পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট টিম৷ ব্যাটিং-এ সুবিধা করতে না পারলেও শক্তিশালী বোলিং টাইগারদের এই সাফল্য এনে দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট টিম৷ ব্যাটিং-এ সুবিধা করতে না পারলেও শক্তিশালী বোলিং টাইগারদের এই সাফল্য এনে দিয়েছে৷
ব্যাংককে মঙ্গলবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে শুরুতে ব্যাট করে ১০০ রান করেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটররা৷ জবাবে খেলতে নেমে ৫৯ রানে অলআউট হয় প্রতিপক্ষ৷ ফলে শুরুতে ব্যাটিং ভালো না করলেও সামগ্রিকভাবে জয় ছিনিয়ে আনেন টাইগাররা৷
বাংলাদেশ দলের সাফল্যের পেছেন দুই ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ এবং আয়েশা রহমানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে৷ ২৪ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার বাছাইপর্বের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেন৷ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নয় রানের বিনিময়ে তিন উইকেট তুলে ‘প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ' হন তিনি৷
অন্যদিকে, আয়েশা একজন ওপেনার৷ থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২ বলে ৩০ রান করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি৷ গত ছয় ম্যাচের মাত্র একটিতে তিনি ২০ রানের কম করে আউট হন৷
বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে জিম্বাবোয়ে৷ সেই ম্যাচে জয় পেলেই বাংলাদেশের সামনে খুলে যাবে সম্ভাবনার আরেকটি দুয়ার৷
ওদের সেরা হয়ে ওঠার কাহিনি
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলে ফেলেছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: Constantin Stüve
হতাশা দিয়ে শুরু
না, এখানে কলসিন্দুরের মেয়েদের হতাশার কথা বলা হচ্ছে না৷ বলা হচ্ছে মফিজ উদ্দিনের কথা৷ স্থানীয় ছেলেরা কোনো কাপ জিততে না পারায় একরকম হতাশ হয়েই ২০১১ সালে মেয়েদের দিয়ে ফুটবল খেলানোর চিন্তা শুরু করেছিলেন ফুটবল কোচ মফিজ উদ্দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
পথটা মসৃণ ছিল না
বাংলাদেশের মতো দেশে মফিজ উদ্দিনের পরিকল্পনা যে সহজে বাস্তবায়িত হওয়ার নয় তা বোধগম্য৷ সেটা হয়ওনি৷ ছিল বাবা-মার কাছ থেকে বাধা, ছিল সামাজিক বাধাও৷ কিন্তু তারপরও কয়েকজন মেয়েকে ফুটবলে নিয়ে আসতে সমর্থ হন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সুযোগ যখন এলো
২০১১ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মেয়েদের ফুটবলের আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে৷ মফিজ উদ্দিন এই সুযোগটা কাজে লাগান৷ স্থানীয় স্কুলের সহযোগিতায় তিনি একটি দল গঠন করেন, যেটা স্থানীয় পর্যায়ে সফলতার পর জাতীয় পর্যায়েও সেরা হয়৷
ছবি: picture-alliance/M.i.S.-Sportpressefoto
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা
শুধু জাতীয় পর্যায়ের সফলতা নিয়ে থেমে থাকেনি কলসিন্দুরের মেয়েরা৷ চলতি বছর নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে তারা৷ প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলেও নেপালে ভূমিকম্পের কারণে খেলাটা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি৷
ছবি: picture alliance/Norbert Schmidt
কলসিন্দুরের ‘মেসি’
একেবারে বামে যাকে দেখছেন তার নাম তহুরা খাতুন৷ বয়স ১২৷ সবাই তাকে কলসিন্দুরের ‘মেসি’ বলে ডাকে৷ এত সাফল্যের পরও তহুরার দাদার চিন্তা, ফুটবল খেলার জন্য হয়ত তহুরা ভালো কোনো স্বামী পাবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বুট তুলে রেখেছে রুমা
তহুরার সঙ্গে খেলতো ১৩ বছরের রুমা আক্তার৷ কিন্তু বাবার আপত্তির কারণে খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে৷ তার বাবা মনে করেন, রুমা ফুটবল খেলে পরিবারের অসম্মান ডেকে এনেছে৷ কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপিকে রুমা জানিয়েছে, ‘‘আমি চাই মানুষ আমাকে আমার মেধার জন্য চিনুক৷ আমি আমার মায়ের মতো শুধু গৃহিনী হয়ে কিংবা স্বামীর দয়ার উপর জীবন কাটাতে চাই না৷’’