। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সদস্য ছিল। ২০১৮ সালে বৌমাকে সদস্য করে সে। শুভেন্দু এনআইএ তদন্ত দাবি করেন। বৃহস্পতিবার খাদিকুল যেতে পারেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারেরা। উপরের ছবিতে এগরা হাসপাতাল। আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের নেতারা
বিজেপি-র পরেই তৃণমূলের নেতারা গ্রামে যান। মন্ত্রী মানস ভুইঞাঁ, বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক তরুণ মাইতি, দোলা সেন, সৌমেন মহাপাত্ররা যেতেই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মানস জানান, দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে। ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের পর গ্রামের বাড়ির কাচ ভেঙে গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেমন করে চলে বেআইনি কারখানা?
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারখানাটি বেআইনি ছিল। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কী করে এই কারখানা চলতো? কোনো লাইসেন্স ছিল না। তারা বাজি না বোমা বানাচ্ছে, সেটা দেখার জন্যও কোনো নজরদারি ছিল না। উপরে থানার ছবি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরো আছে
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এরকম বাজি কারখানা ওই এলাকায় আরো আছে। বাজির চাহিদা আছে। এখন প্রায় সব উৎসবেই বাজি ফাটে। গ্রামের ভিতরে প্রায় কোনো কারখানাতেই লাইসেন্স নেই। এগরার বিস্ফোরণের পর কি এইসব কারখানা বন্ধ হবে? উপরের ছবিতে খাদিকুল গ্রাম।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ওই অঞ্চলে এমন একাধিক বেআইনি বাজির কারখানা আছে। এর আগেও সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ, দমকল এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে এর আগে কমিটি গড়া হয়েছে। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করার দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। অভিযোগ, কমিটি খাতায় কলমে হয়েছে। বাস্তবে তাদের কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের মদতেই বাজি কারখানাগুলি চলে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রোববার রাতে ট্রাকে করে ঘটনাস্থল থেকে বারুদ সরিয়েছে পুলিশ। এক দমকলকর্মী রাতেই জানিয়ে দিয়েছেন, ওখানে কোনো বাজি কারখানা ছিল না। নিছক আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও ঘটনাস্থলে বাজির খোল এবং বারুদ মিলেছে বলে স্থানীয় সংবাদপত্রের অভিযোগ।
এগরার পর বজবজের ঘটনা নিয়েও রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে।