এগরা বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত ভানু বাগ মৃত। বিস্ফোরণে ভানুও আহত হয়েছিলেন। কটকেই মৃত্যু হয়েছে তার।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার পুলিশ জানিয়েছিল, ভানুকে কটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ছেলে ও ভাইপোও গ্রেপ্তার। কটকের হাসপাতালে ভানুর চিকিৎসা হচ্ছিল। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাত দুটোর সময় তার মৃত্যু হয়। তার দেহ রাজ্যে নিয়ে আসছে পুলিশ।
ভানুর পাশাপাশি তার ছেলে ও ভাইপোও এই বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত। ভাইপোকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ভানুর শেষকৃত্যের পরেও ছেলেকেও নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার এগরায় ভানুর বাজি কারখানায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। পুরো কারখানা পুড়ে যায়। নয়জন মারা যান। মৃতদেহগুলি কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে রাস্তায় গিয়ে পড়ে।
এরপরই ভানুর খোঁজ চলতে থাকে। বিস্ফোরণের সময় ভানুও কারখানায় ছিলেন। তার দেহ ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। সেই অবস্থায় আত্মীয়রা তাকে বাইকে করে নিয়ে কটকে ভর্তি করান। ভানুর আগে বাড়ি ছিল ওড়িশার বালেশ্বরে। সেখানকার একটি ঠিকানায় আধার কার্ডও ছিল। সেটা দেখিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, রান্নার তদারকি করতে গিয়ে সিলিন্ডার ফেটে এই অবস্থা হয়েছে।
তবে এরপরেও একটি হাসপাতাল তার চিকিৎসা করেনি। একটি হাসপাতাল অন্য হাসাপাতালে তাকে রেফার করে। তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে।
ইতিমধ্য়ে বৃহস্পতিবার সিআইডি ওই হাসপাতালে পৌঁছে যায় এবং ছেলে ও ভাইপোকে ধরে। পরে ভানুর মৃত্যু হয়।
ভানুর বিরুদ্ধে
ভানুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিয়োগ আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভাদুর কাছে বাজির কারখানার কোনো লাইসেন্স ছিল না। তা সত্ত্বেও সে দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানাটি চালায়। গ্রামবাসীরা অতীতে অভিযোগ করলেও পুলিশ-প্রশাসন কিছু করেনি। অভিয়োগ, ভানু ছিল খুবই প্রভাবশালী।
গ্রামবাসীদের অনেকেই ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ভানুর কারখানায় বাজি ছাড়াও বোমা বানানো হত। আর বোমা তৈরি করতে গিয়েই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ। সাবেক পুলিশকর্তাও বলেছেন, বিস্ফোরণের মাত্রা দেখে তার মনে হচ্ছে, বোমাই ফেটেছে।
গ্রামবাসীরা ভানু বাগের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ডিডাব্লিউয়ের চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভানুর প্রতিবেশী ঝর্না বাগের মতে, ভানু ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার পেশাটা ছিল খুব খারাপ।
বিস্ফোরণে স্বামীকে হারিয়েছেন সুমা জানা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ভানু বাগকে তিনি শাস্তি দিতে চান। সুমা কিছু করার আগেই অবশ্য ভানু না ফেরার দেশে চলে গেছে।
আবার স্ত্রীকে হারানো সঞ্জিত বাগ কান্নায় ভেহে পড়ে বলেছেন, তার দুইটি ছোট বাচ্চাকে এখন তিনি কীভাবে মানুষ করবেন। এ সবই হয়েছে ভানু বাগের জন্য।
স্থানীয় মানুষ এও অভিযোগ করেছেন, কেউ কাজ করতে না চাইলে ভানু হমকি দিয়ে করাতো।
তারা অভিযোগ করেছেন, শুধু বাজি কারখানাই নয়., ভানুর একটি ওষুধের কারখানা ছিল। ভানু খাদিকুলে একটি বাড়িতে থাকতো। তাছাড়াও তার একটি বিলাসবহুল বাড়ি ছিল।
মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই
বিস্ফোরণে আহত দুই জন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। তাদের কলকাতা নিয়ে আসা হয়েছে। এসএসকেএমে তারা ভর্তি আছেন।
বিজেপি-র মিছিলে বোমা, গুলি
এগরাকাণ্ডের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে মিছিল বের করেছিল বিজেপি। তার নেতৃত্বে ছিলেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, মিছিলে বোমা মারা হয়। গুলিও চলে। সিআইএসএফ জওয়ানরা গুলি চালান। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল।
তৃণমূল অবশ্য় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিস্ফোরণের গ্রাম বলছে, বোমা তৈরি হতো বাজি কারখানায়
এগরা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে খাদিকুল গ্রাম। সেখানেই বাজি তৈরির কারখানায় মঙ্গলবার ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়েছে। কারখানাটি ভানু বাগের। অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। উপরের ছবিটি ভানু বাগের কারখানার। এই কারখানায় বেআইনিভাবে বাজি বানানো হতো বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মৃতদেহ ছিটকে পড়ে রাস্তায়
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মৃতদেহগুলি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজি না বোমা?
বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে সাবেক পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, বাজি থেকে এরকম হয় না। বোমা থেকে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'বোমা তৈরি হতো'
স্বামী শক্তিপদ বাগের সঙ্গে মালতী বাগ ওই কারখানায় কাজ করতেন। স্বামী মারা গেছেন। সেদিন মালতী দেরি করে যাবেন ঠিক করেছিলেন বলে বেঁচে গেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''ওরা সবরকম বোমা বানাতো। অভিযুক্ত ভানু বাগও আগে বোমা বানাতো। আমি চাই দোষীদের শাস্তি হোক।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একই কথা প্রাণকৃষ্ণের
গ্রামবাসী প্রাণকৃষ্ণ মাইতি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, বিশাল আওয়াজ হয়। আমরা তো প্রথমে ঢুকতে পারিনি। পরে দেখি, পুকুরে দেহ ভাসছে। তার দাবি, এখানে আগেও তিনবার আগুন লেগেছে। মানুষ মারা গেছে। কারখানায় বোমা বানানো হতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চৈতন্য ভুইঞাঁর অভিযোগ
গ্রামবাসী চৈতন্য ভুইঞাঁ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, পুকুরে দেহ পড়ে। এক দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলারানি যা বললেন
গ্রামের বাসিন্দা বেলারানি মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আমাদের বাড়ির কাচ ভেঙেছে। প্রচণ্ড শব্দের পর শুধু কালো ধোঁয়া দেখতে পাই। আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভানু বাগ গ্রেপ্তার
বিস্ফোরণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভানু বাগকে ওড়িশার কটক থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার ভাইপো এবং ছেলেকেও। গত ৩০ বছর ধরে সে বাজি বানাতো। ২০১১-র পর থেকে তার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাংলাদেশে যেত ভানুর বাজি
ভানু বাগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভানু বাগকে কালীপুজোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সে জামিন পেয়ে যায়। ওড়িশা সীমানার কাছে সে বেআইনিভাবে বাজি কারখানা চালাত। মমতা বলেছেন, আমি শুনেছি, ও বাংলাদেশে এবং ওড়িশাতে বাজি সরবরাহ করতো। উপরের ছবিতে ভানু বাগের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজনীতি চলছে
বিস্ফোরণের পরেই রাজনৈতিক নেতারা আসছেন এই গ্রামে। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার এগরায় যান। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভানু তৃণমূলের বড় নেতা। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সদস্য ছিল। ২০১৮ সালে বৌমাকে সদস্য করে সে। শুভেন্দু এনআইএ তদন্ত দাবি করেন। বৃহস্পতিবার খাদিকুল যেতে পারেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারেরা। উপরের ছবিতে এগরা হাসপাতাল। আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের নেতারা
বিজেপি-র পরেই তৃণমূলের নেতারা গ্রামে যান। মন্ত্রী মানস ভুইঞাঁ, বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক তরুণ মাইতি, দোলা সেন, সৌমেন মহাপাত্ররা যেতেই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মানস জানান, দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে। ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের পর গ্রামের বাড়ির কাচ ভেঙে গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেমন করে চলে বেআইনি কারখানা?
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারখানাটি বেআইনি ছিল। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কী করে এই কারখানা চলতো? কোনো লাইসেন্স ছিল না। তারা বাজি না বোমা বানাচ্ছে, সেটা দেখার জন্যও কোনো নজরদারি ছিল না। উপরে থানার ছবি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরো আছে
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এরকম বাজি কারখানা ওই এলাকায় আরো আছে। বাজির চাহিদা আছে। এখন প্রায় সব উৎসবেই বাজি ফাটে। গ্রামের ভিতরে প্রায় কোনো কারখানাতেই লাইসেন্স নেই। এগরার বিস্ফোরণের পর কি এইসব কারখানা বন্ধ হবে? উপরের ছবিতে খাদিকুল গ্রাম।